হের্টা ম্যুলার স্টকহোল্মে নোবেল পুরস্কার নিলেন
১১ ডিসেম্বর ২০০৯রোমানিয়ার বানাটে নিটস্কিডর্ফে ১৯৫৩ সালে জন্ম এই মহিলার৷ অর্থাৎ রোমানিয়ার জার্মান ভাষাভাষী অংশে মানুষ হয়েছেন তিনি৷ অবশ্য রুমেনীয় ভাষাও জানতেন৷ এ-বছরই নোবেল পুরস্কার ঘোষিত হবার পর তাঁকে ফ্রাঙ্কফুর্ট বই মেলায় বলতে শোনা গেছে যে তাঁর ভাষা জার্মান হলেও, চিন্তার ছন্দগুলি সবই রুমেনীয়৷ কিন্তু হের্টা ম্যুলার নোবেল পুরস্কার পেলেন তিনি কম্যুনিস্ট শাসিত রোমানিয়ায় চরম নিপীড়ন এবং রাজনৈতিক ত্রাসকে তুলে ধরেছেন বলে৷ অপরদিকে তাঁর লেখার উপজীব্য হল তাঁর আত্মকাহিনী, যেমন তাঁর প্রখ্যাততম উপন্যাস ‘‘আটেমশাউকেল’’ বা ‘নিঃশ্বাসের দোলনা’ হল তাঁর মা’কে নিয়ে, যাঁকে অন্যান্য বহু রুমেনীয়-জার্মানদের মতো ১৯৪৫ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নে বিতাড়ন করা হয়৷ ম্যুলার স্বয়ং বৃহস্পতিবার জার্মান টেলিভিশনের একটি সাক্ষাৎকারে বলেছেন: ‘‘আমি এ্যাতো দুঃখকষ্ট দেখেছি, দেখেছি কতো মানুষকে কিভাবে ভেঙে দেওয়া হয়েছে৷ আমি দেখেছি ঐ সরকার কিভাবে মানুষদের অবজ্ঞা করেছে৷ এবং ঐ জিরোগুলো, ঐ ফুলে ওঠা, পালিশ করা শূন্যগুলো, ঐ কম্যুনিস্ট কর্মকর্তারা, কি ঘৃণ্য জীবই ছিল তারা৷’’
সলঝেনিটসিনের পরে ম্যুলার?
হের্টা ম্যুলারের নোবেল পুরস্কার প্রাপ্তিতে খোদ জার্মানিতেই কিছু কিছু মহলে আজও অস্বস্তি পরিলক্ষিত হচ্ছে৷ যেমন ওল্ডেনবুর্গের ‘‘নর্ডভেস্ট-সাইতুং’’ লিখেছে: হের্টা ম্যুলার সারা জীবন ধরে বস্তুত একটিই বই লিখে চলেছেন৷ এটাকে তাঁর ম্যানিয়া বলা যায়, অথবা তাঁর ব্যক্তিগত সমস্যা সমাধানের চরম পদ্ধতি বলা চলে, আবার এ-ধরণের সাহিত্যের সর্বোচ্চ পর্যায়ও বলা চলে৷ - এর জবাব এসেছে ‘‘ভেস্টফালেন-ব্লাট’’ পত্রিকা থেকে৷ তার সম্পাদকীয় স্মরণ করিয়ে দিয়েছে হের্টা ম্যুলার কিভাবে বরফে জমে যাওয়া আলুর খোসা এবং ক্ষুধার দেবদূতের মধ্য দিয়ে তাঁর ‘‘আটেমশাউকেল’’ উপন্যাসে অদৃশ্যকে দৃশ্য করেছেন৷ বানাটের সোয়াবেনদের এক মেয়ে, যাঁর বাবা ছিলেন কুখ্যাত নাৎসি এস-এস গোষ্ঠীর এক প্রাক্তন সদস্য - এক মহিলা, যিনি ১৯৪৫ সালের পর রুমেনীয়-জার্মান হিসেবে ইউরোপের ভুল অংশে জন্মগ্রহণ করেন - যাঁর লেখার মূল বিষয় হল স্ট্যালিনের মৃত্যুশিবির - তেমন এক মহিলার নোবেল পুরস্কার পাওয়াটাকে একমাত্র আলেক্সান্ডার সলঝেনিটসিনের নোবেল পুরস্কার পাবার সাথে তুলনা করা চলে৷
হের্টা ম্যুলারকে বাঁমঘেষা বুদ্ধিজীবীরা কি বললেন, অথবা অপরদিকে রক্ষণশীল মহল তাঁকে তাদের জোয়ান অফ আর্ক করতে চাইল কিনা, তার উপর এই সম্পূর্ণ স্বনির্ভর এবং স্বয়ংসংহত শিল্পীর অর্থ কিংবা তাৎপর্য, দুটোর কোনোটাই নির্ভর করবে না - সেটাই বোধহয় সৌভাগ্য৷
প্রতিবেদক: অরুণ শঙ্কর চৌধুরী, সম্পাদনা: হোসাইন আব্দুল হাই