সাংস্কৃতিক স্থাপনার প্রতি যত আক্রোশ
বিশ্বের সাংস্কৃতিক স্থাপনাগুলো অক্ষত রাখা ক্রমশ কঠিন হয়ে পড়ছে৷ যুদ্ধ, জঙ্গি হামলা, বিদ্বেষ কিংবা পর্যটকদের নিছক খেয়ালের বশেই সেগুলো নষ্ট হচ্ছে৷ সবশেষ এই ইস্যুটি বড় হয়ে দেখা দিয়েছে মাচু পিচুর এক ঘটনাতে৷
মাচু পিচুর সূর্য মন্দিরে মলত্যাগ!
পেরুর দক্ষিণ-পশ্চিমে আন্দিজ পর্বতমালায় অবস্থিত প্রাচীন এই নগরী৷ পঞ্চদশ শতাব্দীর ইনকা সভ্যতার অন্যতম নিদর্শন এটি৷ সেখানকার সূর্য মন্দিরে পর্যটকদের একটি দল অবৈধভাবে রাত্রি যাপন করেছে বলে অভিযোগ করে কর্তৃপক্ষ৷ এমনকি সেখানে তারা মলত্যাগ করে অপরিচ্ছন্নও করে রাখে৷
বিচারের মুখোমুখি
মাচু পিচুর ঘটনায় ছয় পর্যটকের মধ্যে পাঁচজনকে পেরু থেকে বের করে দেয়া হয়৷ সাংস্কৃতিক এই ঐতিহ্য নষ্ট করার দায়ে আর্জেন্টিনার এক নাগরিককে বিচারের মুখোমুখি হতে হবে৷ তিনি সেখানকার একটি প্রস্তরখন্ড খুলে নেয়ার চেষ্টা করেছেন বলে অভিযোগ করা হয়েছে৷ এজন্য তার চার বছরের কারাদণ্ড হতে পারে৷ এর আগে চিলির দুই নাগরিককে এক লাখ ডলার করে জরিমানা করা হয়েছিল একই কারণে৷
পর্যটকের ঢল
সাম্প্রতিক সময়ে মাচু পিচুতে পর্যটকের ঢল সামলাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে কর্তৃপক্ষকে৷ তাদের প্রতিদিনের পদভারেই ইউনেস্কো ঘোষিত এই বিশ্ব ঐতিহ্যের অপূরণীয় ক্ষতি হচ্ছে৷ দ্য পেরু টেলিগ্রাফের তথ্য অনুযায়ী ২০১৮ সালে সেখানে ১৫ লাখ পর্যটকের পা পড়েছে৷ ১৯৯১ সালে তা ৮০ হাজারেরও কম ছিল৷
মৎস্যকন্যার গায়ে রং
হান্স ক্রিস্টিয়ান অ্যান্ডারসনের রূপকথা অবলম্বনে ১৯১৩ সালে এই মৎস্যকন্যাকে গড়েছেন ভাস্কর এডভার্ড এরিকসন, যা এখন ডেনমার্কের অন্যতম পর্যটন আকর্ষণ৷ ২০১৭ সালে তিমি শিকার বিরোধী আন্দোলনকারীরা ভাস্কর্যটির গায়ে লাল রং মেখে দেন৷ সম্প্রতি ‘হংকং মুক্ত কর’ এমন একটি বার্তাও লাল রঙে লিখে দেয়া হয় এই পাথুরে মূর্তির গায়ে৷
দুই দফা মাথা বিচ্ছিন্ন
১৯১৩ সালে বসানোর পর থেকে ভাস্কর্যটি কয়েক দফা লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়েছে৷ ১৯৬৪ সালে দ্য লিটল মারমেডের মাথা চুরি যায়৷ শেষ পর্যন্ত সেটি আর উদ্ধার করা যায়নি৷ তার বদলে নতুন করে পুনঃস্থাপন করা হয়েছে৷ চার বছর পর আবারও একই ঘটনা ঘটে৷ এবার ধরা না গেলেও মাথা ফেরত পাওয়া যায়৷
ইয়েলো ভেস্টের কবলে আর্ক অফ ট্রায়াম্ফ
২০১৮ সালে ফ্রান্সের ইয়েলো ভেস্ট আন্দোলনকারীদের কবলে পড়ে আর্ক অফ ট্রায়াম্ফ৷ তারা এই ঐতিহ্যের গায়ে স্লোগান লিখে দেয়৷ পরে দীর্ঘদিন পর্যটকদের জন্য স্থাপনাটি বন্ধ ছিল৷ তবে সংস্কারের পর ২০১৯ সালে আবারও খুলে দেয়া হয়েছে ফ্রান্সের অন্যতম এই আকর্ষণ৷
রেহাই পায়নি ভাস্কর্য
আর্ক অফ ট্রায়াম্ফ অভ্যন্তরের জাদুঘরে রাখা ছিল এই ভাস্কর্যটি, যা ফরাসি বিপ্লবের অন্যতম প্রতীকী চরিত্র হিসেবে বিবেচিত হয়ে থাকে৷ এই ঘটনার পর পুলিশের সঙ্গে ব্যাপক সংঘর্ষ হয় ইয়েলো ভেস্ট আন্দোলনকারীদের৷ ১০০ জন আহত ও ৪০০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়৷
পালমিরার ধ্বংসযজ্ঞ
সিরিয়ার প্রাচীন নগরী পালমিরা৷ এই অঞ্চল দখলে নিয়ে ধ্বংসলীলা চালায় ইসলামিক স্টেট৷ উপরে এএফপির ফটোগ্রাফার জোসেফ ইডের তোলা ২০১৪ সালের একটি আলোকচিত্র দেখা যাচ্ছ৷ তখনও সেখানে হানা দেয়নি আইএস৷ পেছনে এখনকার পরিস্থিতি৷
রক্ষা পেলো তুমবুকতুর নথি
শুধু পালমিরা নয়, মালির প্রাচীন নগরী তুমবুকতুও রেহাই পায়নি আইএসের হাত থেকে৷ স্থাপনা ধ্বংস করলেও ‘গ্রেট লাইব্রেরি অফ তুমবুকতুতে’ অমূল্য কিছু নথি অক্ষত ছিল৷ স্থানীয় নেতা ও পণ্ডিত হিসেবে পরিচিত আব্দেল কাদের সেগুলোকে কৌশলে সরিয়ে ফেলেছিলেন৷বর্তমানে প্রাচীন বই আর নথিগুলো সংরক্ষিত আছে হামবুর্গে৷
তালেবানদের হাতে বৌদ্ধ মূর্তি ধ্বংস
পাহাড়ের গায়ে খোদাই করা গর্তটিতে একসময় গৌতম বুদ্ধের ষষ্ঠ শতকে গড়া দুটি বিশাল মূর্তি ছিল৷ ২০০১ সালে আফগানিস্তানে এমন দুটি ভাস্কর্য গুড়িয়ে দেয় তালেবানরা৷
পর্যটকদের দায়িত্বশীল আচরণের অনুরোধ
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে পোল্যান্ডে নাৎসি হত্যাযজ্ঞের স্মৃতি বিজড়িত স্থান আউসভিৎজ৷ পর্যটকদের আচরণে বিরক্ত হয়ে গত বছর সেখানকার কর্তৃপক্ষ আহ্বান জানিয়েছিল, যাতে তারা পর্যবেক্ষণের সময় ১০ লাখ মানুষের মৃত্যুর কথাটি মনে রাখে৷
হলোকস্টের স্মৃতিস্থাপনায় খেলাধুলা
আউসভিৎজের মতো সংকটে বার্লিনের হলোকস্ট স্মৃতিচিহ্নও৷ দুই হাজার ৭১১ টি ধূসর রঙের কংক্রিট স্ল্যাব রয়েছে সেখানে৷ ২০০৫ সালে স্থাপন করার পর দুই দফা এটি ক্ষতিগ্রস্থ হয়৷ ২০১৪ সালে সেখানে আতশবাজি আর মলত্যাগের একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়ার পর নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে৷
ইব্রাহিমোভিচের ভাস্কর্য
গত বছরের অক্টোবরে সুইডেনের মালমোতে ফুটবলার ইব্রাহিমোভিচের একটি ভাস্কর্য উন্মোচন করা হয়৷ এই সুইডিশ তারকার অনবদ্য খেলোয়াড়ী জীবন শরু হয়েছিল এখানকার ক্লাব থেকে৷
ইব্রাহিমোভিচের পতন
এক মাস পর নভেম্বরে ইব্রাহিমোভিচ স্টকহোমের একটি ক্লাবের মালিকানার অংশীদার হন৷ সেই ক্লাব মালমো এফএফ-এর প্রধান প্রতিদ্বন্দী৷ এ কারণেই মালমো এফএফ-এর সমর্থকরা ক্ষুব্ধ হয়ে ইব্রাহিমোভিচের ভাস্কর্যটি ভেঙে ফেলেন৷