মেঘনা আলমের আটকাদেশ কেন অবৈধ নয় জানতে চেয়ে রুল হাইকোর্টের
১৩ এপ্রিল ২০২৫এদিকে তাকে গ্রেপ্তারের প্রক্রিয়া যথাযথ হয়নি বলে উল্লেখ করেছেন আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল৷
বাংলাদেশে ডয়চে ভেলের কনটেন্ট পার্টনার দৈনিক প্রথম আলো জানিয়েছে, বিশেষ ক্ষমতা আইনে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেটের মাধ্যমে মেঘনা আলমকে দেওয়া আটাকাদেশ কেন আইনগত কর্তৃত্ব বহির্ভূত ঘোষণা করা হবে না, তা রুলে জানতে চেয়েছে হাইকোর্ট৷
বিচারপতি রাজিক আল জলিল ও বিচারপতি তামান্না রহমান খালিদীর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ আজ রোববার এ রুল দেন৷ মেঘনা আলমকে আটকের প্রক্রিয়া ও আটকাদেশের বৈধতা নিয়ে তার বাবা বদরুল আলম এই রিট আবেদন দায়ের করেন৷
রুলে পরোয়ানা ছাড়া বাসা থেকে মেঘনা আলমকে গ্রেপ্তার, কারণ না জানিয়ে গ্রেপ্তার, ডিবি কার্যালয়ে ২৪ ঘণ্টার বেশি হেফাজতে রাখা ও আইনজীবীর সুযোগ না দেওয়া কেন আইনগত কর্তৃত্ব বহির্ভূত ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়েছে৷ পাশাপাশি বিশেষ ক্ষমতা আইনে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেটের মাধ্যমে দেওয়া আটকাদেশ কেন আইনগত কর্তৃত্ব বহির্ভূত ঘোষণা করা হবে না, তাও জানতে চেয়েছেন আদালত৷
স্বরাষ্ট্রসচিব, পুলিশের মহাপরিদর্শক, ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার, ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের (ডিবি) প্রধান, ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট ও ভাটারা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে দুই সপ্তাহের মধ্যে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে৷
মেঘনা আলমের গ্রেপ্তারের প্রক্রিয়া সঠিক হয়নি: আসিফ নজরুল
এদিকে মেঘনা আলমকে গ্রেপ্তারের প্রক্রিয়া যথাযথ হয়নি বলে স্বীকার করেছেন আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল৷ শনিবার পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের প্রধানকে পদ থেকে সরিয়ে দেয়া হয়েছে৷
আসিফ নজরুল রোববার সাংবাদিকদের বলেন, ‘‘মেঘনা আলমের যদি কোনো অপরাধ থাকে তার প্রেক্ষিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় যথাযথভাবে ব্যবস্থা গ্রহণ করবে৷ এটা আমরা স্বীকার করছি যে গ্রেপ্তারের প্রক্রিয়া ঠিক হয়নি৷’’
মামলা ও অভিযোগ ছাড়াই বুধবার রাতে বাংলাদেশের অভিনেত্রী এবং মডেল মেঘনা আলমকে আটক করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ৷ বৃহস্পতিবার (১০ এপ্রিল) রাতে তাকে ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনে ৩০ দিনের আটকাদেশ দেন ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিষ্ট্রেট৷ মেঘনার বিরুদ্ধে থানায় কোনো মামলা ছিল না, কোনো সুনির্দিষ্ট অভিযোগও ছিল না৷
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সমালোচনা শুরু হলে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ- ডিএমপি শুক্রবার ফেসবুকে একটি ব্যাখ্যা দেয়৷ তাতে দাবি করা হয়, ‘‘মেঘনা আলমকে অপহরণ করার অভিযোগ সঠিক নয়৷''
পুলিশের দাবি, ‘‘রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা বিঘ্নিত করা, গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি সম্পর্ক মিথ্যাচার ছড়ানোর মাধ্যমে আন্তঃরাষ্ট্রীয় সম্পর্ক অবনতির অপচেষ্টা করা এবং দেশকে অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত থাকার অভিযোগে মেঘনা আলমকে সকল আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করে নিরাপত্তা হেফাজতে রাখা হয়েছে৷''
তবে তার আটক নিয়ে সরকারের বিরুদ্ধে বিভিন্ন মহলে সমালোচনা অব্যাহত থাকে৷ উদ্বেগ প্রকাশ করে বিবৃতি দিয়েছে মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল৷
এ প্রেক্ষিতে আসিফ নজরুল রোববার সাংবাদিকদের বলেন, ‘‘মডেল মেঘনা আলমকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ডিটেনশন দিয়েছিল৷ এ নিয়ে অনেক বিতর্ক তৈরি হয়েছে৷ আপনাদের শুধু একটি জিনিস বলতে চাই, আমরা সরকারের উচ্চপর্যায়ে এ নিয়ে মিটিং করেছি৷ আমরা এ ব্যাপারে বিভিন্ন মানবাধিকার প্রতিষ্ঠান এবং অন্য অনেকের বক্তব্যে সচেতন আছি৷ আমরা শুধু এটুকু আপনাদের বলতে পারি, মডেল মেঘনা আলমের ব্যাপারে পুলিশ কিছু তদন্ত করছে এবং ওনার বিরুদ্ধে কিছু সুনির্দিষ্ট অভিযোগ আছে৷ কিন্তু ওনাকে যে প্রক্রিয়ায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে, বিশেষ ক্ষমতা আইনে, সেটা সঠিক হয়নি৷''
মেঘনা আলমের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ আছে তার করণীয় বিষয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় অচিরেই উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করবে বলেও উল্লেখ করেন তিনি৷
এদিকে শনিবার এক আদেশে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা বিভাগের (ডিবি) প্রধানের পদ থেকে রেজাউল করিম মল্লিককে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশের গণমাধ্যমগুলো৷
এফএস/এআই