স্পেনের বন-বাঁচানো বুনো ঘোড়াদের বাঁচাবে কে?
স্পেনের গালিসিয়া অঞ্চলের বনজঙ্গলকে দাবানল থেকে বাঁচাতো এই বুনোঘোড়াগুলি৷ কিন্তু তারাও এখন ঝুঁকিতে৷ বিস্তারিত ছবিঘরে...
দাবানল ও বুনোঘোড়া
স্পেনের এই গ্রামে প্রতি গ্রীষ্মেই ফিরে আসে দাবানলের ঝুঁকি৷ কিন্তু ২০১৯ সাল থেকে লুসিয়া পেরেজ তার বুনোঘোড়াদের এখানে চড়ানো শুরু করার পর থেকে তা লক্ষণীয়ভাবে কমেছে৷ এই ঘোড়াদের খুরের ঘষার ফলে ও ঘোড়াগুলি তাদের প্রিয় হলদে ফুলের গাছ খেয়ে ফেলার ফলে দাবানল ছড়াতে সহায়ক এমন গাছ কমে যায়৷ অন্য প্রাণীদের তুলনায় বুনোঘোড়াদের শারীরিক গঠন এখানকার পরিবেশের সাথে ভালো করে মানিয়ে নিতে পারে৷
মানুষ ও ঘোড়ার সম্পর্ক যেমন
সময়ের সাথে সাথে স্থানীয় মানুষ এই বুনোঘোড়াদের ওপর দখল ফলাতে শুরু করেছে৷ প্রতি বছর ‘রাপা দে বেস্তাস’ উৎসবে এই বুনোঘোড়াদের অজ্ঞান করে টীকা দেওয়া হয়, কোনো ঘা বা আঘাতের চিকিৎসাও করা হয় সেই সময়৷ তাদের চুল এমনভাবে কেটে দেওয়া হয়, যাতে তারা নেকড়েদের নজরে না পড়ে৷ স্পেনের এই অঞ্চলে এমন প্রায় দশ হাজার বুনোঘোড়া রয়েছে৷
খরচসাপেক্ষ ও লাভহীন পেশা
কিন্তু বুনোঘোড়াদের দেখভাল করা বেশ খরচসাপেক্ষ৷ প্রতিটি ঘোড়ার বাচ্চা বিক্রি করলে ৬০ ইউরোর মতো পাওয়া যায়, কিন্তু বুনোঘোড়ার ঠিকঠাক ভরনপোষণ করতেই লাগে একশ ইউরোর কাছাকাছি৷ সরকারের তরফে এই শ্রেণির বুনোঘোড়াদের সাংস্কৃতিক মর্যাদা দেওয়া হলেও নতুন আইন প্রণয়ণে বা আরো লগ্নি করতে আগ্রহী নয় তারা৷ ফলে স্থানীয়দের ক্ষোভ থেকেই গেছে৷
ঘোড়া যেভাবে সরকারের টাকা বাঁচাচ্ছে
এই প্রজাতির বুনোঘোড়ার সংখ্যা আরো নিয়ন্ত্রিতভাবে বাড়ালে তা সরকারের জন্য লাভজনক হতে পারে বলে মনে করেন আলকালা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতিবিদ মেলিনা বারিও৷ তার মতে, যে দাবানল নিয়ন্ত্রণে আনতে সরকারের খরচ হয় আট থেকে দশ হাজার ইউরো, এই মাত্রার দাবানল আটকাতে পারে এমন এক একটি বুনোঘোড়া৷ কিন্তু সরকারের মতে, যত ঘোড়া আছে, তাদের পর্যটন ও অন্যান্য খাতে ব্যবহার করেও ঘোড়ার মালিকদের লাভের পরিমাণ বাড়ানো সম্ভব৷
কেন এখনো এই বুনোঘোড়াদের দেখভাল করছে মানুষ
আগে সপ্তাহে একবার ঘোড়াদের দেখতে যেতেন নিকো ও লুসিয়া৷ এখন তাদের প্রতিদিনই যেতে হয় কারণ ঘোড়াদের জীবন নিরাপদ নয়৷ নিয়মিত দেখাশোনা না করলে ঘোড়াগুলি অধৈর্য্য হয়ে পড়ে ও পালিয়ে গেলের গাড়িচাপা পড়ে যায়৷ কখনো কখনো এই ঘোড়াগুলি ভুল করে পাশের কোনো ক্ষেতে চলে গেলে ক্ষেতের মালিকরা এসে ঘোড়াদের ওপর হামলা করে৷ তাদের মতে, এই ঘোড়াগুরি প্রকৃতির রত্ন, তাই লাভজনক না হলেও তাদের দেখাশোনা করাটা নিকো ও লুসিয়ার নৈতিক কর্তব্য৷
ইতিহাসে মোড়া ঐতিহ্যের ভবিষ্যৎ
পনেরোশ শতাব্দী থেকে স্পেনের গালিসিয়া অঞ্চলে চলে আসছে বুনোঘোড়াদের বার্ষিক চিকিৎসা ও শুশ্রূষার এই রীতি৷ কিছু কিছু এলাকায় এটি পরিণত হয়েছে বার্ষিক পর্যটন উৎসবেও৷ কিন্তু সরকার ও স্থানীয়দের মধ্যে দ্বিমত থাকায় এই ঐতিহ্য এখন প্রশ্নের মুখে৷ জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বিশ্বের বহু এলাকার সাথে সাথে স্পেনেও বাড়ছে দাবানলের ঝুঁকি৷ এই পরিস্থিতিতে বন-বাঁচানো বুনোঘোড়াদের গুরুত্ব অনেকটাই৷
এসএস/এসিবি (রয়টার্স)