মেঘালয়ে গ্রেপ্তার পাঁচ বাংলাদেশি
১২ আগস্ট ২০২৫গত কয়েক দিন ধরে মেঘালয়ের খাসি হিলস অঞ্চলে একের পর এক তল্লাশি অভিযান চালিয়েছে পুলিশ এবং বিএসএফ। তাদের সঙ্গে ছিল স্থানীয় গ্রামবাসীরাও। অভিযোগ, গত শুক্রবার সীমান্ত পার করে একদল সশস্ত্র ব্যক্তি মেঘালয়ে ঢুকে এক স্থানীয় দোকানদারকে অপহরণের চেষ্টা করে। ওই ব্যবসায়ীর নাম বালসরাং এ মারাক। মেঘালয়ে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের খুব কাছে একটি বাজারে দোকান চালান মারাক। পুলিশের কাছে তিনি অভিযোগ করেছেন, শুক্রবার রাতে আট-নয় জন সশস্ত্র দুষ্কৃতী তার দোকানে ঢোকে। সাময়িক বাকবিতণ্ডা হওয়ার পরে তারা মারাককে দোকান থেকে তুলে সীমান্তের দিকে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। নিয়ে যাওয়ার সময় তারা তার হাতে হাতকড়া পরিয়ে দেয়। তাকে প্রাণে মেরে ফেলার হুমকিও দেওয়া হয়।
মারাকের দাবি, সীমান্তের কাছে পৌঁছানোর পর আচমকাই সে হাতকড়া পরা অবস্থাতেই পালায়। পাশের গ্রামের একটি বাড়িতে ঢুকে আশ্রয় নেওয়ার চেষ্টা করে। দুষ্কৃতীরা তার পিছন পিছন ওই বাড়ি পর্যন্ত আসে এবং গুলি ছোড়ে।
রাতের অন্ধকারে যখন এই ঘটনা ঘটছে, তখন গ্রামের মানুষ ঘুমোচ্ছিলেন। গুলির আওয়াজ পেয়ে স্থানীয় গ্রামবাসীরা বাইরে বেরিয়ে আসেন এবং ওই দুষ্কৃতীদের কার্যত ঘিরে ফেলেন। অন্যদিকে বিসএএফ এবং পুলিশকেও খবর দেওয়া হয়। দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে বিএসএফ শূন্যে গুলি ছোড়ে বলে অভিযোগ। দুষ্কৃতীরা তখনও পালানোর চেষ্টা করছিল বলে অভিযোগ। পুলিশ এবং বিএসএফ তিনজনকে ধরে ফেলে। আরেক ব্যক্তিকে স্থানীয় মানুষ ধরে ফেলে বলে দাবি করা হয়েছে।
স্থানীয় পুলিশ সুপার বি জিরওয়া ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন, ''মারাকের অভিযোগের ভিত্তিতে ওই ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। কেন তারা এক ভারতীয় দোকানদারকে অপহরণের চেষ্টা করেছে, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। আদালত ওই ব্যক্তিদের পুলিশ হেফাজতে নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে।''
বিসএএফ-এর স্থানীয় কম্যান্ডার জানিয়েছেন, যারা গ্রেপ্তার হয়েছে, তাদের কাছ থেকে আগ্নেয়াস্ত্র, বাংলাদেশের টাকা উদ্ধার হয়েছে। একজন নিজেকে বাংলাদেশের পুলিশ বলে দাবি করেছেন। তার কাছ থেকে একটি পুলিশের আইডি কার্ডও পাওয়া গেছে। ওই কার্ডটি আসল কি না, তা পরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে।
বাংলাদেশের প্রশাসন বা বিজিবি-কে এ বিষয়ে কিছু জানানো হয়েছে কি না, তা বিএসএফ-এর তরফে জানানো হয়নি। তবে খোলা সীমান্ত দিয়ে যে পাচার বেড়েছে বলে দাবি করেছে পুলিশ।
পুলিশ জানিয়েছে, আইন মেনে আটক ব্যক্তিদের আদালতে পেশ করা হয়েছিল। ওই ব্যক্তিরাও যাতে আইনি সাহায্য পান, তা নিশ্চিত করা হয়েছে। বস্তুত, জনগণের হাতে ধরা পড়া ব্যক্তি আহত হয়েছেন। তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
বিএসএফ জানিয়েছে, এই ঘটনার সঙ্গে যুক্ত আরো বেশ কিছু ব্যক্তি এলাকায় লুকিয়ে আছে বলে তাদের আশঙ্কা। ফলে অভিযান এখনো চলছে। বস্তুত, রোববার ওই ঘটনায় যুক্ত সন্দেহে আরো এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
আটক ব্যক্তিদের নাম প্রকাশ করেছে পুলিশ। তারা হলেন, জামালপুরের জাহাঙ্গির আলম, নারায়ণগঞ্জের সায়েম হোসেন, কুমিল্লার মেহফুজ রহমান। নিজেকে পুলিশ বলে দাবি করেছেন মারফুর রহমান, তিনিও জামালপুরের বাসিন্দা বলে পুলিশের কাছে জানিয়েছেন।
অভিযোগকারী ব্যক্তির সঙ্গে আটক ব্যক্তিদের পূর্ব পরিচিতি ছিল কি না, তা-ও খতিয়ে দেখছে পুলিশ। অন্যদিকে, বিএসএফ আটক সকলের নামেই অবৈধ অনুপ্রবেশের মামলা দায়ের করেছে।