যমুনাকে দূষণের হাত থেকে বাঁচাতে কী করতে হবে?
৫ মার্চ ২০২৫কিন্তু দিল্লিতে কেন এটি মৃত নদীতে পরিণত হয়েছে? ওখলা ব্যারেজ এলাকায় বসে পরিবেশকর্মী পঙ্কজ কুমার জানান, ‘‘এখানে প্রতি ১০০ মিলিলিটারে ফেকাল কলিফর্ম ব্যাকটেরিয়ার সংখ্যা ১৮ লাখ এমপিএন৷ দিল্লি দূষণ নিয়ন্ত্রণ কমিটির মতে সংখ্যাটি ৫০০ এমপিএন হওয়া উচিত৷ আর সর্বোচ্চ সংখ্যাটি হতে পারে আড়াই হাজার এমপিএন৷ সুতরাং আমরা যদি এখানকার ফেকাল কলিফর্মের সংখ্যাটা দেখি তাহলে বুঝতে পারি যে, মানুষ ও পশুর অপরিশোধিত বর্জ্য নদীতে ফেলা হচ্ছে৷''
দিল্লিতে ৩৫টির বেশি পয়ঃশোধনাগার আছে৷ তারপরও পরিবেশ সংস্থা আর্থফাইভআর এর হিসেব বলছে, প্রতিদিন ৮০০ মিলিয়ন লিটার অপরিশোধিত বর্জ্যপানি নদীতে মিশছে৷
জরিপ বলছে, যমুনা নদীর ৮৫ শতাংশের বেশি দূষণ আসে ঘরবাড়ির বর্জ্যপানি ও অপরিশোধিত মল থেকে৷
পঙ্কজ কুমার জানান, ‘‘দিল্লির সাত থেকে আটটি পয়ঃশোধনাগার খুব কার্যকরভাবে বর্জ্যপানি শোধন করে থাকে৷ আপনি যদি সেই পানি দেখেন তাহলে বিশ্বাসই করবেন না যে, এটা একসময় বর্জ্য ছিল৷ যদি সবগুলো পয়ঃশোধনাগার এমনভাবে কাজ করতো তাহলে যমুনা নদীর অবস্থা অনেক ভালো হতো, আর পানিতেও গন্ধ থাকতো না৷''
দিল্লিতে প্রবেশের আগে যমুনা নদীর পানি তুলনামূলক অনেক পরিষ্কার থাকে৷
ওয়াজিরাবাদ বাঁধে যমুনার পানি পরিশোধিত করে দিল্লির বাসিন্দাদের সরবরাহ করা হয়৷ এভাবে তিন কোটি বাসিন্দার পানি চাহিদার প্রায় ৭০ শতাংশ পূরণ করা হয়৷
তবে ওয়াজিরাবাদ বাঁধ থেকে নিম্নাঞ্চলের দিকে প্রবাহিত হয়ে যমুনা নদী তার প্রথম ও সবচেয়ে বড় নালার সঙ্গে মিশেছে, যার নাম নাজাফগড় নালা৷ ২২ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে অবস্থিত ঐ এলাকার ২৩টি বড় নালা থেকে নিয়মিত বিরতিতে বর্জ্যপানি ছাড়া হয়৷
টেরি স্কুল অফ অ্যাডভান্সড স্টাডিজের গবেষণা স্কলার ঋতু রাও বলেন, ‘‘ভারতে যেটা হয়েছে সেটা হলো, আলাদা পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা গড়ে তোলার পরিবর্তে নগরায়নের কারণে মলমূত্র ও গৃহস্থালীর বর্জ্যের সঙ্গে কারখানার বর্জ্য মিশে নদীতে গিয়ে পড়ছে৷ বর্জ্যপানিপ্রবাহের পথ পরিবর্তন করে এসব ড্রেন ও নদীতে ফেলার কারণে নদীগুলি উন্মুক্ত নর্দমা বা ড্রেনে পরিণত হয়েছে৷''
নগর এলাকার পানি সম্পদ সম্পর্কে জনসচেতনতা বাড়াতে ঋতু রাও প্রায় হাঁটা কর্মসূচির আয়োজন করেন৷ তিনি মনে করেন, প্রকৃতিকে রক্ষার প্রথম ধাপ হচ্ছে এর সম্পর্কে সচেতনতা গড়ে তোলা৷ ‘‘এমনকি সবচেয়ে শিক্ষিত মানুষের মধ্যেও সচেতনতার অভাব আছে৷ সরকারকে স্কুল, হাউজিং সোসাইটি ও জনপরিসরে সচেতনতা কর্মসূচি বাস্তবায়ন করতে হবে৷ সেখানে জলাশয় ও জলাভূমির গুরুত্ব তুলে ধরতে হবে৷ এগুলো আমাদের বেঁচে থাকার জন্য জরুরি,'' বলেন ঋতু রাও৷
পঙ্কজ কুমার ও ঋতু রাও এর মতো মানুষেরা যমুনা রক্ষার জন্য আওয়াজ তুলে যাবেন৷ কিন্তু নদী রক্ষা ও এর পানি পরিষ্কার রাখার জন্য দিল্লিবাসীকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে৷ সাধারণ নাগরিক, রাজনীতিবিদ বা নীতিনির্ধারক, সবাইকেই এগিয়ে আসতে হবে৷
অশোক কুমার/জেডএইচ