সংক্রামক রোগী শিম্পাঞ্জিদের দ্বীপ
লাইবেরিয়ার শিম্পাঞ্জিদের একটি দল গবেষণা সংক্রান্ত পরীক্ষানিরীক্ষার পর বেঁচে গিয়েছিল৷ সংক্রামক রোগে আক্রান্ত হয়ে তারা এখন উপকূলবর্তী ছয়টি দ্বীপে বাস করে৷
গবেষণায় ব্যবহার
১৯৭৪ সালে নিউ ইয়র্ক ব্লাড সেন্টারের (এনওয়াইবিসি) গবেষকেরা লাইবেরিয়ার পশ্চিম উপকূলে একটি গবেষণাগার তৈরি করেছিলেন৷ এনওয়াইবিসি আমেরিকার অলাভজনক একটি ব্লাড ব্যাংক সংস্থা৷ লাইবেরিয়া বায়োমেডিকেল রিসার্চ ইনস্টিটিউটের সঙ্গে তারা কাজ করত৷ শিম্পাঞ্জিদের ফাঁদে ফেলে তাদের উপর গবেষণা ও ওষুধের পরীক্ষানিরীক্ষা চালানো হত৷
খাঁচাবন্দি জীবন
প্রাণীগুলিকে সে দেশের রাজধানী মনরোভিয়ার বাইরে রাখা হয়েছিল৷ ভিল্যাব ২ গবেষণাগারে খাঁচায় বন্দি থাকত শিম্পাঞ্জিগুলি৷
সংক্রামক রোগের গবেষণা
গবেষকরা প্রাণীগুলিকে হেপাটাইটিস বি, রিভার ব্লাইন্ডনেস (পরজীবীবাহিত চোখের রোগ)-এর মতো নানা অসুখের জীবাণু দিয়ে সংক্রমিত করতেন৷ চিকিৎসার কার্যকারিতা দেখতে প্রাণীগুলির উপর পরীক্ষা শুরু করেন গবেষকেরা৷
শুধু নৌকায়
মোট ৮৫টি শিম্পাঞ্জি ছিল ওই দ্বীপে৷ ১৯৯০ এবং ২০০০ সালের প্রথম দিকে লাইবেরিয়ার দুটি গৃহযুদ্ধের সময় পরীক্ষাগারের কাজে ব্যাহত হয়েছিল৷ ২০০৫ সালে গবেষণা বন্ধ করে দেওয়া হয়৷ শিম্পাঞ্জিগুলিকে ধীরে ধীরে ফার্মিংটন নদীর মোহনার ছয়টি জনবসতিহীন দ্বীপে স্থানান্তরিত করা হয়৷ বর্তমানে পশু অধিকার রক্ষা কর্মীরা নৌকায় করে শিম্পাঞ্জিগুলির খাওয়া-দাওয়া সরবরাহ করেন৷
ব্যয়বহুল যত্ন
হিউম্যান সোসাইটির কর্মীরা প্রাণীগুলির জন্য ফলমূল এবং পানীয় জলের বালতি নিয়ে আসেন৷ এই দ্বীপে দুয়েরই অভাব রয়েছে৷ এনওয়াইবিসি শিম্পাঞ্জিদের যত্নের জন্য আর্থিক সহায়তার প্রতিশ্রুতি দিলেও ২০১৫ সালে তা বন্ধ করে দিয়েছিল৷ স্বেচ্ছাসেবীদের প্রতিবাদের ফলে ২০১৭ সালে আবারও প্রায় ৫০ কোটি টাকা দেয় তারা৷ তবে তা যথেষ্ট নয়৷ হিউম্যান সোসাইটি জানিয়েছে, শিম্পাঞ্জিগুলি ৩০-৪০ বছর পর্যন্ত বাঁচতে পারে৷
বংশরক্ষা
বর্তমানে বাচ্চা আর বয়স্ক মিলিয়ে ৬৫টি শিম্পাঞ্জি রয়েছে সেখানে৷ কোনও মানুষকে দ্বীপের কাছে দেখলে তারা তেড়ে যায়৷ অপরিচিত ব্যক্তিদের দিকে পানি ছিটায়, কখনো চিৎকার করে৷ এদের অন্য কোথাও আনা অন্য প্রাণীদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ৷ কারণ তারা এখনও সংক্রামক রোগের জীবাণু বহন করছে৷
নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখা
শিম্পাঞ্জিগুলি সাঁতার জানে না৷ তাই তারা নদীর দিকে খুব একটা আসে না৷ তবে খাবার নিয়ে আসা স্বেচ্ছাসেবীরা প্রতিরক্ষামূলক পোশাক পরে থাকেন এবং প্রাণীগুলির থেকে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখেন৷ এই স্বেচ্ছাসেবীদের মাত্র কয়েকজন অনেক বছর ধরে এই দ্বীপে আসছেন৷ তাদের সঙ্গে প্রাণীগুলির বন্ধুত্ব হয়ে গিয়েছে৷
সাফল্যের তেতো স্বাদ
শিম্পাঞ্জিদের উপর গবেষণা সফল হয়েছিল৷ হেপাটাইটিস বি ভ্যাকসিন এবং হেপাটাইটিস সি রোগ নির্ণয়ের ক্ষেত্রে ওই গবেষণা আশার আলো দেখেছিল৷ ২০০৫ সাল পর্যন্ত ওই গবেষণাগারের দায়িত্বে ছিলেন বেটসি ব্রটম্যান৷ ২০১৪ সালে একটি সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘‘শিম্পাঞ্জিদের পরীক্ষায় ব্যবহার করা উচিত হয়নি৷ স্বেচ্ছাসেবীরাই ঠিক বলেছিলেন, আমি এখন এটা বেশ বুঝতে পারি৷’’
প্রতিবেদন: ক্লাউডিয়া ড্যান/আরকেসি