সোমালিয়ার দুর্ভিক্ষ সারা বিশ্বের নজর কেড়েছে : নিবেল
১৭ আগস্ট ২০১১গত সোমবার জার্মান উন্নয়ন মন্ত্রী ডির্ক নিবেল সাক্ষাৎ করেন কেনিয়ার প্রেসিডেন্ট মোয়াই কিবাকির সঙ্গে৷ সেই সাক্ষাতে কেনিয়ার সরকারের অনেক কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন৷ প্রেসিডেন্টের সঙ্গে আলোচনা পর্বের পর মন্ত্রী ডির্ক নিবেল সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে একটি কথাই বলেন৷ তাঁর কথায়, ‘‘সোমালিয়ায় দুর্ভিক্ষের কারণে জার্মান সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে আরো নিবিড়ভাবে সোমালিয়ার সঙ্গে কাজ করতে, সাহায্য এবং সহযোগিতা বাড়াতে৷''
কেনিয়ার প্রেসিডেন্ট কিবাকির সঙ্গে আলোচনা না হওয়া পর্যন্ত ডির্ক নিবেলকে অপেক্ষা করতে হয়েছিল এই বক্তব্যের জন্য৷ জার্মানি সোমালিয়ায় দুর্ভিক্ষ পীড়িতদের সাহায্য করছে ঠিকই, কিন্তু তা যথেষ্ট নয় বলে বিরোধী দল এবং বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থার পক্ষ থেকে সমালোচনা শোনা গেছে৷ সাহায্য সংস্থাগুলো দাবি জানিয়েছে, জার্মান সরকারের উচিত সোমালিয়ায় দুর্ভিক্ষ পীড়িতদের জন্য আরো বেশি করে অর্থ ব্যয় করা৷ অন্ততপক্ষে ব্রিটেন, অ্যামেরিকা এবং নেদারল্যান্ডস যে বিশাল পরিমাণ সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে তার কাছাকাছি আসা৷
কেনিয়া সফরের আগেই জাতিসংঘ এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের অন্যান্য সদস্য দেশগুলোর সঙ্গেও কথা বলেছেন ডির্ক নিবেল৷ তখনই তাঁর কাছে বেশ পরিষ্কার হয়েছে, যে এখনো সোমালিয়ায় প্রায় দশ লক্ষ মানুষ কষ্টে ভুগছে৷ এসব মানুষ তিনবেলা খেতে পারছে না৷ এ প্রসঙ্গে ডির্ক নিবেল বলেন, ‘‘সোমালিয়ায় দুর্ভিক্ষ পীড়িতদের সাহায্য করতেই জার্মানির সহযোগিতা এ উন্নয়ন মন্ত্রণালয় সাহায্য হিসেবে ১১৮ মিলিয়ন ইউরো খরচ করতে প্রস্তুত৷ এই অর্থ দিয়ে স্বল্প, মাঝারি এবং দীর্ঘমেয়াদী বিভিন্ন উন্নয়নমূলক পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হবে৷''
আর এই বক্তব্যই কাজ করেছে চমক হিসেবে৷ ১১৮ মিলিয়ন ইউরো৷ এর মধ্যে জার্মানি ১৫০ মিলিয়নের বেশি ইউরো দিয়ে সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দিল৷ অন্ততপক্ষে সামালোচকরা এত বিশাল পরিমাণ অঙ্কের টাকা আশা করেনি৷ তবে ডির্ক নিবেল বেশ স্বাভাবিকভাবেই বলেছেন, এই অর্থের প্রয়োজন হবে৷ সোমালিয়ায় দুর্ভিক্ষ পীড়িতদের জরুরি ভিত্তিতে প্রয়োজন খাবারের৷ শুধুমাত্র বেঁচে থাকার জন্য প্রয়োজন খাদ্যের৷ কেনিয়ার দাদাবে যে শরণার্থী শিবির রয়েছে সেখানেই আশ্রয় নিয়েছে প্রায় সাড়ে চার লক্ষ মানুষ৷ এরা সবাই সোমালিয়া থেকে এসেছে৷ বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচী ইতিমধ্যেই এসব অভুক্ত মানুষের মুখে খাবার তুলে দিয়েছে, কিন্তু তা যথেষ্ট নয়৷ আরো সাহায্য চাই, আরো খাবার চাই৷ এছাড়া এই শিবিরের আশেপাশে আশ্রয় নিয়েছে আরো কয়েক হাজার ক্ষুধার্ত মানুষ, যাদের শরণার্থী হিসেবে নথিভুক্ত করা হয়নি৷ কেনিয়াকে জার্মান সরকার প্রায় ৫০ মিলিয়ন ইউরো দিয়ে সাহায্য করছে৷ এর কিছু অংশ ব্যয় করা হচ্ছে সোমলিয়ার শরণার্থী এবং দুর্ভিক্ষ পীড়িতদের পেছনে৷ তবে বেশির টাকা খরচ করতে কেনিয়ার সরকার নারাজ তাহলে হয়তো হিতে বিপরীত হবে৷ কেনিয়ার মানুষ ক্ষিপ্ত হয়ে উঠবে সোমালিয়ার আশ্রয়গ্রহণকারীদের ওপর৷
মন্ত্রী ডির্ক নিবেল যে অর্থের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, তা দিয়ে ইথিওপিয়াকেও সাহায্য করা হবে৷ সেখানে আশ্রয় গ্রহণ করেছে সোমালিয়া থেকে আগত অসংখ্য মানুষ৷ তবে ইথিওপিয়া এবং সোমালিয়া ছাড়াও বেশ কিছু দেশে খরা দেখা দিয়েছে এবছর৷ সেই দেশগুলোকেও সাহায্যের কথা ভাবা হচ্ছে৷ দেশগুলোর মধ্যে ইয়েমেন, জিবুতি এবং উগান্ডা উল্লেখযোগ্য৷
প্রতিবেদন: মারিনা জোয়ারদার
সম্পাদনা: সঞ্জীব বর্মন