যুদ্ধকে লজ্জা দিতে যেখানে বেজে ওঠে সংগীতের সুর
বিধ্বস্ত গাজার বাতাসে ভেসে বেড়ায় মানুষের কান্না, যন্ত্রণার খতিয়ান৷ তার মধ্যেও বেঁচে থাকার রসদ খোঁজেন তরুণ সংগীতশিল্পীরা৷ শান্তি খোঁজেন সুর ও গানের মধ্যে দিয়ে৷ খোঁজেন আশার আলোও৷ বিস্তারিত ছবিঘরে...
ভয়ের বিরুদ্ধে আশার লড়াই
গাজা সিটি দখল অভিযান শুরু করেছে ইসরায়েল৷ যুদ্ধে ভেঙেছে গাজা কলেজের ঘর৷ গুলিবিদ্ধ দেওয়াল, ভাঙা জানলা৷ মোহাম্মদ আবু মেহেদির কাছে এ আর নতুন কিছু নয়৷ তাই এমন পরিস্থিতিতেও তিন ছাত্রী ও এক ছাত্রকে তিনি শেখাতে পারেন গিটার৷ মেহেদি মনে করেন, এই দুর্বিষহ সময়ে সংগীত মানুষকে একটু হলেও মানসিক শান্তি দিতে পারে৷
হার না মানা এক শিক্ষক
২০২৪ সালের শুরুতে যুদ্ধবিধ্বস্ত দক্ষিণ গাজায় সংগীতের ক্লাস নিতে শুরু করেন আহমদ আবু আমশা৷ এডওয়ার্ড সাইদ ন্যাশনাল কনজার্ভেটরি অব মিউসিক-এর অন্যতম শিক্ষক তিনি৷ দক্ষিণ গাজার যুদ্ধের আতঙ্কগ্রস্ত ভীত কিশোর-কিশোরীদের গান ও বাজনা শেখাতে শুরু করেন আহমদ৷
‘সংগীত আমাকে আশা জোগায়’
‘‘গান-বাজনা আমাকে আশা জোগায় ও সব উৎকণ্ঠা দূর করে৷’’ জানিয়েছে ১৫ বছরের রিফান আল কাসাস৷ ন‘বছর বয়স থেকে সে আরবি বাদ্যযন্ত্র ‘উদ’ বাজাতে শিখেছে৷ তার আশা, একদিন সে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বাজাবে৷
পরিস্থিতি ভয়াবহ
সংগীত শিক্ষকের তাঁবু থেকে বেরোলেই চোখের সামনে বিধ্বস্ত গাজা শহরের চিত্র৷ আপৎকালীন আশ্রয়শিবিরে শত শত মানুষ৷ একটু খাবার, ওষুধ, একফোঁটা জলের জন্য হাহাকার৷ শিক্ষক ও শিক্ষার্থী উভয়েই ক্লান্ত, ক্ষুধার্ত৷ কেউ কেউ ক্লাসে আসতেও পারেন না৷ দৃশ্যটি ১২ আগস্টের৷
মৃত্যু ও যন্ত্রণাকে হারাতে
ধ্বংস হয়ে যাওয়া স্কুলবাড়ির সামনে নিজের বাদ্যযন্ত্র উদ নিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছেন ১৮ বছরের ইউসেফ সাদ৷ স্কুলের বাকি সব বাদ্যযন্ত্রই ধ্বংস হয়ে গেছে৷ ১৮ বছরের এই তরুণের স্বপ্ন, ‘‘একদিন আমি নিশ্চয়ই শিশুদের সংগীতের পাঠ দিতে পারবো, যাতে তারা ধ্বংসলীলা সত্ত্বেও সৌন্দর্যকে বেছে নেয়৷’’
মঞ্চ, শ্রোতা ও দর্শক
পরিস্থিতি ভয়াবহ, কিন্তু সংগীত তো সবসময়েই শ্রোতাকে খুঁজে নেয়৷ যুদ্ধবিধ্বস্ত শহরে একটি তাঁবুর মধ্যেই অনুষ্ঠানের আয়োজন৷ সে অনুষ্ঠানের শেষে প্রশংসা ও হাততালিতে ফেটে পড়ে সেই তাঁবু৷ ২০ বছরের এক তরুণ শিক্ষার্থী জানান, ‘‘সংগীতের নতুন ধরন নিয়ে জানতে আমার ভালো লাগে৷ তার চেয়েও ভালো লাগে রক (সংগীতের এক বিশেষ ঘরানা)৷’’ দৃশ্যটি ৪ আগস্টের৷
এক মুহূর্তের আনন্দ
কোনোরকমে খাড়া করা মঞ্চে শিশুদের কচি গলার গান যেন হারিয়ে দেয় প্রতিদিনের বিস্ফোরণের শব্দকে৷ দৃশ্যটি ৪ আগস্টের৷
যন্ত্রণা বনাম সংগীত
ওসামা জাহৌজ ‘নেই’ নামক একটি বাঁশি বাজান৷ মূলত আরবি, ফারসি ও তুর্কী সংগীতে এই বাঁশি বাজানো হয়৷ তার কথায়, ‘‘ বোমা বিস্ফোরণ তীব্র হলে আমি শ্বাসের ব্যায়াম করি, বা খুব নিচু লয়ে বাঁশি বাজাই৷ বাজানোর সময় মনে হয় আমি আবার স্বাভাবিকভাবে শ্বাস নিতে পারছি৷ নেই যেন আমার যন্ত্রণাকে ধীরে ধীরে মুছে দিচ্ছে৷’’
ক্লাউডিয়া ডেন/এসটি