৯/১১ ও ইউরোপের নিরাপত্তা
১০ সেপ্টেম্বর ২০০৯৯/১১ ও ইউরোপ
১১ই সেপ্টেম্বরের হামলার কুশিলবদের সঙ্গে ইউরোপের সরাসরি যোগসূত্র ছিল৷ যারা বিমানের চালকের আসন দখল করে হামলা চালিয়েছিল, তাদের মধ্যে কয়েকজন জার্মানির হামবুর্গ শহরে বসবাস করেছে৷ ২০০৪ সালে মাদ্রিদ ও ২০০৫ সালে লন্ডনের সন্ত্রাসী হামলার ফলে ইউরোপ হয়ে ওঠে ইসলামপন্থী সন্ত্রাসবাদের লক্ষ্যবস্তু৷ ২০০৪ সালে তৎকালীন জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইয়শকা ফিশার বলেছিলেন, ‘‘এই ধরনের হামলা আগেভাগেই প্রতিহত করতে আমাদের সব কিছু করতে হবে এবং তা শুধু জাতীয় স্তরে সীমাবদ্ধ থাকলে চলবে না৷ সন্ত্রাসবাদের সামনে আমরা নতি স্বীকার করতে পারি না৷’’
নিরাপত্তার কড়াকড়ি
ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলিতে অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা সম্পর্কে জাতীয় স্তরে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়ে থেকে৷ আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদের পরিপ্রেক্ষিতে বিষয়টি একটি সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে৷ কিন্তু পরিবর্তিত পরিস্থিতি থেকে শিক্ষা নিয়ে ই.ইউ. সন্ত্রাস দমনের ক্ষেত্রে এক সমন্বয়কের পদ সৃষ্টি করে৷ এই পদের দায়িত্ব পেয়ে নেদারল্যান্ডস’এর গাইস দ্য ফ্রিস বলেন, ‘‘তথ্যের আদান প্রদান অত্যন্ত জরুরি৷ সদস্য দেশগুলির পুলিশ ‘ইউরোপোল’এর মাধ্যমে তথ্যের আদান-প্রদান করে৷ সরকারী কৌঁসুলিরা ই.ইউ. স্তরে বিচার বিভাগীয় পর্যায়ে সহযোগিতা করেন৷ সন্ত্রাসবাদের আর্থিক সূত্র বন্ধ করতে আমরা আইন প্রণয়ন করছি৷ সন্ত্রাসবাদীদের অর্থের প্রয়োজন৷ আমাদের নিশ্চিত করতে হবে, তারা যাতে তাদের হাতে অর্থ না পৌঁছয়৷ এর জন্যও আন্তর্জাতিক সহযোগিতার প্রয়োজন৷’’
তথ্য-সুরক্ষা নিয়ে দুশ্চিন্তা
ইউরোপের বেশীরভাগ মানুষ বিমানবন্দরগুলিতে নিরাপত্তার কড়াকড়ি মেনে নিয়েছেন৷ কিন্তু মার্কিন কর্তৃপক্ষ যখন আমেরিকাগামী ইউরোপীয় বিমানযাত্রীদের তথ্য ঘেঁটে দেখার অবাধ অধিকার দাবি করল, তখন জোরালো প্রতিরোধ সৃষ্টি হল৷ তৎকালীন ই.ইউ. বিচার বিভাগীয় কমিশনর ফ্রাঙ্কো ফ্রাতিনি বলেছিলেন, ‘‘অন্য কর্তৃপক্ষের হাতে তথ্য তুলে দিতে হবে – এটা আমরা মেনে নিচ্ছি৷ কিন্তু ইউরোপে যেভাবে নাগরিকদের তথ্যের অপব্যবহার রুখতে সুরক্ষার মানদণ্ড চালু রয়েছে, সেখানেও এমন মানদণ্ড থাকা প্রয়োজন৷’’
নিরাপত্তা আইনের কড়াকড়ির ফলে আজ ব্যাঙ্কের গ্রাহক এবং মোবাইল টেলিফোন বা ইন্টারনেট ব্যবহারকারীরা বিলক্ষণ জানেন, যে কর্তৃপক্ষ তাদের সম্পর্কে নানা তথ্য সংগ্রহ করে চলেছে৷ কিন্তু ইউরোপের গোয়েন্দা সংস্থাগুলি এই সব তথ্যের ভিত্তিতে যেভাবে সন্ত্রাসবাদী সন্দেহে কিছু ব্যক্তির তালিকা প্রস্তুত করে থাকে, নাগরিক অধিকার রক্ষাকারী গোষ্ঠীগুলির জন্য তা অত্যন্ত উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে৷ কোন তথ্যের ভিত্তিতে এই ধারণার সৃষ্টি হল এবং নাগরিক হিসেবে কীভাবে তার বিরোধিতা করা সম্ভব, তা কেউ জানে না৷ ঐ তালিকায় নাম ওঠা বা নাম মুছে ফেলার কোনো স্বচ্ছ প্রক্রিয়া নেই৷ মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ ইউরোপের একাধিক দেশে গোপন কারাগার রেখেছিল, তদন্ত চালিয়ে তা ইতিমধ্যে জানা গেছে৷
আইনের শাসন
গুয়ান্তানামো কারাগারের নাম উল্লেখ না করলে ১১ই সেপ্টেম্বরের ঘটনার পরিণতির খতিয়ান অসম্পূর্ণ থেকে যাবে৷ সেখানে মার্কিন প্রশাসন বন্দিদের প্রতি যে আচরণ দেখিয়েছে, তার ফলে গোটা বিশ্বে তুমুল সমালোচনার ঝড় উঠেছে৷ সন্ত্রাসী হামলার ফলে মরিয়া হয়ে আমেরিকা এমন সব ঝুঁকি নিয়ে এবং নিজস্ব মূল্যবোধ বিসর্জন দিয়ে যেভাবে সন্ত্রাসবাদ দমনের উদ্যোগ নিয়েছে, তা কতটা যুক্তিযুক্ত ছিল, সেবিষয়ে বিতর্ক আজও চলছে৷ নিন্দুকেরা বলছেন, নিজস্ব মূল্যবোধ বিপন্ন করলে এই সংগ্রামে সাফল্য পাওয়া যাবে না৷
তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডাব্লু বুশ ও তাঁর প্রশাসনই এমন সমালোচনার লক্ষ্য ছিল৷ ইতিমধ্যে সমালোচকরা ইউরোপীয় ইউনিয়নের বিরুদ্ধেও অভিযোগ তুলে বলছেন, নিরাপত্তার দোহাই দিয়ে সেখানেও আইনকে বুড়ো আঙুল দেখানো হচ্ছে৷ অথচ আইনী শাসনই ই.ইউ.-র মৌলিক বৈশিষ্ট্য হিসেবে তুলে ধরা হয়ে থাকে৷
প্রতিবেদন: ক্রিস্টফ হাসেলবাখ, অনুবাদ: সঞ্জীব বর্মন, সম্পাদনা: আবদুল্লাহ আল ফারূক