রুশ গোলায় লাগা আগুন যেভাবে নেভান ইউক্রেনীয় দমকলকর্মীরা
আপৎকালীন পরিস্থিতিতে কাজের অভিজ্ঞতা ছিল ইউক্রেনের দমকলকর্মীদের। অগ্নিকাণ্ড মোকাবেলার জিনিসপত্র থাকতো তাদের কাছে। কিন্তু রুশ আগ্রাসন কঠিন কাজকে আরো কঠিন করে দিয়েছে।
জ্বলছে ঘর, পুড়ছে বাড়ি
সুবিশাল এক অ্যাপার্টমেন্টে রাশিয়ার গোলাবর্ষণের ফলে আগুন লাগে। খারকিভের আশেপাশের এলাকাগুলিতেও গোলাবর্ষণ চলে। যুদ্ধপীড়িত ইউক্রেনের দমকলকর্মীরা এখন জানেন, একাধিক বাড়িতে আগুন লাগলে কোনটিকে আগে বাঁচাতে হবে, কাদের প্রথমে উদ্ধার করতে হবে এবং একই সময়ে কিলোমিটার দূরে কারখানায় আগুন লাগলে, তা কীভাবে সামলাতে হবে।
একযোগে হার না মানা লড়াই
ইউক্রেনের খারকিভ শহরের একটি দমকলকেন্দ্রের প্রধান রোমান কাশানভ রয়টার্সকে বলেন, "একই সময়ে ছয় বা সাতটি অ্যাপার্টমেন্ট জ্বলতে দেখছেন। অথচ আপনি জানেন না কিছু লোক আদৌ কোথায় রয়েছে। এদিকে আপনার কাছে মাত্র তিনটি ট্রাক আছে। এটা একটা লটারির মতো।"
পরিবারকে কবে দেখবেন
গোলাবর্ষণের মাঝেই রোমান কাশানভদের মনে পড়ে পরিবারকে। তার সাত বছরের শিশুকন্যা ভিওলেত্তা, স্ত্রী মারিনা জার্মানিতে রয়েছেন। জীবন মৃত্যুর মধ্যে লড়াই করতে করতে ভিডিও কলে প্রিয়জনের মুখ দেখেন কাশানভ। তার কথায়, "পরিস্থিতি ইরাক, আফগানিস্তানের মতো। কোথায় কখন বোমা হামলা হবে কেউ জানে না।"
লড়ছেন নারী কর্মীরাও
মার্গারিটা এবং অন্যান্য দমকল কর্মীরা কাজের মাঝে কখনো সখনো জানলার বাইরে চোখ রাখেন। কিন্তু কালো পর্দায় ঢাকা তাদের কার্যালয় ভবনটি। যাতে সহজে সেটি লক্ষ্য করে শত্রুশিবির আক্রমণ করতে না পারে। উদাস চোখে চেয়ে থাকেন মার্গারিটা।
মাঝরাতে কাজের ডাক
ঝুঁকি নেওয়ার জন্য অতিরিক্ত অর্থ পান দমকলকর্মীরা। কাজের ধরন বদলে যায়, কর্মীরা যাতে সবাই একটু বিশ্রাম নিতে পারেন, সে কথাও মাথায় রাখা হয়। কিন্তু মাঝরাতে ডাক এলেই আলেকজান্ডারের মতো কর্মীরা মানুষকে বাঁচাতে বেরিয়ে পড়েন। কাজের মাঝে প্রশিক্ষণ নেন, ব্যায়াম করেন কারণ সুস্থ থাকতেই হবে।
অন্ধকারে কাজ
অগ্নিদগ্ধ বাড়িগুলিতে কাজ করতে হয় তাদের। অন্ধকার, সামান্য টর্চের আলো ভরসা। তারা খতিয়ে দেখেন, গোলার আঘাতের ফলে ভাগ্যজোরে কেউ বেঁচে রয়েছেন কিনা। কাশানভ বলেন, তিনি খুশি স্ত্রী এবং সন্তান নিরাপদে রয়েছে। প্রতি রাতে মেয়েকে গল্প বলে ঘুম পাড়িয়ে দেয়ার কথা মনে পড়ে তার।
লক্ষ্যে অবিচল
বুলেটরোধক পোশাক, জ্যাকেট সবমিলিয়ে নিজের ওজনের থেকে প্রায় ২০ কেজি বেশি ওজন সমেত চলাফেরা করতে হয় তাদের। খারকিভের আপৎকালীন পরিষেবা বিভাগের গণণাধ্যম সচিব ইভজেনি ভাসিলেঙ্কো আগস্টে বলেছিলেন, যুদ্ধের শুরু থেকে, দমকলকর্মীরা ১৭০০ বার খারকিভের নানা এলাকায় গোলার হানার ফলে আগুন নিয়ন্ত্রণ করেছেন।
খবর পড়েন মোবাইলে, ক্লান্তি আসে
ডিমা আর নিকোলাই বেশ পরিশ্রান্ত। ছবি দেখেই তা বোঝা যাচ্ছে। যুদ্ধ থেমে যাওয়ার আশা নিয়ে মোবাইলে খবরে চোখ রাখেন তারা। তারা জানেনা না কবে এই পরিস্থিতি থেকে মুক্তি মিলবে। মৃত শিশুর দেহ কিংবা অনাথ হয়ে যাওয়া শিশুর বাবা মায়ের দেহ দেখে বিচলিত হয়ে পড়েন কাশানভও। মানসিকভাবে একেবারে বিধ্বস্ত তিনি, জানান কাশানভ।
মন শান্ত রাখার চেষ্টা
সামান্যতম সুযোগ পেলে একটু মন হালকা রাখার চেষ্টা করেন কেউ কেউ। মোবাইলে গান শোনেন হয়তো কিংবা মনকে ব্যস্ত রাখার চেষ্টা। মৃতদেহ দেখতে দেখতে চোখে জল চলে আসে দমকলকর্মীদের।
প্রাণের ঝুঁকি, অপেক্ষা পরিস্থিতি বদলের
এতকিছুর মাঝেও লড়াই ছাড়ছেন না তারা, আশা রাখছেন পরিস্থিতির বদল হবে, প্রিয়জনকে ফিরে পাবেন এই দমকলকর্মীরাও। এই সাইনবোর্ডটা লাগাতে ইগর তার বন্ধুদের সাহায্য করছেন। এখানে লেখা আছে, শুভ সন্ধ্যা, আমরা ইউক্রেন থেকে এসেছি।
আরকেসি /এসিবি (রয়টার্স)