সেপ্টেম্বরের মধ্যে বিরোধী জোটের আসন সমঝোতা
ভারতের প্রধান বিরোধী জোট ইন্ডিয়ার তৃতীয় বৈঠক চলছে মুম্বইতে। ২৮ দলের ৬৩ জন নেতা বৈঠকে উপস্থিত।
পাটনা, বেঙ্গালুরুর পর মুম্বই
প্রথম বৈঠক হয়েছিল পাটনায়। তারপর বেঙ্গালুরুতে জোটের নাম ঠিক হয়, ইন্ডিয়া। ২৮টি দল একজোট হয়ে নরেন্দ্র মোদীর বিরুদ্ধে লড়ার সিদ্ধান্ত নেয়। এবার মুম্বইতে জোটের তৃতীয় বৈঠকে আরো কিছু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেয়া হতে পারে। উপরের ছবিটি বেঙ্গালুরু বৈঠকের।
আসন বন্টন নিয়ে সিদ্ধান্ত সেপ্টেম্বরেই
ঠিক হয়েছে, সেপ্টেম্বর মাসের মধ্যেই জোট শরিকেরা নিজেদের মধ্যে আসন বন্টনের বিষয়টি চূড়ান্ত করে ফেলবেন। এনিয়ে প্রাথমিকভাবে কিছু কথা হয়েছে পাটনা ও বেঙ্গালুরুর বৈঠকে। বৃহস্পতিবার মুম্বইতে ঠিক হয়েছে, ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে তারা আসন বন্টন শেষ করে ফেলবেন।
রাহুল-অভিষেক কথা
মুম্বই যাওয়ার আগে দিল্লি এসেছিলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। বুধবার ভোরে রাহুল গান্ধীর সঙ্গে একান্তে বৈঠক করেন অভিষেক। তাদের মধ্যে এক ঘণ্টা ধরে কথা হয়। সেখানে পশ্চিমবঙ্গের বিষয়েই কথা হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। বিশেষ করে কংগ্রেসের সঙ্গে জোট ও আসন বন্টনের বিষয়টিই প্রাধান্য পেয়েছে।
অধীর যা বলেছেন
লোকসভায় কংগ্রেসের নেতা ও পশ্চিমবঙ্গে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী আগে বলেছেন, পশ্চিমবঙ্গ হলো পুকুর, আর দেশের রাজনীতি হলো নদী। কংগ্রেস এখন নদী নিয়ে বেশি ব্যস্ত। তবে অধীর এখনো রাজ্যে তৃণমূল ও মমতার কড়া সমালোচনা করছেন। দত্তপুকুর বিস্ফোরণ নিয়েও করেছেন।
কংগ্রেস যেখানে প্রধান বিরোধী
মধ্যপ্রদেশ, তেলেঙ্গানা, গুজরাট, কেরালা, হরিয়ানা, ত্রিপুরা, গোয়ার মতো কিছু রাজ্যে লড়াইটা সরাসরি বিজেপি ও কংগ্রেসের মধ্যে। কংগ্রেস এখানে মূল বিরোধী দল। সেখানে অন্য বিরোধী দলের শক্তি খুব বেশি নয়। ফলে সেখানে সামান্য কিছু আসন তাদের ছাড়তে হতে পারে কংগ্রেসকে। কিন্তু দিল্লি নিয়ে সমস্যা আছে। দিল্লিতে আপ ও কংগ্রেস জোট করে লড়বে কি না, তা নির্ভর করছে, কেজরিওয়াল ও রাহুল গান্ধীর উপর।
কংগ্রেস যেখানে ক্ষমতায়
ছত্তিশগড়, রাজস্থান, কর্ণাটক, হিমাচলে কংগ্রেস এককভাবে ক্ষমতায় আছে। এর মধ্যে রাজস্থান, কর্ণাটকে আপ আসন চাইতে পারে। তবে দুই রাজ্যেই তাদের শক্তি খুবই কম। এনসিপি কিছু আসনের দাবিদার। ফলে এখানেও খুব বেশি আসন ছাড়তে হবে না কংগ্রেসকে। উপরের ছবিটি কর্ণাটকে কংগ্রেসের মুখ্যমন্ত্রী সিদ্দারামাইয়ার।
মহাজোটের রাজ্যে
মহারাষ্ট্র, বিহার, ঝাড়খণ্ড, তামিলনাড়ুতে মহাজোট আছে। কংগ্রেস তার শরিক। এই রাজ্যগুলিতেও আসন বন্টন নিয়ে খুব বেশি অসুবিধা হওয়ার কথা নয়। উপরের ছবিতে বিহারের উপ-মুখ্যমন্ত্রী তেজস্বী যাদব, দুই সাবেক মুখ্যমন্ত্রী লালুপ্রসাদ ও রাবড়ি দেবী। বিহারের মহাজোটে আছে কংগ্রেসও।
উত্তরপ্রদেশ নিয়ে
উত্তরপ্রদেশ নিয়ে সমস্যা আছে। সেখানে সমাজবাদী পার্টি প্রধান বিরোধী দল। তারা এখনো পর্যন্ত কংগ্রেসের সঙ্গে হাত মেলাতে চায় না। সেক্ষেত্রে আসন সমঝোতা হবে নাকি দুই দল কৌশলগত সমঝোতা করবে তা এখনো স্পষ্ট নয়।
বামেরা কী করবে?
সিপিএম জানিয়ে দিয়েছে, তারা পশ্চিমবঙ্গ বা কেরালায় কোনো জোটে যাবে না। তারা জাতীয় স্তরে জোটে থাকবে। এই অবস্থান বদলের সম্ভাবনা কম। পশ্চিমবঙ্গে তারা আইএসএফের সঙ্গে সমঝোতায় আছে। কংগ্রেসের সঙ্গেও তাদের অঘোষিত সমঝোতা রয়েছে। কেরলে তারা ক্ষমতায়। সেখানে তারা বা কংগ্রেস কেউই জোটে যেতে রাজি নয়।
অন্য রাজ্যে
তেলেঙ্গানায় লড়াইটা হবে টিআরএসের সঙ্গে কংগ্রেসের। তবে অন্ধ্রে লড়াই হওয়ার কথা ওয়াইএসআর কংগ্রেসের সঙ্গে চন্দ্রবাবু নাইডুর তেলুগু দেশমের। নাইডু বিজেপি-র সঙ্গে হাত মিলিয়েছেন। উত্তরপূর্বের রাজ্যগুলির পরিস্থিতি আলাদা। সেখানে কংগ্রেস প্রধান বিরোধী দল। দু-একটা রাজ্যে তৃণমূল আছে। আছে কিছু আঞ্চলিক দলও। উপরের ছবিতে তেলেঙ্গানার মুখ্যমন্ত্রী কে চন্দ্রশেখর রাও।
জোটের মুখ
জোটের মুখ হিসাবে আগে থেকে কাউকে তুলে ধরা হবে না। তাহলে লড়াইটা মোদী বনাম তার বিরুদ্ধে হবে। বিরোধী নেতারা চাইছেন, লড়াইটা এনডিএ বনাম ইন্ডিয়া জোটের মধ্যে হোক। তবে জোটের আহ্বায়ক হিসাবে নীতীশ কুমার ও মল্লিকার্জুন খাড়গের নাম শোনা যাচ্ছে।
কংগ্রেস চাইছে
সোনিয়া ও রাহুল গান্ধী এবার এই জোট নিয়ে চলতে চান। তাই খুব ভেবেচিন্তে প্রতিটি পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে। চেষ্টা করা হচ্ছে, বিরোধের জায়গাগুলিকে সরিয়ে রেখে যে সব বিষয়ে মতৈক্য হতে পারে, সেই জায়গাগুলি বেছে নিতে।