সন্দেশখালিতে ঢুকতে দেয়া হলো না বিজেপি সাংসদদেরও
১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৪বিরোধীদের এখনো সন্দেশখালিতে ঢুকতে দেয়া হচ্ছে না। রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর কাছে সন্দেশখালির মেয়েদের লাঞ্ছনা নিয়ে রিপোর্ট পেশ করেছে তফসিলি কমিশন। সুপ্রিম কোর্ট ও কলকাতা হাইকোর্টে সন্দেশখালি নিয়ে দুইটি মামলা হয়েছে। দিন দুয়েক আগে সন্দেশখালি যেতে গিয়ে পুলিশের হেনস্থার মুখে পড়েছিলেন সুকান্ত মজুমদার। সাংসদের অধিকার ভঙ্গ করা হয়েছে এই অভিযোগে পুলিশের ডিআইডি রাজীব কুমার, এসপি, অতিরিক্ত এসপি জেলাশাসক এবং মুখ্যসচিবকে ডেকে পাঠিয়েছে সংসদের অধিকাররক্ষা কমিটি। দিল্লি গেলে তাদের কমিটির জেরার মুখে পড়তে হবে।
বিজেপি সংসদীায় দলকে যেতে দেয়া হলো না
সন্দেশখালিতে গিয়ে সেখানকার পরিস্থিতি, বিশেষ করে নারীদের উপর অত্যাচারের অভিযোগ খতিয়ে দেখে তাকে রিপোর্ট দেয়ার জন্য ছয় সদস্যের দলকে পাঠিয়েছিলেন বিজেপি সভাপতি জে পি নাড্ডা। তবে তাদের সন্দেশখালিতে ঢুকতে দেয়নি পুলিশ।
সন্দেশখালি যাওয়ার পথে রামপুরে তাদের আটকে দেয়া হয়। তারা তখন রাস্তায় বসে পড়েন। বিজেপি নেতারা বলেন, তারা পাঁচজন যাবেন। পুলিশ তা না মানায় তারা বলেন, তাদের দুই জন প্রতিনিধি সন্দেশখালিতে গিয়ে মানুষের সঙ্গে কথা বলবেন। তাতেও রাজি হয়নি পুলিশ। ঢুকতে না পেরে তারা কলকাতায় এসে রাজভবনে রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা করেন।
এর আগে রাজ্যের বিরোধী নেতা শুভেন্দু অধিকারীকেও সন্দেশখালিতে যেতে দেয়া হয়নি। লোকসভার কংগ্রেস নেতা অধীর রঞ্জন চৌধুরীরও সন্দেশখালি যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।
রাজ্যের পুলিশ ও প্রশাসনের কর্তাদের তলব
দিন দুয়েক আগে বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার সন্দেশখালি যেতে গেলে, পুলিশ তাকে বাধা দেয়। তাকে মাটিতে ফেলে দেয়া হয় বলে অভিয়োগ। তিনি অজ্ঞান হয়ে যান। প্রথমে তাকে বসিরহাটের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে কলকাতায় নিয়ে আসা হয়।
সুকান্ত এরপর স্পিকার ওম বিড়লার কাছে অধিকারভঙ্গের অভিযোগ করেন। তিনি বলেন, হাসপাতালে পর্যন্ত যেতে বাধা দেয়া হয়েছিল। স্পিকার সেই সব অভিযোগ পাঠিয়ে দেন কমিটির কাছে। তারপরেই কমিটি রাজ্য পুলিশের ডিজিডি রজীব কুমার, এসপি, অতিরিক্ত এসপি, জেলাশাসক ও মুখ্যসচিবকে ডেকে পাঠিয়েছে। ১৯ ফব্রুয়ারি এই পাঁচজনকে কমিটির মুখোমুখি হতে বলা হয়েছে।
রাষ্ট্রপতির কাছে রিপোর্ট
সন্দেশখালি নিয়ে ভারতের রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর কাছে রিপোর্ট পেশ করেছে তফসিলি কমিশন। বৃহস্পতিবার তফসিলি কমিশনের চেয়ারম্যান অরুণ হালদারের নেতৃত্বে প্রতিনিধিদল সন্দেশখালিতে যান। তারা সেখানে নির্যাতিত বিক্ষুব্ধ নারীদের সঙ্গে কথা বলেন। প্রতিনিধি দলের কাছে নারীরা ভয়ঙ্কর সব অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরেন। তবে রিপোর্টে কী আছে সে বিষয়ে কমিশন কিছু জানায়নি।
কমিশনের প্রতিনিধিদের কাছে সন্দেশখালির নারীরা বলেছেন, তাদের রাতে পর্টি অফিসে ডেকে পাঠানো হতো। না গেলে তাদের বা পরিবারের লোকেদের মারধর করা হতো। মিটিংয়ের নাম করে ডাকা হতো। কাউকে কাউকে অনেক রাত পর্যন্ত থেকে যেতে বলা হতো।
এর আগে রাজ্যপাল আনন্দ বোসও সন্দেশখালিতে গিয়েছিলেন। তাকেও নারীরা তাদের অভিযোগের কথা কথা জানিয়েছেন। সে ব্যাপারে তিনি রাজ্য সরকারের কাছ থেকে রিপোর্ট চেয়েছেন।
আদালতে সন্দেশখালি
কলকাতা হাইকোর্ট ইতিমধ্যেই স্বপ্রণোদিত হয়ে সন্দেশখালি নিয়ে একটি মামলা গ্রহণ করেছে। বিচারপতি অপূর্ব সিনহা রায় বলেছেন, তিনি সন্দেশখালি নিয়ে বিচলিত। আদিবাসীদের জমি জোর করে নিয়ে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে, মাথায় বন্দুক ধরে ধর্ষণের অভিয়োগ এসেছে। রাজ্যের পাবলিক প্রসিকিউটারকে তিনি এই নিয়ে রিপোর্ট দিতে বলেছেন। মামলার পরবর্তী শুনানি হবে ২০ ফেব্রুয়ারি। তার আগে গোটা সন্দেশখালি থেকে বিচারপতি ১৪৪ ধারা প্রত্যাহারের নির্দেশ দেন। তারপর সন্দেশখালির প্রবেশপথগুলোতে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়।
সন্দেশখালি নিয়ে একটি জনস্বার্থ মামলা করতে চাওয়া হয়েছে সুপ্রিম কোর্টে। আবেদনে বলা হয়েছে, মণিপুরের মতো তিন বিচারপতির কমিটি গঠন করে তদন্তের ভার তাদের উপর দেয়া হোক। দ্রুত বিচারের আবেদনও জানানো হয়েছে। প্রধান বিচাররপতি চন্দ্রচূড় জানিয়েছেন, তিনি আবেদন পড়ে সিদ্ধান্ত নেবেন।
'সব শাসকের চরিত্র এক'
প্রবীণ সাংবদিক ও মানবাধিকার কর্মী আশিস গুপ্ত ডিডাব্লিউকে বলেন, ''ভারতে সব শাসক দলের চরিত্র এক। তারা ক্ষমতায় থাকার সময় একইরকম কাজ করে। যে বিজেপি সন্দেশখালি নিয়ে এত হইচই করছে, তারা উত্তরপ্রদেশের হাথরাসে কাউকে ঢুকতে দেয়নি। সাংবাদিককে পর্যন্ত গ্রেপ্তার করেছে। গুজরাটে তো তারা বিলকিস বানোর ধর্ষকদের মুক্তি দিয়েছিল। তৃণমূল তখন প্রবল প্রতিবাদ করেছিল। এখন তারাও সন্দেশখালিতে বিরোধীদের ঢুকতে দিচ্ছে না।''
জিএইচ/এসিবি(পিটিআই, আনন্দবাজার, টিভি৯)