হেফাজতে মৃত্যু নিয়ে তোপের মুখে শ্রীলঙ্কা পুলিশ
১৫ এপ্রিল ২০২৫শ্রীলঙ্কার পূর্বাঞ্চলীয় জেলা বাদুল্লার বাসিন্দা ২৫ বছরের সাথসারা নিমেশ রাজধানী কলম্বোতে কেয়ারগিভারের ট্রেনিং প্রোগ্রামে অংশ নিয়েছিলেন৷ এক ব্যক্তির বাড়িতে বিনা অনুমতিতে প্রবেশের অভিযোগে ১ এপ্রিল তাকে আটক করে পুলিশ৷ আটক করে কলম্বোর ওয়েলিকাদা থানায় নিয়ে যাওয়ার পর তাকে মানসিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে পাঠানো হয়৷ এর একদিন পর তিনি মারা যান৷
নিমেশের মা সামান্থিকে পুলিশ জানায়, তার ছেলে আত্মহত্যার চেষ্টা করছিল৷ নিমেশ মানসিকভাবে অসুস্থ ছিল বলেও দাবি করে পুলিশ৷
তবে নিমেশের মা সামান্থির দাবি, থানায় নিয়ে তার ছেলেকে মারধর করা হয়েছে৷ বিষয়টি গোপন করতেই তার ছেলেকে মানসিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে পাঠানো হয়েছিল বলে অভিযোগ তার৷
ডিডাব্লিউকে সামান্থি বলেন, ‘‘আমি সত্যিই মনে করি যে, পুলিশ মিথ্যা বলছে৷'' তিনি বলেন, তার ছেলের সারা শরীরে আঘাত, আচড় এবং ক্ষতের চিহ্ন ছিল৷ তার মতে, পুলিশ এবং যে বাড়িতে সে প্রবেশ করেছিল বলে অভিযোগ, সেই বাড়িওয়ালা তাকে আঘাত করে থাকতে পারে৷
দক্ষিণ এশিয়ার এই দ্বীপ রাষ্ট্রটিতে পুলিশের হেফাজতে থাকা অবস্থায় আজানা কারণে নিহতের ঘটনা এটিই প্রথম নয়৷ দেশটির হিউম্যান রাইটস কমিশন জানিয়েছে, জানুয়ারি ২০২০ থেকে আগস্ট ২০২৩ সময়ের মধ্যে হেফাজতে থাকা অবস্থায় ২৪ জন এবং পুলিশের এনকাউন্টারে ১৩ জন নিহত হয়েছেন৷
উল্লেখ্য, নিমেশের নিহতের কারণ নিয়ে সন্দেহ থাকায় পুনরায় ময়নাতদন্তের আবেদন জানায় তার পরিবার৷ পরিবারের আবেদন মঞ্জুর করেছে কর্তৃপক্ষ৷
‘আমাদের পেশাদার পুলিশ নেই'
নিমেশের পরিবারের আইনজীবী সেনেকা পেরেরা ডিডাব্লিউকে বলেন, গত জানুয়ারি থেকে নিমেশের মামলাসহ মোট চারটি হেফাজতে মৃত্যুর ঘটনায় আইনি পরামর্শের কাজ করছেন তিনি৷
এই আইনজীবীর দাবি, ওয়েলিকাদা থানা দুই বছর আগে এক গৃহকর্মী নিহতের ঘটনায় জড়িত ছিল৷ ২০২৩ সালে পুলিশ হেফাজতে ৪১ বছরের রাজকুমারী নিহতের ঘটনার পর এই থানার পুলিশ কর্মর্তাকে বদলি করা হয়েছিল৷
পেরেরা বলেন, ‘‘একই ঘটনা বারবার ঘটে চলেছে৷ আমাদের আসলে পেশাদার পুলিশ নেই৷''
এ বিষয়ে পুলিশের মুখপাত্র ফ্রেডেরিক উদয়কুমারা বলেন, নিমেশের নিহতের ঘটনার পর এক পুলিশ কর্মকর্তাকে বদলি করা হয়েছে, এবং দুইজনকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে৷ তিনি বলেন, ‘‘কোনো কর্মকর্তা যদি এই ঘটনায় জড়িত থাকেন তাহলে আমরা তাকে ছাড় দেব না৷''
পুলিশের নিষ্ঠুরতা
বেশ কয়েক বছর ধরেই শ্রীলঙ্কায় আটক ব্যক্তিদের সাথে পুলিশের নিষ্ঠুর আচরণের অভিযোগ উঠে আসছে৷ ২০১৫ সালে দেশটির হিউম্যান রাইটস ওয়াচ অভিযোগ করে যে, হেফাজতে থাকা ব্যক্তিদের নির্যাতনে প্রায়ই পুলিশ কর্মকর্তারা জড়িত থাকেন৷
শ্রীলঙ্কার বার এসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট রাজীব আমাসুরিয়া ডিডাব্লিউকে বলেন, কয়েক দশক ধরেই পুলিশের নিষ্ঠুরতা একটি নিয়মিত সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে৷ এসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে পুলিশকে অধিকার এবং স্বাধীনতার বিষয়ে প্রশিক্ষণ দিতে তাদের সাথে যোগাযোগ করা হয়েছে৷
জিভান রাবিন্দ্রান/আরআর