রেলে নিরাপত্তা
৩১ জুলাই ২০১২‘এই যে দুর্ঘটনাগুলো ঘটছে, তার পিছনে একটাই কারণ হচ্ছে, রেলে যেভাবে নিরাপত্তার নিয়মকানুন অনুসরণ করা উচিত, যেভাবে দেখাশোনা হওয়া উচিত রেলের সমস্ত যন্ত্রপাতির, তার সিগনাল, তার রোলিং স্টক, তার পার্মানেন্ট ওয়ে, সেগুলো ভীষণভাবে অবহেলিত হচ্ছে,' ডয়চে ভেলে'কে বললেন সিপিএম সাংসদ বাসুদেব আচার্য্য৷
আশির দশক থেকে বিভিন্ন কমিটির সদস্য হিসেব রেলওয়ের সঙ্গে যুক্ত তিনি৷ নিরাপত্তা ক্ষেত্রে পরিস্থিতি খুব খারাপ জায়গায় দাঁড়িয়েছে, বলে তাঁর ধারণা৷ আসল সমস্যা হল রেলপথ, সিগনাল প্রণালী এবং বগি ও ওয়াগনগুলির মেইন্টেনান্স বা পরিচর্যা, এবং ক্ষেত্রবিশেষে আধুনিকীকরণ৷ এবং তার জন্য প্রয়োজন অর্থের৷
‘যেমন ধরুন কোচের মেইন্টেনান্সের সময় কিছু জিনিস রিপ্লেস করতে হবে৷ সে সব জিনিস সাপ্লাই হচ্ছে না৷ পুরনো জিনিসকেই আবার সেখানে লাগানো হচ্ছে৷ ফলে দুর্ঘটনা ঘটছে৷' এছাড়া রেলের নিরাপত্তা খাতে এখন প্রায় এক লাখ চাকুরি খালি, বলে জানালেন বাসুদেব আচার্য্য৷ রানিং স্টাফকে ১৬, ১৭ কি ২০ ঘণ্টা একটানা কাজ করতে হয়৷ এরপর সেই কর্মীদের দৈহিক ও মানসিক অবস্থা কি দাঁড়ায়, তা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন বাসুদেব আচার্য্য৷
ভাড়া বাড়িয়ে নিরাপত্তার অর্থায়ন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, রেলের মূল রোজগার যাত্রীবহন থেকে নয়, মাল পরিবহণ থেকে৷ কাজেই যাত্রীদের উপর আরো চাপ বাড়িয়ে লাভ নেই৷ অপরদিকে ভারতে মাল পরিবহণের মাশুল এমনিতেই বিশ্বের অপরাপর দেশের চেয়ে বেশি৷ কাজেই মাশুল আরো বাড়ালে মাল আরো বেশি করে সড়ক পরিবহণের দিকে চলে যাবে৷ বর্তমানে রেল বছরে ৯৯ কোটি টন মাল পরিবহণ করে৷ সেই পরিমাণকে ১৫০ কোটি টনে নিয়ে যাওয়া সম্ভব, বলে জানান বাসুদেব আচার্য্য৷
অথচ বাস্তবে যা ঘটছে তা হল, লাইন ক্যাপাসিটি না বাড়িয়ে নতুন ট্রেনের সংখ্যা বাড়ানো হচ্ছে৷ দুর্ঘটনার ঝুঁকি কমানোর জন্য নতুন প্রযুক্তি যে নেই, এমন নয়৷ কিন্তু তা প্রয়োগ করার জন্য অর্থের প্রয়োজন৷ সে অর্থ হয় সরকারি বাজেট থেকে, নয়তো রেলের নিজস্ব আয়বৃদ্ধি থেকে আসতে পারে৷ কিন্তু সে ধরণের কোনো পরিকল্পনা রেল মন্ত্রণালয় কিংবা রেলওয়ে বোর্ডের নেই, বলে অভিযোগ করেন বাসুদেব আচার্য্য৷
সাক্ষাৎকার: অরুণ শঙ্কর চৌধুরী
সম্পাদনা: দেবারতি গুহ