৪১ বছর পর আবার মহাকাশে এক ভারতীয়
২৫ জুন ২০২৫ফ্লোরিডায় নাসার কেনেডি স্পেস সেন্টার থেকে ভারতীয় সময় ১২টা এক মিনিটে শুভ্রাংশু শুক্লাসহ চার মহাকাশচারীকে নিয়ে উড়লো স্পেসএক্সের ফ্যালকন ৯ রকেট। আগামী ২৬ জুন ভারতীয় সময় বিকেল সাড়ে চারটে নাগাদ শুভ্রাংশু শুক্লাদের নিয়ে স্পেসএক্সের রকেট পৌঁছে যাবে ইন্টারন্যাশনাল স্পেস স্টেশনে(আইএসএস)।
১৯৮৪ সালে উইং কম্যান্ডার রাকেশ শর্মা প্রথম ভারতীয় হিসাবে মহাকাশে গেছিলেন। তার ৪১ বছর পর ৩৯ বছর বয়সি গ্রুপ ক্যাপ্টেন শুভ্রাংশু শুক্লা গেলেন। তিনিই এই মহাকাশযানের পাইলট।
এই মহাকাশযানের ডিরেক্টর হলেন রেগি হুইটসন। এ ছাড়াও থাকছেন পোল্যান্ডের স্লায়োস উজ়নানস্কি-উইসনিউস্কি এবং হাঙ্গেরির টিবর কাপু।
মোট ১৪ দিনের এই অভিযানের জন্য এই চার মহাকাশযাত্রীকে দীর্ঘদিন ধরে প্রশিক্ষণ নিতে হয়েছে। শুভ্রাংশুসহ চার মহাকাশচারীকে নিভৃতবাস করতে হয়েছে। আগামী ১৪ দিন তাঁরা আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে থাকবেন। সেখানে অন্তত ৬০টি পরীক্ষা করবেন তাঁরা। তার মধ্যে সাতটি পরীক্ষা ভারতীয় গবেষকেরা ঠিক করেছেন। ক্যাপ্টেন শুক্লা মহাকাশ থেকে কোনো এক ভিআইপি-র সঙ্গে কথাও বলবেন।
শুভ্রাংশু গুপ্ত মহাকাশ থেকে পাঠানো প্রথম বার্তায় বলেছেন, ''আমার প্রিয় দেশবাসীকে নমস্কার। কী অসাধারণ যাত্রা। ৪১ বছর পর আমরা আবার মহাকাশে। প্রতি সেকেন্ডে সাড়ে সাত কিলেমিটার গতিতে পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করছি। আমার কাঁধে লাগানো তেরঙা পতাকা বলে দিচ্ছে, আমি আপনাদের প্রতিনিধি। আমার এই যাত্রা শুধু আন্তর্জাতিক মহাকাশকেন্দ্রে প্রবেশের সূচনা নয়, এটা ভারতের মানবিক মহাকাশ প্রকল্পের যাত্রার সূচনা। আপনারা সকলে এই যাত্রায় সামিল। আপনাদের বুকও নিশ্চয়ই গর্বে ফুলে উঠেছে। জয় হিন্দ, জয় ভারত।''
কে এই শুভ্রাংশু শুক্লা
শুভ্রাংশু শুক্লা হলেন ভারতীয় বিমান বাহিনীর একজন অফিসার। ১৯৮৫ সালে লখনউতে তার জন্ম। ২০০৫ সালে তিনি সামরিক প্রশিক্ষণ শেষ করেন এবং ন্যাশনাল ডিফেন্স একাদেমিতে কম্পিউটার সায়েন্স ডিগ্রি লাভ করেন।
তিনি মিগ, জাগুয়ার, হক এবং অন্যান্য যুদ্ধবিমান চালিয়েছেন। ২০২৪ সালে তিনি গ্রুপ ক্যাপ্টেন পদে উন্নীত হন।
২০১৯ সালে তিনি ইসরো থেকে ডাক পান। ২০২০ সালে তিনি রাশিয়ায় গ্যাগারিন কসমোনট প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে প্রশিক্ষণ নেন। গত ফেব্রুয়ারিতে প্রধানমন্ত্রী মোদী জানান, শুভ্রাংশু গুপ্ত গগনযান মিশনে ভারতের প্রতিনিধিত্ব করবেন।
শেষ সময়ের উদ্বেগ
বুধবারও মহাকাশযানকে নিয়ে রকেটের যাত্রার আগে কিছু প্রযুক্তিগত জটিলতা দেখা দেয়। দ্রুত তা ঠিক করে নেয়া হয়।
তারপর এই লঞ্চ কমপ্লেক্সের ৩৯এ থেকে ফ্যালকন রকেটটি যাত্রা শুরু করে। এখান থেকেও ১৯৬৯ সালে অ্যাপলো ১১ করে চাঁদে গেছিলেন নীল আর্মস্ট্রং।
বারবার পিছিয়ে যায়
এই মহাকাশযাত্রা হওয়ার কথা ছিল ২৯ মে। কিন্তু খারাপ আবহাওয়া ও প্রযুক্তিগত সমস্যার জন্য তা বারবার পিছিয়ে যায়। পাঁচবার এই যাত্রা বাতিল হয়। অবশেষে বুধবার তা মহাকাশযাত্রা করে।
যে রকেট এই মহাকাশ অভিযানে ব্যবহার করা হচ্ছে, তা ইলন মাস্কের সংস্থা স্পেস এক্সের বানানো ফ্যালকন নয় রকেট। এই রকেট ১৬ বার মহাকাশযাত্রায় ব্যবহার করা হয়েছে। প্রতিবারই তা নিরাপদে যাত্রা করেছে।
ভারত দিয়েছে ৫৫০ কোটি টাকা
এই মহাকাশযাত্রায় শুভ্রাংশু শুক্লাকে পাঠাবার জন্য ভারতকে ৫৫০ কোটি টাকা দিতে হয়েছে।
এই মহাকাশ অভিযানের নাম রাখা হয়েছে, মিশন আকাশ গঙ্গা। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ২০২৩ সালে যুক্তরাষ্ট্র সফরের সময় এই বিষয়ে চুক্তি হয়। ইসরো ও নাসার সহযোগিতায় ভারত ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে সহযোগিতার নতুন অধ্যায় শুরু হয়।
প্রধানমন্ত্রীর বার্তা
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বলেছেন, শুভ্রাংশু গুপ্তার সঙ্গে ১৪০ কোটি ভারতীয়ের শুভেচ্ছা, আশা, আকাঙ্খা রয়েছে। তার আন্তর্জাতিক মহাকাশ কেন্দ্রে যাওয়া একটা বিশাল মহাকাশ পদক্ষেপ।
মোদী বলেছেন, ভারত, হাঙ্গেরি, পোল্যান্ড ও যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশচারীদের নিয়ে এই মহাকাশ অভিযানের সাফল্যকে স্বাগত জানাই। প্রধানমন্ত্রী সব মহাকাশচারীকে অভিনন্দন জানিয়েছেন।
রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু বলেছেন, আবার প্রমাণ হলো, গোটা বিশ্ব একটা বৃহৎ পরিবার।
জিএইচ/এসজি(এপি, এএফপি, রয়টার্স)