হংকংয়ে কার্যত বন্ধ জুলাই গণতন্ত্রের মিছিল
১ জুলাই ২০২৫গত প্রায় ১০ বছর ১ জুলাই দিনটিকে প্রতিবাদের দিন হিসেবে পালন করেছেন হংকংয়ের গণতন্ত্রপন্থিরা। চীনের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে পথে নেমেছেন হাজার হাজার গণতন্ত্রপন্থি মানুষ। কিন্তু ২০২০ সালের পর থেকে চীনের আগ্রাসী নীতির সামনে এই আন্দোলন ক্রমশ স্তিমিত হতে শুরু করে। এবছর প্রতিবাদ প্রায় নেই বললেই চলে। কড়া নজরদারিতে কিছু জায়গায় পালিত হচ্ছে গণতন্ত্র দিবস। অভিযোগ, কোনো কোনো জায়গায় আগেই এই অনুষ্ঠান রেকর্ড করে রাখা হয়েছে।
১৯৯৭ সালের ১ জুলাই হংকংয়ে যুক্তরাজ্যের শাসন শেষ হয়। হংকং চীনের অংশ হয়। সে সময় যে চুক্তি হয়েছিল, তাতে বলা হয়, চীনে অন্তর্ভুক্তি হলেও হংকংয়ের হাতে স্বায়ত্ত্বশাসনের যথেষ্ট ক্ষমতা থাকবে। এক দেশ, দুই তন্ত্র-- এই নিয়মে হংকং চালিত হবে বলে সে সময় স্থির হয়েছিল। এবং সে কারণেই ১ জুলাই দিনটিকে গণতন্ত্রের দিন হিসেবে পালন করতে শুরু করেন হংকংবাসী। কিন্তু পরবর্তীকালে নীতি বদল করে চীন। 'এক চীন' নীতি কায়েম করার চেষ্টা হয় হংকংয়ের উপর।
২০২০ সালের গরমকালে হংকংয়ে জাতীয় নিরাপত্তা আইন জারি করে চীন। এই আইন প্রয়োগ করে হংকংয়ে সমস্ত প্রতিবাদ সমাবেশের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। গণতন্ত্রের পক্ষে রাস্তায় নেমে যারা আন্দোলন করছিলেন, তাদের জেলে ঢোকানো হয়। ২০২৪ সালে আর্টিকাল ২৩ রদ করে চীন আরো কড়া পদক্ষেপের সিদ্ধান্ত নেয়। এর ফলে পুলিশের ক্ষমতা আরো বৃদ্ধি পায়। জনচক্ষুর আড়ালে বিচারের ব্যবস্থা তৈরি হয়। দেশদ্রোহের আইন আরো শক্ত হয়।
এই পরিস্থিতিতে আন্দোলনের রাস্তা থেকে কার্যত সরে এসেছে হংকং। এবছর গণতন্ত্র দিবস প্রায় কোথাও পালিত হচ্ছে না। কিছু জায়গায় প্রতীকী উৎসব পালনের ব্যবস্থা করে দিয়েছে রাষ্ট্র।
হংকংয়ের চিফ এক্সিকিউটিভ জন লি জানিয়েছেন, ''এখন হংকংয়ে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে এসেছে।'' তার মতে, এখন প্রতিবাদের সমস্ত রাস্তা বন্ধ হয়ে গেছে। লি মনে করেন, এর ফলে হংকংয়ে স্থিতিশীলতা ফিরে এসেছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হংকংয়ের এক বাসিন্দা ডিডাব্লিউকে জানিয়েছেন, ''একটা সময় ছিল যখন আমরা বিশ্বাস করতাম সরকারের কাছে পরিবর্তনের আর্জি জানানো যায়। আমরা মিছিল করতাম, প্রতিবাদ করতাম। এখন সেই দিনগুলোকে সোনালি দিন মনে হয়। ২০২০ সালের পর থেকে মিছিলে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছি। এখন যা অনুষ্ঠান হয়, তা প্রতীকী।''
বস্তুত, যে সংগঠনগুলি সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে সরব হতো, তারাও একে একে সংগঠন বন্ধ করে দিয়েছে। শেষ যে সংগঠনটি অবশিষ্ট ছিল, তার নাম দ্য লিগ অফ সোশ্যাল ডেমোক্র্যাটস। ৩০ জুন এই সংগঠনটিও বন্ধ হয়ে গেছে। সংগঠনের প্রধান চ্যান পো-ইং জানিয়েছেন, ''সদস্যদের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করেই এই করুণ সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছেন তারা।''
বস্তুত, পরিবর্তন এবং গণতন্ত্রের দাবিতে আন্দোলন করতে গিয়ে হংকং বন্দি হয়েছেন দশ হাজার ২০০ মানুষ। এর মধ্যে ৩০০ জনের বিচার চলছে জাতীয় নিরাপত্তার মামলায়। প্রতিবাদ করলেই গ্রেপ্তার করছে পুলিশ। সে কারণেই এই সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হচ্ছে প্রতিবাদী সংগঠনগুলি।
একদল ছাত্র ডিডাব্লিউকে জানিয়েছে, কয়েকদিন আগে তাদের একটি স্টেডিয়ামে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। সেখানে তাদের একটি অনুষ্ঠানে যোগ দিতে বলা হয়। পরে তারা জানতে পারে, ওই অনুষ্ঠানটি ১ জুলাইয়ের জন্য আগে থেকে রেকর্ড করা হচ্ছে।
এস রিপ্লে/এসজি