৫০ বছর পর সাহিত্য আকাদেমি পুরস্কার থেকে বাদ বাঙালি সাহিত্যিক
১৮ মার্চ ২০২৫১৯৭৩-এর পর এই প্রথম সাহিত্য আকাদেমি পুরস্কার পেলেন না কোনো বাঙালি সাহিত্যিক। এই বাদ পড়ার কারণ নিয়ে বাংলা সাহিত্য মহলে জল্পনা তুঙ্গে। সামনে এসেছে দলাদলির তত্ত্ব। কেউ প্রশ্ন করেছেন, বাংলার প্রতি বঞ্চনার কারণেই কি বাদ পড়লেন এ রাজ্যের সাহিত্যিকেরা? অন্যদিকের বক্তব্য, অযোগ্য বই সুপারিশ করার কারণেই এবার এমন ঘটনা ঘটলো। কিন্তু আসল ঘটনা নিয়ে কেউই সরাসরি মুখ খুলতে চাননি।
'পদ্ধতিগত কারণে বাদ'
সাধারণত সাহিত্য আকাদেমি পুরস্কার প্রাপকদের তালিকা বার হয় ডিসেম্বরে। ২০২৪-এ তা হয়নি। মার্চের গোড়ার দিকে যে তালিকা প্রকাশিত হয়েছে, তাতে ২০২৪ সালে মোট ২৩টি ভাষার সাহিত্যিকের নাম আছে। বাংলার কোনো নাম নেই। আকাদেমির সভাপতি মাধব কৌশিক আনন্দবাজার ডট কমকে জানান, "পদ্ধতিগত সমস্যার জন্য এবছর কোনো বাঙালি সাহিত্যিককে পুরস্কার দেওয়া যায়নি।" পদ্ধতিগত সমস্যাটি কী, তা অবশ্য ব্যাখ্যা করেননি তিনি।
মুখে কুলুপ এঁটেছেন বাংলার পরামর্শদাতা কমিটিও। দশ সদস্যের এই কমিটির আহ্বায়ক ব্রাত্য বসু ডিডাব্লিউকে বলেন, তিনি এই বিষয়ে কোনো মন্তব্য করবেন না। তবে বাংলা সাহিত্য মহলের এক পক্ষ অভিযোগ করছেন, অযোগ্য সাহিত্য সুপারিশ হওয়ার কারণেই বাংলার সাহিত্যিকেরা এবছর পুরস্কার থেকে বঞ্চিত হলেন। পরামর্শদাতা কমিটির নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সদস্য অবশ্য দ্ব্যর্থহীনভাবে জানিয়েছেন, পুরস্কারের বিষয়ে কোনো আলোচনা কমিটিতে হয়নি।
'করের টাকায় পরিচালিত, ফলে স্বচ্ছতা প্রয়োজন'
কী কারণে এবছর কোনো বাঙালি সাহিত্যিক পুরস্কার পেলেন না তা জানতে চেয়ে সাহিত্য আকাদেমির সচিবকে চিঠি পাঠিয়েছে বাম লেখক সংগঠন পশ্চিমবঙ্গ গণতান্ত্রিক লেখক শিল্পী সংঘ। সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক রজত বন্দ্যোপাধ্যায় ডিডাব্লিউকে বলেন, "জনসাধারণের করের টাকায় এই আকাদেমিগুলি পরিচালিত হয়। ফলে তাদের সিদ্ধান্তে স্বচ্ছতা থাকা জরুরি। বাংলা সাহিত্যের কোনো লেখকের অনুপস্থিতি বিভ্রান্তির সৃষ্টি করেছে। এ বিষয়ে আমরা স্পষ্ট ভাবে জানতে চেয়েছি। পদ্ধতিগত সমস্যা, নাকি নীতিগত কারণে বাদ পড়লেন বাঙালি সাহিত্যিকেরা। বাংলার বিচারকমণ্ডলি কি কোনো নাম সুপারিশ করেছিলেন? করে থাকলে সেটা কি জনগণের সামনে আনা যায়?" আকাদেমির বিরুদ্ধে ওঠা একদেশদর্শিতার অভিযোগ সম্পর্কেও জানতে চাওয়া হয় ওই চিঠিতে।
২০২৩ এ জলের উপর পানি উপন্যাসটির জন্য সাহিত্য আকাদেমি পুরস্কার পেয়েছিলেন সাহিত্যিক স্বপ্নময় চক্রবর্তী । ডিডাব্লিউয়ের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে তিনি বলেন, "যে কোনো কারণেই হোক এবছর এই পুরস্কার নিয়ে সাধারণ মানুষ উৎসাহ হারিয়েছেন। ডিসেম্বরে তালিকা প্রকাশিত হয়নি। সে বিষয় নিয়ে কারও মাথা ব্যাথা ছিল না। জানুয়ারিতে আমি পশ্চিমবঙ্গের সাহিত্য আকাদেমির অফিসে ফোন করে জানতে চেয়েছিলাম। তারা বলেছিল, দিল্লি থেকে কিছুই জানানো হয়নি। কারো কোনো হেলদোল দেখিনি।"