সবুজ হাইড্রোজেন ব্যবহারে অগ্রদূত হতে চায় চিলি
১৮ জুন ২০২৫এরইমধ্যে হাইড্রোজেন চালিত ট্রেন দেখা যাচ্ছে দক্ষিণ অ্যামেরিকায়৷ এদিকে, জার্মানিতে কিছু প্রতিষ্ঠান এ সংক্রান্ত কারিগরি সমস্যায় ভুগছে৷ হাইড্রোজেন চালিত ট্রেন কি ক্ষণিকের উচ্ছ্বাস নাকি ভবিষ্যতের শক্তি?
চিলি এখন অবধি বিশ্বের সবচেয়ে বড় তামা উৎপাদক৷ বিশ্বের এক চতুর্থাংশ বাজারই দেশটির দখলে৷ চিলির উত্তরের উপকূলীয় শহর অ্যান্টোফাগাস্টায় এক প্রযুক্তি ইতিহাস তৈরি হচ্ছে৷ লজিস্টিক কোম্পানি এফসিএবির মালিক দেশটির অন্যতম বড় তামা উৎপাদক৷ এক শতক আগে কয়লাচালিত ট্রেনে খনিজ পদার্থ পরিবহন শুরু করেছিল প্রতিষ্ঠানটি৷
বর্তমানে সেগুলো পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর ডিজেলে চালিত৷ তবে এই পরিস্থিতি শিগগিরই বদলে যাবে৷
এফসিএবির প্রধান প্রকৌশলী হোসে লুইস আদাস্মে এই বিষয়ে বলেন, ‘‘অ্যান্টোফাগাস্টা রেলওয়েস বলিভিয়ার প্রধান প্রকৌশলী আমি৷ এটি চিলি এবং দক্ষিণ অ্যামেরিকার প্রথম হাইড্রোজেন চালিত লোকোমটিভ৷''
একেবারে নতুন এই ট্রেন চীন থেকে আনা হয়েছে৷ প্রথম যাত্রার চূড়ান্ত প্রস্তুতিও সম্পন্ন হয়েছে৷ এতে ২০ সিলিন্ডার হাইড্রোজেন রয়েছে৷ আদাস্মে বলেন, ‘‘গন্তব্য এবং ট্র্যাকের ভিত্তিতে বলা যায় লোকোমোটিভটি ১৬৬ কিলোমিটার অবধি যেতে পারবে৷ আরো সুবিধাজনক গন্তব্যের ক্ষেত্রে আমরা বাড়তি সুবিধা পাবো৷''
প্রাথমিকভাবে বন্দর থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরের গুদাম অবধি স্বল্প দূরত্বে ট্রেনটি যাচাই করা হয়েছে৷ ভবিষ্যতে এটি বন্দর, বলিভিয়া এবং তামা খনির মধ্যে লম্বা দূরত্বে চলাচল করবে৷
এফসিএবি বছরে সত্তর লাখ টন তামা এবং অন্যান্য খনিজ পদার্থ পরিবহন করে৷
উত্তর চিলি, আর্জেন্টিনা এবং বলিভিয়ার খনি থেকে আকরিক তোলার পর তা পাহাড় এবং মরুভূমির মধ্য দিয়ে ৭০০ কিলোমিটার রেল নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে অন্যত্র নেয়া হয়৷
টেকসই লক্ষ্য অর্জনে এই নেটওয়ার্ক কার্বনমুক্ত করতে চায় প্রতিষ্ঠানটি৷
এফসিএবি উদ্ভাবন বিভাগের প্রধান পাওলিনা আরিয়াসা টোরো বলেন, ‘‘একটি লক্ষ্য হচ্ছে ২০৩০ সালের মধ্যে কার্বন নির্গমন ৩০% কমিয়ে আনা৷ এবং অধিকাংশ কার্বন নির্গমন লোকোমোটিভের কারণে হচ্ছে৷''
বায়োমাস দিয়ে তৈরি হাইড্রোজেন এখনো ব্রাজিল থেকে আনতে হয়৷ ডিজেলের চেয়ে তা অনেক ব্যয়বহুল বলছে এফসিএবি৷ তবে এই পরিস্থিতি শীঘ্রই বদলাবে বলে আশাবাদী প্রতিষ্ঠানটি৷
হাইড্রোজেন নিয়ে বড় পরিসরে ভাবছে চিলি৷ এজন্য প্রাথমিক প্রকল্পগুলোর কাজ চলছে৷ দেশটির দক্ষিণে প্রয়োজনীয় অবকাঠামোগত পরিবর্তনও আনা হচ্ছে৷ সস্তা হাইড্রোজেনের ক্ষেত্রে বিশ্বের প্রথম স্থান নিতে চায় দেশটি৷ তাই বায়ু শক্তি এবং হাইড্রোজেন উৎপাদনে ব্যাপক বিনিয়োগ করছে চিলি৷
ক্লাইমেট ইমপেক্ট ইন্সটিটিউটি পিআইকের বিজ্ঞানী ফালকো ইওকোট বলেন, ‘‘পাতাগোনিয়ায় এমন এলাকা আছে যেখানে জার্মানির তুলনায় দ্বিগুণ বা চারগুণ বেশি বায়ু প্রবাহিত হয়৷ ফলে হাইড্রোজেন সেখানে খুব সস্তা হতে পারে এবং হাইড্রোজেন ট্রেনের জন্য জ্বালানি সরবরাহ করতে পারে৷''
দক্ষিণ অ্যামেরিকাসহ গোটা বিশ্বে মালবাহী যান এখনো ব্যাপক আকারে ডিজেলের উপর নির্ভরশীল৷ চিলির এফসিএবি ট্রেনগুলোর ক্ষেত্রেও তা প্রযোজ্য৷
পাওলিনা আরিয়াসা টোরো বলেন, ‘‘বর্তমানে ৭০০ কিলোমিটারের বেশি ট্রেন নেটওয়ার্কের উপর অনেক চাপ রয়েছে৷ আমরা খুব খাড়া মরুভূমির ঢালের কথা বলছি, যেটা গন্তব্যে যেতে ব্যবহার করতে হবে৷ আর সেখানে বিদ্যুতায়ন নানা প্রতিকূলতার কারণে বেশ ব্যয়বহুল৷''
অন্যদিকে, হাইড্রোজেনের সুফল পেতে গেলে একটি পুরো কাঠামো গড়তে হবে৷
সিইআর-এর কারিগরি পরিচালক মার্সেল দে লা হেই বলেন, ‘‘এটা পুরো ইকোসিস্টেমের ব্যাপার৷ এটা শুধু যে ট্রেন হাইড্রোজেন ব্যবহার করে তা নয়, এটা উৎপাদন এবং ট্রেনের রসদেরও ব্যাপার৷''
উদ্ভাবন, কম খরচ এবং পরিকাঠামোর ব্যাপক সম্প্রসারণের উপর নির্ভর করছে যে ভবিষ্যতে হাইড্রোজেন ট্রেন তুলনামূলক ভালো বিকল্প হবে কি না৷ বিশেষ করে প্রত্যন্ত অঞ্চলে যেখানে বিদ্যুতায়ন সহজ নয় সেখানে প্রকৃত অর্থেই বিকল্প হতে পারে হাইড্রোজেন ট্রেন৷
প্রতিবেদন: টিম শাউয়েনবার্গ/এআই