সোমালিয়ার ছ'টি এলাকা এখন দুর্ভিক্ষাবস্থা
৬ সেপ্টেম্বর ২০১১ক্ষুধার্ত মানুষরা শুধু মৃত্যুর দিন গুনছে, জানিয়েছেন এমন একজন যিনি পাঁচ সন্তানের জনক এবং তাদেরই একজনকে হারিয়েছেন তিনি বুভুক্ষার করাল গ্রাসে৷ নোর আনশুর সোমালিয়ার বে অঞ্চলের বাসিন্দা৷ এক সময় এই এলাকা সোমালিয়ার শস্যাগার বলে বিবেচিত হত৷ আর এখন জাতিসংঘ এটাকে ছয় নম্বর দুর্ভিক্ষপীড়িত অঞ্চল বলে ঘোষণা করেছে সোমবার৷ নোর আনশুর নিজে দেখছেন কীভাবে প্রতিদিন তাঁর প্রতিবেশীদের শিশু সন্তানরা, বৃদ্ধবৃদ্ধারা খেতে না পেয়ে মারা যাচ্ছে৷
হাজার হাজার সোমালির মত আনশুরও তাদের খরাক্লিষ্ট এলাকা ছেড়ে পাড়ি দেন রাজধানী মোগাদিশুর দিকে৷ কিন্তু সেখানেই বা পর্যাপ্ত খাবার কোথায়? খাবার সরবরাহের কাজটা হয়ে উঠেছে কঠিন এবং বিপজ্জনক৷ মোগাদিশুতে আফ্রিকান ইউনিয়নের ৯ হাজার শান্তিরক্ষী প্রহরারত৷ কিন্তু তা সত্ত্বেও ট্রাক থেকে সাহায্য হিসেবে পাঠানো খাবার চুরি হয়ে যাচ্ছে৷ খাবার বন্টনের সময় ঘটছে গোলাগুলির ঘটনা৷
সোমালিয়ার দক্ষিণাঞ্চলের অনেকটাই নিয়ন্ত্রণ করে জঙ্গি ইসলামি গোষ্ঠী আল-শাবাব৷ এই সব এলাকায় দুর্ভিক্ষাবস্থা আরো শোচনীয়৷ আল-শাবাব তাদের নিয়ন্ত্রিত এলাকায় বহু ত্রাণ সংস্থার কাজ নিষিদ্ধ করে রেখেছে৷
জাতিসংঘের দপ্তরে সোমালিয়ার মানচিত্রে লাল রং'এরই আধিক্য৷ দেশের প্রায় গোটা দক্ষিণাঞ্চলের ওপর এই লাল রং ছড়ানো৷ যার অর্থ সেখানে দেখা দিয়েছে এক জরুরি অবস্থা যার মোকাবিলা করতে হবে দ্রুত৷ জাতিসংঘের সর্বশেষ জরিপে দেখা যাচ্ছে, দুর্ভিক্ষের কারণে শত শত মানুষের মৃত্যু হচ্ছে সোমালিয়ায়৷ তার মধ্যে শিশুদের সংখ্যা কম নয়৷ জাতিসংঘ মহলের আশঙ্কা, পরিস্থিতি না বদলালে না খেতে পেয়ে সাড়ে সাত লক্ষ মানুষের মৃত্যু ঘটতে পারে৷ বিশ্ব সংস্থার জরুরি সাহায্য সমন্বয়কারী মার্ক বওডেন বলছেন: ‘‘আগামী চারটি মাস খুবই গুরুত্বের৷ অবস্থাটা আমাদের থিতু করতেই হবে৷ এই সংকট চট করে দূর হবেনা৷ আমাদের ত্রাণ তৎপরতা জোরদার করার জন্য চাই অর্থসাহায্য৷ সোমালিয়ার অসহায় মানুষদের এই সাহায্য জরুরি প্রয়োজন৷''
প্রতিদিনই সাহায্যপ্রার্থীরা এসে পৌঁছচ্ছে রাজধানী মোগাদিশুতে, প্রতিবেশী দেশ কেনিয়া আর ইথিওপিয়ায়৷ ক্ষুধায় কাতর তারা৷ জার্মান ত্রাণকর্মী রাইনার লাং মোগাদিশুর অবস্থাটা নিজের চোখে দেখে এসেছেন৷ তিনি বলছেন:‘‘আমি একটা হাসপাতালে একেবারে কঙ্কালসার শিশুদের দেখেছি৷ বিছানায় তারা লেপ্টে আছে৷ পুরোপুরি পুষ্টিহীন তাদের শরীর৷ তারা আদৌ বাঁচবে কিনা তা বলা যায় না৷ মানুষের একেবারে অন্তিম দশা যেন৷''
ত্রাণ সংগঠনগুলো সতর্ক করে দিয়ে বলছে, অক্টোবর মাসে দীর্ঘ প্রত্যাশিত বর্ষণ যদি হয়ও তাহলেও পরিস্থিতির কোন উন্নতি হবেনা৷ জাতিসংঘ বলছে, সোমালিয়ার ৪০ লাখ মানুষের অর্থাৎ দেশের অর্ধেকেরও বেশি মানুষের সাহায্য প্রয়োজন৷
প্রতিবেদন: আব্দুল্লাহ আল-ফারূক
সম্পাদনা: সঞ্জীব বর্মন