নিবন্ধনের সময় বাড়িয়ে নেয়ার পিছনেও নির্বাচন পেছানোর উদ্দেশ্য আছে কিনা জানতে চাইলে দলটির যুগ্ম আহ্বায়ক মনিরা শারমিন বলেন, "আমরা নতুন দল, তাই নিবন্ধনের শর্ত পুরণে আমাদের একটু সময় দরকার। অন্য দল যারা আবেদন করেছেন, তারাও সময় বাড়াতে চেয়েছেন। দুই মাস সময় বাড়িয়ে দিয়েছে, আমরা এই সময়ের মধ্যে নিবন্ধন শেষ করতে পারবো। নির্বাচন পেছানো আমাদের উদ্দেশ্য নয়। আর আমরা কোনো চাপও দেইনি।”
নির্বাচন কমিশনের নীতিমালায় নিবন্ধনের যে শর্ত আছে, তা হলো:
১. স্বাধীনতার পর অনুষ্ঠিত কোনো সংসদ নির্বাচনে দলীয় প্রতীকে কমপক্ষে একটি আসনে বিজয়।
২. সেসব নির্বাচনে দলটির প্রার্থীরা যেসব আসনে অংশ নিয়েছেন, সেসব আসনে মোট ভোটের ৫ শতাংশ অর্জন।
৩. কেন্দ্রীয় কমিটিসহ একটি সক্রিয় কেন্দ্রীয় অফিস থাকতে হবে। দেশের অন্তত এক-তৃতীয়াংশ জেলায় জেলা অফিস থাকতে হবে। আর অন্তত ১০০টি উপজেলা বা মেট্রোপলিটন এলাকার থানায় অফিস থাকতে হবে, যার প্রতিটিতে সদস্য হিসেবে কমপক্ষে ২০০ জন ভোটার থাকবে।
ওই তিনটি শর্তের যে-কোনো একটি পুরণ ছাড়াও নিবন্ধন পেতে আগ্রহী দলটির গঠনতন্ত্রে কেন্দ্রীয় কমিটিসহ সব কমিটির সদস্য নির্বাচিত করা; কমিটিতে কমপক্ষে ৩৩ শতাংশ নারী সদস্য রাখা (২০৩০ সালের মধ্যে পূরণ) সহ আরো কিছু বিধান রাখার শর্ত আছে।
মনিরা শারমিন বলেন, "১০০ উপজেলা ও ২২ জেলায় কমিটি দেয়া, কেন্দ্রীয়সহ ওইসব জেলা-উপজেলায় নিজস্ব অফিস নেয়ার কাজ এগিয়ে চলছে। আশা করি, এই দুই মাসের মধ্যেই আমার এইসব কাজ শেষ করতে পারবো। আর আমাদের জাতীয় নাগরিক কমিটির তো ৪৫০ উপজেলায় কমিটি আছে। সেই কমিটিগুলো তো সংযুক্ত হবে। বিভিন্ন জেলা উপজেলা থেকে কমিটির নাম আসছে, সেগুলোও দেখছি। আমরা আগামী সপ্তাহেই একটি সাংগঠনিক সপ্তাহ ঘোষণা করবো। তার মধ্য দিয়েই সব পর্যায়ে কমিটি গঠন করা হবে। গঠনতন্ত্র সময়ের মধ্যেই চূড়ান্ত হবে। দলীয় প্রতীকও প্রায় চূড়ান্ত পর্যায়ে আছে।”
তহবিলের ব্যাপারে তিনি বলেন, "এইসব কাজ করতে তো খরচ আছে। আমরা এখন নিজেরা খরচ করছি। কিন্তু ক্রাউড ফান্ডিং-এর মাধ্যমেই মূলত আমরা তহবিল গঠন করবো। আমরা একটা নীতিমালা তৈরি কেরেছি, ফাইনান্সিয়াল পলিসি তৈরি করেছি। এই সপ্তাহের শেষে আমরা পলিসি ঘোষণা করে ফান্ড সংগ্রহ শুরু করবো। আমরা দলের নামে এরই মধ্যে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলেছি।”
এএনসিপি জাতীয় থেকে স্থানীয়- সব ধরনের নির্বাচনেই প্রার্থী দেবে। এ কারণে তারা প্রার্থীও বাছাই করছে।
মনিরা শারমিন বলেন, " আমরা রাজনৈতিক দল করেছি। অবশ্যই নির্বাচন আমাদের টার্গেট। মৌলিক সংস্কার হলেই আমরা নির্বাচনে অংশ নেবো। জাতীয় নির্বাচন ছাড়াও জেলা, উপজেলা, পৌরসভা,ইউপি -সব নির্বচনেই আমরা অংশ নেবো। যারা বিভিন্ন নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারেন, তাদের সঙ্গে আমরা কথা বলছি। নিজেরাও প্রার্থী নিয়ে চিন্তা করছি। আমরা একটি নির্বাচনমুখী দল।”
তার কথা, "আমরা মৌলিক সংস্কার ছাড়াও নির্বাচন কমিশনের সংস্কার চেয়েছি। আরপিওর সংশোধন চেয়েছি। আসলে এই সংস্কারগুলো নির্বাচনের আগে দরকার। কোনো সময়ক্ষেপন বা সুবিধা নেয়ার জন্য নয়। আমরা মনে করি, ফ্যাসিবাদ রেখে নির্বাচন নয়। আর প্রধান উপদেষ্টা যে ডিসেম্বর থেকে জুনের কথা বলছেন, সেই সময়ের মধ্যেই মৌলিক সংস্কার করে নির্বাচন সম্ভব। সংস্কার না করে নির্বাচন করলে ওই সংস্কার আর হবে না। তাহলে জুলাই অভূত্থানের ফল জাতি পাবে না।”