সুইজারল্যান্ডের জলবায়ুবান্ধব অ্যাপার্টমেন্ট
৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫সেখানকার বাসিন্দারা একটি লক্ষ্য অর্জনের চেষ্টা করছেন, যেটি পুরো সুইজারল্যান্ড ২০৫০ সালের মধ্যে করতে চায়৷ আর তা হলো, কার্বন নিরপেক্ষ হওয়া৷
সুইজারল্যান্ডের একটি নির্মাণ প্রকল্প টেকসই ভবনের মান নির্ধারণ করছে৷ ‘হোবেলভ্যার্ক' প্রকল্প জলবায়ু নিরপেক্ষ জীবনযাপন সম্ভব করতে চায়৷
হোবেলভ্যার্ক প্রকল্পের ধারণায় শুধু জলবায়ু নয়, একসঙ্গে বসবাসের বিষয়টিও আছে- সেখানকার অনেক কমন স্পেস যার প্রমাণ৷
সুইজারল্যান্ডের ভিন্টারটুরে প্রকল্পটি অবস্থিত৷ প্রকল্পের আওতায় নির্মিত পাঁচটি ভবনে প্রায় ৪০০ জন বাস করেন৷ তাদের লক্ষ্য কার্বন নিরপেক্ষ হওয়া৷
বিল্ডিং কো-অপারেটিভ ‘মোর দেন হাউজিং' এর মিশায়েল লস বলেন, ‘‘ছাদে থাকা সোলার প্যানেল থেকে পাওয়া বিদ্যুৎ ভবনে ভেতরে কাজে লাগে৷ আমরা রিসাইকেল করা উপকরণ ব্যবহার করেছি, যে কারণে কার্বন ফুটপ্রিন্ট কমেছে৷ আর সবুজে ঘেরা এলাকা বেশি থাকায় অতিরিক্ত গরমও হয় না৷''
স্থপতি প্যাসকেল ফ্লামার নির্মাণকাজে ব্যবহৃত উপকরণ কাজে লাগিয়ে কার্বন ফুটপ্রিন্ট কমিয়েছেন৷ ভেঙে ফেলা ভবনের জানালা খুলে তিনি নতুন ভবনে লাগিয়েছেন৷ আর বহিরাবরণ এসেছে পুরনো এক কারখানা থেকে৷
বারান্দার রেলিংগুলো একটি জেলখানার বিছানার ফ্রেম ছিল৷ রিসাইকেল উপকরণ ব্যবহার মানে হচ্ছে, নতুন কিছু তৈরি করার চেয়ে কম জ্বালানি খরচ করা৷
তবে চ্যালেঞ্জও আছে৷ প্যাসকেল ফ্লামার বলেন, ‘‘আপনি যদি না জানেন ভবিষ্যতে আপনি কী দিয়ে ভবন তৈরি করবেন, তাহলে আপনি ঠিকমতো পরিকল্পনা করতে পারবেন না৷ ফলে নির্মাণকাজ শুরু হওয়ার কিছুক্ষণ আগ পর্যন্তও আপনার কাছে উপকরণ থাকে না৷ সে কারণে কিছুটা অসম্পূর্ণতা থেকে যায়৷ আপনি এখানে সেটা দেখতে পারছেন৷ যেমন ভবনের সামনের দিকটায় বিভিন্ন ধরনের উপকরণ কোনোভাবে জোড়া লাগিয়ে কিছু একটা করা হয়েছে৷
হোবেলভ্যার্ক প্রকল্প একধরনের কমিউনিটির অনুভূতি দেয়৷ আঙ্গিনা থেকে সহজেই স্টুডিও অ্যাপার্টমেন্টগুলোতে ঢুকে যাওয়া যায়৷ দুই রুমের এসব অ্যাপার্টমেন্টের বাসিন্দারা এক জায়গায় কাজ ও বসবাস করতে পারেন৷ যে কেউ সহজেই যখন-তখন ভেতরে ঢুকতে পারেন৷
শিল্পী গাব্রিয়েল কেসলার বলেন, ‘‘অ্যাপার্টমেন্টের মধ্যেই কাজ ও বসবাসের সুবিধা থাকার বিষয়টা আমার ভালো লাগে৷ এছাড়া কমিউনিটির অংশ হতে পারা এবং যখন-তখন লোকজন এসে আমার স্টুডিওটা দেখতে পারার অনুভূতিটাও ভালো৷''
বড় কমন স্পেস আর ব্যক্তিগত ব্যবহারের জন্য আলাদা জায়গা: এগুলোকে বলে ‘ক্লাস্টার অ্যাপার্টমেন্ট'৷ এতে ব্যক্তিপ্রতি বসবাসের জায়গা কমে আর জ্বালানি বাঁচে৷
প্রকল্পের এক অ্যাপার্টমেন্টের বাসিন্দা মাডলাইনা ব্রুনার টিয়াম বলেন, ‘‘আমাদের নিউক্লিয়ার পরিবারের সদস্যসংখ্যা পাঁচজন: আমার স্বামী, আমি, আমাদের তিন সন্তান, দুজন ফস্টার সন্তানও আমাদের সঙ্গে বাস করে৷ আমার মাও এখানে একটা ক্লাস্টার অ্যাপার্টমেন্ট পেয়েছেন৷ বড় কমন লিভিং ও ডাইনিং রুম থাকার বিষয়টি ভালো, কারণে সেখানেই আমরা দিনের বেশিরভাগ সময় কাটাই৷ প্রত্যেকের আলাদা প্রাইভেট জায়গাও আছে৷''
গরম করার জন্য কম শক্তি ব্যবহারের বিষয়টিই সব নয়৷ বৈশ্বিক তাপমাত্রা বাড়ায় শীতলীকরণের বিষয়টিও গুরুত্বপূর্ণ৷ হোবেলভ্যার্ক প্রকল্পে এই সবুজ এলাকা তৈরি করা হয়েছে যেখানে বৃষ্টির পানি জমতে পারে এবং পরে ধীরে ধীরে বাষ্পীভূত হয়ে পুরো ভবনে ঠাণ্ডা ছড়িয়ে দিতে পারে৷
হোবেলভ্যার্ক প্রকল্পে বাস্তবায়ন করা এসব ধারণা অদূর ভবিষ্যতে এই প্রকল্পকে কার্বন নিরপেক্ষ হতে সহায়তা করবে৷ আর কমিউনাল-লিভিং ধারণা বাসিন্দাদের স্বল্পমূল্যে বসবাসের সুবিধারও চেয়েও বেশি কিছু দিচ্ছে৷
ইয়েন্স ফন লার্শার/জেডএইচ