সংস্কার কমিশন ও সংস্কারের প্রস্তাবনা
বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান ড. মুহাম্মদ ইউনূস দায়িত্ব গ্রহণের সঙ্গে সঙ্গেই রাষ্ট্রযন্ত্রের গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন অংশের সংস্কার কমিটি গঠন করেন। ছবিঘরে থাকছে সেসব সংস্কার প্রস্তাবনার সারসংক্ষেপ।
নির্বাচন কমিশন সংস্কার
নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কারের উদ্দেশ্যে প্রায় ১৫০টির কাছাকাছি সুপারিশ করেছে কমিশন। যার মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন, প্রবাসী বাংলাদেশিদের জন্য ডাকযোগে ভোট দেয়ার ব্যবস্থা, রাষ্ট্রপতি নির্বাচন, দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট সংসদ, উচ্চ কক্ষের জন্য নির্বাচন, বিরোধী দলকে ডেপুটি স্পিকারের পদ দেয়া ও জাতীয় নির্বাচনে কোন আসনে ৪০ শতাংশের কম ভোট হলে পুনরায় নির্বাচনের সুপারিশ করা হয়েছে।
সংবিধান সংস্কার
সংবিধান সংস্কার কমিশনে যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় স্টেট বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. আলী রীয়াজকে প্রধান করা হয়। ক্ষমতার প্রাতিষ্ঠানিক ভারসাম্য প্রতিষ্ঠায় প্রধানমন্ত্রীর একচ্ছত্র ক্ষমতা কমানোসহ সংবিধানে আমূল পরিবর্তনের সুপারিশ করেছে কমিশন। দুই কক্ষ বিশিষ্ট সংসদ, সংসদের আসন বাড়ানো, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা, এক ব্যক্তির দুবারের বেশি প্রধানমন্ত্রী হতে না পারার সুপারিশ করা হয়েছে।
বিচার বিভাগ সংস্কার
বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশন সুপ্রিম কোর্টের স্বাধীন সচিবালয়, বিচারক নিয়োগের জন্য স্বাধীন কমিশন, হাই কোর্টের বিভাগীয় বেঞ্চ, জেলা ও উপজেলা আদালত স্থাপনসহ নানা সংস্কারের সুপারিশ করেছে। প্রধান বিচারপতি নিয়োগে জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত ও সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল গঠনের প্রস্তাব করা হয়েছে। এছাড়া, বিচারকদের শৃঙ্খলা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতের ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে।
পুলিশ সংস্কার কমিশন
প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে জমা দেয়া প্রতিবেদনে পুলিশ সংস্কার কমিশন বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশ করেছে। বল প্রয়োগ, আটক, গ্রেপ্তার, তল্লাশি, জিজ্ঞাসাবাদ, মানবাধিকার, প্রভাবমুক্ত ও জবাবদিহিমূলক বাহিনী গঠন, থানায় জিডি রেকর্ড, মামলা রুজু, তদন্ত ও ভ্যারিফিকেশনসহ বিভিন্ন বিষয়ে সংস্কারের সুপারিশ করেছে পুলিশ সংস্কার কমিশন। পুলিশের সেবামূলক ও জনবান্ধব কার্যক্রম বাড়ানোর সুপারিশ করা হয়েছে।
দুর্নীতি দমন সংস্কার কমিশন
দুদক সংস্কার কমিশনের দায়িত্ব পান ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)-এর নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান। একটি সংস্কার কমিশন গঠিত হয় এবং কমিশন দুর্নীতি প্রতিরোধে ৪৭টির মতো সংস্কার প্রস্তাব দিয়েছে। দুদককে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান, অর্থাৎ প্রাতিষ্ঠানিক স্বাধীনতা শক্তিশালীকরণকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয়া হয়েছে এই প্রতিবেদনে।
জনপ্রশাসন সংস্কার
জনপ্রশাসন সংস্কারকে একটি চলমান প্রক্রিয়া হিসেবে উল্লেখ করে কমিশন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোর উপর বেশ কিছু কাঠামোগত ও পদ্ধতিগত সংস্কারের সুপারিশ করেছে। ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য ও যোগাযোগ মন্ত্রণালয় থেকে তথ্য ও যোগাযোগ বিভাগকে আলাদা করা, ফরিদপুর ও কুমিল্লাকে বিভাগ ঘোষণা, নাগরিক পরিষেবা উন্নয়নে প্রশাসনের ডিজিটাল রূপান্তর, বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসের কাঠামো ও প্রক্রিয়াগত সংস্কারের উল্লেখ করা হয়েছে প্রতিবেদনে।