হাওড়ায় ভাগাড়ে ধস, বাড়ি ভাঙলো, রাস্তায় ফাটল, বিপন্ন মানুষ
হাওড়ার ভাগাড়ে আবর্জনার চাপে ধস নেমেছে। বাড়ি ভেঙে গেছে। রাস্তায় ফাটল। এলাকায় মিথেন গ্যাসের আতঙ্ক।
কী হয়েছে?
হাওড়ার বেলগাছিয়া ভাগাড়ে জঞ্জালের প্রবল চাপে এলাকায় ধস নেমেছে। ভাগাড়ের পিছনে প্রায় ১৫ হাজার মানুষ বসবাস করেন। সেখানে প্রচুর বাড়ি ভেঙেছে। রাস্তায় বড় ফাটল দেখা দিয়েছে। অনেক বাড়িতে বড় বড় ফাটল দেখা দিয়েছে। জলের পাইপ ভেঙেছে। ফলে বিশাল এলাকায় জল সরবরাহ ঠিকভাবে হচ্ছে না।
গ্রিন ট্রাইবুন্যালের সতর্কতা সত্ত্বেও
ন্যাশনাল গ্রিন ট্রাইবুন্যাল(এনজিটি) এর আগে হাওড়ার পুর কর্তৃপক্ষ রাজ্য প্রশাসনকে আবর্জনা ফেলা নিয়ে সতর্ক করেছিল। বেলগাছিয়ার মাঠে যে পরিমাণ আবর্জনা থাকতে পারে, তার সীমা আগেই পার হয়ে গে্ছে। গতবছর অক্টোবরে পুর কমিশনারকে এই নিয়ে এনজিটি ভর্ৎসনা করেছিল। টাইমস অফ ইন্ডিয়ার রিপোর্ট বলছে, জেলাশাসক হলফনামা দিয়ে বলেছিলেন, তারা বিকল্প জায়গার সন্ধান করছেন। নগরোন্নয়ন দপ্তরকে হস্তক্ষেপ করতে বলেছিল এনজিটি।
আবর্জনার পাহাড়
হাওড়ার বেলগাছিয়ার ভাগাড়ে ১০ থেকে ১৫তলা উচ্চতার জঞ্জালের পাহাড় জমে আছে। যেহেতু এই এলাকার ধারণ-ক্ষমতার অনেক বেশি আবর্জনা জমা হয়েছে, তার চাপে ধস নেমেছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
বাড়ি ভেঙেছে
এই ধসের কারণে অনেকগুলি বাড়ি ভেঙে পড়েছে। উপরে এমনই একটি ভাঙা বাড়ির ছবি। ভাগাড়ের পাশের এলাকায় ১৫ হাজার মানুষের বসবাস। তাদের মধ্যে আতঙ্ক চরমে।
বাড়িতে ফাটল
প্রচুর বাড়িতে বড় বড় ফাটল দেখা দিয়েছে। যে কোনো সময়ে বাড়ি ভেঙে পড়তে পারে্। এরকম ফাটল ধরা বাড়ির সামনে মানুষ বসে আছেন। সরকারি প্রশাসন ও পুর কর্তৃপক্ষ এখনো তাদের বিকল্প স্থানে নিয়ে যায়নি।
রাস্তায় ফাটল
বৃহস্পতিবার থেকেই ভাগাড়ের আবর্জনার পাহাড়ে আড়াআড়িভাবে ফাটল ধরতে শুরু করে। শুরু হয় ধস। ভাগাড় সংলগ্ন অঞ্চলে রাস্তার ফাটল এক ইঞ্চি থেকে বেড়ে ১০-১২ ইঞ্চি হয়ে যায়। অনেক জায়গায় রাস্তা উপরে উঠে গেছে। এলাকার বাসিন্দাদের প্রবল ক্ষোভ সামলাতে পুলিশ মোতায়েন করা হয়।
সংকটে মানুষ
জঞ্জালের স্তূপে ধসের কারণে উত্তর হাওড়া, শিবপুর ও মধ্য হাওড়ার একাংশে পানীয় জল সরবরাহকারী প্রধান পাইপলাইন ফেটে যায়। কংক্রিটের রাস্তা ভেঙে পড়ে। সদ্য তৈরি নিকাশি নালাতেও ভাঙন ধরে। জলের সমস্যা মেটানোর জন্য বেনারস রোডের বেলগাছিয়া মোড় পর্যন্ত এসে কাজ বন্ধ হয়ে থাকা একটি পাইপলাইন বসাতে শুরু করে পুরসভা ও কেএমডিএ।
প্রশাসনের আশ্বাস
প্রশাসনের তরফে জানানো হয়, অভিজ্ঞ বিজ্ঞানী ও সিনিয়র ইঞ্জিনিয়ারদের নিয়ে এলাকা ঘুরে দেখা হয়েছে। রাস্তাঘাট সংস্কার, নিকাশি ব্যবস্থা , বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিয়ে রিপোর্ট হাওড়ার জেলাশাসককে দেওয়া হয়েছে। পুর কমিশনার জানান, ইতিমধ্যেই বিদ্যুৎ সংযোগ স্থাপনের কাজ শুরু হয়েছে। বেলগাছিয়া আন্ডারগ্রাউন্ড রিজার্ভার থেকে পাইপ লাইনের মাধ্যমে জল সরবরাহ স্বাভাবিক করার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। দ্রুত সেই কাজ করা হবে।
দিশেহারা মানুষ
ধসের কারণে বহু বাড়িতে ফাটল দেখা যায়। ভেঙে পড়ে একাধিক বাড়ি। খাবার, জল, আশ্রয় হারিয়ে এখন দিশেহারা স্থানীয় মানুষ। প্রশাসনের তরফ থেকে তাদের নিরাপদ জায়গায় সরে যেতে বলা হয়েছে। অনেকেই প্রশাসনের নির্দেশে তাদের জিনিসপত্র নিয়ে সরে যাচ্ছেন। বেশ কয়েকটি বিদ্যুতের খুঁটির মাটি আলগা হয়ে যাওয়ার জন্য বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্নও করা হয়।
মিথেন আতঙ্ক ছড়াচ্ছে
এলাকায় মিথেন গ্যাসের আতঙ্ক ছড়াচ্ছে। অনেক স্থানীয় মানুষ সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন, তারা গ্যাসের তীব্র গন্ধ পাচ্ছেন। তাদের আশঙ্কা এটা মিথেন গ্যাসের গন্ধ হতে পারে। রাস্তাতেই দিনযাপন করছেন বহু বাসিন্দা। ঘটনাস্থল পরিদর্শনে যান রাজ্যের বিপর্যয় মোকাবিলা দল। কোন পথে সুরাহা হবে, সেটা খতিয়ে দেখছেন তারা।
পুরমন্ত্রীর আশ্বাস
ভাগাড়ের পরিস্থিতি দেখার পর রোববার বৈঠক ডাকেন জেলাশাসক দিপপ্রিয়া পি। তিনি জানান, গোটা এলাকার মাটি পরীক্ষার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। সোমবার ভাগাড়ের অবস্থা দেখতে যান মেয়র তথা পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। বিক্ষোভের মুখে পড়ে তিনি এলাকা ঘুরে দেখতে পারেননি। আগামী দুই-তিন বছরের মধ্যে ওই জায়গার সমস্ত বর্জ্য সরিয়ে ফেলার আশ্বাস দিয়েছেন ফিরহাদ। ক্ষতিগ্রস্তদের অন্য জায়গায় বাড়ি করে দেয়া হবে বলে তিনি জানান।
বিরোধী নেতা যা বললেন
পুরমন্ত্রীর পরেই বেলগাছিয়া ভাগাড়ে যান বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। তিনি অভিযোগ করেন, পুলিশ তাকে বাধা দেয়। তিনি ক্ষতিগ্রস্তদের ত্রিপল ও খাবার দেন। তিনি জানান, প্রশাসন মানুষের জন্য জল, বিদ্যুতের ব্যবস্থা করতে পারছে না। পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত প্রতিদিন কুড়ি লিটার পানীয় জলের ব্যবস্থা করবেন বলে আশ্বাস দেন শুভেন্দু।
স্থানীয় মানুষের বক্তব্য
এলাকার বাসিন্দা মহেশ সাউ বলেন, 'আমি লোডিং এর কাজ করি। আজ পাঁচদিন ধরে এই অবস্থা। দুই দিন জলের ব্যবস্থা ছিল, সোমবার তাও নেই। এটা বুধবার থেকে হয়েছে। ক্লাব থেকে খাবার দেওয়া হয়েছিল। রাস্তা, ঘর নষ্ট হয়ে গিয়েছে। মাথার ওপর যেমন ছাদ ছিল সরকারের কাছে অনুরোধ তার ব্যবস্থা করে দিক।'
'কখনো খাবার পাচ্ছি, কখনো পাচ্ছি না'
বাসিন্দা গৌরী দেবী বলেন, 'যাদের ঘর নেই তাদের আশ্রয় দেওয়া হচ্ছে না। যাদের আছে তাদের দেওয়া হচ্ছে। কেউ নেই দেখার। ক্লাব থেকে কখনো খাবার পাচ্ছি, কখনও পাচ্ছিনা। শিশুরা খাবার পাচ্ছে না। কী করবো বুঝে উঠতে পারছি না।'
কোথায় যাব, প্রশ্ন গায়েত্রীর
এখানকার বাসিন্দা গায়েত্রী দাস বলেন, 'ঘর ভেঙে গিয়েছে। বাচ্চাদের নিয়ে কোথায় যাব? ক্লাব থেকে কখনো খাবার দেওয়া হচ্ছে, কখনো হচ্ছে না। মুখ দেখে সাহায্য দেওয়া হচ্ছে। মুখ্যমন্ত্রী একবার এসে দেখুন কী অবস্থায় আমরা আছি।'