লিবিয়ায় অ্যাকোয়াপনিক্স পদ্ধতিতে চাষ
৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে লিবিয়ায় খরা বাড়ছে৷তাই ফসল ফলানো কঠিন হয়ে উঠছে৷ এই অবস্থায় দেশটির এক কৃষক আবদুল্লাহ এলফান্দি অ্যাকোয়াপনিক্স পদ্ধতিতে চাষ করে সফল হচ্ছেন৷
ইউরোপীয় ইউনিয়নের কাছ থেকে পাওয়া অর্থ সহায়তা দিয়ে চাষাবাদ শুরু করেছিলেন তিনি৷ এলফান্দি জানান, ‘‘আমাদের খামার ‘হাইড্রোহার্ভেস্ট'এ আমরা সব ধরণের সবুজ শাকসবজি চাষ করি — লেটুস, আরগুলা, পুদিনা, তুলসী, পাতাকপি ইত্যাদি৷ আমরা গভীর জলের চাষপদ্ধতিব্যবহার করি, সে কারণে গাছ পুষ্টিসমৃদ্ধ জলে জন্মায়৷''
এলফান্দির খামারটি কেমন?
এলফান্দির খামারটি লিবিয়ার রাজধানী ত্রিপোলির কাছে অবস্থিত৷ খামারের পানি আসে একটি জলাধার থেকে, যা অনেক দক্ষতার সঙ্গে ব্যবহার করা হয়৷ মাছের ট্যাঙ্ক এবং ফসলের মধ্যে পানি সঞ্চালন করা হয়৷
লিবিয়ায় খামারগুলো সাধারণত কীটনাশক ব্যবহার করে- যা মানুষের স্বাস্থ্যের পাশাপাশি পরিবেশেরও ক্ষতি করতে পারে৷
কিন্তু এলফান্দির খামারে কীটনাশক ব্যবহার করতে হয় না, রাসায়নিক সারও দিতে হয় না৷ সেখানে অর্গানিক পদ্ধতিতে মাছ ও সবজি চাষ করা হয়৷ পানিও কম খরচ হয়৷ তাই এটি লিবিয়ার মতো মরুভূমির দেশগুলোর জন্য একটি টেকসই বিকল্প হতে পারে৷
লিবিয়ার মিসরাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আবদেল মজিদ বশির মালিতান বলেন, ‘‘একজন পরিবেশ বিজ্ঞানী হিসেবে আমরা এই ধরণেরইকো-ফার্মিং দৃঢ়ভাবে সমর্থন করি৷ এতে রাসায়নিক সার ব্যবহারের দরকার পড়ে না৷ এমনকি বাজারে যে জৈব সার পাওয়া যায়, যার উৎপাদন প্রক্রিয়া খুব ভালোভাবে নিয়ন্ত্রিত হয় না, সেই সারেরও প্রয়োজন হয় না৷''
এলফান্দি যখন ২০২৩ সালে তার অ্যাকোয়াপনিক্স খামার চালু করেন তখন তার বয়স ছিল মাত্র ২৪ বছর৷ শুরুতে বিশাল ব্যয় এবং প্রযুক্তিগত চ্যালেঞ্জ থাকা সত্ত্বেও তিনি ইউরোপীয় ইউনিয়নের ‘লিবিয়া স্টার্টআপ প্রোগ্রাম' থেকে পাওয়া ২০ হাজার ইউরো অনুদান দিয়ে প্রকল্পটি শুরু করেছিলেন৷
ক্রমশ সিস্টেমকে উন্নত করে চলেছেন তিনি:
তিনি এখন তার অর্গানিক পণ্য ত্রিপোলির অনেক ক্যাফেতে বিক্রি করেন৷ কিন্তু তার জন্য এটি কেবল শুরু৷ তিনি লিবিয়ায় খাদ্য নিরাপত্তা উন্নত করতে সাহায্য করতে চান, এবং অন্যদের তার পথ অনুসরণ করতে অনুপ্রাণিত করতে চান৷
এলফান্দি বলেন, ‘‘এখনও সচেতনতার অভাব আছে, এবং লিবিয়ার বেশিরভাগ মানুষের কাছে খরচ করার মতো খুব বেশি অর্থ নেই৷ তবে আমি বিশ্বাস করি পরিবর্তন আসছে৷ এরইমধ্যে আমরা উন্নতির লক্ষণ দেখতে পাচ্ছি৷ এবং যখন পরিস্থিতি বদলাবে তখন একটি ভালো বাজার তৈরির জন্য আমরা প্রস্তুত থাকতে চাই৷''
এলফান্দি ক্রমাগত তার সিস্টেমকে আরও উন্নত করে চলেছেন৷ এখন তিনি অ্যাজোলাও চাষ করছেন৷ ‘মশা ফার্ন' নামে পরিচিত এই উদ্ভিদ পানির উপরিভাগকে ঢেকে রাখে, বাষ্পীভবন হ্রাস করে এবং ডিম পাড়া থেকে মশাকে বিরত রাখে৷
এটি প্রোটিনে ভরপুর, তাই এটি থেকে মাছের জন্য ভালো খাবার পাওয়া যায়৷ ভবিষ্যতে লিবিয়ার কৃষিতে জৈব অ্যাকোয়াপনিক্স একটি বড় ভূমিকা পালন করতে পারে৷ সেখানে উদ্ভাবন শুধু এক স্মার্ট বিষয় নয়, অপরিহার্যও বটে৷
ইসলাম আলাট্রাশ, ভল্ফ গেবহার্ট/জেডএইচ