মৃত্যুপথযাত্রীদের জন্য পণ্য ডিজাইন করেন বিটেন
২৮ জুলাই ২০২৫বিটেন স্টেটার বলেন, ‘‘মৃত্যু এবং তার আগের দিনগুলো নিয়ে আলোচনা এখনো যেন অনেকটা ট্যাবু বিষয়৷ কিন্তু এমনটা হওয়া উচিত নয়৷ আমি চাই আমার ডিজাইন মানুষকে জীবনের ঐ সময়টা সম্পর্কে সংবেদনশীল করে তুলুক, যা আমাদের সবাইকে প্রভাবিত করে৷ সেটা অন্যদের যত্ননেওয়ার সময় হোক কিংবা যখন আমরা নিজেরাই শেষ পর্যায়ে পৌঁছে যাই তখন৷’’
এসব পণ্যের মধ্যে আছে সিরামিকের কাপ, রঙিন গাউন, ফোন হোল্ডার, বেড-বক্স ইত্যাদি৷ বিটেন স্টেটার তার লেবেলের নাম দিয়েছেন ‘ফাইনালি'৷
বিটেন স্টেটার হামবুর্গের বাসিন্দা হলেও প্রায় ২০ বছর ধরে জুরিখে বাস করছেন৷ সেখানে তিনি একটি আর্টস বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিজাইনের অধ্যাপক৷ তিনি বলেন, ‘‘আমি আমার মায়ের সঙ্গে তার শেষ চার বছর ছিলাম৷ তার সঙ্গে হাসপাতালের বিভিন্ন বিভাগে থেকেছি-- অনকোলজি ওয়ার্ড থেকে সার্জারি, প্যালিয়েটিভ কেয়ার ওয়ার্ড থেকে হসপিস পর্যন্ত৷ সেই সময় আমি কার্যকারিতা, অর্থ এবং সৌন্দর্য সম্পর্কে নিজেকে অনেক প্রশ্ন করেছি৷ কারণ, আমিতো শুধু পরিবারের একজন সদস্য ছিলাম না, ডিজাইনারও ছিলাম৷''
জুরিখের ভাইড-স্পিটাল হাসপাতালের সহযোগিতায় তিনি তার ডিজাইনার পণ্যগুলো তৈরি করেছেন৷ এগুলো শুধু কাজের হলেই চলবে না, দেখতেও সুন্দর হওয়া জরুরি৷
রোগীর যত্ন নেওয়া বিষয়ের বিশেষজ্ঞ নোয়েমি লেহমান প্যালিয়েটিভ কেয়ার ওয়ার্ডে কাজ করেন৷ রোগীদের শেষ দিনগুলোতে তাদের চাহিদা মেটানোর চেষ্টা করেন৷ লেহমান বলেন, ‘‘মানুষ যখন অসুস্থ থাকে বা তাদের জীবন শেষের দিকে এগিয়ে যেতে থাকে তখন সুন্দর জিনিস খুবই গুরুত্বপূর্ণ - এবং এটা শুধু তাদের জন্যই নয়, তাদের প্রিয়জন এবং দর্শনার্থীদের জন্য, এবং আমাদের জন্য, যারা এমন রোগীদের যত্ন নিই৷ এসব জিনিস রোগীদের তাদের বর্তমান অবস্থা থেকে মনোযোগ একটু হলেও অন্যদিকে নিয়ে যায়৷''
বিটেন স্টেটার ২০২৪ সালে জুরিখে তার প্রথম দোকান খোলেন৷
তার ক্লায়েন্টদের একজন হলেন স্থপতি রোলান্ড লেহনেন৷ ২০১৭ সালে তার স্বামী ক্যানসারে আক্রান্ত হন৷ লেহনেন বলেন, ‘‘আপনি সবচেয়ে সুন্দর কফিন আর চুল্লি বেছে নিতে পারেন৷ কিন্তু মৃত্যুর আগের সময়গুলো নিয়ে কথা বলা আমাদের সমাজে এতটাই নিষিদ্ধ যে এটি একটি বড় সমস্যা তৈরি করে৷ দুর্ভাগ্যবশত মৃত্যুর প্রক্রিয়ার সময় প্রায়ই সৌন্দর্যের বিষয়টি হারিয়ে যায়৷''
বিটেন স্টেটারকে ২০২৩ সালে ‘ডিজাইন প্রাইজ সুইজারল্যান্ড' দেয়া হয়েছিল, যা তার জন্য আরেকটি উৎসাহের বিষয় ছিল৷
বিটেন স্টেটার জানান, ‘‘আমি এই বিষয়টা নিয়ে কাজ চালিয়ে যাব৷ এটা আমার হৃদয়ের খুব কাছের কিছু৷ আমি মনে করি এই ক্ষেত্রের বিশেষজ্ঞদের কাছ থেকে শেখা, এবং তাদের সঙ্গে একসাথে এগিয়ে যাওয়া দুর্দান্ত একটা বিষয়৷ নিজে খুব দুর্বল না হওয়া পর্যন্ত আমি এটা চালিয়ে যেতে চাই৷''
ক্রিস্টিন লেব্যার্ট/জেডএইচ