যোগ্য-অযোগ্যের তালিকা দিলো না এসএসসি, রাতভর বিক্ষোভ শিক্ষকদের
প্রতিশ্রুতি দিয়েও সোমবার সন্ধ্যা ছয়টার মধ্যে যোগ্য-অযোগ্যের তালিকা দিলো না এসএসসি। শিক্ষকরা প্রতিবাদ চালিয়ে যাচ্ছেন।
প্রতিশ্রুতি রাখলো না এসএসসি
শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুর সঙ্গে শিক্ষকদের বৈঠকে এসএসসি প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, তাদের কাছে সিবিআইয়ের দেয়া তালিকা আছে। তারা সেই তালিকা সোমবার প্রকাশ করে দেবে। ব্রাত্য বসুও জানিয়েছিলেন, তালিকা প্রকাশ করা হবে। তারা আইনজ্ঞদের সঙ্গে পরামর্শ করার জন্য কয়েকটা দিন সময় চেয়ে নিচ্ছেন।
দুপুর থেকেই শিক্ষকরা এসএসসি-মুখি
দুপুর থেকেই শিক্ষকরা বিধাননগরে এসএসসি-র অফিসের সামনে পৌঁছাতে শুরু করেন। তারা এসএসসি অফিসের সামনে বসে পড়েন। অপেক্ষা করতে থাকেন, কখন তারা প্রতিশ্রুতি মেনে তালিকা প্রকাশ হবে যোগ্য ও অযোগ্য শিক্ষকদের।
তালিকা প্রকাশ হলো না
দুপুর গড়িয়ে বিকেল হলো, বিকেল শেষ হয়ে সন্ধ্যা, তারপর রাত, তালিকা আর প্রকাশ করা হলো না। মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়লেন অনেক শিক্ষক। অনেক আশা নিয়ে তারা এসেছিলেন। বুঝতে পারলেন, তাদের আশায় ছাই ঢেলে দিয়েছে এসএসসি।
পুলিশের সঙ্গে ধাক্কাধাক্কি
শিক্ষকরা সিদ্ধান্ত নেন, এসএসসি চেয়ারম্যানকে তারা অফিস থেকে বেরোতে দেবেন না। উত্তেজিত শিক্ষকরা এসএসসি অফিসের ভিতরে ঢুকতে চান। তাদের সঙ্গে পুলিশের ধস্তাধস্তি শুরু হয়। পুলিশ শিক্ষকদের এসএসসি অফিসের গেট পেরিয়ে ঢুকতে দেয়নি। তবে আগের দিনের মতো আর শিক্ষকদের লাথি মারেনি পুলিশ।
উত্তেজনা বাড়ে
পুলিশের সঙ্গে ধস্তাধস্তি, এসএসসি-র তরফে তালিকা প্রকাশ না করার সিদ্ধান্তে উত্তেজনা বাড়ে। শিক্ষকরা জানিয়ে দেন, দাবিপূরণ না হলে তারাও বিক্ষোভ এবং অবস্থান থেকে সরে আসবেন না। শিক্ষকরা বলেন, তারা সব হারিয়ে পথে বসেছেন। তাদের পিঠ দেওয়ালে ঠেকেছে। ফলে তাদের আন্দোলন ছাড়া আর কোনো উপায় নেই। তারা জানান, তারা প্রতারিত বোধ করছেন।
এসএসসি-র বিবৃতি
সোমবার গভীর রাতে বিবৃতি দেয় এসএসসি। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “২০১৬ সালে শিক্ষক নিয়োগের বিষয়ে স্পষ্ট করে বলা হচ্ছে যে, এসএসসি সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মেনে চলবে। এবং বিভাগ কর্তৃক জানানো হচ্ছে, যে শিক্ষকেরা চাকরি করেছেন, তাঁদের বেতন বর্তমান ব্যবস্থা অনুসারে বিতরণ করা হবে।” কিন্তু প্রতিশ্রুতি দিয়েও যোগ্য ও অযোগ্য শিক্ষকদের তালিকা কেন দেয়া হলো না, সেই বিষয়ে কিছুই জানানো হয়নি।
শিক্ষামন্ত্রী যা বললেন
শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু বলেছেন, “যারা বঞ্চিত শিক্ষক সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মতো তাদের মাইনে পাওয়া নিয়ে কোনও সমস্যা নেই। এই আন্দোলন অর্থহীন। ওখানে থাকা অনেকে হয়তো অযোগ্য। সুপ্রিম কোর্ট কোনো গাইডলাইন না দিলে আমরা কিছু বলতে পারি না। আমরা রিভিউ পিটিশনের জন্য যাচ্ছি। সুপ্রিম কোর্ট আমাদের গাইডলাইন দিয়ে দেবে। আমরা যে ভাবে এগোচ্ছি, তাতে আস্থা রাখা উচিত। আস্থা রাখবেন কি রাখবেন না, সেটা তাদের ব্যাপার।’’
কেন প্রতিশ্রুতি দেয়া হলো?
শিক্ষামন্ত্রীর এই বক্তব্যের পর শিক্ষকরা প্রশ্ন তোলেন, তাহলে কেন যোগ্য ও অযোগ্যদের তালিকা প্রকাশের প্রতিশ্রুতি দেয়া হলো? কথা দিয়েও এখন কেন সুপ্রিম কোর্ট দেখাচ্ছেন শিক্ষামন্ত্রী? ওই তালিকা তো সিবিআই সুপ্রিম কোর্টকেও দিয়েছে। কেন এখন তৃতীয় কাউন্সেলিং পর্যন্ত তালিকা প্রকাশের কথা বলা হচ্ছে? এতে তো অযোগ্যদের সুবিধা করে দিতে চায় সরকার?
সারা রাত নজর রাখা হলো
সারা রাত এসএসসি-র সদরদপ্তরের সামনে কড়া নজর রাখলেন শিক্ষকরা। ভিতরে থাকা এসএসসি-র চেয়ারম্যান যাতে দপ্তর থেকে চলে যেতে না পারেন, তা নিশ্চিত করা হলো। সেখানে মাঝেমধ্যে উত্তেজনা ছড়ালো। ভিতরে আটকে থাকা কর্মীদের জন্য খাবার যাচ্ছিল। তা ফেলে দেন শিক্ষকরা। বলেন, তারা না খেয়ে আছেন, কর্মীদের বাইরে থেকে খাবার নেয়া যাবে না।
কিছু শিক্ষক রাস্তায় শুয়ে
রাত বাড়তে থাকায় কিছু শিক্ষক রাস্তায় শুয়ে পড়লেন। বাকিরা প্রহরা দিলেন। যাদের স্কুলে পড়াবার কথা, তাদের এইভাবে রাস্তায় নামতে হলো।
কোনো ব্যবস্থা নেই
আন্দোলনরত শিক্ষকদের জন্য অস্থায়ী শৌচাগার-সহ কোনো ব্যবস্থাই নেই। প্রচন্ড গরমের মধ্যে তারা রাস্তায় বসে, শুয়ে আছেন। কিছু মানুষের দুর্নীতির জন্য ২৬ হাজার শিক্ষকের চাকরি গেছে। এই দুর্নীতি তাদের নামিয়ে এনেছে রাস্তায়।
অবস্থান চলছে
রাত শেষ হলো। সকালের আলো ফুটলো। শিক্ষকদের অবস্থান চলছে। শিক্ষকরা জানাচ্ছেন, তারা বিক্ষোভ দেখাবেনই। দাবি না পূরণ হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে।