সার্ভিস লেনের খরচ শতভাগ বাড়ার নেপথ্যের যত কারণ
২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২২পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান মনে করেন, প্রধানত জমির দাম ও সময় বেড়ে যাওয়ায় কারণেই এই খরচ বেড়েছে৷ তবে দুর্নীতিও থাকতে পারে, কিন্তু প্রমাণ ছাড়া তা বলা ঠিক হবে না৷
এই প্রকল্পের কাজ শুরু হয় ২০১৮ সালে৷ তখন খরচ ধরা হয়েছিল তিন হাজার ৮৮৫ কোটি ৭২ লাখ টাকা৷ এর এখন তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে সাত হাজার ৯৭৫ কোটি টাকায়, যা দুই গুণের বেশি৷
২০২১ সালে প্রকল্পটি শেষ হওয়ার কথা থাকলেও এখন নতুনভাবে ২০২৩ সালে প্রকল্প শেষ করার মেয়াদ নির্ধারণ করা হয়েছে৷ সার্ভিস লেনের মোট দৈর্ঘ্যও নতুন করে নির্ধারণ করা হয়েছে৷ এখন দৈর্ঘ্য কমে হবে ২৬৫ দশমিক ৪৯ কিলোমিটার৷ আগে ছিল ২৭০ দশমিক ৫৮ কিলোমিটার৷ তখন জমি অধিগ্রহণের পরিমাণ ধরা হয়েছিল ৯৮৬ দশমিক ৪৮ একর৷ তবে এখন অধিগ্রহণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে এক হাজার ৩৭৮ দশমিক ৮০ একর৷ মঙ্গলবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)-এর সভায় প্রকল্পটির সংশোধনী অনুমোদন করা হয়৷
ব্যয় বাড়ার কারণ জানতে চাইলে পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য মামুন-আল-রশিদ ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘প্রথমত, জমি অধিগ্রহণের খরচ বেড়েছে৷ প্রকল্পটি যখন ২০১৮ সালে গ্রহণ করা হয়, তার চেয়ে জমির দাম তিনগুণ বেড়ে গেছে৷ দ্বিতীয়ত, ২০১৫ সালে যখন অস্ট্রেলীয় ও সুইডিস দুইটি কোম্পানি একটি প্রকল্পের আওতায় এর সাম্ভাব্যতা যাচাই করে, তখন নরসিংদী এলাকার পরিকল্পনায় ভুল ছিল৷ সেটা সংশোধন করে নরসিংদীর বাগহাটা থেকে সরাসরি পুরিন্দা পর্যন্ত নতুন লাইন নকশা করা হয়৷ এর ফলে আরো অতিরিক্ত জমি অধিগ্রহণ করার দরকার হয়৷ ফলে প্রকল্পটির ব্যয় আরো বেড়ে যায়৷’’
তিনি আরো বলেন, ‘‘ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ছয়টি জোনে এরই মধ্যে কাজ শুরু হয়ে গেছে৷ ওইসব এলাকায় পর্যাপ্ত জমি আছে৷ বাকি এলাকায় অধিগ্রহণ করতে হবে৷’’ তার কথা, জমি অধিগ্রহণে আর খরচ বাড়ার সম্ভাবনা নাই৷
টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘‘দীর্ঘসূত্রিতা প্রকল্পের ব্যয় বাড়ার অন্যতম কারণ৷ সময় যখন বেড়ে যায়, তখন সময়ের সাথে সাথে সবকিছুর দামই বেড়ে যায়৷ তবে এর ভিতরে অন্য ধরনের কারণও আছে৷ যেহেতু প্রকল্প ব্যয় বাড়লে তার অনুমোদন সহজেই পাওয়া যায়৷ বাজেট, টাকা বরাদ্দ হয়৷ ফলে কখনো কখনো উদ্দেশ্যমূলভাবেই প্রকল্পের ব্যয় বাড়ানোর জন্য দেরি করা হয়৷ এই প্রকল্পের সাথে যারা জড়িত, তাদের একাংশ ক্ষমতার অপব্যবহার করে এটা করে৷ এর সঙ্গে তাদের আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার বিষয় থাকে৷’’
তিনি বলেন, ‘‘এটা একটা মিশ্র বিষয়৷ এরমধ্যে অদক্ষতা যেমন আছে, স্বাভাবিক কারণে দেরি হওয়ার বিষয়ও আছে৷ আছে দুর্নীতির প্রবণতাও৷’’
পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, ‘‘জমি অধিগ্রহণ অনেক জটিল বিষয়৷ জমি নিয়ে অনেক মামলা-মোকদ্দমা হয়৷ একই পরিবারের মধ্যে নানা ঝামেলা থাকে৷ ফলে অধিগ্রহণ করতে অনেক সময় লাগে৷ এর মধ্যে জমির দাম দুই গুন-তিন গুণ বেড়ে গেছে৷ অনেক গরিব মানুষের জমি থাকে, তাদের তো ভালো দাম দিতে হয়৷ এসব কারণে সময়ও বেশি লাগছে৷ ফলে এখন প্রকল্পের ব্যয় বেড়ে গেছে৷’’
শুধু জমির দাম বাড়ার কারণে প্রকল্পের ব্যয় দুই গুণ কীভাবে বাড়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘‘না শুধু জমির কারণে নয়, সময় বেশি লাগার কারণে নির্মাণ সামগ্রী, লোহা লক্করের দামও বেড়ে গেছে৷ যন্ত্রপাতি, সিমেন্টের কাঁচামাল, রড সবকিছুর দামই বেড়ে গেছে৷ আসলে ঠিক সময়ে প্রকল্প শেষ করতে না পারার কারণেই এটা হচ্ছে৷ এখানে অদক্ষতা আছে৷’’
এখানে দুর্নীতিও কারণ হিসেবে কাজ করছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘‘দুর্নীতির একটা জনশ্রুতি আছে৷ দুর্নীতি হতেও পারে৷ কিন্তু কোনো প্রমাণ না পাওয়া পর্যন্ত তো দুর্নীতির কথা আমি বলতে পারি না৷ যদি কখনো প্রমাণ পাই, তখন ধরবো৷’’ তার কথা, ‘‘যদিও আমরা দেখছি অব্যবস্থাপনার কারণে, গাফিলতির কারণে প্রকল্পের ব্যয় বাড়ছে, কিন্তু আমরা নিরুপায়৷ জনগণের কল্যাণে উন্নয়ন প্রকল্প তো আমরা বন্ধ করতে পারি না৷’’