৫ আগস্ট নিয়ে আওয়ামী লীগ নেতাদের ভাবনা
৫ আগস্ট ২০২৫দলটির তিন নেতা ও ছাত্রলীগের সভাপতি মনে করেন, অনুশোচনা করলে আওয়ামী লীগ ধ্বংস হয়ে যাবে না৷
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সংসদ সদস্য আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, ‘‘৫ আগস্ট ষড়যন্ত্রের দুর্ঘটনা হয়েছে৷ এটা প্রতিক্রিয়াশীল গোষ্ঠী, জঙ্গি গোষ্ঠী, ডিপ স্টেট, বিদেশিদের দালাল সবাই মিলে একটি রক্তক্ষয়ী তথাকথিত বিপ্লব করে একটি নির্বাচিত সরকারকে উৎখাত করেছে৷ একটি অবৈধ দখলদার সরকার দেশকে দখল করেছে৷ তারা দেশের মানুষের সাথে প্রতারণা করেছে৷''
তিনি বলেন, ‘‘দেশের মানুষ যে আমাদের সাথে আছে তা এক বছরের মধ্যেই প্রমাণ হচ্ছে৷ বাংলাদেশে এখন আইনের শাসন নেই৷ সংবাদ মাধ্যমের স্বাধীনতা নেই৷ তাদের গলা টিপে ধরা হয়েছে৷''
৫ আগস্টকে কেন্দ্র করে মানুষ হত্যার দায় কি আওয়ামী লীগ সরকারের নেই, এই প্রশ্নের জবাবে বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, ‘‘সব হত্যারই তো বিচার হতে হবে৷ আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদেরও তো হত্যা করা হয়েছে৷ সংখ্যালঘুদের হত্যা করা হয়েছে৷ তার দায় কে নেবে৷ বিচার করবে কে? অসাংবিধানিক ইউনূস সরকার কি বিচার করবে? তারা তো বিচার না করার উদ্যোগ নিয়েছে৷''
আওয়ামী লীগের এই নেতা বলেন, ‘‘অ্যাডভোকেট তাজুল ইসলাম যিনি একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে গণহত্যার মামলায় অভিযুক্তদের প্রধান কৌসুলী (আইনজীবী), তিনি হয়েছেন এখন শেখ হাসিনার বিচারের রাষ্ট্রপক্ষের প্রধান প্রসিকিউটর৷ শেখ হাসিনা স্বাধীনতা যুদ্ধের পক্ষ দলের প্রধান বঙ্গবন্ধু কন্যা৷ তাহলে কিসের বিচার হচ্ছে? বিচার করছে কে? যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের প্রতিশোধ নিতে এই বিচার৷''
জুলাই আন্দোলনে হত্যার দায়, অনুশোচনা ও ক্ষমা প্রার্থনা প্রসঙ্গে বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, ‘‘আমাদের দলের কার্যক্রমই তো নিষিদ্ধ৷ আমরা তো কোনো রাজনৈতিক কার্যক্রম চালাতে পারছি না৷ আমাদের নেতা-কর্মীরা কারাগারে আছে, পালিয়ে আছে৷ হাজার হাজার মামলা হয়েছে৷ আমাদের ১২৫ জন সাবেক মন্ত্রী, এমপি, নেতা কারাগারে৷ আমাদের দলের নেত্রী শেখ হাসিনাকে জোর করে, বল প্রয়োগ করে দেশের বাইরে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে৷ আমরা যখন একটি স্বাভাবিক পরিবেশ পাব, রাজনৈতিকভাবে কাজ করার সুযোগ পাব তখন আমরা গঠনতান্ত্রিকভাবে বসে কোথায় আমাদের সফলতা, কোথায় আমাদের ব্যর্থতা, কোথায় আমাদের ত্রুটি, কোথায় আমাদের ভুল সংশোধন করতে হবে সে ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেব৷ আওয়ামী লীগ দেশের মানুষের, জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল৷''
তিনি বলেন, ‘‘অনুশোচনা করলেই আওয়ামী লীগ ধ্বংস হয়ে যাবে এটা আমরা মনে করি না৷''
আওয়ামী লীগের সাবেক প্রতিমন্ত্রী এবং সংসদ সদস্য এবং দলটির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী অনুশোচনা এবং ক্ষমা চাওয়ার প্রশ্নে বলেন, ‘‘অনুশোচনা তো শুরু হয়ে গেছে ইতিমধ্যেই৷ অনুশোচনা, বেদনা দুঃখ শুরু হয়ে গেছে৷ কারণ যারা দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্বের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে প্রতারিত হয়েছে তারা এখন অনুশোচনা করছে ধীরে ধীরে৷ তারা এখন অনুতপ্ত হচ্ছে৷''
‘‘আমরা তো দেশের স্বাধীনতার ওপর আঘাত আসায় দেশকে রক্ষা করতে চেয়েছিলাম৷ দেশ তো এখন দেশবিরোধী দখলদারদের মধ্যে চলে গেছে৷ দেশ তো এখন দেশের মানুষ শাসন করছে না৷ দেশ এখন শাসন করছে বিদেশি সাম্রাজ্যবাদী শক্তিরা, সাম্প্রদায়িক শক্তি, জঙ্গিরা৷ দেশে এখন কোনো স্বাধীনতা নেই৷ গণমাধ্যমেরই স্বাধীনতা নেই৷ পাকিস্তানি শাসক গোষ্ঠীও মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে কোনো গণমাধ্যম দখল করেনি৷ কিন্তু ৫ আগস্টের মাধ্যমে গণমাধ্যম দখল হয়ে গেছে৷ যেদেশে বঙ্গবন্ধুর নাম থাকবে না, সেই দেশ বাংলাদেশ হয় কীভাবে,'' প্রশ্ন করেন খালিদ মাহমুদ চৌধুরী৷
তাহলে আপনাদের পতন কেন হলো? দেশের মানুষ যদি আপনাদের সঙ্গেই থাকে? এই প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘‘ইউনূস এবং ইউনূস বাহিনী তো নিজেই বলেছে এটা ম্যাটিকুলাসলি ডিজাইনড৷ অস্ত্রের মুখে দখল করা হয়েছে, প্রতারণা করা হয়েছে৷ কোটা সংস্কার আন্দোলনের যে আবেগ অনুভূতি সেটাকে ব্যবহার করে ব্ল্যাকমেইলিং করা হয়েছে৷''
তার দাবি, ‘‘আগে শুনতাম মগের মুল্লুক, কিন্তু বাংলাদেশ এখন মবের মুল্লুকে পরিণত হয়েছে৷ বাংলাদেশ ভালো নেই৷ অনুশোচনা শুরু হয়েছে৷''
ক্ষমা চাওয়া ও অনুশোচনা প্রসঙ্গে সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত বলেন, ‘‘গত এক বছর ধরে তারা যে হত্যা করেছে তারা কি তার জন্য অনুশোচনা করেছে? আর ওই সময়ে (৫ আগস্ট কেন্দ্রিক) যে হত্যা হয়েছে, আমরা তো সব হত্যাকাণ্ডের বিচারের কথা বলেছি৷ স্বাধীন বিচার বিভাগীয় কমিশন গঠন করেছিলাম৷ যারা আমাদের ক্ষমা চাওয়ার কথা বলছে তারা তো এক গোষ্ঠী হত্যাকারীকে দায়মুক্তি দিয়েছে৷ যারা হত্যাকারীকে দায়মুক্তি দেয়, যারা মব সন্ত্রাস করল, ঘরে ঘরে ঢুকে হত্যা করলো, তার জবাব কে দেবে?''
আপনাদের যদি জনভিত্তি থাকতো তাহলেতো দেশের মানুষ আপনাদের পক্ষে থাকত, তা তো হয়নি- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘‘এর জবাব আপনারা কয়েকদিন পরে পাবেন৷ এখানে জঙ্গি, যুদ্ধাপরাধী, সাম্প্রদায়িক শক্তিকে যুক্ত করা হয়েছে৷ সাম্রাজ্যবাদী শক্তির টাকা ঢালা হয়েছে, ম্যাটিকুলাসলি ডিজাইন করা হয়েছে৷ লাশের পর লাশ ফেলা হয়েছে৷ মানুষের মন বিষিয়ে বিষাক্ত করে, ক্ষেপিয়ে তোলা হয়েছে৷ আজকে এক বছরের মাথায় এসে দেশের বেশিরভাগ মানুষ এটা অনুধাবন করতে পেরেছে৷ তারা ফিল করে তাদের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করা হয়েছে৷''
‘‘আওয়ামী লীগ চায়নি আর মানুষ নিহত হোক৷ তাই ক্ষমতা ছেড়ে দিয়েছে৷ আওয়ামী লীগ যদি চাইতো তাহলে হত্যা করে ক্ষমতায় থাকতে পারত৷ আওয়ামী লীগ মানুষের দল৷ তাই সেটা চায়নি,'' দাবি করেন তিনি৷
আরেক প্রশ্নের জবাবে আরাফাত বলেন, ‘‘আওয়ামী লীগ জনগণের দল৷ মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বদানকারী দল৷ আওয়ামী লীগ জনগণের কাছে বারে বারে ফিরে যাবে৷ আওয়ামী লীগের যা কিছু ক্ষমা চাওয়া, অনুশোচনা সব জনগণের কাছে৷ আওয়ামী লীগ এগুলো জনগণের সাথে বোঝাপাড়া করবে৷ কোনো এনজিও থেকে ধরে আনা কিছু লোকজন ক্ষমতা দখল করেছে৷ আওয়ামী লীগ ক্ষমা যদি চায়, অনুশোচনা যদি করে, সবকিছুই আওয়ামী লীগ জনগণের সাথে করবে৷''
জুলাই-আগস্টে ছাত্রদের ওপর হামলার অভিযোগ আছে ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে৷ বিশেষ করে ১৫ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রীদের ওপর হামলা সরকার বিরোধী আন্দোলনকে নতুন মাত্রা দেয়৷ তবে ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেন সেই হামলার অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘‘বৈষম্যবিরোধীরাই আমাদের ওপর প্রথম হামলা করে৷ তার ছবি, ভিডিও ফুটেজসহ সব প্রমাণ আছে৷''
তার দাবি, ‘‘এরপর তো সরকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেয়৷ আমরা তো সরকারের সিদ্ধান্ত মেনে ক্যাম্পাস ছেড়ে চলে যাই৷''
তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‘‘কোটা তুলে দেয়ার দাবি মেনে নেয়ার পরও পরিকল্পিতভাবে জামায়াত শিবিরই নাশকতা করে৷ তারা ওই আন্দোলনে ভিতরে ঢুকে গিয়ে এসব করে৷''
সাদ্দাম হোসেন বলেন, ‘‘আমাদের সংগঠনেও শিবির নানাভাবে ঢুকে পড়েছিলো৷ কিন্তু আমরা তা বুঝতে পারিনি৷''
আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘‘অবশ্যই আমাদের কোনো ভুল ত্রুটি থাকলে আমরা সেগুলো থেকে শিক্ষা নেব৷ অতীতের ভুল থেকে আমরা শিক্ষা নেব৷ আমাদের সীমাবদ্ধতা থেকে আমরা শিক্ষা নেব৷''