যুক্তরাষ্ট্র এবং দক্ষিণ আফ্রিকা ‘মুক্ত’ জিম্বাবোয়ের জন্য কাজ করবে
৮ আগস্ট ২০০৯এ-যাত্রায় আফ্রিকার সাতটি দেশ সফর করবেন হিলারি ক্লিন্টন৷ তার মধ্যে দক্ষিণ আফ্রিকা নিঃসন্দেহে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ৷ এর পটভূমিতে রয়েছে রাজনীতির রসায়ন৷ দক্ষিণ আফ্রিকার প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট থাবো এমবেকি এবং প্রাক্তন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডাব্লিউ বুশের মধ্যে সম্পর্কটা যে কোনোদিনই বিশেষ হার্দ্দিক হয়ে উঠতে পারেনি, তার একটা মূল কারণ ছিল জিম্বাবোয়ের দীর্ঘকালীন প্রেসিডেন্ট রবার্ট মুগাবের প্রতি উভয়ের সম্পূর্ণ বিপরীত মনোভাব৷ বুশ ছিলেন মুগাবের তীব্র সমালোচক৷ অপরদিকে এমবেকি মুগাবে’কে আফ্রিকার ঔপনিবেশিকতা থেকে মুক্তির সংগ্রামের প্রথম দিকের যোদ্ধাদের মধ্যে গণ্য করতেন৷ হয়তো মুগাবের কিছু কিছু অবস্থানের প্রতি তাঁর অব্যক্ত সহানুভূতিও থেকে থাকতে পারে৷ যাই হোক, এমবেকি চেয়েছিলেন জিম্বাবোয়ে সমস্যার একটি নিছক আফ্রিকান সমাধান৷ এছাড়া এইডস ব্যাধির নিরুদ্ধে সংগ্রামের ক্ষেত্রেও এমবেকি’র কিছু নিতান্ত নিজস্ব ধ্যানধারণা ছিল৷ এবং শেষমেষ এমবেকি ইরাকে মার্কিন অনুপ্রবেশও ঠিক সমর্থন করে উঠতে পারেননি৷
নতুন রসায়ন
কিন্তু বর্তমানে মার্কিন প্রেসিডেন্ট হলেন বারাক ওবামা এবং দক্ষিণ আফ্রিকার নতুন প্রেসিডেন্ট হলেন জেকব জুমা, যিনি অতীতেও মুগাবের বিরুদ্ধে এমবেকি’র চেয়ে কড়া ব্যবস্থা নিতে চেয়েছিলেন৷ কাজেই জিম্বাবোয়ে প্রসঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র এবং দক্ষিণ আফ্রিকার মনোভাবে প্রত্যক্ষ অথবা প্রচ্ছন্ন বৈপরীত্যের অবসান ঘটার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে৷ ঠিক সেই সুযোগটাই নিলেন হিলারি ক্লিন্টন, এবং আপাতদৃষ্টিতে তিনি ব্যর্থমনোরথ হননি৷ গতকাল প্রিটোরিয়ায় তাঁকে বলতে শোনা যায় যে তিনি কোনো প্রতিশ্রুতি আদায়ের আশায় আসেননি, তবে জিম্বাবোয়েতে দক্ষিণ আফ্রিকার একটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা আছে বলে তাঁর বিশ্বাস৷ দক্ষিণ আফ্রিকার আন্তর্জাতিক সম্পর্ক মন্ত্রী মাইতে এনকোয়ানা-মাশাবেনে’র সঙ্গে আলাপ-আলোচনার পর ক্লিন্টন বলেন: ‘‘আমরা একটি স্বাধীন, গণতান্ত্রিক এবং সমৃদ্ধিশালী জিম্বাবোয়ের স্বপ্ন সাধন করার জন্য একত্রে কাজ করছি৷’’ জিম্বাবোয়ের পরিস্থিতি দক্ষিণ আফ্রিকা এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, উভয়ের পক্ষেই সমস্যাকর, বলেন ক্লিন্টন৷ তবে সেই পরিস্থিতি জিম্বাবোয়ের মানুষদের জন্যই সবচেয়ে বেশী সমস্যাকর, বলে তাঁর মন্তব্য৷
দক্ষিণ আফ্রিকার পররাষ্ট্রমন্ত্রী এনকোয়ানা-মাশাবেনে বলেন, জিম্বাবোয়েতে মুগাবে এবং বিরোধীদের মধ্যে ক্ষমতা ভাগাভাগির চুক্তিটির শীঘ্র বাস্তবায়ন হল অতীব গুরুত্বপূর্ণ৷ অন্যথায় সাধারণ জিম্বাবোয়েনরা ধৈর্য্য হারিয়ে ফেলতে পারে৷
শীতের অবসান
এমবেকি-বুশ আমল সম্পর্কে এনকোয়ানা-মাশাবেনে কূটনীতিকসুলভ মন্তব্যে বলেন, যে তিনি কোনো শৈত্য অনুভব করতে পারেননি৷ অপরদিকে তিনি এবং ক্লিন্টন নির্ধারণ করেছেন, যে গত আট বছরে পারষ্পরিক সম্পর্কে যে ব্যাপারটি ঘটেনি, তা হল সঠিক সমন্বয়৷
অতঃপর ক্লিন্টন জোহান্নেসবার্গ যাত্রা করেন নেলসন মান্ডেলার সঙ্গে একটি ব্যক্তিগত সাক্ষাতের জন্য৷ তবে ইতিপূর্বে তিনি একটি অংশত মার্কিন অর্থানুকুল্যে পরিচালিত এইডস ক্লিনিক পরিদর্শন করেন এবং দক্ষিণ আফ্রিকার স্বাস্থ্যমন্ত্রী এ্যারন মোৎসোয়ালেদি’র সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে ‘‘খোলাখুলি আলোচনা করেন’’৷
প্রতিবেদক: অরুণ শঙ্কর চৌধুরী, সম্পাদনা: দেবারতি গুহ