লিবিয়া থেকে দেশে ফিরেছেন আরো ১৬৭ বাংলাদেশি
১০ এপ্রিল ২০২৫লিবিয়ার রাজধানী ত্রিপোলির বাংলাদেশ দূতাবাস জানিয়েছে, বাংলাদেশ সরকার ও লিবিয়ার ধারাবাহিক ও সমন্বিত প্রচেষ্টায় ১৬৭ জন বাংলাদেশি নাগরিককে জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম)-এর সহযোগিতায় বুধবার (৯ এপ্রিল) লিবিয়া থেকে দেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে৷
লিবিয়ার বুরাক এয়ারের একটি ফ্লাইটে (ইউজেড ২২২) বাংলাদেশিদের নিজ দেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে৷ বৃহস্পতিবার সকালে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে ফ্লাইটটি৷
লিবিয়ার ত্রিপোলিতে বাংলাদেশ দূতাবাসের একজন কর্মকর্তা বিষয়টি ডয়চে ভেলেকে নিশ্চিত করেছেন৷
তিনি জানিয়েছেন, দেশ ফেরত পাঠানো বাংলাদেশির মধ্যে ১৫৮ জন বেনগাজীর একটি আটককেন্দ্রে আটক ছিলেন৷
বাংলাদেশ দূতাবাস জানিয়েছে, বেনগাজির আটককেন্দ্র থেকে বাংলাদেশিদের উদ্ধারের পর তাদের তথ্য যাচাই-বছাই করা হয়েছে৷ এরপরই এসব অনিয়মিত বাংলাদেশি অভিবাসীদের জন্য ভ্রমণ অনুমতি বা ট্রাভেল পারমিট (আউট পাস) ইস্যু করা হয়৷
স্থানীয় কর্তৃপক্ষের বহির্গমন অনুমতি নিয়েই এসব বাংলাদেশিদের দেশে পাঠানো সম্ভব হয়েছে বলেও জানিয়েছে দূতাবাস৷
জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে যেসব অভিবাসী ইউরোপে পৌঁছাতে চান, তাদের কাছে উত্তর আফ্রিকার যুদ্ধবিদ্ধস্ত দেশ লিবিয়া অন্যতম প্রধান ট্রানজিট বা প্রস্থান পয়েন্ট৷ বাংলাদেশিরাসহ সাব-সাহারা আফ্রিকার বিভিন্ন দেশ, মধ্যপ্রাচ্য, সিরিয়া, আফগানিস্তান, পাকিস্তান ও এশিয়ার বিভিন্ন দেশের নাগিরকেরাও ইউরোপ পৌঁছানোর আশায় ভিড় জমান লিবিয়ায়৷
২০১১ সালে ন্যাটো-সমর্থিত বিদ্রোহে লিবিয়ার দীর্ঘদিনের স্বৈরশাসক মুয়াম্মার গাদ্দাফিকে উৎখাত এবং হত্যা করা হয়৷ এরপর থেকে লিবিয়ায় সহিংসতা এবং অস্থিতিশীলতা নিত্যদিনের ঘটনায় পরিণত হয়েছে৷ সেখান থেকে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টায় আছে দেশটি৷
কিন্তু লিবিয়া এখনো দুই ভাগে বিভক্ত৷ একপক্ষে আছে ত্রিপোলিতে জাতিসংঘ স্বীকৃত সরকার৷ অন্যপক্ষে আছে সামরিক শক্তিধর খলিফা হাফতারের নেতৃত্বাধীন পূর্বাঞ্চলীয় প্রশাসন৷
ত্রিপোলি থেকে বেনগাজির দূরত্ব সড়ক পথে এক হাজার কিলোমিটারেরও বেশি৷ আর বেনগাজি খলিফা হাফতারের নেতৃত্বাধীন পূর্বাঞ্চলীয় প্রশাসনের অংশ৷
ডয়চে ভেলেকে একটি সূত্র জানিয়েছে, ভূমধ্যসাগর পেরিয়ে ইউরোপ পৌঁছানোর চেষ্টারত বাংলাদেশিদের বেশিরভাগই বেনগাজি হয়েই লিবিয়া ঢোকেন৷ কারণ, ভিসা ছাড়া কিংবা অনিয়মিতভাবে ত্রিপোলিতে আসা তুলনামূলক কঠিন৷
গত মার্চে তিনটি ফ্লাইটে অন্তত পাঁচশ জন বাংলাদেশিকে নিজ দেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে৷ এদের মধ্যে টিউনিশিয়া থেকে পাঠানো হয়েছে ১৭ জনকে৷
দেশে ফেরত যাওয়া অনেক বাংলাদেশি ত্রিপোলির তাজুরা আটককেন্দ্রেও বন্দি ছিলেন৷ সেখান থেকে উদ্ধারের পরই মতামতের ভিত্তিতে তাদের দেশে ফেরত পাঠানোর উদ্যোগ নেয়া হয়৷
২০১৭ সাল থেকে এখন পর্যন্ত ১০ হাজারের বেশি বাংলাদেশি নাগরিককে লিবিয়া থেকে দেশে ফেরানো হয়েছে৷ ২০২৩ সালের জুলাই থেকে এখন পর্যন্ত অন্তত পাঁচ হাজার বাংলাদেশি নাগরিককে নিরাপদে প্রত্যাবাসন করা হয়েছে বলেও জানিয়েছে দূতাবাস৷
টিএম/এসিবি