তিনি আরো বলেন, ‘‘রাস্তা যদি না ছাড়েন, আপনাদের দাবি-দাওয়া কোথায় গেল ওইটা পরে দেখবো, আগে এখানে রাস্তা ক্লিয়ার করবো। আমার কথা পরিষ্কার। ৭ মিনিট পরে এখানে যারা থাকবেন, তারা আমার ডিরেক্ট আদেশ ভঙ্গ করছেন এবং জনভোগান্তি ক্রিয়েট করেছেন। এই পানিশেবল ক্রাইমের আন্ডারে আপনারা জেলে যাবেন। কথা পরিষ্কার বলে দিলাম। ৭ মিনিট পরে আমি ড্রোন দিয়ে যেন দেখি রাস্তা ক্লিয়ার।” সেনা কর্মকর্তার এমন আল্টিমেটামের এক মিনিটের মধ্যে শ্রমিকরা রাস্তা ছেড়ে দেন। রাস্তা তো শ্রমিকরা ছাড়লেন, কিন্তু তাদের বোনাস-ওভারটাইমের কী হবে?
ঈদ বোনাস, ২৫ ভাগ উৎপাদন বোনাস, নাইট বিল, টিফিন বিলসহ আরো কয়েকটি দাবিতে গাজীপুরের তেলিপাড়া এলাকায় ‘ইস্মোগ সোয়েটার' নামে একটি কারখানার শ্রমিকরা গত শুক্রবার ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করছিলেন। তখন সেনাবাহিনীর সদস্যরা সেখানে হাজির হয়ে এমন বক্তব্য দেন। সকাল ১০টা থেকে আন্দোলনে নেমেছিলেন শ্রমিকরা। সড়ক অবরোধের কারণে মহাসড়কের উভয় পাশে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। দুপুর পৌনে ১২টার দিকে সেনাবাহিনী ঘটনাস্থলে পৌঁছে আলোচনা করে দাবি পূরণের আশ্বাস দেয়।
হ্যান্ড মাইকে একজন সেনা কর্মকর্তা ঘোষণা করেন, "আপনাদের দাবি-দাওয়া নিয়ে নেগোসিয়েশন চলছে, চলবে। এটা নিয়ে কোনো সমস্যা নেই। ফ্যাক্টরির ভেতরে মালিক ও শ্রমিকের কোনো অমিল থাকলে সেটা নেগোসিয়েশনের মাধ্যমে সমাধান হবে। কিন্তু গতকালও শ্রম মন্ত্রণালয় থেকে বলা হয়েছে, রেসপেক্টেড আইজিপিও সংবাদ সম্মেলনে ডিরেক্ট বলে দিয়েছেন, কোনো রকম রোড ব্লক এখন থেকে গ্রাহ্য করা হবে না। রোডব্লক-জনভোগান্তি এক পানিশেবল ক্রাইম। এর জন্য আপনারা যে কেউ সাজাপ্রাপ্ত হতে পারেন।”
শ্রমিকরা বলছেন, ইস্মোগ সোয়েটার কারখানায় ১ হাজার ২ শতাধিক শ্রমিক কাজ করছেন। দীর্ঘদিন কাজ করলেও তাদের ওভারটাইম বিল, নাইট বিল, মাতৃত্বকালীন ছুটি, বাৎসরিক টাকা পান না বলে দাবি তাদের। এছাড়া তাদের প্রোডাকশন রেট সঠিকভাবে দেওয়া হয় না বলেও অভিযোগ রয়েছে। তাই মোট ১৪ দফা দাবি আদায়ের জন্য আন্দোলন করছিলেন তারা।
শ্রমিক নেত্রী বাংলাদেশ সেন্টার ফর ওয়ার্কার সলিডারিটির প্রতিষ্ঠাতা ও নির্বাহী পরিচালক কল্পনা আক্তার ডয়চে ভেলেকে বলেন, "শ্রম মন্ত্রণালয়ের বৈঠকে ২০ রমজানের মধ্যে বেতন-বোনাস পরিশোধের আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। এজন্য আমরা ২০ রমজান পর্যন্ত অপেক্ষা করছি। এর মধ্যে না হলে কঠোর আন্দোলনে যাবো। এখন যে আন্দোলন হচ্ছে, এর মধ্যে কিন্তু শুধু বেতন বোনাস না, নানা ধরনের সমস্যা আছে সেগুলো নিয়ে। যেমন, কোনো প্রতিষ্ঠান মালিক বন্ধ করে দিয়েছে, কিন্তু টাকা দিচ্ছে না, আবার সরকার যে ৪ শতাংশ বেতন বাড়াতে বলেছে, সেটাও অনেক মালিক করছেন না- এভাবে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কর্মীরা তাদের দাবিতে মাঠে নামছেন।”
এর আগে গত বুধবার বকেয়া বেতন, ঈদ বোনাসের ঘোষণা ও বকেয়া ছুটির টাকার দাবিতে আঞ্চলিক সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন খান টেক্স লিমিটেড নামের কারখানার শ্রমিকেরা। শ্রমিকদের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, অধিকাংশ শ্রমিকের দুই মাসের বেতন বকেয়া আছে। এসব বেতন পরিশোধের দাবিতে আন্দোলন চলছে।পাওনা পরিশোধের তারিখ ঘোষণ করা হলেও তা পরিশোধ করা হয়নি। এ ছাড়া শ্রমিকদের ছুটির টাকা ও নারীদের মাতৃত্বকালীন টাকাও বকেয়া আছে। শ্রমিকেরা চান পাওনা পরিশোধের সুনির্দিষ্ট তারিখ ঘোষণা করা হোক, তা না হলে কঠোর আন্দোলনে নামতে চান তারা।